২১. রূপকথা নয়! (২ পর্ব)

রূপকথা নয়! (প্রথম পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
.
প্রচন্ড শীতের রাত। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া জামা কাপড় ভেদ করে হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছিল।পরমাসুন্দরী এক তরুণী  দৃঢ়,দ্রুতপদক্ষেপে হেঁটে যেয়ে নির্জন এক বাড়ির কড়া নাড়লো। দরজা খুলে দিল এক যুবক। এবং  চোখের সামনে সুন্দরী তরুণী দেখে সঙ্গে সঙ্গেই দরজা বন্ধ করে দিল।
.
মেয়েটি রাস্তা থেকে চেঁচিয়ে বলল,‘দয়া করে আমাকে আপনার বাড়িতে ঢুকতে দিন। আমি সফরে বেরিয়েছি। ভেবেছিলাম রাত নামার আগেই আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারবো, কিন্তু রাত হয়ে গেছে অথচ আমি এখনো মাঝপথে এবং আমি জানি না, আমি কোথায় এসে পড়েছি। আমি এই এলাকার কাউকেই চিনি না।আপনি যদি আমাকে আপনার বাড়িতে আশ্রয় না দেন, আমি ভয় পাচ্ছি বাহিরে আমার সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটতে পারে’।
যুবকটি উত্তর দিল,‘আশে পাশে আরো অনেক বাড়ি ঘর আছে… আপনি দয়া করে সেই বাড়িগুলোর কোন একটাতে যান, ইনশা আল্লাহ তারা আপনাকে সাহায্য করবে’।
.
মেয়েটি চলে গেল। আসলে চলে যাওয়ার ভান করলো। হাড় কাঁপানো শীতের রাতে মেয়েটির নির্জন ঐ বাড়ির কড়া নাড়া, সফরের কথা বলে আশ্রয় প্রার্থনা করা সবই জঘন্য একটা মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। প্ল্যানে  বুঝতে হলে আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ডের ঘটনাগুলোও জানতে হবে।
.
এই যুবক ছিল আল্লাহর এক তাকওয়াবান বান্দা। সারাদিন রোযা রাখতো  আর সারারাত নফল সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্‌র ভয়ে অশ্রু বিসর্জন দিত।সব ধরণের হারাম থেকে নিজেক সযত্নে বাঁচিয়ে রাখতো।তাঁর পাড়া  প্রতিবেশী রা খুব একটা সুবিধের ছিল না । হারাম-হালালের কোন তোয়াক্কা তারা  করতো না ।আড্ডাবাজি,গীবত,পরচর্চা,পরনিন্দা করেই তাদের দিন কাটতো। আমাদের যুবক, পাড়া  প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করতো না। অধিকাংশ সময়ই সে তাঁর নিজের বাড়িতে বসে বসে আল্লাহ্‌র ইবাদাত করতো। তাঁর পাড়া  প্রতিবেশীরা এতে বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে গেল।তারা সব সময় এই যুবকের সমালোচনা করতো, ‘দেখ না,এই ব্যাটার ভাব দেখ, আমাদের পাত্তাই দেয়না,আমরা কি মানুষ না? সারাদিন ঘরে বসে বসে তসবিহ টিপে,আমাদের সঙ্গে কোন মেলামেশাই করোনা। ব্যাটাকে চল জন্মের মতো সাধুগিরির শিক্ষা দেই ’।
.

ইমেইজ কার্টেসিঃ shutterstock
তারা সবাই মিলে এই যুবকের পদস্খলনের ষড়যন্ত্র করলো। সুবহান আল্লাহ! শয়তান সবসময় মানুষকে সরাসরি আক্রমণ করে না । সে মাঝে মাঝে মানুষদের মধ্যেই এমন একটা দল তৈরি করে যারা অন্য মানুষকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে বিচ্যুত করতে চায়।
.
ঐ যুবকের প্রতিবেশীরা গরু খোঁজার মতো করে আশেপাশের এলাকা চষে ফেললো রুপসী,লাস্যময়ী মেয়ের খোঁজে। তারা এমন এক তরুণীর সন্ধান পেল যে ছিল ঐ এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুন্দরী। লোকগুলো ঐ মেয়েকে প্রস্তাব দিল,‘আমরা চাই, তুমি অমুক এলাকার ঐ যুবককে তোমার রূপের ফাঁদে ফেলবে এবং তার পদস্খলন ঘটাবে……তার সঙ্গে যিনা করবে’।
‘হায় আল্লাহ! আমি একজন মেয়ে, এমন কাজ আমি কিভাবে করবো?’
