০৫. ১০৮ টি নীলপদ্ম (৩ পর্ব)



১০৮ টি নীলপদ্ম (প্রথম পর্ব)


সৃষ্টির একবারের শুরুর সেই সময়টা । আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে ।  তিনি জান্নাতে থাকেন । একা একা  কিছুটা বিষণ্ণ মনে   ঘুরে বেড়ান । আই রিপিট “জান্নাতে” মন খারাপ করে ঘুরে বেড়ান । অবশেষে আল্লাহ্‌ (সুবঃ), আদম (আঃ) এর সঙ্গী   হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন।আদম (আঃ) এর বিষন্নতা কেটে গেল।
স্বামী / স্ত্রী এবং তাদের মধ্যেকার অন্তরঙ্গতা  আল্লাহ্‌ (সুবঃ) এর এক বিশাল নিয়ামত । স্বামী / স্ত্রী একজন অপরের চোখ শীতলকারী , প্রশান্তি দানকারী । হাজার বছর ধরেই স্বামী স্ত্রীর এই অসম্ভব সুন্দর সম্পর্ক, একে অপরের প্রতি স্রদ্ধাবোধ, ত্যাগ স্বীকারের হাজার হাজার  কাহিনী  লিপিবদ্ধ হয়েছে, মহাকাব্য রচিত হয়েছে , রচিত হয়েছে অসংখ্য অশ্রু  ঝরানো উপাখ্যান । কিন্তু আমাদের এই তথাকথিত আধুনিক মহান সভ্যতায় বদলে গেছে  স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ।
ঠুনকো হয়ে গেছে  স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা ভালোবাসায় মিশে গেছে ফরমালিন । কমে গেছে একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ।  আমাদের দাদা দাদী, নানা নানীদের জেনারেশান,   অত দূরে যেতে হবে না, আমাদের বাবা মার জেনারেশানের স্বামী স্ত্রীর  সম্পর্কের মধ্যে যে পরিমাণ সততা ছিল ,যে পরিমাণ আবেগ ছিল তা আমাদের জেনারেশানের মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বছরের পর বছর ধরে তাঁরা একসাথে একি ছাদের নিচে ঘুমিয়েছেন , জীবনের সকল দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছেন , সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়েছেন জীবনের পক্ষে।
আমাদের জেনারেশানের দাম্পত্য জীবন অনেকটা পিকনিকের মতো । একে অন্যকে  দেখে দুজনকেই দুজনের  অনেক “কুউউল” মনে হল , তারপর  দুজনে বিয়ে করে কিছুদিন “এনজয়” করল । তারপর একরাতে মশারী খাটাতে যেয়ে  দুজনের হালকা কথা কাটাকাটি শুরু হল , তারপর ঝগড়া , তারপর রাত দুপুরে দুই পক্ষের অভিভাবক ডেকে ডিভোর্স ।
খালাস।
আবার কিছুদিন পর অন্য একজনকে দেখে অনেক ‘কুউউল’ মনে হল, তারপর আবার বিয়ে , তারপর কিছুদিন এনজয়, ফেসবুকের ওয়ালপেজ ভর্তি বেডরূম সেলফি , তারপর একদিন সামান্য কারণে হুট করে  ডিভোর্স ।  এই দুষ্ট চক্র চলতেই থাকে ।
কিন্তু কেন?
কেন হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা  স্বামী স্ত্রীর মধুর সম্পর্কের আজ এই  বেহাল দশা ? কেন এক নিদারুণ দুঃসময়ে টালমাটাল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধনগুলোর একটি?
অনেক গুলো ফ্যাক্টর আছে এর পিছনে । পুঁজিবাদী চিন্তাভাবনা ,সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে নিজের প্রবৃত্তির দাসত্ব
করা,সেকুল্যারিজমের প্রসার,মিডিয়ার মগজধোলাই,নারীবাদের উত্থান ।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর পর্নমুভি, আইটেম সং,  সর্বোপরি মিডিয়ার pornification এবং নারীকে শুধু মাত্র
দেহসর্বস্ব ‘সেক্স অবজেক্ট’ হিসেবে দেখানোর  ট্রেন্ড ।  এই কম আলোচিত বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই আমাদের   এই লিখাটি
সামনে এগুবে ইনশা আল্লাহ্‌  ।
আমাদের জেনারেশান  লাগামছাড়া অশ্লীলতা আর বেহায়াপনায় গা ভাসিয়েছে । এক দুই  ঘন্টানেট  ব্রাউজিং করেই তারা
বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে “যখন কিছুই লুকানোর থাকেনা” টাইপ মেয়েদের ছবি দেখে ফেলে তা আমাদের বাপ দাদারা তাঁদের
সারাজীবনে দেখেছে কিনা সন্দেহ । হাই স্পীড নেট , এন্ড্রয়েড ফোনের কল্যানে পর্ন মুভি আলু পটলের মতোই সহজলভ্য
হয়ে গেছে আর আমাদের ছেলে মেয়েরা তা গোগ্রাসে গিলছে ।
প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২৮,২৫৮ জন মানুষ পর্ন দেখছে [১] University of Montreal  এর গবেষকরা এমন একজনকেও খুঁজে পাননি যে জীবনে কখনোই পর্ণ দেখেনি।[২]
Security technology company Bitdefender এর গবেষনা থেকে দেখা যাচ্ছে,পর্নসাইটে যাতায়াত করে এমন ১০ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স দশ বছরের নিচে । এবং এই দুধের বাচ্চা গুলো রেপপর্ন টাইপের জঘন্য জঘন্য সব ক্যাটাগরির পর্ন দেখে । [৩]
পর্নমুভি দেখে, চটি গল্প পড়ে বড় হওয়া এইসব ছেলে মেয়েরা যৌনতা সম্পর্কে অতিরঞ্জিত, অবাস্তব ধারনা নিয়ে বড় হয়ে ঊঠছে ।  এদের সেক্স এডুকেশানের  মাধ্যমও এই পর্ন মুভি। National Union of Students(NUS) এর জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে শতকরা ৬০ জন স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা যৌনতা সম্পর্কে জানার জন্য পর্ণ মুভি দেখছে।[৪]
