০৩. চোরাবালি (৮ পর্ব)

চোরাবালি (প্রথম পর্ব)

খুবই অবাক লাগে যখন দেখি একদল মানুষ মাস্টারবেশনের পক্ষে প্রচারণা চালায়; ধর্মে নিষেধ করেছে তো কি হয়েছে, বিজ্ঞান আমাদের বলছে এটা শরীরের জন্য উপকারী , এর কোন ক্ষতিকর দিক নেই, মাঝে মাঝে মাস্টারবেট করলে শরীর ভালো থাকে, টেনশান মুক্ত থাকা যায় ব্লা ব্লা …… । পাশ্চাত্যের কিছু দেশে তো রীতিমতো স্কুলের বাচ্চাদের সেক্স এডুকেশানের নামে এই জঘন্য ব্যাপারটাতে উৎসাহী করে তোলা হয় । খুবই দুঃখ লাগে যখন দেখি আমাদের দেশেও মুসলিম নামধারী  আল্লাহর  কিছু অবুঝ বান্দা এর পক্ষে ফেসবুক , ব্লগে লিখালিখি করছে , ভিডিও বানাচ্ছে ।
বুকের ভেতর  খুব কষ্ট নিয়ে এই সিরিজটা শুরু করলাম আল্লাহর ইচ্ছায় । এই সিরিজে ইনশা আল্লাহ আমরা সবাইকে একটা ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করব আপাতদৃষ্টিতে মাস্টারবেশন আসক্তি খুব নিরীহ মনে হলেও কি ভয়ঙ্কর বিষে বিষাক্ত এই আসক্তি । প্রথম  দুই টা পর্বে আমরা এমন কিছু হতভাগ্য ভাইদের কথা আপনাদের জানাবো মাস্টারবেশন আসক্তি যাদেরকে ধ্বংসের গভীর এক খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । পরের কয়েকটি পর্বে আমরা আলোচনা করব  বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মাস্টারবেশনের ভয়াবহতা । সবশেষে ইনশা আল্লাহ , ইসলাম এবং বিজ্ঞানের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে মাস্টারবেশনের ওপর একটা তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হবে ।
আপনি আমন্ত্রিত ।

এক.
আমার বয়স ২৩ বছর আর আমি থাকি হন্ডুরাসে । ১০ বছর ধরে আমি মাস্টারবেট করে আসছি । এতে  আমি পুরোপুরি আসক্ত ।
প্রত্যকেদিনই আমাকে মাস্টারবেট করতে হয় ।  দুইবার,  একটানা চার দিন ছিলাম  মাস্টারবেট না করে ।
মাস্টারবেশন আসক্তি আমার স্বাস্থ্য,আমার প্রজনন অংগ আর সামাজিক জীবনের খুব ক্ষতিসাধন করেছে ।
মাস্টারবেশন আসক্তি আমার যে ক্ষতিগুলো করেছেঃ
১) কোন গার্লফ্রেন্ড জুটাতে পারিনি । (https://www.youtube.com/watch?v=rXfDmL7iig4)
২) সারাদিন দুর্বল দুর্বল লাগে । চোখে সবসময় ঘুম লেগে থাকে ।
৩) শরীরে একটু শক্তি সঞ্চয় হলে আবার মাস্টারবেট করতে ইচ্ছে করে ।
৪) তেমন কোন প্রোডাক্টিভ কাজই করা হয়না । সৃষ্টিকর্তার দেওয়া চমৎকার এই জীবনটা নষ্ট করে ফেললাম ।
৫) শরীর তীব্র জ্বালাপোড়া করে ।
৬) আমাকে খুবই বয়স্ক দেখায় । একটানা চারদিন মাস্টারবেশন থেকে দূরে ছিলাম,দুইবার । সেই সময় আমার চেহারায় সতেজ একটা ভাব ছিল । আহা! সেই দিনগুলো কত ভালো ছিল !
৭) পিঠ ব্যাথা করে ।
৮) মাস্টারবেশনের পরে  পুরো শরীর ব্যাথা করে , হাড়গুলো ঝনঝন করে ।
৯) সবসময় নিজেকে দোষী মনে হয় ।
১০) আমার প্রজনন অঙ্গ অস্বাভাবিক হয়ে গেছে ।

মাস্টারবেট না করার উপকারিতাঃ
(চার দিন মাস্টারবেট না করেই যে পরিবর্তন গুলো আমি লক্ষ্য করেছিলাম)
১) শরীরের দুর্বলতা, ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়েছিল । দিল ‘খুশ’ ছিল ।
২) কাজ কর্মে ব্যাপক ফুর্তি ছিল ।মনযোগ বেড়ে গিয়েছিল ।যে কাজ ধরতাম সেটা শেষ করেই ছাড়তাম আর অনেক কাজ করতে পারতাম ।
৩) একটু বেশী  স্মার্ট হয়ে গিয়েছিলাম, মনেহয় । বন্ধুদের সঙ্গে বেশ ভালো রসিকতা করতাম, পার্ট নিতাম ।
৪) সেক্সুয়ালি প্রোএক্টিভ ছিলাম ।
৫) সকালে ঘুম থেকে ওঠে ভাবতাম , এইবার এক্সারসাইজ করে শরীরটা ফিট বানিয়ে ফেলব ।
আমি এখন তীব্র সংকল্পবদ্ধ; মাস্টারবেট করা ছাড়বোই । শক্তিশালী একজন মানুষ হব , হব একজন ভালো স্বামী ,ভালো বাবা  ।
আমি চাই  পরিবারের সদস্য আর বাচ্চাদের সঙ্গে চমৎকার কিছু সময় কাটাতে। জ্যোৎস্না আর জোনাকি দেখে আমি মুগ্ধ হতে চাই , বসন্তের উদাসী বাতাস গায়ে মেখে নিতে চাই , চাই পাখির কাছে ,ফুলের কাছে যেয়ে তাদের কথা গুলো বুঝতে  ; সৃষ্টিকর্তার উপহার দেওয়া এই জীবনটা চুটিয়ে উপভোগ করতে ।

দুই.
আমি ভারত থেকে বলছি । বয়স যখন ১৩ তখন প্রথম মাস্টারবেশনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে । তারপর কোন বিরতি ছাড়াই একটানা আড়াই বছর ধরে মাস্টারবেট করেছি । শুরুর দিনগুলোতে দিনে একবার করে মাস্টারবেট করতাম কিন্তু পরের দিকে এই সংখ্যা বেড়ে যায়; ২-৩ বার এমনকি ৫ বারের বেশীও মাস্টারবেট করতাম প্রতিদিন ।গলায় এবং মুখে প্রচুর ব্রোন বের হবার কারণে  আমাকে  খুবই বিচ্ছিরি দেখাতো ।
স্কুল বা কোচিং ছাড়া অন্য কোথায় যেতাম না । বাড়িতে বসে থাকতাম সবসময়। মানুষজনের সামনে যেতে খুবই অস্বস্তিবোধ করতাম । লজ্জা ,হতাশা ,দুশ্চিন্তা,পিঠব্যাথা,তীব্র মাইগ্রেনের ব্যাথায় আমার তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ।পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছিল , কিন্তু আমি বেশ মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলাম; পড়াশোনা চালিয়ে নিয়েছি ভালোমতো ।  একটানা আড়াই বছর ধরে মাস্টারবেট করার পর আমি এটা থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম যদিও  সেই মুক্তির স্বাদ খুব বেশী দিন ধরে উপভোগ করতে পারিনি । ক্লাসে একটা মেয়ে ছিল , ও’কে আমি মনে মনে ভালবাসতাম [বিবাহ বহির্ভূত প্রেম হারাম –https://www.youtube.com/watch?v=rXfDmL7iig4 , https://www.ummaland.com/blog/1740/বিবাহ-বহির্ভূত-সম্পর্ক-প্রেম-ইসলামে-সম্প/ ] । ভালোবাসার জন্য আমি প্রতীজ্ঞা করলাম যে করেই হোক না কেন মাস্টারবেশন  ছাড়তে হবে । এত লজ্জা নিয়ে , পিম্পলে ভরা বিদিকিচ্ছিরি এই চেহারা নিয়ে ও’র  সামনে আমি দাঁড়াবো কীভাবে !
কঠোর সাধনার মাধ্যমে মাস্টারবেট করা ছাড়লাম । মুখের সব পিম্পল আর দাগগুলোও ভ্যানিশ হয়ে গেল । রেজাল্ট খুবই ভালো হতে লাগলো , বাড়িয়ে বলছি না স্কুলের সেরা  হ্যান্ডসাম   ছাত্রদের একজন হয়ে গেলাম । দুশ্চিন্তা, হতাশা সব রাতারাতি দূর হয়ে গেল। কিন্তু স্কুল শেষ করার পর আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল ।দুজন আলাদা আলাদা কলেজে ভর্তি হলাম । চোখের সামনে থেকে মূর্তিমান ‘অনুপ্রেরণা’ চলে যাওয়াতে আবার মাস্টারবেশনে আসক্ত হয়ে গেলাম; আগের চেয়ে আরো ভয়ংকর ভাবে ।
পুরোনো সব সমস্যারা ফিরে এলো  দলবেঁধে। মুখের পিম্পল, দুশ্চিন্তা , হতাশা , মাথাব্যাথা । একটানা দুই-তিন দিন ধরে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করত , মনে হত মাথার ভেতরে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে ।
ক্লাসটেস্টগুলোতে খুব বাজে রেজাল্ট করতে থাকলাম । বেধড়ক মার খেলাম এক  টিচারের হাতে একদিন । হতাশা আরো বাড়লো । ক্লাসটাস করা বাদ দিলাম , সারাদিন রুমের দরজা লাগিয়ে শুধু পর্ন দেখতাম । হতাশা কাটানোর জন্য মনোবিদদের কাছে গেলাম । কিন্তু লাভ হলোনা [আমি অবশ্য উনাকে কখনো বলিনি যে আমি মাস্টারবেশনে আসক্ত । এখবর , উনার মাধ্যমে বাবা মা বা আমার কোন আত্মীয় জানলে আমার পিণ্ডি চটকাতো না ?]
প্রিপারেশানের অভাবে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারলাম না । একটা বছর লস হয়ে গেল । এখন আবার সেই পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশান নিচ্ছি । আমার পেছনে  লাখ  রুপি  খরচ করছে আমার পরিবার , কিন্তু আমি সব জলে ফেলে দিচ্ছি । দুর্বিষহ একটা জীবন পার করছি । হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, সংকোচ, ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা , স্বাস্থ্য সমস্যা …আরো অনেক কিছু যেগুলো আমি এখানে বললাম না । মাস্টারবেশনের ভয়ংকর এই ফাঁদ থেকে কবে মুক্তি পাব,  আদৌ পাব কিনা তা আমি জানি না । চূড়ান্ত একটা  যুদ্ধে নামবো আমি । মাস্টারবেশনের বিরুদ্ধে । আমার নিজের জন্য ,আমার বাবা-মা’র জন্য,পরিবার,যারা আমাকে ভালোবাসে , আমাকে বিশ্বাস করে তাদের জন্য । আমি কখনোই হেরে যেতে পারিনা , জিততে আমাকে হবেই……
[প্রেম মাস্টারবেশন ছাড়ার  মহা ঔষোধ মনে করার কোন দরকার নেই। প্রেম আপনাকে খুব অল্প সময়ের জন্য মাস্টারবেশন থেকে দূরে রাখতে পারবে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী কোন সমাধান দিতে পারবে না ।  সে প্রেম যতই পবিত্র হোক না কেন। অনেক মানুষকে চিনি যারা প্রেমও করে আবার ধুমায়ে মাস্টারবেট করে, পর্ন দেখে । এই হারাম সম্পর্কটি হুডতোলা রিকশা, কেএফসি, আলো আধারির রেস্টুরেন্ট,স্টার সিনেপ্লেক্স পর্ব শেষে আপনাকে লিটনের ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে পারে।   আর সেটা নিশ্চয়ই মাস্টারেশনের চেয়ে জঘন্য একটা ব্যাপার ।]
চলবে ইনশা আল্লাহ ……