‘তুমি আমাদের এই কাজটা করে দাও। বিনিময়ে তুমি যা পাবে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা। তোমাকে ওজন করে তোমার ওজনের সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি স্বর্ণ তোমাকে দেওয়া হবে। রাজি ? ’
.
মেয়েটি কিছুক্ষন চিন্তা করলো। বিবেকের সঙ্গে যুদ্ধ করলো বলা যায়। সে ছিল খুবই গরীব। নুন আনতে পান্তা ফুরায় টাইপ অবস্থা। এক ধাক্কায় এতো সম্পদ। করলামই না হয় এই খারাপ কাজটা। একবারই তো! নিজেকে বোঝালো সে।
‘ঠিক আছে। এতো করেই বলছো যখন। আমি রাজি’
.
ঐ মেয়ে চলে যাবার ভান করলো। কিছুক্ষণ পরে… সে আবার যুবকের দরজায় কড়া নাড়লো।  ‘আমি পাশের বাড়িগুলোতে গিয়েছিলাম কিন্তু তারা কেউ বাড়িতে নেই। বাহিরে প্রচন্ড ঠাণ্ডা। আমার ভীষণ ভয় করছে, আপনি আমাকে আপনার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দিলে আমি হয়তো ঠান্ডায় মরে যাব! দয়া করে দরজা খুলুন’ অনুনয় ঝরে পড়লো মেয়েটির কন্ঠে।
‘পাহাড়ের নিচের দিকে আরেকটু নেমে গেলে ওখানে আরো কিছু বাড়ি পাবেন। ইনশা আল্লাহ তারা আপনাকে তাদের সাথে থাকতে দেবেন। আমার বাড়িতে শুধু আমি,আর কেউ নেই। আমাদের দুজনের একসঙ্গে থাকা ঠিক হবে না’।– যুবকের সরল স্বীকারোক্তি।
.
মেয়েটি চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে সে আবার ফিরে এল এবং দরজায় কড়া নাড়ল… এবার লোকটি দরজা খুললো এবং মেয়েটিকে দেখতে পেল। মেয়েটি বলল,‘আল্লাহর শপথ! আপনি যদি আমাকে ভেতরে আসার অনুমতি না দেন.. এবং কোনো পুরুষ যদি আমার সম্ভ্রম ছিনিয়ে নেয় তবে আল্লাহর! শপথ শেষ বিচারের দিন আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে বলব যে, আপনিই হলেন সেই ব্যক্তি যার কারণে এসব ঘটেছে। আপনার কারণেই আমি ধর্ষিত হয়েছি….।
.
আর যুবকটি যখন আল্লাহ সুবহানুওয়া তা’আলার নাম শুনল তখন তাঁর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো কেননা, যখন মু’মিনগণের সামনে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয়, তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে।
যুবক দরজার পাল্লা মেলে ধরলো।
‘আসুন, আপনি এই ঘরে রাতটা কাটিয়ে দিন,আমি পাশের ঘরেই থাকছি … দয়া করে আমাকে আর বিরক্ত করবেননা এবং ফজরের ওয়াক্ত হওয়ামাত্রই আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন’। এতোটুকু বলে যুবক পাশের ঘরে চলে গেল। কুরআন তিলাওয়াত শুরু করার পূর্বে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করতে ভুল করলো না।
.
যুবকের প্রতিবেশীরা আশেপাশেই ওঁত পেতে ছিল। মেয়েটি বাড়ীতে ঢোকার পর তারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে খেঁকশিয়ালের মতো খ্যাঁক খ্যাঁক শব্দ করে হাসতে লাগলো- ব্যাটার সাধুগিরি একটু পরেই খতম হয়ে যাবে।আরো কিছুক্ষণ তাদের এভাবে বসে থাকার ইচ্ছা। তারপর,  একেবারে চূড়ান্ত মুহূর্তে হারে হারে করে যুবকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে যুবক এবং ঐ রূপসীকে হাতে নাতে ধরার প্ল্যান ।
.
যুবকটি নিবিষ্ট মনে কুরআন তিলাওয়াত করছিল। হটাত মেয়েটির ঘর থেকে রক্ত হিম করা একটা চিৎকার ভেসে আসলো। যুবক হাতে একটা বাতি নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে  প্রবেশ করল। চোখের সামনের দৃশ্য তাকে স্রেফ স্ট্যাচু বানিয়ে দিল।
মেয়েটি শুয়ে আছে বিছানায়। গায়ে একটা সুতো পর্যন্ত নেই। দুচোখে তীব্র কামনা।
.