অস্ট্রেলিয়ান গবেষক Maree Crabbe এবং David Corlett এর ভাষ্যে,‘ আমাদের সংস্কৃতিটাই এমন হয়ে গিয়েছে যে কিশোর,তরুণরা কীভাবে যৌনতাকে উপলব্ধি করবে এবং যৌনতার মুখোমুখি দাঁড়াবে সেটা শেখাচ্ছে পর্ণ। সেক্স এডুকেশানের প্রভাবশালী মাধ্যম হচ্ছে পর্ণ’। [৫]
মানুষ কোন একটা বিষয় বার বার দেখতে থাকলে এবং সেটা তার ভালো লাগলে একসময় না একসময় সে সেটা করতে চাই । কাজেই  বিয়ের পর শুরু হচ্ছে ঝামেলা। [৬]
পর্নমুভিতে আসক্ত হওয়ার কারণে বিয়ের আগে  থেকেই  স্বামীর মনে নারী দেহের বিভিন্ন অঙ্গের আকার  আকৃতি   সম্পর্কে অতিরঞ্জিত এবং অবাস্তব ধারনা থাকে। [৭] তার  অবচেতন মন এটা ধারণা করে থাকে যে সব  নারীর দেহই  পর্নমুভির অভিনেত্রীদের মতো । এবং  নারীরা  বিছানায়, পর্নঅভিনেত্রীদের মতোই বেপরোয়া । কিন্তু সে যখন আসল সত্যটা আবিষ্কার করে বসে তখন সে হতাশ হয়ে যায় এবং দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় অশান্তি।
মুদ্রার ওপর পিঠটাও দেখে ফেলা যাক । পর্নমুভিতে আসক্ত নারীরাও ছেলেদের দেহ সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারনা করে বসে থাকে । বিয়ের পর সে যখন আবিষ্কার করে তার স্বামীর দেহ পর্নমুভিতে দেখানো পুরুষদের মতো না , তার স্বামী পর্নমুভিতে দেখানো পুরুষটার মতো এক্ট করতে পারছে না বা  ডিউরেশান পর্নমুভির চেয়ে  অনেক কম । তখন সে তার স্বামীকে নিয়ে অসন্তুষ্টিতে ভুগছে । দাম্পত্য কলহ শুরু হচ্ছে । পরকীয়ার সূত্রপাত হচ্ছে ।  পরকীয়ার পালে জোর হাওয়া লাগাতে ইন্ডিয়ান বস্তাপচা সিরিয়াল তো আছেই ।
দুজনের কেউই ভেবে দেখছেনা পর্নমুভিতে যেগুলো দেখানো হচ্ছে সেগুলো  কতটা ফেক ।কতটা এডিটিং করা হয়েছে । পর্নঅভিনেত্রীদের “শরীর” বলুন আর পর্নঅভিনেতার “শরীর” বলুন এগুলো সব কিছুই স্বাভাবিক আকারের চেয়ে অতিরিক্ত বড় আকারে পর্নমুভিতে এডিটিং এর মাধ্যমে উপস্থাপনা করা হয় । অনেক ঘাম ঝরিয়ে , বিশেষ ব্যামায় করে, সার্জারির মাধ্যমে এইগুলো বড় করা হয় । স্বাভাবিক নারী পুরুষের দেহ তাদের মত হবে না এটাই সত্য ।  আর ত্রিশ চল্লিশ মিনিটের একটি পর্নমুভি হয়তো সাত দিন ধরে শুটিং করা হচ্ছে ,পুরুষ অভিনেতা বা অভিনেত্রীরা যৌন শক্তি বর্ধক ড্রাগস নিয়ে তাতে পারফর্ম করছে , আর এর ভোক্তারা  নীল স্ক্রীনের সামনে  পর্ন মুভি দেখে ভেবে নিচ্ছেন তারা বোধহয় “একশটেই” চল্লিশ পঞ্চাশ মিনিট  স্টে করতে পারে । পর্নআসক্ত স্ত্রী ভাবছে পর্নমুভির অভিনেতা এতক্ষন পারলে আমার স্বামী কেন পারছে না তার নিশ্চয় সমস্যা আছে, পর্নআসক্ত স্বামী ভাবছে আরে সে এতক্ষন পারলে আমি কেন পারি না , নিশ্চয় আমার কোন সমস্যা আছে।
এইভাবে পর্নআসক্ত স্বামী তার আত্মবিশ্বাস  হারিয়ে ফেলছে আর স্ত্রীরাও অসন্তুষ্টিতে ভুগছে । স্বামী স্ত্রীর ভালবাসায় ভাটা পড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের (যৌন বিশেষজ্ঞ,চিকিৎসক,মনোবিদ,মনোবিজ্ঞানী,প্রফেসর) শতাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে [৮] পর্ন,মারাত্মক রকমের যৌন সমস্যা সৃষ্টি করে। ইরেক্টাইল  ডিসফাংশন (লিঙ্গ উত্থিত না হওয়া) থেকে শুরু করে , প্রিম্যাচিউর ইউজাকুলেশান(অকাল বীর্যপাত), যৌনতার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, অতৃপ্ত থাকা,স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার ভালোবাসা কমে যাওয়া, যৌনতায় আগ্রাসন প্রদর্শন…
বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে যুবকদের যৌনসমস্যা যতোটা বৃদ্ধি পেয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগে কখনো এরকম হয়নি। ৭জন নেভি চিকিৎসক সহ আরো অনেক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে লিখিত একটি গবেষণাপত্র [৯], [১০] থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৪ থেকে ৩৫ শতাংশ পুরুষ ইরেক্টাইল ডিসফাংশন জনিত সমস্যায় আক্রান্ত। যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এমন পুরুষের সংখ্যা শতকরা ১৬ থেকে ৩৭ জন। এই পুরুষদের কারো কারো বয়স ৪০ বছর বা তার চেয়ে কম , কেউ কেউ ২৫ বছর বয়সী টগবগে যুবক , কেউ কেউ সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া টিনেজার!
অনলাইন ফ্রি পর্নোগ্রাফি যুগের পূর্বের (?-২০০৬) বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে ৪০ বছর বা এর চেয়ে কম বয়সী পুরুষদের মাত্র ২-৫ শতাংশ পুরুষ ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে আক্রান্ত। ৩৫ বছর বা এর চেয়ে কমবয়সী কেউ ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে আক্রান্ত এমনটা শোনাই যেতনা। তার মানে গত কয়েক বছরে তরুণ,যুবকদের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন  প্রায়  ১০০০% বেড়েছে। এর পেছনে দায়ি কে ?
চলবে ইনশা আল্লাহ্‌……