চোরাবালি (দ্বিতীয় পর্ব)

তিন.
সেদিন সকালে ভীষণ চমকে গিয়েছিলাম । ঘুম থেকে উঠে  আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি অনেকটা মনের খেয়ালেই। অবাক হয়ে দেখি একটা ৬০ বছরের বুড়ো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চেহারার এই হাল দেখে মন খুব  খারাপ হয়ে গেল। ৩১ চলছে আমার, যৌবনের মধ্যগগণে, কিন্তু আমার চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ স্পষ্ট। আমার বড় দু’ ভাই আছে। একজনের বয়স ৩৯ অন্যজনের ৪৫। কিন্তু আজকাল অপরিচিত যে কেউ আমাকে তাদের আংকেল ভেবে বসে! অবশ্য আমার এ অবস্থার জন্য আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। দোষী আমি নিজেই। আমি নিজেই কি নিজেকে তিলে তিলে ধ্বংস করার মাতাল নেশায় নামিনি গত ১৭ বছর ধরে?
১৪ বছর বয়স থেকে হস্তমৈথুন করা শুরু করেছিলাম।  এখন আমার বয়স ৩১ ।১৭ বছর! নিজেকে ধ্বংস করার  ১৭ বছর! একদিন সব ছিল আমার; ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী, মোটা বেতনের চাকরি, সুন্দরী স্ত্রী ।এখন আমি  নিঃস্ব! চোখে খুবই কম দেখি, টাইপিং এ প্রচুর ভুল হয়।স্মৃতিশক্তি একেবারেই কমে গেছে, কিছুই মনে থাকে না; সম্পূর্ণ আনপ্রোডাক্টিভ।গত বছর অফিস থেকে ছাঁটাই করে দিয়েছে।  বউটাও ছেড়ে গেছে।ভালো থাকুক সে, এই কামনা করি।আমি আর কতটুকুই বা সুখী করতে পারতাম তাকে! আমি শেষ হয়ে গেছি।বেঁচে থাকার ইচ্ছে মরে গেছে।
হস্তমৈথুন আসক্তি  আপনার কী ক্ষতি করছে আপনি টেরও পাবেন না, কিন্তু যখন বুঝবেন আসক্তির লাগাম টেনে ধরা দরকার, তখন অনেক দেরী হয়ে যাবে । কিছু করার থাকবে না। পায়ে পড়ি আপনাদের, দয়া করে নিজেকে বাঁচান হস্তমৈথুন থেকে। নিজেই নিজেকে শেষ করে ফেলবেন না ।
চার.
হস্তমৈথুন আমার চিন্তাশক্তি কমিয়ে দিয়েছে, সৃজনশীলতার বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে । আমার স্মৃতিশক্তি একেবারেই দুর্বল হয়ে গেছে । বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ১০-১১ বছর বয়স থেকেই আমি পর্নমুভি দেখতাম ।অবশ্য হস্তমৈথুন  করা শুরু করি তার কিছুটা পরে; ১৩ বছর বয়স থেকে ।আর এখন আমার বয়স ১৭ ।
হস্তমৈথুনে আসক্ত হবার পূর্বে আমার স্মৃতিশক্তি ছিল খুবই ধারালো । স্রেফ দুই তিনবার রিডিং পড়েই বইয়ের পুরো একপৃষ্ঠা আয়ত্ত করে ফেলতে পারতাম, আর  এখন ৬-৭ লাইন মুখস্ত করতেই ঘাম ছুটে যায় । গণিত এবং বিজ্ঞানে আমার অসাধারণ দক্ষতা ছিল । একা একা পড়েই বুঝে ফেলতাম বিজ্ঞানের সব  প্যাঁচানো বিষয় গুলো , কঠিন কঠিন অঙ্কেরর সমাধান করে ফেলতাম অতি সহজেই । সেই দিনগুলো আমার কাছে এখন  স্বপ্নের মতো। ইলেভেন ক্লাসের গণিত আমার নাকের জল আর চোখের জল এক করে ছেড়েছে । কোথায় হারিয়ে গেল আমার সেই প্রতিভাগুলো ?
পাঁচ.
বন্ধুরা, আমার নাম ম্যাক্স । আমি জানি তোমরা কি পরিমাণ চিন্তিত তোমাদের নিজেদের শরীরটা নিয়ে যেটা তোমরা হস্তমৈথুন করে করে শেষ করে ফেলেছ। আমিও অবশ্য তোমাদের মতোই ক্ষতিগ্রস্থদের দলে । আমার বয়স ১৯ আর আমি গত দুই বছর ধরে হস্তমৈথুন  করছি । আমি ক্লাসের সেরা ছাত্রদের একজন ছিলাম কিন্তু বন্ধুদের খপ্পরে পড়ে হস্তমৈথুনে আসক্ত হবার পর,  পাশ মার্ক জুটাতেই হিমশিম খাচ্ছি । আমার ব্রেইনের কার্যক্ষমতা একেবারেই কমে গেছে ।  তোমরা ভুলেও হস্তমৈথুন  করবে না , এটা খুব ক্ষতিকর ।
ছয়.
আমি বাংলাদেশ থেকে বলছি । আট বছর হতে চললো আমি হস্তমৈথুনে  আসক্ত । অনেক চেষ্টা করেছি, নোংরা এই কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার, কিন্তু পারিনি । মুসলিম হিসেবে  সবসময় মনে হয়েছে অন্যদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া উচিত আমার। কিন্তু কখনো করা হয়ে ওঠেনি সেটা; নিজে তো জানি  আমি কতটা খারাপ  ।
আমি নিজের উপর ঠিকমতো ভরসা করতে পারি না,আত্মবিশ্বাস শুন্যের কোঠায় । আমি সবসময়  হীনমন্যতায় ভুগি । মানুষজনের সামনে সহজ হতে পারিনা ।
প্রথম প্রথম হস্তমৈথুনে  খুব মজা পেতাম । এখন আর পাই না । মাত্র ২০ সেকেন্ড…… তারপরেই সব শেষ ।
অনেকেই আমাকে বেশ পছন্দ করে । তাদের কাছে চমৎকার একজন মানুষ আমি ।  তারা শুধু আমার বাহিরের রূপটাই জানে;  সৎ,ভদ্র, বিশ্বস্ত ।  আমার অন্ধকার জগতটা সম্পর্কে যদি তারা জানতো !
আমি খুব শুকনা, দুর্বল আর ভুলোমনা । মাঝে মধ্যেই অসুখ-বিসুখে পড়ি । বন্ধুরা আমাকে এগুলো নিয়ে খুব করে ‘পচিয়ে’ দেয়।
সামনের দিনগুলো নিয়ে আমি  চিন্তিত । বিয়ে নিয়ে  সবসময় আমার মধ্যে একটা ভয় কাজ করে । যে আসবে সে কেমন হবে ! আমাকে কি পছন্দ করবে ! আমি কি তাকে সুখী করতে পারবো…… !
চলবে ইনশা আল্লাহ ……