এখন এই যুবকটি  জীবনে প্রথমবারের মতো এমন কিছু দেখলো যা সে এর আগে কখনো দেখেনি। সে ভেতরে ভেতরে এমন কিছু অনুভূতির টের পেতে শুরু করল যা ইতিপূর্বে কখনো টের পায়নি ,তার মন তাকে এমন কিছু করতে বললো যা পূর্বে কখনো বলেনি…  তাদের অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি এখন তার সামনে…. হাতছানি দিয়ে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে নিষিদ্ধ জগতে হারিয়ে যাওয়ার! কী করবে সে?
টগবগে একজন যুবক এই পরিস্থিতিতে কী করে? সে তার জীবনে এমন কিছু কখনো দেখে নি…এলাকাবাসীরা আগেই বাড়িটি ঘিরে ফেলেছিল।এবার তারা তাদের বৃত্ত ছোট করে ফেলে প্রাচীরের গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। আর মিনিট দুয়েক পরেই  দরজা ভেঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করবে তারা। যুবকটি ঐ মেয়ের ঘরে ঢোকার পর থেকেই মেয়েটি চিৎকার দেওয়া বন্ধ করে ফেলেছিল। কিছুক্ষণ রাজ্যের নীরবতা নেমে আসলো। দূরে একটা নিশাচর পাখি একগাছ থেকে অন্য গাছের উদ্দেশ্যে উড়াল দিল। গাছের পাতা থেকে একদলা তুষার মাটিতে পড়লো।
.
হটাত যুবকের বাড়ি থেকে রক্ত হিম করা চিৎকার ভেসে আসলো, মেয়েটির গলা… সে চিৎকার করছে… করতেই আছে… থামার কোন নাম গন্ধ নেই। এলাকাবাসীরা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে দরজায় হামলে পড়লো। তারপর মেয়ে এবং যুবক দুজনকেই আবিষ্কার করলো  একই ঘরের মেঝেতে!
.
(আগামী পর্বে সমাপ্য ইনশা আল্লাহ )




রূপকথা নয়! (শেষ পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
মেয়েটি মেঝেতে শুয়ে ছিল সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায়। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে সে তীক্ষ্ণ চিৎকার করে যাচ্ছিল।
যুবকটি ছিল ঘরের এককোণায়, দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ছিল সে… কাঁদছিল অঝোরে। যুবকের একহাত পাশে রাখা একটা বাতির আগুনের মধ্যে ধরা। বাতাসে মাংস পোড়ার তীব্র কটু গন্ধ।
যুবকই কাঁদছে আর কাঁদছে…. ওইদিকে মেয়েটি চিৎকার করছে….লোকেরা           মেয়েটিকে ঘরের বাইরে নিয়ে গেল আর মেয়েটি ভয়ার্ত কন্ঠে বলতে থাকলো,‘ তোমরা আমাকে এই যুবকটার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাও । আল্লাহর শপথ! এর ঈমান আমাকে শেষ করে দিচ্ছে… আমি আমার সামনে এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা আমি  তোমাদের বোঝাতে পারবো না… আর এটা আমার অন্তর পুড়িয়ে দিচ্ছে, আমার ভেতরটা ছারখার হয়ে যাচ্ছে… এই যুবকের ঈমান আমাকে খুন করে ফেলছে, আমাকে এখান থেকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো’।

ইমেইজ কার্টেসিঃ shutterstock
মেয়েটি তার রূপের ফাঁদে ঠিকই গেঁথে ফেলেছিল যুবকটিকে। মেয়েটির আহ্বানে সাড়া দিতে যুবকটি এক পা দুই পা করে আগাচ্ছিল তার দিকে। কিন্তু এই নাজুক মুহূর্তেও যুবকটি তাঁর রবের কথা,রবের শাস্তির কথা ভুলে যায়নি, মেয়েটির দিকে একটি করে ধাপ আগানোর পর সে তার হাত বাতির আগুনের ওপর ধরছিল  এবং নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল,‘মনে রাখিস, জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার এই আগুনের চেয়েও বেশী উত্তপ্ত’।  তীব্র বেদনায় সে মেঝেতে পড়ে যাচ্ছিল । আবার সে উঠে দাঁড়াচ্ছিল। মেয়েটির দিকে আরেক কদম এগিয়ে যাচ্ছিল… আর যখনই সে মেয়েটির দিকে আবার আগানো শুরু করছিল, তখনই সে তাঁর হাতটাকে আগুনে ঠেলে দিচ্ছিল এবং নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল,‘মনে রাখিস, জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়েও বেশি তীব্র’।
মেয়েটিকে সেই ঘর হতে সরিয়ে নেবার পর সেই যুবক অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে প্রত্যাবর্তন করলো আল্লাহ’র (সুবঃ) নিকট- ‘ইয়া আল্লাহ! আমি যে গুনাহ করেছি তার জন্য আমাকে ক্ষমা করুন”।
কী ছিল সেই গুনাহ? কী করেছিল সে?