রেফারেন্সঃ
[১] https://goo.gl/NxUWuY
[২]https://goo.gl/Z6TwPJ
[৩][ http://bit.ly/2fdBY1a
[৪]  https://goo.gl/HdfMq6
[৫] https://goo.gl/PGF6zX
[৬]Cicely Alice Marston and Ruth Lewis. “Anal Heterosex Among Young People and Implications for Health Promotion: A Qualitative Study in the UK,” BMJ Open 4, no. 8 (2014).
[৭] Emily Leickly, Kimberly Nelson, and Jane Simoni, “Sexually Explicit Online Media, Body Satisfaction, and Partner Expectations Among Men who have Sex with Men: A Qualitative Study,” Sexuality Research & Social Policy (2016). doi:10.1007/s13178-016-0248-7
[৮] https://goo.gl/tGJ4Nd
[৯] https://goo.gl/9FbhBs
[১০] https://goo.gl/ANeYcd

 

১০৮ টি নীলপদ্ম (দ্বিতীয় পর্ব)

বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে যুবকদের যৌনসমস্যা যতোটা বৃদ্ধি পেয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগে কখনো এরকম হয়নি। ৭জন নেভি চিকিৎসক সহ আরো অনেক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে লিখিত একটি গবেষণাপত্র [৯,১০] থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৪ থেকে ৩৫ শতাংশ পুরুষ ইরেক্টাইল ডিসফাংশন জনিত সমস্যায় আক্রান্ত। যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এমন পুরুষের সংখ্যা শতকরা ১৬ থেকে ৩৭ জন। এই পুরুষদের কারো কারো বয়স ৪০ বছর বা তার চেয়ে কম , কেউ কেউ ২৫ বছর বয়সী টগবগে যুবক , কেউ কেউ সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া টিনেজার!