 

চোরাবালি (তৃতীয় পর্ব)

আলফ্রেড কিনসে নামে কুখ্যাত এক সেক্স রিচার্‌সার ছিল আমেরিকাতে । লোকটা চল্লিশ  পঞ্চাশের দশকে এবং তার কিছু পরে সেক্স নিয়ে চরম ভুল ভাল কিছু গবেষণা করে।পাশ্চাত্যে চার্চের পতনের পর মানুষ ক্রমাগতই বস্তুবাদী হয়ে পড়ে । ইশ্বর, ধর্মের যায়গা দখল করে নেয়  বিজ্ঞান আর দর্শন । বিজ্ঞানকে নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না , বিজ্ঞান যা বলবে তা চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে হবে । তো তথাকথিত মুক্তমনা, বিজ্ঞানমনস্ক আলফ্রেড কিনসে যখন বিজ্ঞানের অপব্যবহারের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে চমৎকার কিন্তু একাডেমিক্যালি একেবারেই অগ্রহনযোগ্য সব গবেষণা পত্র নিয়ে আসল তখন সমাজকে বাধ্য করা হল এগুলো মেনে নিতে । আলফ্রেড  কিনসের গবেষণাগুলো কাজে লাগিয়ে মুনাফা লুটতে হাজির হলো কুখ্যাত এক ইরোটিক ম্যাগাজিন, Sexuality Information and Education Council of the United States (SIECUS), শয়তানী সিস্টেমের এজেন্ডা বাস্তবায়নের শক্তিশালী এক হাতিয়ার হিসেবে পেল আলফ্রেড  কিনসের গবেষণাগুলো ।

সমাজের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হল চরমভাবে বিকৃত যৌনাচারগুলো । বলা হল, মানুষ যৌনতার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এখানে ইশ্বর, সমাজ বা অভিভাবক কারো কোন হস্তক্ষেপ চলবে না । সে যা মন চায়  তা করতে পারবে । হস্তমৈথুন, এনাল সেক্স, ওরাল সেক্স, সমকামিতা,অযাচার,চাইলড সেক্স, পশুকামিতা সব কিছুকেই স্বাভাবিক করে ফেলার কার্যক্রম শুরু হল । আজকের পাশ্চাত্যের বেহায়াপনার শুরুটা শুরু হল এই ভন্ড গবেষকের হাত ধরে ।
(পরবর্তীতে ভন্ড আলফ্রেড কিনসের গবেষণা গুলো বিজ্ঞানী, চিকিৎসকদের কাছে একাডেমিক্যালি চরম মার খেয়েছিল । এগুলো নিয়ে  আমরা এক সময় খুব দীর্ঘ  আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ্‌)
এই  প্রতারক কিনসে চল্লিশ-পঞ্চাশের  দশকে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে আমেরিকার ফিজিশিয়ান এবং আমেরিকান সমাজের সমালোচনা করতে ।আমেরিকান  সমাজ সংকীর্ণমনা, মৌলবাদী প্রগতির পথে বাঁধা কারণ আমেরিকান সমাজে হস্তমৈথুন করাকে জঘন্য কাজ হিসেবে দেখা হয় । সে ফিজিশিয়ানদের  তুলোধুনো করে ছাড়ে কারণ তাঁরা স্কুল গুলোতে বাচ্চাদের শেখান হস্তমৈথুন ক্ষতিকর ।

কিনসের নিজের ভাষায় , “ফিজিশিয়ানরা মাস্টারবেশনের ক্ষতিকারতা নিয়ে  হাইস্কুলের বাচ্চাদের সামনে অনেক বকবক করে ; তারা  দাবী করে বৈজ্ঞানিক ভাবেই প্রমানিত হস্তমৈথুন নার্ভাস ডিসঅর্ডার এবং নিউরোটিক ডিসটারবেন্স এর জন্য দায়ি। কিন্তু আসলে ঘটনা একটু অন্যরকম । তাদের  এই দাবীর স্বপক্ষে বিজ্ঞানের কিছুই করার নেই । তারা যে সমাজে বড় হয়ে উঠেছে সেই সমাজের নৈতিকতা বোধই  তাদেরকে হস্তমৈথুনকে ক্ষতিকর ভাবতে প্রভাবিত করেছে”
কিনসে চরম মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জোর গলায় দাবী করে মাস্টারবেশনের কোন ক্ষতিকারতা নেই ।  তার এই মিথ্যা দাবীটাই সেক্স এডুকেশানের বই গুলোতে বার বার খুব বিশ্বাসযোগ্য ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এটাকে ধ্রুব সত্য বলে মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছে ।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ! অন্য কোন গবেষক নয়, আলফ্রেড কিনসে নিজেই নিজের থিওরিকে মিথ্যা প্রমাণিত করে একসময় । স্বেচ্ছায় নয় অবশ্য; বাধ্য হয়ে । কিনসে  ছিল চরমমাত্রায় হস্তমৈথুনে আসক্ত। সে নিজের যৌনাঙ্গের ওপর ভয়াবহ  নির্যাতন নিপীড়ন চালায়, ফলে আক্রান্ত হয়  orchitis নামের এক লজ্জাজনক রোগে । কিনসের টেস্টিকলে অসহ্য ব্যাথা হতো । এই রোগের কারণে অকালেই কিনসে রিটার্ন টিকিট ছাড়াই পাড়ি জমায় জাহান্নামে । [১]

কিনসের গবেষণাগুলো দ্বারা পাশ্চাত্য ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় আগেই বলা হয়েছ । এই গবেষণাগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেকেই দাবী করেন হস্তমৈথুন শরীরের জন্য খুব উপকারী । হস্তমৈথুন প্রোটেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, এটা আপনাকে আরো পুরুষালী করে তোলে , দীর্ঘক্ষন বিছানায় পারফর্ম করতে সাহায্য করে আরো কত কি!

আমাদের এই  ‘চোরাবালি’ সিরিজের প্রথম দুই পর্বে আমরা তুলে ধরেছি মাস্টারবেশনে আসক্ত ভাইদের জীবন নষ্ট হয়ে  যাবার গল্পগুলো । এই পর্ব সহ সামনের কয়েকটা পর্বে আমরা বিজ্ঞান এবং সামাজিক গবেষণার সাহাজ্যে মাস্টারবেশনের ক্ষতিকারতা তুলে ধরার চেষ্টা করব যদি আল্লাহ্‌ তৌফিক দেন ।

হস্তমৈথুন তৈরি করবে নানা ধরণের যৌন জটিলতাঃ
আপনার যৌনজীবনকে বিষিয়ে তোলার জন্য এই এক হস্তমৈথুনই যথেষ্ট। আর যদি এর সাথে যোগ হয় পর্নোগ্রাফি, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। পাশাপাশি হাত ধরে চলা এই দু’ ভাই আপনার জীবনকে লন্ডভন্ড করে দেবে, বুকের যমীনে সুখ স্বপ্নের যে ক্ষেত আপনি বহু যত্নে গড়ে তুলেছিলেন তা নিমিষেই পুড়িয়ে দেবে চৈত্রের খরতাপের মতোই।

অকাল বীর্যপাত বা Premature Ejaculation এর অন্যতম কারণ এই হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুন করার সময় আপনি চেষ্টা করতে থাকেন কতো তাড়াতাড়ি চুড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছানো যায়, পাওয়া যায় শীর্ষসুখ। দেরি হলে ভালো লাগে না, অসহ্য বিরক্তি এসে ভর করে। এভাবে কিছুদিন হস্তমৈথুন করার পর আপনার মস্তিষ্ক বুঝে ফেলবে খুব তাড়াতাড়ি আপনি চুড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছাতে চাচ্ছেন। সে তখন এভাবেই নিজেকে প্রোগ্রাম করে নেবে। অল্প সময়েই আপনি শীর্ষসুখ পেয়ে যাবেন। স্ত্রীর সঙ্গে স্বাভাবিক অন্তরঙ্গতার সময়েও আপনার প্রোগ্রামড ব্রেইন অল্প সময়েই আপনাকে চুড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছে দেবে। আপনার স্ত্রী থাকবেন অতৃপ্ত।