সে যিনা থেকে বিরত ছিল।
সে ওই জমিনের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের কাছে যাওয়া থেকে বিরত ছিল ।
সে কি আসলে কোন গুনাহ করেছিল!
অথচ সে বলল, হে আল্লাহ! মেয়েটির দিকে বাড়ানো আমার সেই পদক্ষেপগুলোর জন্য আমাকে ক্ষমা করুন। [১]
দুই.
সৌদি আরবের জেদ্দার এক তরুণের গল্প এটি । খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। সেই তরুণ ছিল আল্লাহ্‌র এক অনুগত বান্দা,কুরআনের একজন হাফিজ এবং এক মসজিদের মুয়াজ্জিন।  একবার সে আর তার বন্ধুরা মিলে তার দাদার গ্রামে বেড়াতে গেল। সেখানকার অভাবী,দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে তারা খেজুর,ইসলামিক বইপত্র, প্যামপ্লেট,সিডি ইত্যাদি বিতরণ করল। তার দাদার গ্রামটি ছিল জেদ্দার খুব কাছেই,  সব বন্ধুরা সেদিনই শহরে ফিরে গেল। থেকে গেল শুধু সেই তরুণ।
.
রাতে খাবার দাবার, গল্পগুজব করার পর সে ড্রয়িংরুমেই ঘুমিয়ে পড়ার আয়োজন শুরু করল। তার দাদা তাকে ঠেলে ভেতরের একটা ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। ছেলেটা বিছানা ঝেড়ে,ঘুমানোর দু’আ গুলো পড়ে শুয়ে পড়লো। সারাদিনের দৌড়াদৌড়ির কারণে সে ছিল খুব ক্লান্ত। গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে খুব একটা সময় লাগলোনা।
.
অনিন্দ্যসুন্দরী এক যুবতী সেই বাড়িতে কাজ করতো। সারাদিন তক্কে তক্কে ছিল সে।রাত গভীর হতেই সে সটান হাজির হলো সেই তরুণের ঘরে।
তারপর?
তারপরের ঘটনা চল শুনি সেই তরুণের মুখ থেকেই।
‘…মনে হলে আমার ঘরের দরজাটা বেশ ক’বার খুললো এবং বন্ধ হল। আমি তেমন একটা পাত্তা দিলাম না। দুচোখে রাজ্যের ঘুম ছিল। মনে হচ্ছিল বাস্তবে নয় স্বপ্নে দরজা খুলতে এবং বন্ধ হতে দেখছি।
তারপর হটাত আমি টের পেলাম কে জানি আমার পাশে এসে শুল। তারপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই মানুষটা আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিল।
তারপর? তারপর কি ঘটেছিল? কি ঘটেছিল সেই রাতে?
তরুণটি এক ঝটকায় সুন্দরী যুবতীকে দূরে ঠেলে দিল। গালে কষে কয়েকটা চড় মারলো। তারপর তড়িঘড়ি করে কাপড় পরে দৌড় দিল মসজিদের দিকে।আল্লাহ্‌র ভয়ে তার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গিয়েছিল। সে থর থর করে কাঁপছিল। ফজরের আযানের আগ পর্যন্ত সে মসজিদে বসে শিশুর মতো কাঁদছিল।
সকালবেলা তার চাচাকে সব খুলে বললো। যুবতী কাজের মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। এই ঘটনার শক সহ্য করা ঐ তরুণের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ালো। ধীরে ধীরে সে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লো। [২]
.
এই দুইটা ঘটনা জানার পরে আমি কিছুক্ষণ থম মেরে বসে ছিলাম। ভাই তুমি,একবার নিজেকে কল্পনা কর ঐ ছেলেটির জায়গায়। তোমার তরুণ শরীর,তোমার টগবগে রক্ত,রাতের নিকষ কালো চাদরের আড়ালে এক সুন্দরী স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছে তোমার কাছে। কোথাও কেউ নেই। কাক পক্ষীও টের পাবে না কিছুই, এমন সময় তুমি কি করবে? কি করাটা স্বাভাবিক? আনন্দে হার্ট এটাক করলেও অবাক হবার কিছুই নেই।
.