অনলাইন ফ্রি পর্নোগ্রাফি যুগের পূর্বের (?-২০০৬) বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে ৪০ বছর বা এর চেয়ে কম বয়সী পুরুষদের মাত্র ২-৫ শতাংশ পুরুষ ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে আক্রান্ত। ৩৫ বছর বা এর চেয়ে কমবয়সী কেউ ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে আক্রান্ত এমনটা শোনাই যেতনা। তার মানে গত কয়েক বছরে তরুণ,যুবকদের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন  প্রায়  ১০০০% বেড়েছে। এর পেছনে দায়ি কে ?
১) ২৪ টি গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে পর্নআসক্তি নানা রকম যৌনজটিলতা সৃষ্টি করে, পর্নআসক্তদের  বাস্তব জীবনে যৌনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলে তাদের উত্তেজিত হতে বা সার্থক যৌন মিলনের জন্য তৈরি হতে সমস্যা হয়।
২) ৫৫ টিরও বেশি গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে পর্নআসক্তির কারণে স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার ভালোবাসা কমে যায়, যৌনজীবন নিয়ে দম্পতিরা অসন্তুষ্টি,অতৃপ্তিতে ভোগেন।[১১]
সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে একদম তরতাজা তরুণরাও যৌনতায় অনাগ্রহ প্রদর্শন করছে! সেই গবেষণাতে দাবি করা হয় পরনোগ্রাফি এই সব তরতাজা তরুণদের যৌনতায় অনাগ্রহের পেছনে দায়ী হতে পারে।[১২]
জাপানের তরুণ তরুণীরা অত্যাধিক পর্নআসক্তির কারণে যৌনতার প্রতি একদমই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে । [১৩]
আমেরিকার তরুণরা বিয়েতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর পেছনে অনেক গুলো কারণ রয়েছে ,যার মধ্যে পর্নআসক্তি অন্যতম বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।
পর্নআসক্তি এর বিয়ের ধারণাটাই বদলে ফেলে। বিয়েকে উপস্থাপন করে শুধু কামনা পূরণের মাধ্যম হিসেবে। বিয়ে মানে যে শুধু শারীরিক মিলনের সামাজিক স্বীকৃতি না , বিয়ে মানে দুটি মনের মিলন, সুন্দর পৃথিবীর জন্য হাতে হাত রেখে সংঘবদ্ধ লড়াই, অনেক দায়িত্ব, কর্তব্য পালন এই বেসিক জিনিসটাই ভুলিয়ে দেয় পর্নআসক্তি। [১৪]
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণরা এটা চিন্তা করছেন যে ইন্টারনেট পর্ন এর মাধ্যমেই তো আমি আমার যৌনাকাঙ্ক্ষা নিবারণ করতে পারছি । তাহলে আমার কী দরকার বিয়ের ঝামেলা পোহানোর! আরেকজনের মানুষের সঙ্গে একই ছাদের নিচে একই বিছানা শেয়ার করা, আরেকজন মানুষের দায়িত্ব নেওয়া।[১৫]
যৌনজীবনের ওপর পর্ন আসক্তি কি বিরূপ পভাব ফেলে সেটা শুনে নেওয়া যাক কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মুখ থেকে।
‘ইন্টারনেট পর্ন তরুণদের যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে। শুরুটা হয় সফটকোর পর্ন এ কম সংবেদনশীল হওয়ার মাধ্যমে, এর পরের ধাপ যৌনতায় আগ্রহ কমে যাওয়া  এবং সবশেষে বীর্যপাত বন্ধ হয়ে যায়’।
“দেখুন, ত্রিশ বছর আগে যখন  কেউ  ইরেক্টাইল ডিস্ফাংশন জনিত সমস্যায় পড়তেন, তখন তা হত মূলত বার্ধক্যজনিত কারণে, সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর। বয়স বাড়ার সাথে সাথে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং বীর্যপাত কঠিন করে ফেলে। ৩৫ বছরের নিচে কারো এমন বড় ধরণের সমস্যার কথা শোনা যেতনা বললেই চলে। কিন্তু সেটা ছিল ইন্টারনেট পর্নের আগের সময়। এখনকার দিনে অনলাইন মেসেজ বোর্ড ভর্তি থাকে তরুণদের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন সংক্রান্ত অভিযোগে। তারা ইরেক্টাইল ডিস্ফাংশনে আক্রান্ত হয়েছেন এই কারণে না যে তাদের কারণ যৌনাঙ্গে সমস্যা, তাদের সমস্যাটা মস্তিষ্কে; যেটা পর্নআসক্তির প্রভাবে বদলে গিয়েছে”।
-ডঃ কার্লো ফরেস্টা,ইটালিয়ান সোসাইটি অফ আন্ড্রোলোজি অ্যান্ড সেক্সুয়াল মেডিসিনের প্রাক্তন সভাপতি।
‘যখন আমি বলি যে পর্ন আমেরিকার যৌন আচরণকে ধ্বংস করছে, আমি মজাও করছি না, বাড়িয়েও বলছি না।  প্রতিনিয়ত আমি দেখতে পাই পর্ন আসক্তি কী গভীর ক্ষত তৈরি করে চলেছে নারী পুরুষের সম্পর্কে। আমি বিশ্বাস করি, পর্নই একমাত্র ও সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যবহির্ভূত কারণ যা সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। এটি যৌন স্বাস্থ্যের সব দিকেরই ক্ষতি করছে’।
‘…
‘একজন মানুষ যখন পর্ন দেখে আর মাস্টারবেট করে তখন সে যেন নিজেই নিজের পায়ে কুড়োল মারে। পর্দার দৃশ্যের মাধ্যমে উত্তেজিত হওয়ার ফলে ধীরে ধীরে বাস্তবজগতের রক্ত মাংসের নারীদের দ্বারা উত্তেজিত হওয়া তার জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, সফল যৌন মিলনের জন্য যতোটুকু সময় উত্তেজিত থাকা দরকার ততোটুকু সময় উত্তেজিত থাকেনা বা তৃপ্তি লাভ করতে পারেনা।
পর্ন হল সেই কালপ্রিট যা আপনার যৌনজীবনের বারোটা বাজিয়ে দেয়’।
‘পর্ন এমন এক ভার্চুয়াল স্বর্গরাজ্যের কথা বলে যা যৌনতায় ভরা যৌনতা আর যৌনতা, শুধু যৌনতা,বিভিন্ন ধরণের যৌনতা আর অসীম সুখ। পর্ন যেটা বলেনা তা হল, একজন ব্যক্তি যতই সেই ফ্যান্টাসি জগতের গভীরে যায়, বাস্তবতা ততই বিপরীত হয়ে দেখা দেয়। পর্ন আসক্তি এর আসক্তদের যৌনক্ষুধা যেমন কমিয়ে দেয়, তেমনি যৌন তৃপ্তি থেকেও দূরে রাখে ’
– ডাঃ হ্যারি ফিস্ক, ক্লিনিক্যাল প্রফেসর, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি ও রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিন। ডাঃ হ্যারি ফিস্ক পুরুষদের স্বাস্থ্য, বিশেষ করে যৌন বিষয়ক রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় অন্যতম পথিকৃৎ। [১৬]
পর্নআসক্ত সঙ্গী তার সঙ্গিনীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করছেননা, [১৭] স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ায় উত্তেজিত হতে সমস্যা হচ্ছে, যৌনমিলন পানসে মনে হচ্ছে, তৃপ্ত হতে পারছেন না, [১৮] একেবারেই সঙ্গিনীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা থেকে দূরে থাকছেন এরকম অসংখ্য ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবগত।[১৯,২০]
পর্নআসক্ত সঙ্গী তার সঙ্গিনীর পোশাক,আশাক,চেহারা,ফিগার,আচার আচরণ নিয়ে খুবই খুঁত খুঁতে হয়ে পড়ে। নীল পর্দার অভিনেত্রীদের সঙ্গে সবসময় নিজের সঙ্গিনীকে তুলনা করেন, আচার আচরণে,কথা বার্তায় সঙ্গিনীকে সেটা জানিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করেনা। এতে করে সঙ্গিনীর ওপর একটা চাপ তৈরি হয়, পর্দার অভিনেত্রীদেরকে তারা প্রতিদ্বন্দী হিসেবে ধরে নিচ্ছে, তাদের সঙ্গে এক অসম প্রতিযোগিতায় নামছে। স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য বা স্বামীকে নিজেদের প্রতি আকর্ষিত করার জন্য চুলের কাটিং,পোশাক আশাক, শরীরের গড়ন, আচার আচরণ সবকিছুই পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এনাল সেক্স,ওরাল সেক্সকেও হ্যাঁ বলতে হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও স্বামীকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না।[২১,২২]
স্ত্রীরা নিজেদের ভাবছেন বঞ্চিত,অবহেলিত, প্রতারণার শিকার।বাড়ছে হতাশা, বাড়ছে বিষণ্ণতায় ভোগা ।[২৩,২৪]
চলবে ইনশা আল্লাহ্‌ ……