হস্তমৈথুন আপনাকে যৌন মিলনের জন্য অযোগ্য, অক্ষম বানিয়ে দেবে। মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় একে বলা হয় Erectile Dysfunction (ED)। European Federation of Sexology এর প্রেসিডেন্ট সহ আরো অনেক বিশেষজ্ঞের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে পর্নআসক্তি এবং হস্তমৈথুনের যুগলবন্দী Erectile Dysfunction এর অন্যতম কারণ।
Erectile Dysfunction এর ফলে যৌনমিলনের সময় আপনার লিঙ্গ (Penis)  উত্থিত হবেনা, যতোটুকু কাঠিন্য দরকার ততোটুকু হবে না,অথবা যতোসময় ধরে শক্ত থাকা প্রয়োজন ততো সময় ধরে ধাকবেনা। ফলশ্রুতিতে আপনি হারাবেন স্বাভাবিক যৌনমিলনের সক্ষমতা।[২,৩,৪]

হস্তমৈথুনের কারণে আপনি স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকবেন। ২০১৫ সালের একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী হস্তমৈথুন এবং পর্ন দেখার ফলে বিবাহিত পুরুষেরা, তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা তাদের কাছে একঘেয়ে লাগে। [৫]
হস্তমৈথুনের কারণে Chronic penile lymphedema নামের ঘিনঘিনে এক রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে । এই রোগে আক্রান্তদের লিঙ্গ কুৎসিত আকার ধারণ করে।  [৬]

দাম্পত্যজীবনে অশান্তিঃ
স্বাভাবিক যৌনমিলন যেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন উপহার দেয়, ধুলো কাদামাটির এ পৃথিবীর বুকে জান্নাতী সুখের এক পশলা বৃষ্টি নামায় সেখানে, হস্তমৈথুন, পায়ু সংগম (Anal Sex), ওরাল সেক্স দাম্পত্যজীবনে মিশিয়ে দেয় জাহান্নামের ফ্লেভার। হতাশা,অতৃপ্তি,অশান্তি,ঝগড়াঝাঁটির অন্যতম প্রভাবক এই বিকৃত যৌনাচারগুলো। [৭,৮,৯]

Dr. Harry Fisch, যিনি Cornel University ‘র Urrrology এবং Reproductive Medicine এর ক্লিনিকাল প্রফেসর,মাস্টারবেশনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করেন,
‘ঘন ঘন মাস্টারবেশনের কারণে একজন মানুষ ইরেকশানজনিত (পেনিস শক্ত হওয়া বা উত্থান) সমস্যায় ভুগতে শুরু করবে। মাস্টারবেশনের সাথে সাথে দেখতে থাকলে একসময় যৌনমিলনের ক্ষমতায় সে হারিয়ে ফেলবে’। [১০]

অতিরিক্ত মাস্টারবেশন ও পর্ন ব্রেইনে ডোপামিনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং আসক্তির জন্ম দিতে পারেঃ 
ডোপামিন এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা এক স্নায়ুকোষ থেকে আরেক স্নায়ুকোষ স্থানান্তরিত হয়।আমাদের ব্রেইনে এর ভূমিকা কী সেটা নিয়ে ‘মাদকের রাজ্যে’ শিরোনামের লিখাতে [১১] আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। হস্তমৈথুন করার পর আমাদের ব্রেইনে ডোপামিন নির্গত হয়, আমরা আনন্দ পাই। আরো  উদাহরণ হিসেবে বলা যায়  ড্রাগস নেওয়া,জুয়া খেলা,খাবার খাওয়া,দৈহিক মিলন ইত্যাদি ইত্যাদির কথা।আমরা যখন এইসবে মত্ত হই তখন আমাদের ব্রেইনে ডোপামিনের বন্যা বয়ে যায় এবং আমরা তৃপ্তি অনুভব করি।আর মাস্টারবেশনের ব্যাপারটা একটু স্পেশাল।মানে ধরুন একটা বাচ্চার হাতে বড়সড় ক্যাডবেরি ধরিয়ে দিলে বাচ্চার অবস্থা যেমন হয় ব্রেইনের অবস্থাও ঠিক তাই হয় যখন এর কারণে ডোপামিন নির্গত হয়।
এই কারণেই আমাদের অনেকেই এতে ড্রাগসের মতন আসক্ত।আমরা চাই বার বার সেই শিহরণ জাগানিয়া অনুভূতিটার স্বাদ পেতে। আর তাই শতোবার করলেও তা যথেষ্ট না।এভাবে ধীরে ধীরে আমাদের ব্রেইনের উপর ডোপামিনের চাঞ্চল্যকর প্রভাব আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।তাই নতুন উদ্দীপনা তৈরি হলেও আমাদের কাছে একসময় তা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।এই ক্যামিকালটা মানে ডোপামিন হল আসলে এমন এক উপাদান যে আপনাকে বলছে, যাও!মন চাচ্ছে যখন তখন একবারে ফাটায় দাও(উদ্দেশ্য হাসিল করেই ছাড়ো)।যৌন-ক্ষুধা,ঝুঁকি নেয়া,উদ্দীপনা,অনুপ্রেরণা,প্রত্যাশা ইত্যাদির সময় এমনটা ঘটে।ডোপামিনের ঘাটতির কারণে যে বিষয়গুলো নজরে আসে সেগুলো হলঃ যৌনক্ষুধা কমে যাওয়া,ঝুঁকি নেয়ার ভীতি কাজ করা,দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি,ঝাঁঝালো প্রতিক্রিয়া,মনোযোগ দেওয়াতে অক্ষমতা,সামাজিকতা,অনুপ্রেরণা ও স্বাভাবিক প্রত্যাশার অভাব ইত্যাদি।আর ডোপামিনের স্বাভাবিক সঞ্চালন এসবের বিপরীত ঘটায়।মানসিক ও শারীরিকভাবে উৎফুল্ল করে তোলে।যারা পর্নের খোলস ত্যাগ করে বেরিয়ে এসেছে তারা এই পজিটিভিটির নির্ভেজাল সাক্ষী।[১২]

মাত্রাতিরিক্ত মাস্টারবেশন ডোপামিনের কার্যকারিতা নিঃশেষ করে দেয়ঃ  
আমাদের ব্রেইনে যারা ডোপামিনের উপস্থিতি আমাদের টের পাইয়ে দেয় তাদের বলে রিসেপ্টর।যখন নেশাসক্ত হয়ে কোন কাজ বারবার করা হয় তখন এই রিসেপ্টরগুলোর কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।তখন ডোপামিনের নিঃসরণে আমাদের ব্রেইন আর আগের মত সাড়া দেয় না বা উদ্দীপ্ত হয় না।

তাই ধরেন,যে আগে অল্পকিছু দেখেই উদ্দীপ্ত হতো এবং মাস্টারবেট করে নিজেকে ঠাণ্ডা করতো,তার আর এখন ওইসব সিম্পল জিনিসপত্র দেখে পোষাবে না।সে এখন ধাবিত হবে জোরদার ক্যাটাগরির দিকে যা পর্যায়ক্রমে বর্বর হতে থাকে।কারণ সাধারণ জিনিস দেখে তার উদ্দীপনা প্রায় অনুভূতিহীন।এতে করে তার আত্মতৃপ্তি বজায় থাকে।
কয়েকজন মহিলার সাথে কথা হয়েছে যারা বলেছে তারা যাদের স্বাভাবিক পুরুষ হিসেবে জানত তাদের কেউ কেউ নাকি গে-পর্ন দেখে নিজেদের পরিতৃপ্ত করে।কেননা এখন আর অন্যকিছুই তাদের ভালো লাগে না।

সবচেয়ে ভয়ংকর ও পরিতাপের বিষয় হল এইভাবে যখন পর্ন আমাদের জীবনের সাথে শক্তভাবে গেঁথে যায় তখন এক পর্যায়ে এই রিসেপ্টরগুলোর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।তখন স্বাভাবিকটা অস্বাভাবিক আর অস্বাভাবিকটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।এজন্য কারো কারো দিনে ১০-২০ বারও মাস্টারবেট  করতে হয় শুধুমাত্র সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য।কিছু কিছু মানুষ আছে যারা এতোটাই পর্নাসক্ত যে তারা তাদের গার্লফ্রেন্ড বা স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়ে এখন আর সুখ পায় না।পর্ন দেখে মাস্টারবেট না করলে অসম্পূর্ণতা থেকে যায়।এই কারণে বেশ কিছু ডিভোর্সও হয়েছে। [১৩,১৪,১৫,১৬]