বাসা খালি পেলে বা একা রুম পেলে আমাদের মাথায় কি চিন্তা ঘোরাফেরা করে?
পর্ন দেখার বা মাস্টারবেট করার এইতো সুযোগ, তাইনা?
লেটস বি অনেস্ট।
বাসায় কেউ ছিল না বা রুম ফাঁকা ছিল আর আমরা পর্ন দেখিনি,মাস্টারবেট করিনি বা কোন মেয়েকে নিয়ে সেক্স ফ্যান্টাসিতে ডুবে যাইনি এমন কবার হয়েছে?
বুকে হাত রেখে আমাদের সত্যি কথা বলার সাহসটা হবে কখনো?
সুবহান আল্লাহ! এই দুই ছেলের ঈমানের শিকড় কি গভীর মাটিতে প্রেত্থিত। গভীর রাতে অপরূপা যুবতীরা নিষিদ্ধপ্রেমের যে ঝড় তুলেছিল তাতেও বিন্দুমাত্র টলেনি তাদের ঈমান, যে সুযোগ পেলে বহু পুরুষ বর্তে যেত, যে সুযোগের কথা ভেবে কত তরুণ অস্থিরতায় ভোগে সেই সুযোগ পাওয়ায় পরেও তা ছুড়ে ফেলে দিতে  এতোটুকু দ্বিধায় ভোগেনি এরা।
হায় আমাদের ঈমান কতো ঠুনকো!
.
একাকী রুমে এক অবাস্তব জগতের ধরা যায়না ছোঁয়া যায়না এমন পর্নস্টাররা আমাদের চিন্তায় আসামাত্র আমাদের ঈমান  হাওয়া হয়ে যায়। নেটে লগইন করে পর্ন দেখতে,মাস্টারবেট করতে আমাদের বিন্দুমাত্র দেরি হয়না। পার্কের চিপায়,রিকশার হুডের নিচে,বাসের পেছনের সিটে, লিফটে আমরা নির্জনতা খুঁজি, লোকাল বাসের ভীড়ে,কনসার্টে আমরা সুযোগ খুঁজি। সারাদিন জাস্ট ফ্রেন্ড জাস্ট ফ্রেন্ড ,ভাইবোন খেলা খেলে গভীর রাতে বাথরুমে নিজেদের ঠান্ডা করি।
.
পাপ করতে করতে আমাদের এমন অবস্থা হয়েছে পাপকে আমরা আর পাপ মনে করি না। মাস্টারবেট করার পর বা পর্ন দেখার পর আমাদের খারাপ লাগে না । এইটা এমন কোণ ব্যাপারই না আমাদের কাছে। জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
.
এই দুই ছেলেও তো আমাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ ছিল,তাদেরও তো আমাদের মতোই একটা হৃদয় ছিল, সেই হৃদয়ে কামনা বাসনা ছিল,ছিল নারীর প্রতি দুর্বোধ্য আকর্ষণ। কিন্তু সেই কামনা বাসনার কাছে তারা মাথা নত করেনি।
.
এরাও আল্লাহর বান্দা,আমরাও আল্লাহ্‌র বান্দা,কিন্তু ওদের সঙ্গে আমাদের আকাশ পাতাল পার্থক্য। হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়ায় বসে এরা যখন কাউসারের পানীয় পান করবে তখন হয়তো রাতের আঁধারে করা আমাদের পাপের কারণে অপমানিত করা হবে। [৩]
.
এক শায়খের মুখে এক ছেলের কথা শুনেছিলাম যে প্রত্যেকদিন ১২,০০০ এরও বেশিবার আল্লাহ’কে (সুবঃ) স্মরণ করতো। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল,‘ কেন তুমি এতো বার আল্লাহকে স্মরণ কর?’
সে উত্তর দিল, ‘ যেন আমি আবু হুরাইরাহকে (রাঃ) হারাতে পারি। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) এর চেয়ে বেশি আল্লাহ্‌কে স্মরণ করতে পারি। [৪]
.
চলোনা ভাই, আমরাও প্রতিযোগিতায় নামি ঐ দুই ছেলের সঙ্গে। তাঁরা যদি  ডানাকাটা পরীদের উপেক্ষা করতে পারে তাহলে কেন আমরা সামান্য পর্নমুভি দেখা ছাড়তে পারবোনা, মাস্টারবেশন বন্ধ করতে পারবোনা?
(শেষ)

মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটির পিডিএফ গুগল ড্রাইভ থেকে ডাউনলোড করুন