 

রেফারেন্সঃ
[১১] https://goo.gl/jnTJpp
[১২]Voon, V., Et Al. (2014). Neural Correlates Of Sexual Cue Reactivity In Individuals With And Without Compulsive Sexual Behaviors, PLoS ONE, 9(7), E102419. Doi:10.1371/Journal.Pone.0102419; Sun, C., Bridges, A., Johnason, J., & Ezzell, M. (2014). Pornography And The Male Sexual Script: An Analysis  Of Consumption And Sexual Relations. Archives Of Sexual Behavior, 45(4), 1-12. Doi:10.1007/S10508-014-0391-2; Kalman, T. P., (2008). Clinical Encounters With Internet Pornography, Journal Of The American Academy Of Psychoanalysis And Dynamic Psychiatry, 36(4), 593-618. Doi:10.1521/Jaap.2008.36.4.593
[১৩] https://goo.gl/W25Fs5
[১৪] Dolf Zillmann, “Influence of unrestrained access to erotica on adolescents’ and young adults’ dispositions toward sexuality,”Journal of Adolescent Health27 (Aug. 2000): 41-44.
[১৫]https://goo.gl/2M62my
[১৬]  https://goo.gl/uBA5iy
[১৭]  James B. Weaver, Jonathan L. Masland, and Dolf Zillmann, “Effects of Erotica on Young Men’s Aesthetic Perception of Their Female Sexual Partners,” Perceptual and Motor Skills 58 (1984): 929-930.]
[১৮]Dolf Zillmann and Jennings Bryant, “Pornography’s Impact on Sexual Satisfaction,” Journal of Applied Social Psychology 18 (1988): 438–453.
[১৯] https://goo.gl/Xo6zN1
[২০] https://goo.gl/RDsCce
[২১] https://goo.gl/6MuuhK
[২২]  https://goo.gl/suG98N
[২৩]Jennifer P. Schneider, “Effects of cybersex addiction on the family: Results of a survey,”Sexual Addiction and Compulsivity7
(2000): 31-58
[২৪] https://goo.gl/8WuhdK

 

 

১০৮ টি নীলপদ্ম (শেষ পর্ব)

পর্নআসক্তির বৈশিষ্ট্যটাই এমন যে আসক্তরা ধীরে ধীরে সফটকোর পর্ন ছেড়ে হার্ডকোর পর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এবং বাস্তব জীবনেও পর্দায় দেখানো পদ্ধতিতে যৌনমিলন করতে চায় [২৫] । সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্ন মুভিগুলোর শতকরা ৮৮ শতাংশ দৃশ্যে শারীরিক আগ্রাসনের প্রদর্শনী রয়েছে, এবং শতকরা ৪৯ শতাংশ দৃশ্যে রয়েছে মৌখিক আগ্রাসন[২৬] । শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই এই শারীরিক ও মৌখিক নির্যাতন যাদের ওপর চালানো হচ্ছে সেই পর্ন অভিনেত্রীরা হাসিমুখে পরম আনন্দে অথবা মুখবুজে নীরবে নির্যাতন সহ্য করে নিচ্ছেন [২৭]। তারমানে দর্শকদের এই মেসেজটাই দেওয়া হচ্ছে যে নারীরা পুরুষদের কাছে এইগুলোই চায়, নারীরা এভাবেই তৃপ্তি পায়, যৌনমিলন করতে হয় এভাবেই [২৮]।
সঙ্গিনীর সঙ্গে পর্ণে দেখানো পদ্ধতিতে যৌনমিলনের সময় পুরুষেরা অজান্তেই সঙ্গিনীদের নির্যাতন করে চলেছেন; মৌখিক এবং শারিরীকভাবেই। টেরও পাচ্ছেননা। সঙ্গিনী বাঁধা দিলে রেপ পর্যন্ত করে ফেলছেন, কিন্তু নিজে বুঝতেই পারছেননা। ভাবছেন এটাই বোধহয় অন্তরঙ্গতার পদ্ধতি।তার সঙ্গিনী সব ধরণের অন্তরঙ্গতায় আনন্দ পান।

গত কয়েক বছরে এনাল সেক্স,ওরাল সেক্সের মতো জঘন্য,বিকৃত এবং হারাম [২৯] যৌনাচারের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।আর এর অন্যতম কারণ হল পর্নমুভিগুলোতে এই বিকৃত যৌনাচারগুলোর আধিপত্য।পর্দার নারীরা হাসিমুখে এনাল সেক্স, ওরাল সেক্সে অংশগ্রহণ করছে কাজেই পর্নআসক্ত পুরুষরা ধরে নিচ্ছেন তাদের সঙ্গিনীরাও এনাল এনাল সেক্স ওরাল সেক্স হাসিমুখে বরণ করে নিবেন। স্বেচ্ছায় রাজি না হলে নারীদেরকে এনাল বা ওরাল সেক্স করতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রয়োজনে মারধোরও করা হচ্ছে।[৩০,৩১,৩২]