আপনি হয়ে পড়বেন উদ্যমহীন, কুঁড়েঃ
তরতাজা অনুভূতি নিয়ে দিন শুরু করলেন, নতুন সূর্য আর সকালের এক কাপ চা অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার রসদ দিল আপনাকে। যে কোন কারণেই হোক মাস্টারবেট করে ফেললেন, তারপর আপনার আর কিচ্ছু করার ইচ্ছে করবে না। ঝিমিয়ে,ঘুমিয়ে দিন পার করে দিতে ইচ্ছে করবে।
কেন এমনটা হয়?
আমরা হয়তো অনেকেই আড্রেনেলিন হরমোনের নাম শুনেছি।আড্রেনাল গ্রন্থিগুলো থেকে এর উৎপত্তি।মূলত যখন ধকল খুব বেশি যায় তখন এই হরমোন নিঃসৃত হয়।এর ফলে ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায়।আর ডোপামিন নিঃসরণের ফলেই এর নিঃসরণ শুরু হয়।অতিরিক্ত ডোপামিন বের হলে অতিরিক্ত আড্রেনেলিনও বের হয় আড্রেনাল গ্রন্থিগুলো থেকে।এর মধ্যে আবার ডোপামিন সংশ্লেষিত হয়ে তৈরি হয় নরআড্রেনেলিন যা আমাদের রক্তে হরমোন হিসেবে থাকে।এদের বাহিনীতে যোগ দেয় আরেক স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোল।এই তিনে মিলে আমাদের হার্ট রেট বাড়াতে থাকে,শক্তি সঞ্চয়কারী কোষগুলো থেকে গ্লুকোজ বের করে আনে এবং স্কেলেটাল পেশিগুলোতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে।আর এসবই আমাদের শরীরে মারাত্মক ধকল সৃষ্টি করে।
ফলস্বরূপ আমরা অনেক সময় উদ্যমহীন,ক্লান্ত বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। মাস্টারবেশনের কারণে ঠিক এ ঘটনাগুলোই ঘটে। নতুন কিছু করার আগ্রহ থাকে না।মন চায় ঘুমিয়ে বাকি সময়টুকু কাটিয়ে দিতে।ক্লাসের পড়া জমতেই থাকে, টেবিলে ফাইল স্তূপ হয়ে যায় কিন্তু কিছুই করার ইচ্ছে করে না। [১৭]

রেফারেন্সঃ
[১] http://www.drjudithreisman.com/archives/Sex_Education_as_Bullying.pdf  page 8
[২] http://www.em-consulte.com/article/1074113
[৩] http://bit.ly/2CS2Yi1
[৪]http://www.tandfonline.com/doi/abs/10.1080/14681994.2017.1365121
[৫] https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/25189834
[৬]Masturbation: Scientific Evidence and Islam’s View by Sayed Shahabuddin Hoseini, Springer Science+Business Media New York 2013; page-2
[৭]https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19453891
[৮]https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21676179
[৯]https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/17541850
[১০] https://yourbrainonporn.com/erectile-dysfunction-and-porn
[১১] http://bit.ly/2DgbZ9h
[১২] http://bit.ly/2dAkcWd
[১৩] http://slate.me/1f0SHhQ
[১৪] http://bit.ly/1pDYoqn
[১৫] http://bit.ly/2dAlSio
[১৬] http://bit.ly/2dMOZgG
[১৭] http://bit.ly/2BTKY9Z

 

চোরাবালি (চতুর্থ পর্ব)

আপনি হবেন পরাজিত  এক  মানুষঃ 
হস্তমৈথুনের পরের কিছু মুহূর্ত আমরা কিন্তু অবাক হয়ে ভাবি যে আমি আসলে এটা কি করলাম! আমার কাছে একরম একেবারে পরাজিত মনে হচ্ছে কেন? যদি আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী কিংবা একেবারেই অপরিচিত কেউও যদি জানতে পারে যে আমি এরকম পর্ন দেখি ও হস্তমৈথুন করি ,তাহলে তারা আমাকে কত খারাপই না ভাববে!
যদি কেউ আমাকে হস্তমৈথুন করার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলে তাহলে সেটা কতই না লজ্জার ব্যাপার হবে!(আমার বড় ভাই এর কাছে আমি ধরা পড়েছিলাম তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর এবং সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে লজ্জাকর ঘটনা)
হস্তমৈথুন আপনাকে আসলে একটা পরাজিত মানুষে পরিণত করবে কারণ আপনি আসলে ঐ সময়ে আপনি মনে করেন যে স্ক্রিনের লোকটার মত আপনিও একই কাজ করছেন ঐ মহিলার সাথে। কিন্তু আপনি তো আসলে তা না। প্রকৃতপক্ষে আপনি আছেন কোন মোবাইল ,ম্যাগাজিন বা ল্যাপটপের সামনে এবং একজন বিকৃত রুচির অসুস্থ  মানুষের মতো আপনার যৌনাঙ্গ নিয়ে অস্থির হয়ে নাড়াচাড়া করছেন।
এই রকম মানুষ  হওয়া উচিত  না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে আমি হস্তমৈথুন করেন এটা দেখলে বা জানতে পারলে আপনার প্রতি মেয়েদের একটা বিরক্তিভাব জন্ম নিবে।
আপনি যখন পর্ন দেখেন আপনি আসলে তখন দুই বা ততোধিক লোকের,যাদের আপনি চেনেন না, একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত দেখছেন। তাদের যদি আপনি চিনতেন তাহলে সেটা এত রোমাঞ্চকর মনে হত?
তাহলে সেটাও কি আপনার কাছে রোমাঞ্চকর লাগতো যে আপনি জানালা দিয়ে সম্পূর্ণ অচেনা কোন দম্পতির একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত দেখছেন?
আসলে পর্ন দেখা বা কারও জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে সম্পূর্ণ অচেনা কোন দম্পতির একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত দেখার মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে?
পর্ন দেখা মানে হচ্ছে এমন একটা জিনিস দেখা যা অধিকাংশ মানুষ একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করে। আমি জানি যখন আপনি পর্ন দেখেন তখন আপনার মনে এতকিছু আসে না কিন্তু আপনার আসলে আগেই এটা নিয়া ভাব উচিত ।
আপনি হয়তো আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন।
কিন্তু এটা চিন্তা করেন যে, আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে একান্তে সময় কাটাচ্ছেন এবং অন্য কেউ সেটা দেখে হস্তমৈথুন করছে ,তখন আপনার কেমন লাগবে? আমি নিশ্চিত, এতে আপনার চরম বিরক্ত, রাগ লাগবে।
আপনি হয়তো তর্ক করতে পারেন যে পর্ন ভিডিওগুলো যখন তৈরি করা হয় তখন তো তারা জানেই যে তাদের ভিডিও করা হচ্ছে । কিন্তু আপনি কেন সেই বিকৃতকামী ব্যক্তি হতে যাবেন যে অন্যদের একান্ত ব্যক্তিগত সময় দেখে?

 আপনি সবসময় অপরাধবোধে ভুগবেনঃ
প্রাথমিক পর্যায়ে, আমাদের ৯৯.৯% জানি যে হস্তমৈথুন হচ্ছে এমন একটা জিনিস যা অন্যদের সামনে করা যাবে না কারণ তারা মনে করতে পারে আপনি একজন বিকৃতকামী লোক। যারা হস্তমৈথুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তারা, তারা যেখানেই যাক না কেন সবসময় সেই চিন্তা মাথার মাঝে আসতে থাকে। তারা এটা ভেবেই অনেকটা অস্থির থাকে যে তারা যে এই ধরনের জিনিস করে সেটা পরিবারের অন্যরা, এমনকি বাচ্চাদের কাছেও ধরা পড়লেও তারা কি মনে করবে। এটা আসলে আসলে অনেকটা পাপবোধের কারাগারের মতো যা তাদের তাড়া করে বেড়ায়। এটা তাদের মনে অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করে। আসলে অনিয়ন্ত্রিত হস্তমৈথুন তাদের জীবন করে তোলে দুর্বিষহ।
এক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা দেখা যাক,
“আমি আসলে কীভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। আমি দিনে দুইবার করে হস্তমৈথুন করি। কিন্তু তা করার পরে আমার তা নিয়ে প্রচণ্ড অপরাধবোধ হয় এবং তা আমাকে পরের প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘিরে রাখে। মাঝে মাঝে তা আমার পুরো দিনটাই মাটি করে দেয়। হস্তমৈথুন নিয়ে আমি যা পড়েছি তাতে মনে হয়েছে যে এটা ছেলেদের জন্য সাধারণ একটা ব্যাপার , কিন্তু আমি এই লজ্জা ও অপরাধবোধের অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে পারি না। আমি অনুভব করি যে আমার আরও ইচ্ছাশক্তির ব্যবহার করা উচিত হস্তমৈথুন বাদ দিতে কিন্তু পরে বুঝতে পারি যে আমি আসলে এটা পছন্দ করি আর তা বাদ দিতে চাই না। আমার তো মনে হয় যে আমি তো কাউকে আঘাত করছি না, তাহলে কেন তা বাদ দিবো? আমার কি কোন সমস্যা আছে? না হলে যেটাকে স্বাভাবিক বলে মনে করি তাতে আমার এই অপরাধবোধ হয় কেন?”
এখানে শুধু একজনের কথা লেখা হয়েছে কিন্তু এরকম আরও হাজার হাজার লোক আছে। [১]