পর্নমুভিতে এই যৌনাচারগুলো আকর্ষণীয়, তৃপ্তিদায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও আদতে এই যৌনাচার গুলো প্রচন্ড ক্ষতিকর, অস্বাস্থ্যকর,নোংরা, নারীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। এনাল সেক্সের কারণে মলাশয়ে ক্যান্সার হতে পারে নারী এবং পুরুষ দুজনেরই। যে যৌনক্রিয়া গুলোর মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, এনাল সেক্স তাদের মধ্যে শীর্ষে। অসংখ্য পুরুষ এনাল সেক্সের কারণে এইডসে আক্রান্ত হচ্ছেন, নারীদের সংখ্যাও কম নয়। এইডস ছাড়াও নানা ধরণের মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ যেমন হারপিস,গনোরিয়া,ক্লামিডিয়া,সিফিলিস হতে পারে এর মাধ্যমে।[৩৩,৩৪]
বিশ্বসাস্থ্য সংস্থার মতে ওরাল সেক্সের কারণে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ভয়ঙ্কর গনোরিয়া রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে। বিশ্বে প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ মানুষ প্রতি বছর এ রোগ সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন, যা অনেকের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও অন্তত ৭৭টি দেশের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছে, গনোরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার প্রবণতা কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।[৩৫]
হারপিস, ক্ল্যামিডিয়া,হেপাটাইটিসহ আরো অনেক যৌনবাহিত ইনফেকশান (STIs) ছড়িয়ে পড়তে পারে ওরাল সেক্সের মাধ্যমে। [৩৬,৩৭,৩৮]

ওরাল ক্যান্সারেরও অন্যতম কারণ ওরাল সেক্স । [৩৯] The New England Journal of Medicine এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে ওরাল সেক্স গলায় ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। পাঁচজনের কম সঙ্গী বা সংগিনীর সঙ্গে ওরাল সেক্সে লিপ্ত এমন ব্যক্তির গলায় ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা , যিনি কখনোই ওরাল সেক্স করেননি তার চেয়ে দ্বিগুন। আর যাদের পাঁচজনের বেশি সঙ্গী বা সঙ্গিনী রয়েছে তাদের গলায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ২৫০% বেশি। [৪০,৪১]
এনাল সেক্স,ওরাল সেক্স দম্পতিদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ,ভালোবাসা কমিয়ে দেয়। এই বিকৃত যৌনাচারগুলো দাম্পত্য কলহ,অশান্তি, মনোমালিন্য,অতৃপ্তির অন্যতম কারণ।[৪২,৪৩,৪৪]

পর্নমুভি এনাল সেক্স, ওরাল সেক্সকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে এসে স্বাভাবিক করার মাধ্যমে সমকামিতার সামাজিক স্বীকৃতির জন্য চমৎকার ভিত্তি তৈরি করে দিচ্ছে। শিশুকাম বাড়ছে।

বাংলাদেশেও এনাল সেক্স এবং ওরাল সেক্স মহামারী আকারে। আমাদের পেইজে এরকম এমন খবর এসে পৌঁছেছে, স্ত্রীর আপত্তির মুখেও স্বামী জোর করে স্ত্রীর সঙ্গে এনাল সেক্স বা ওরাল সেক্সে লিপ্ত হচ্ছেন।

দম্পতিতের পারস্পরিক বিশ্বাসে ফাটল ধরায়, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দেয় ‘পর্ন আসক্তি । একজন জীবন সঙ্গী/ সঙ্গিনী সন্তুষ্টি দিতে পারেনা, পরকীয়া থেকে পতিতাগমন সব কিছুর দুয়ার খুলে দেয়। [৪৫]

পর্ন আসক্তি সন্তান লালন পালনে অনীহ সৃষ্টি করে। [৪৬]
বাচ্চা কাচ্চা লালন পালন করা তো আর কম ঝামেলার কাজ না ! রাত বিরাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেললে ডায়াপার চেঞ্জ করে দাও , ট্যাঁ ট্যাঁ করে কেঁদে উঠলে সুখের ঘুম ছেড়ে বাচ্চার কান্না থামাও , স্কুলে নিয়ে যাও, কোচিং এ নিয়ে যাও , হ্যানো ত্যানো আরো কত কি ।
পর্ন আসক্তরা ভার্চুয়াল সেক্স ফ্যান্টাসীর ফাঁদে ফেসে যেয়ে সারাক্ষণ পর্ন মুভি নিয়ে পড়ে থাকে ।
বাস্তব জীবন সম্পর্কে একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে পড়ে । তাদের সময় কোথায় বাচ্চার জন্য আলাদা ভাবে চিন্তা করার ?
বাবা /মা পর্ন আসক্ত এমন পরিবারের বাচ্চারা প্রচন্ড অবহেলায় বেড়ে ওঠে ; স্নেহ ভালবাসা শাসন তেমন একটা পায় না ।
বাচ্চাদের দীর্ঘমেয়াদী মানসিক ক্ষতি হয় , স্কুলে পিছিয়ে পড়ে , বন্ধুদের সঙ্গে সহজভাবে মিশতে পারে না , ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যায় ।

ছেলেবেলায় সবারই রোল মডেল থাকে তার বাবা-মা । তার বাবা মা পৃথিবীর সেরা বাবা মা , সবার চেয়ে বেশী স্মার্ট, এমন একজন যে সবকিছু জানে , পারে – সুপারম্যান । বাবার চশমাটা চোখে দিয়ে আর কোট টা ছোট্ট শরীরে চাপিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবে একদিন সেও তার বাবার মতোই হবে।
ছেলেমেয়েরা যখন একটু বড় হয় , বুঝতে শেখে তার চারপাশের জগত সম্পর্কে তখন বাবা/মা’র অন্ধকার জগতটা তাদের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেলে শ্রদ্ধার গভীরতা কমে যায় ,বাবা মা’র জন্য ভালবাসার যে একটা মহাসমুদ্র ছিল ছোট্ট বুকটাতে তাতে ভাটা পড়তে সময় লাগে না ।মেয়ে বাবার আদরের স্পর্শে হয়তো পবিত্রতার অভাব অনুভব করে।

পর্নআসক্তি থেকে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন, প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশান, যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া, অতৃপ্তি, যৌন নির্যাতন, বিকৃত যৌনাচার,পারস্পরিক বিশ্বাস,শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দেওয়া সবকিছুই অনিবার্য এক করুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়; বিচ্ছেদ।

AMERICAN SOCIOLOGICAL ASSOCIATION এ উত্থাপিত একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে বিবাহিতদের পর্ন আসক্তি, তাদের বিচ্ছেদের সংখ্যা দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়। [৪৭]

আমেরিকাতে শতকরা ৫৬টি বিবাহ বিচ্ছেদের মূলকারণ সঙ্গি/সঙ্গিনীর পর্ন আসক্তি। [৪৮]
আর এই বিবাহ বিচ্ছেদ সূচনা করে আরো অনেক সমস্যার ।

-> বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার এমন পরিবারে বেড়ে উঠা ছেলেমেয়েরা খুব সহজেই বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়েপড়ছে । তাদের জেল খাটার হার স্বাভাবিক পরিবারে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ।

-> বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার এমন পরিবারে বেড়ে উঠা ছেলেমেয়েরা স্বাভাবিক পরিবারের ছেলেমেয়দের তুলনায় দ্বিগুণবেশী দারিদ্র্যের সম্মুখীণ হয় । সেই সঙ্গে একাডেমিক বা প্রফেশনাল লাইফে তারা স্বাভাবিক পরিবারের ছেলেমেয়েদেরচেয়ে খুবই পিছিয়ে পড়ে । তাদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয় । অনেকেই তাদের সৎ বাবার হাতে যৌননিপীড়নের শিকার হয় । অনেকে বাসা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় – এদের অনেকের ঠিকানা হয় পতিতালয়ে বা ’পর্ন ইন্ডাস্ট্রী গুলোতে । অনেক ছেলেমেয়ে শারীরিক এবং মানসিক পীড়ন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে বসে ।

-> বিবাহ বিচ্ছেদ যে মনের সুখ শান্তি কেড়ে নেয়, হতাশা আর বিষণ্ণতার সৃষ্টি করে এমনকি অনেক সময় মানুষ আত্মহত্যাও করে এটা তো জানা কথা । বিবাহ বিচ্ছেদ কিন্তু আর্থিক ক্ষতিও করে যথেষ্ট পরিমান । একই যোগ্যতার অধিকারী বিবাহিতরা, ডিভোর্সড লোকদের তুলনায় শতকরা ১০- ৪০ শতাংশ বেশী উপার্জন করে থাকে । বিবাহ বিচ্ছেদের কারনে প্রতি বছর কম পক্ষে প্রায় ১১২ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ট্যাক্স দিতে হয় জনগণকে পুরো আমেরিকা জুড়ে ।[৪৯,৫০]

আসলে পর্নমুভি বলুন, হলিউডের মুভিই বলুন, বলিউডের মুভি বা আইটেম সং সব জায়গাতেই নারীকে বানিয়ে ফেলা হয়েছে সেক্স অবজেক্ট , পুরুষকে সন্তুষ্ট করার জন্যই যেন তার পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে । তেমনি ভাবে পুরুষকে উপস্থাপন করা হচ্ছে বাইসেপ ট্রাইসেপের হাটবাজার বসিয়ে ফেলা একজন মাসলম্যান, একজন সেক্স পাওয়ার হাউজ । স্বামী স্ত্রীর পবিত্র ভালবাসাটাকে “যৌনতার” মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে । একে অপরকে যেকোন মুল্যে পাশবিক উপায়ে ভোগ করাটাই যার শেষ কথা এবং আসল উদ্দেশ্য । ভালবাসা যে শুধু দেহের মিলন নয়, ভালবাসাতে যে মনের মিলনটাই বড় এটা আজ মিথ্যে হতে বসেছে । ভালবাসার জন্য একসময় পুরুষ দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড় বাধতে চেয়েছিল, চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল সারা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে ১০৮ টি নীল পদ্ম আনার, প্রিয়তমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখে পার করে দিতে চেয়েছিল সারাটি জীবন, নারীরা কথা দিয়েছিল পথ চেয়ে থাকার অনেক অনেক বছর । আজ সেই নারীরাই ,আজ সেই পুরুষরাই “ভালবাসাটাকে” ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে ।

পর্নমুভির নোংরা ফ্যান্টাসীর জগত থেকে বের হয়ে এসে, ভোগবাদী চিন্তা ভাবনা কে দূরে ঠেলে দিয়ে আসুন না একটু রোমান্টিক হয়ে যান । রাসূল (সাঃ) এর মতো করে লাইফ পার্টনারকে ভালবাসুন । একে অন্যের সীমাবদ্ধতা, দোষ ত্রুটি গুলো ক্ষমা করে দিন, একে অন্যের প্রতি সহনশীল হোন, সম্পর্কের ব্যাপারে বিশ্বস্ত হোন ।

ভুলে ভরা গল্প লিখতে লিখতে পার করে দিলেন তো অনেক দীর্ঘরাত, অযথা ভুলে ভালোবাসার রৌদ্রকাজ্জ্বল,শান্ত,নিরুদ্রপ চেনা উপকূলে আহব্বান করে নিয়ে আসলেন রুদ্র ঝড়ের সংবাদবাহী কালো মেঘ, আর কতো ? যথেষ্টেরোও বেশি কি হয়নি? এবার তবে থামুন। একজীবনে কতোটা আর নষ্ট হবেন ?