আপনি হয়ে যাবেন অসামাজিকঃ
হস্তমৈথুন  করে করে ডোপামিনের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেললে মন চাইবে সবসময় অন্ধকার ঘরের কোনায় বসে পর্ন দেখে দেখে হস্তমৈথুন  করতে।বন্ধুদের সংগে দেখা করা, আড্ডা দেওয়া, দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়া এইগুলো অবধারিতভাবেই বিরক্তিকর লাগবে। পর্ন দেখা বা হস্তমৈথুন  করার উত্তেজনার কাছে মামার বাসায় বেড়াতে যাওয়ার উত্তেজনা নিছকই দুধভাত।
হস্তমৈথুনের কারণে আসলে আমরা জীবনকে ভালোমতো উপভোগ করার সুযোগটাই হারিয়ে ফেলছি।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি যখন আমি হস্তমৈথুন বাদ দিয়ে দিলাম , আমার একজন সামাজিক মানুষে পরিণত হয়ে গেলাম। আমি আবার আমার বন্ধুদের সাথে মজা করছি , গল্প করছি ,বেড়াতে যাচ্ছি। আমি মনে মনে ভাবতাম “জীবনটা তো আসলেই অনেক মজার।” যখন আমি  হস্তমৈথুনে আসক্ত ছিলাম ,আমার কখনই এই ধরনের অনুভূতি হতো না । আমার কোন উৎসাহই থাকতো না এসবের জন্য ।

জীবনের ছোট ছোট ব্যাপারগুলো থেকে আমি আপনি কম আনন্দ পাবেনঃ
হস্তমৈথুন  করে যদি আপনি ডোপামিন নিঃসরণকারী স্নায়ুগুলোকে দুর্বল বা একেবারে ধ্বংসই করে ফেলেন এবং আপনার মস্তিষ্ক ডোপামিনের স্বাভাবিক মাত্রা নির্ধারণ করতে না পারে ,তাহলে আপনি নিত্যদিনের সেই সব ছোট ছোট বিষয় থেকে  পুরোপুরি মজা পাবেন না যেসব বিষয়  থেকে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ মজা পেয়ে থাকেন। যেমন ধরুন, ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানো, ক্রিকেট খেলা, বৃষ্টিতে ভেজা, চাঁদনী পসর রাতে জ্যোৎস্না স্নান করা…  এই  কাজগুলো  আপনার  কাছে মনে হবে  একেবারেই বিরক্তিকর, অপ্রয়োজনীয়,আদিখ্যেতা।


রেফারেন্সঃ
[১] http://bit.ly/2hidby1

চোরাবালি (পঞ্চম পর্ব)

অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে যেতে পারেঃ 
প্রথমে আমাদের জানতে হবে যে টেস্টোস্টেরন [১] আসলে কি? এটার গুরুত্বটাই বা আসলে কি ? টেস্টোস্টেরন আসলে একটা গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা পুরুষ হিসেবে আমাদের অতি দরকারী।
টেস্টোস্টেরন যেমন পুরুষের শরীরে প্রজননতন্ত্রের টিস্যু যেমন টেস্টিস , প্রোস্টেট গঠনে ভুমিকা রাখে তেমনি পেশী বৃদ্ধিতে, হাড়ের গঠনে, চুলের বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে । এটা অস্টিওপরোসিস নামক রোগের প্রতিরোধেও কাজ করে।
অর্থাৎ এটা আমাদের স্বাস্থ্য গঠনের পাশাপাশি যৌন কার্যাবলীতেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে । এখন এটা নিয়ে আপনি বিতর্ক করতে পারেন যে হস্তমৈথুন করলে যদি টেস্টোস্টেরন কমে যায়, তাহলে তো স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়াতেও তা কমে যাবে?
তাহলে কি মানুষ স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়াও বাদ দিয়ে থাকবে?

আসলে হস্তমৈথুন আর স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়ার মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য। এটা শুধু মুখের কথা না ,এটা বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত। হস্তমৈথুন আর স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়ার সময় আমাদের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়। স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়ার পরে একজন পুরুষ কখনই নিঃস্ব,রিক্ত অনুভূতি নিয়ে তার পরের কয়েকটা দিন
পার করে না কারণ তখন টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। [২]
এবার একটা লেখা পড়া যাক। Real Natural Men ব্লগের একটা আর্টিকেল –
“টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বৃদ্ধির নানা কারণ আছে ,তবে তারমধ্যে সবচেয়ে প্রধান হচ্ছে স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়া।
এটা তাহলে একটা মজার ব্যাপার, তাই না? উদাহরণ হিসেবে একটা ঘটনা জানা যাক।
১৯৯২ সালে একটা পরীক্ষা করা হয়েছিল । এটা চালানো হয়েছিল ৪টি দম্পতির উপর ।
আসলে এটা জানার ছিল যে তাদের দাম্পত্যকালিন স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়ার দিন এবং তাদের মাঝে যেদিন কোনরূপ যৌন ক্রিয়া হয় না , এই দুই ধরনের দিনে তাদের টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কি অবস্থায় থাকে। দেখা যায় যে , যে রাতে তারা স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়া করেছে , তারপর তাদের টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে যে রাতে তাদের মাঝে কোন রূপ যৌন ক্রিয়া হয় নি, তারপর তাদের টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় নি।

২০০৩ সালে, হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকা ও টেস্টোস্টেরনের পরিমাণের উপর এর প্রভাব নিয়ে পুরুষদের উপর একটা পরীক্ষা চালানো হয়। সেটার ফলাফলে দেখা যায় যে, হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকার প্রথম ১ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায় । কিন্তু এরপর আরেকটা বড় ‘কিন্তু’ আছে । ৬ষ্ঠ আর ৭ম দিনে এই বৃদ্ধির হয়ে যায় ১৪৭%!!!! এই ৭ দিনের পরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ তার স্বাভাবিক পর্যায়ে যায়।”[৩]
এখন দেখা যাক  কেন আমাদের টেস্টোস্টেরন দরকারঃ
  • ·         এনার্জি
  • ·         স্মৃতিশক্তি
  • ·         মনোযোগ
  • ·         আত্মমর্যাদাবোধ
  • ·         আত্মনিয়ন্ত্রণ
  • ·         সুগঠিত পেশি
  • ·         দৈহিক শক্তি
  • ·         কাজ করার সক্ষমতা
  • ·         গলার স্বরের গম্ভীরতা
  • ·         মানসিক প্রশান্তি
  • ·         পুরুষের মত আচরণ
  • ·         প্রভাবশালী আচরণ
  • ·         লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন
  • ·         হাড়ের স্বাভাবিক গঠনে
  • ·         যৌন ক্রিয়ার জন্য পর্যাপ্ত আমিষ সরবরাহ করা
  • ·         দীর্ঘস্থায়ী যৌন ক্রিয়াতে
  • ·         স্বাস্থ্যকর মেটাবলিজম উৎপাদনে
  • ·         লিভারের কার্যাবলীতে
  • ·         সুগঠিত প্রস্টেট গ্রন্থি গঠনে
এথেকে আমরা বুঝতে পারছি যে টেস্টোস্টেরন আমাদের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটাকেই আমারা হস্তমৈথুনের মাধ্যমে নষ্ট করে দিচ্ছি। এই ব্যাপারটা কি আমরা কখনও একটু মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করি? [৪,৫,৬]

আচ্ছা যদি টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে যায় তাহলে কী হতে পারে?
  • ·         ক্লান্তিভাব
  • ·         বিষণ্ণতা
  • ·         দুর্বল স্মৃতি শক্তি
  • ·         মনোযোগ কমে যাওয়া
  • ·         অতিরিক্ত অস্থিরতা
  • ·         কম শারীরিক সক্ষমতা
  • ·         আত্মনিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া
  • ·         পুরুষালি আচরণ কমে যাওয়া
  • ·         আচরণে মিনমিনে ভাব আসা
  • ·         স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়াতে আগ্রহ না থাকা
  • ·         দ্রুত বীর্যপাত
  • ·         দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
  • ·         মেরুদণ্ডে ব্যথা
  • ·         পেশী সুগঠিত না হওয়া
  • ·         শরীরে চর্বি হয়ে যাওয়া
  • ·         হাড় ক্ষয়ে যাওয়া
  • ·         চুল পড়ে যাওয়া [৭,৮,৯]
ক্রমাগত হস্তমৈথুন করে যাওয়ার ফলে আপনার আচরণ হয়ে পড়তে পারে অপরিণতদের মতঃ
অপরিণত আচরণ বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? আসলে যাদের আচরণে অতিরিক্ত অস্থিরতা, কম আত্মনিয়ন্ত্রণ , অধৈর্য, কম মনোযোগ এগুলো ফুটে ওঠে, তাদের আচরণই মূলত বলা হয় অপরিণত আচরণ। এগুলো আসলে করবে বাচ্চারা। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির আচরণে অবশ্যই এসব জিনিস থাকবে না।
আচ্ছা আমরা তো একটু আগেই আলোচনা করলাম টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলাফল নিয়ে। সেটা আর অপরিণত আচরণ তো আসলে দেখা যাচ্ছে তাহলে একই জিনিস।
আর আমার নিজের মতামত জানতে চাইলে বলবো যে যখন আমি হস্তমৈথুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি, আমার আচরণ আগের থেকে অনেক পরিণত হয়ে যায় যা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সাথে মানানসই। আমি নিজেই এখন বুঝতে পারি যে আমি অনেক ভালো ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, আমি আগের থেকেও আরও বেশি ধৈর্যশীল, আত্মনিয়ন্ত্রণশীল, অধিক মনযোগী, আগের থেকে শান্ত হয়ে বসে থাকতে পারি এবং আগের থেকে বেশি মনেও রাখতে পারি। এখন আমার নিজেরই লজ্জা হয় যে আগে আমি এমন আচরণ কীভাবে করতাম!!

অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের কারণে আপনার ভিতর থেকে পুরুষালি ও প্রভাবশালী আচরণ কমিয়ে দেবেঃ
মানব সভ্যতার শুরুতে মানুষ ছোট ছোট দলে বাস করত, আধুনিক সমাজের মত সুযোগ সুবিধা সেখানে ছিলনা। সেই সমাজ ব্যবস্থাতেও একটা জিনিস বিদ্যমান ছিল।সাধারণত দলের সবচেয়ে শক্তিশালী, প্রভাবশালী সদস্য,দলনেতা সঙ্গিনী হিসেবে পেত দলের সবচেয়ে
ভালো মেয়েকে। আর এটা সে তার নিজের ইচ্ছামত করতে পারতো। অপেক্ষাকৃত দুর্বল , কম প্রভাবশালী বা সাধারণ পুরুষ রা তার তাদের সঙ্গিনী পেত তার পরে। মূলত দলনেতা যেসব মেয়েকে তার সঙ্গিনী হিসেবে নিত না তারাই এসব পুরুষদের কপালে জুটত।
এখনকার আধুনিক সমাজের সাথে আদিম সমাজের অনেক পার্থক্য থাকলেও এই ধারাটা কিন্তু এখনও
আছে । আমরা আমাদের স্কুল, কলেজ , বন্ধুদের মাঝে বা আমাদের কর্মক্ষেত্রের দিকে তাকালেই এর প্রমাণ পাবো।
তাহলে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে একজন পুরুষের জীবনে তার পুরুষালি আচরণ , সুন্দর ব্যক্তিত্বের গুরুত্ব ঠিক কতটা । আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে টেস্টোস্টেরন।
একজন সত্যিকারের পুরুষ হবে প্রবল আত্মবিশ্বাসী, তার কথাবার্তা ,আচার আচরনণেই তার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে। তার আচরণের মাখে কোন মিনমিন করা স্বভাব থাকবে না । আর এই জাতীয় পুরুষের প্রতি সবাই সহজেই আকৃষ্ট হয় ।
আর এই ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকতে হলে টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা আগেই
আলোচনা করেছি । আসলে আমরা যখন হস্তমৈথুন করে করে আমাদের টেস্টোস্টেরন নিঃশেষ করতে থাকি , আমরা তখন বাইরে একটা পুরুষের খোলসের মাঝি আবদ্ধ থাকি। আমাদের ভেতরটা হয়ে যায় – দুর্বল, ভীতু স্বভাবের।
এর থেকে মুক্তির উপায় তো আপনার হাতেই। হস্তমৈথুন বাদ দিয়ে দিন । একমাত্র সমাধান তো এটাই।
আমি যখন হস্তমৈথুন বাদ দিয়ে দেই, সে সপ্তাহ থেকেই আমি নিজের নিজের ভিতরে আমূল পরিবর্তন বুঝতে পারি। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আমি আগের থেকে আরও বড় , শক্তিশালী হয়ে গেছি। আমি বুক ভরে শান্তিতে শ্বাস নিতে পারছি কাজ বিপদ বা কঠিন হয়েছে তো কি হয়েছে, আমি ভয় পাই না তাতে। আমার প্রতি অন্যদের ধারনাও পাল্টাতে শুরু করলো। আর আমার নিজের মাঝে থাকা এই নতুন ‘আমি’ টাকে আমি এতদিন জানতামই না!!!!!
(বি.দ্র. এখানে মূল লেখকের কথা বলা হয়েছে)
আবার ভয় পাই না মানে এটা না যে আমি ইচ্ছা করে মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছি বা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছি। আমি নিজের প্রতি এখন আত্মবিশ্বাসী যে ঝামেলা দেখলে তা থেকে পালিয়ে যাবো না। আমি মনে করি, সবাই ছেলে হিসেবে জন্মালেও প্রকৃত পুরুষ সবাই হয়ে উঠতে পারে না । হস্তমৈথুনের ফলে আমরা নিজেরাও জানি না যে আমরা কি অপার সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করছি!
আচ্ছা আপনি কাদেরকে আসল পুরুষ বলে মনে করেন ? মেসি রোনালদো নেইমার বা সাকিব আল হাসান কে , তাইতো ? এরাই আপনার আদর্শ, আপনার তথাকথিত স্বপ্নের পুরুষ !
এখন সত্যি করে বলুন তো আপনার কি মনে হয় এরা সারাদিন বাসায় বসে থেকে হস্তমৈথুন করে? আপনি মনে করেন যে এরা সারাদিন দরজা বন্ধ করে বসে থেকে চুপচাপ শুধু পর্নদেখে?[১০,১১,১২]

অতিরিক্ত হস্তমৈথুন প্রায়ই জন্ম দেয় অতিরিক্ত অস্থিরতাঃ
হস্তমৈথুনের অস্থিরতার জন্ম দেয়। আর এটার সবচেয়ে বড় প্রমাণ আমি নিজেই। আমি প্রায়ই অস্থির , অধৈর্য হয়ে থাকতাম সব ব্যাপারে। কিন্তু আমি এর কারণ খুঁজে পেতাম না।
হস্তমৈথুন বাদ দেয়ার সাথে সাথে আমার ভিতরে নানা পরিবর্তন আসতে থাকে। আমার আচরণ সংযমী হতে থাকে। অস্থিরতা, অধৈর্য এই ব্যাপারগুলো আমার মাঝে হারিয়ে যেতে থাকে। এটা আমার জন্য আসলেই অনেক বড় শান্তির ছিল। আমি সব সময় আর অস্থির হয়ে থাকি না এটা চিন্তা করে যে ,অন্যরা আমাকে নিয়ে কি ভাবছে।
আমার এই পরিবর্তনের কারণ নিশ্চয়ই আপনারা এখন বুঝতে পারছেন । আসলে হস্তমৈথুনের সাথে সাথে আমাদের শরীর থেকে বিপুল পরিমাণ টেস্টোস্টেরন বের হয়ে যায়। আর অতিরিক্ত অস্থিরতাও আসে মূলত এটার জন্যই।
আসলে এটা সিগারেট খাওয়ার মতোই ব্যাপার । মানুষ ধূমপান করে মনের অস্থিরতা, দুঃচিন্তা দূর করতে কিন্তু হয় আসলে তার উল্টাটা। ধূমপানের কারণে মানুষের মনের অস্থিরতা, দুঃচিন্তা আরও বেড়ে যায়।হস্তমৈথুনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক তাই।[১৩]

হস্তমৈথুন মানুষের বিষণ্ণতা বাড়ায়ঃ
একজন যখন হস্তমৈথুন করে ,তখন সে তার ডোপামিন নিঃসরণকারী গ্রন্থিগুলোকে নষ্ট করে ফেলতে থাকে। ডোপামিনের গুরুত্ব নিয়ে আগেই আলোচনা করা হয়েছে। তারপরে আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি মানুষের আনন্দের অনুভূতি আসে মূলত ডোপামিন থেকেই। আর কেউ যখন তার ডোপামিন ব্যয় করে এই হস্তমৈথুন থেকে পাওয়া অল্প আনন্দের পিছনে , তার তখন আর হস্তমৈথুন ছাড়া কিছুই হতাশা, উৎকণ্ঠা, কর্মক্ষেত্রের মেন্টাল স্ট্রেস থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য অনেকেই হস্তমৈথুন করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে হতাশা, উৎকণ্ঠা, মেন্টাল স্ট্রেস আবারো ফিরে আসে শতগুন শক্তিশালী হয়ে।ভালো লাগে না।[১৪]
এই বিকৃত রুচির কাজের ফলাফলটা কী কেউ চিন্তা করি?
এই বিকৃত রুচির জঘন্য কাজের মাধ্যমে মানুষ যখন আসক্ত হয়ে পড়ে, তখন আর তার স্বাভাবিক কোন কিছুই ভালো লাগে না। সে আর জীবনে অন্য কোন কিছুই উপভোগ করতে পারে না। সে সবসময় একটা বিষণ্ণতায় ভোগে। কিন্তু সে যখন হস্তমৈথুন বাদ দিয়ে দেয় ,তার ডোপামিন নিঃসরণকারী গ্রন্থিগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসতে থাকে। আর ডোপামিনের পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসলে, তার জীবন থেকে বিষণ্ণতাও দূর হতে থাকে।
সে আক্ষরিক অর্থেই তার জীবনকে উপভোগ করতে শুরু করে। এটাই তো হওয়া উচিত আসলে। সে আনন্দ খুঁজে পেতে থাকে চারপাশের ছোটখাট ব্যাপারগুলো থেকেই।

 

চোরাবালি (ষষ্ঠ পর্ব)