ফাগুনের তারাভরা একরাতে জোস্ন্যায় হেলান দিয়ে বসুন দুজনে। কান্নার রঙ্গ মুছে ফেলে চোখ রাখুন। হাওয়ার গল্প শুনে পার করুন কিছুটা সময় ,শুকতারাকে সাক্ষী রেখে ও’র কপালে চুমু খান। নিজের কর্কশ মুঠিতে,ওর কোমল মুঠো নিয়ে বলুন, ‘মেয়ে, এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পারি। আমার ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে গা ঝাড়া দিয়ে নোংরামিগুলো ফেলে দিয়ে জীবনের পক্ষে দাঁড়াতে, ভালোবাসার সেই চেনা উপকূলে ফিরে আসতে।ইচ্ছে পূরণের এই দুঃসাহসিক যাত্রায় এভাবেই তোমার হাতটা ধরে রাখতে দেবেনা?
(শেষ)

মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটির পিডিএফ গুগল ড্রাইভ থেকে ডাউনলোড করুন


=======
রেফারেন্সঃ
[২৫]Wright, P.J., Tokunaga, R. S., & Kraus, A. (2016). A Meta-Analysis Of Pornography Consumption And Actual Acts Of Sexual Aggression In General Population Studies. Journal Of Communication, 66(1), 183-205. Doi:10.1111/Jcom.12201; DeKeseredy, W. (2015). Critical Criminological Understandings Of Adult Pornography And Women Abuse: New Progressive Directions In Research And Theory. International Journal For Crime, Justice, And Social Democracy, 4(4) 4-21. Doi:10.5204/Ijcjsd.V4i4.184; Allen, M., Emmers, T., Gebhardt, L., & Giery, M. A. (1995). Exposure To Pornography And Acceptance Of The Rape Myth. Journal Of Communication, 45(1), 5–26. Doi:10.1111/J.1460-2466.1995.Tb00711.X
[২৬] Bridges, A. J., Wosnitzer, R., Scharrer, E., Sun, C. & Liberman, R. (2010). Aggression And Sexual Behavior In Best Selling Pornography Videos: A Content Analysis Update. Violence Against Women, 16(10), 1065–1085. Doi:10.1177/1077801210382866
[২৭] ][ https://goo.gl/xk1NM3 ]
[২৮] Bridges, A. J. (2010). Pornography’s Effect On Interpersonal Relationships. In J. Stoner And D. Hughes (Eds.) The Social Costs Of Pornography: A Collection Of Papers (Pp. 89-110). Princeton, NJ: Witherspoon Institute; Layden, M. A. (2010). Pornography And Violence: A New Look At The Research. In J. Stoner And D. Hughes (Eds.) The Social Costs Of Pornography: A Collection Of Papers (Pp. 57–68). Princeton, NJ: Witherspoon Institute; Marshall, W. L. (2000). Revisiting The Use Of Pornography By Sexual Offenders: Implications For Theory And Practice. Journal Of Sexual Aggression 6(1-2), 67. Doi:10.1080/13552600008413310]
[২৯] [ https://islamqa.info/en/91968]
[৩০] [Eunjung Ryu, “Spousal Use of Pornography and Its Clinical Significance for Asian-American Women: Korean Women as an Illustration,” Journal of Feminist Family Therapy 16, no. 4 (2004): 75–89. Janet Hinson Shope, “When Words Are Not Enough: The Search for the Effect of Pornography on Abused Women,” Violence Against Women 10, no. 1 (2004): 56–72.
[৩১] https://goo.gl/4hccVw
[৩২] https://goo.gl/Uitete ]
[৩৩] [https://goo.gl/prfgBG ]
] [৩৪] https://goo.gl/FtLX9u
[৩৫] [http://www.bbc.com/bengali/news-40546773]
[৩৬] https://goo.gl/5mLcv3
[৩৭] https://goo.gl/Lu1ZNY
[৩৮] https://goo.gl/Q8ZJiZ
[৩৯][https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/22236342]
[৪০] [https://goo.gl/a232zi ]
[৪১] [ “New Scientist: “Oral sex can cause throat cancer” – 09 May 2007″.Newscientist.com. Retrieved 2010-03-19. ]
[৪২] https://goo.gl/CetK6N
[৪৩] https://goo.gl/5gNNJB
[৪৪] https://goo.gl/7GWhD5
[৪৫] [Jill Manning, “Hearing on pornography’s impact on marriage & the family,” U.S. Senate Hearing: Subcommittee on the
Constitution, Civil Rights and Property Rights, Committee on Judiciary, Nov. 10, 2005. http://www.judiciary.senate.gov/
hearings/testimony.cfm?id=e655f9e2809e5476862f735da10c87dc&wit_id=e655f9e2809e5476862f735da10c87dc-13(accessed Dec. 27, 2012)]
[৪৬] [Dolf Zillmann, “Influence of unrestrained access to erotica on adolescents’ and young adults’ dispositions toward sexuality,”Journal of Adolescent Health27 (Aug. 2000): 41-44. ]
[৪৭] https://goo.gl/7bxq2r ]
[৪৮] [https://goo.gl/HyVV91 ]
[৪৯][ https://goo.gl/mLY78T
[৫০] https://goo.gl/D8UAWx ]