অতিরিক্ত হস্তমৈথুন আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল, ভীতু আর লজ্জিত করে রাখবেঃ
হস্তমৈথুনের কারণে আপনার কি কি মানসিক সমস্যা হবে সেটা আগেই আলোচনা করা হয়েছে (পড়ুন আগের পর্বগুলো)। আপনি সবসময় অস্থিরতা বোধ করবেন, একটা পাপবোধে নিমজ্জিত থাকবেন ভাবে থাকবেন। আপনি চাইলেও স্বাভাবিক হতে পারবেন না। কারণ হস্তমৈথুন আপনাকে ভিতর থেকে শেষ করে ফেলছে। গ্রাস করে ফেলছে আপনার আবেগ-অনুভূতিগুলো।
সত্যি কথা বলতে আমি নিজেও এরকম অবস্থার মাঝে গিয়েছি। আমি অনেক চেষ্টা করেছি স্বাভাবিক থাকতে কিন্তু ভিতর থেকে কোন ইচ্ছা জাগতো না, কোন জোর পেতামনা। কিন্তু যখন হস্তমৈথুন বাদ দিলাম ,অনেক ক্ষেত্রেই আমার ভিতরে পরিবর্তন আসতে শুরু করলো। আমি স্বাভাবিকভাবেই মানুষজনের সঙ্গে কথা বলতে পারি এখন। এজন্য কোন জড়তা বা ভীতি এগুলো কাজ করে না।
(বি.দ্র. এখানে মূল লেখকের কথা বলা হয়েছে)

ক্রমাগত হস্তমৈথুন আপনার আত্মনিয়ন্ত্রণ কমিয়ে দেবেঃ
সত্যি কথা বলতে কথা বলতে ক্রমাগত হস্তমৈথুন আপনার আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ দিনদিন কমিয়ে দিবে। কেন কিভাবে কমাবে তা নিয়ে আগেই আলোচনা করা হয়েছে। এখন দেখা যাক এগুলোর ফলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
মেয়েরা কিন্তু তাদের জীবনসঙ্গী হিসেবে পুরুষালি স্বভাবের ছেলেদেরই বেশি প্রাধান্য দেয়। আত্মনিয়ন্ত্রণহীন বা অনেকটা লুতুপুতু স্বভাবের ছেলেদের কিছু সময়ের জন্য ভালো লাগলেও বা কাছাকাছি থাকলেও কখনই এদের মতো কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চায় না।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা আসলেই একটি বড় যোগ্যতা। আপনি আপনার মনের আবেগে ভেসে হারিয়ে যাচ্ছেন না ,এই যোগ্যতাকে কখনই ছোট করে দেখার উপায় নেই। আত্মনিয়ন্ত্রণ শুধু আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো না, আমাদের ব্যক্তিত্বও গড়ে উঠে এর উপর ভিত্তি করে।
আর হস্তমৈথুনের ফলে আপনার এই আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাটাই শেষ হতে থাকে। আপনার মন হতে থাকে অস্থিরতায় ভরপুর। অল্পতেই নিয়ন্ত্রণ হারান নিজের প্রতি আবেগ তাড়িত হয়ে। হতাশা , কাজে অনীহা এই সব কিছুই আসলে এটার ফল।
অথচ আপনি শুধু হস্তমৈথুন করা থেকেই বিরত থেকে দেখুন ,আপনার জীবন থেকে এই সব হতাশা ,অস্থিরতা দূর হয়ে যাবে।
আগে যেসব ব্যাপারে আপনি অল্পতেই অতিরিক্ত আবেগ তাড়িত হয়ে পড়তেন, উত্তেজিত হয়ে পড়তেন , সেগুলো আপনি এখন  আর গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভাববেনই না। এবং নিজেই এখন বুঝতে পারবেন যে আপনি কতটা বোকাই না ছিলেন!

হস্তমৈথুনের ফলে আপনি শারীরিকভাবে অনেক নমনীয়, ভঙ্গুর হয়ে পড়বেনঃ
আমাদের শরীর হচ্ছে আমাদের মনের আয়নাস্বরূপ। আপনি আপনার মনের ভিতরকার অবস্থা বেশি দিন চাপা দিয়ে রাখতে পারবেন না । আপনার কথাবার্তা,কাজকর্ম,অভিব্যক্তির মাধ্যমেই এগুলো ফুটে ওঠে।
আর হস্তমৈথুনের কারণে আপনার মনের ভিতরে ক্রমাগত অস্থিরতা আপনি লুকিয়ে রাখবেন যেখানে আপনি আপনার মনের জোরটাই ধ্বংস করে ফেলছেন? এটা আপনি পারবেনও না। আপনার সাথে কেউ কথা বললেই তা বুঝতে পারবে যে আপনার মনের ভিতরে অস্থিরতা কাজ করছে।
আর মানসিকভাবে দুর্বল হবার কারণে আপনার আচরণও হবে সেরকমই- ভীত, অবসাদগ্রস্ত, কোন কিছু ভালো না লাগা।
আপনি ভাবেন যে আপনি তো আপনার অস্থিরতার কথা কাউকে বলছেন না, আপনার নিজের মাঝেই তা রেখেছেন কিন্তু আপনার আচরণ তা ঠিকই প্রকাশ করে দিচ্ছে।
আপনি এই অবস্থা থেকে মুক্তি চান? আপনি চান আপনার আচরণ আরও দৃঢ় প্রত্যয়ী হোক? প্রথমে তাহলে আপনার হস্তমৈথুনের অভ্যাস বাদ দিন। তারপর দেখুন কি হয়।

হস্তমৈথুন আপনার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দেয়ঃ
মাস্টারবেশনের ঠিক পরের অবস্থাটার কথা চিন্তা করুন, আপনি হস্তমৈথুন  করে ঠান্ডা হয়ে শুয়ে পড়লেন বিছানায়, বদ্ধ ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে বাতাসে  দলবেঁধে ভেসে বেড়াতে লাগলো জীবনের সেই সব  প্রশ্নগুলো যার উত্তর আপনি এখনো পাননি, একে একে আসতে শুরু করল জীবনের হিসেব না মেলা সব ঘটনাগুলো। মন খারাপ হওয়া শুরু হল আপনার।‘ধুর! শালা! আমার জীবনটা তো পুরোপুরিই নষ্ট হয়ে গেল, আমি একটা ফেলটুস, আমি একটা গান্ডু, আমি কিচ্ছু করতে পারি না, আমার দ্বারা কিসসু হবে না’
বড় হতে হলে,সফল হতে হলে আত্মবিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ফ্যাক্টর। হস্তমৈথুন   আপনার নিজের ওপর বিশ্বাসটাকে একেবারেই গুঁড়িয়ে দেয়। এক-দুই মাস হস্তমৈথুন  থেকে দূরে থাকুন। দেখবেন আপনার ভেতর আত্মবিশ্বাস টইটম্বুর হয়ে আছে।
অতিরক্ত হস্তমৈথুন আপনার মনোযোগ কমিয়ে দেয়ঃ
২০০১ সালের একটা গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, হস্তমৈথুন করার ৩০ মিনিটের মাঝে
Noradrenaline (Norepinephrine)এর পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে।
এর ফলে কি হবে?
কারণ Noradrenaline [১] এমন একটা হরমোন যা আপনার কোন জিনিসের প্রতি অখণ্ড মনোযোগ ধরে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আর সেই জিনিটাই আপনি হস্তমৈথুন করে কমিয়ে ফেলছেন , আপনার মনোযোগ তাহলে থাকবে কীভাবে!!!!!!
এছাড়া আপনি তো হস্তমৈথুন করে আপনার Dopamine,Testosteroneএগুলোরও তো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসতে সময়ের দরকার হয়ে পড়ে।
একটা বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, হস্তমৈথুনের পরবর্তী এই অবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে অন্তত ২ সপ্তাহ সময় লাগে[২]
চিন্তা করে দেখুন, হস্তমৈথুন  করার দিনটাতে আপনি ক্লাসে, পড়ার টেবিলে বা অন্য কোন কাজে   কি মনযোগ দিতে পারেন, না সবসময় মাথার মধ্যে লাগামছাড়া চিন্তা ভাবনা ঘোরাফেরা করে?
চলবে ইনশা আল্লাহ …
(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত)
মূল লিখাটিঃ https://goo.gl/JBz2YM
রেফারেন্সঃ
[১] https://goo.gl/sHwjQ7
[২] https://goo.gl/cZSbbu

 

চোরাবালি (সপ্তম পর্ব)

হস্তমৈথুন  আপনাকে ‘চান্দু’ বানাবে:  
চুল পড়া নিয়ে ছেলেরা যে পরিমাণ টেনশান করে মেয়েরা তার এককানাকড়িও করে না বোধহয় । আমাদের সমাজের এখন যে অবস্থা তাতে মাথায় চুল কম ছেলেদের বিয়ে হতে বেশ ভালো পরিমাণ সমস্যা হয় । হাই স্যালারির জব, ঢাকায় এপার্টমেন্ট, গাড়ী সব ঠিক ঠাক থাকার পরেও মাথায় চুল কম থাকার কারণে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে এরকম খবর মাঝে মাঝেই শোনা যায় । তো চুল পড়ার অনেক গুলো কারণ রয়েছে । সেই কারণগুলোর মধ্যে যে কারণটা নিয়ে আমরা আজকে গ্যাঁজাবো সেটা হচ্ছে মাস্টারবেশন

New York Times Health এর ভাষ্যমতে মানবদেহের হরমোনের পরিবর্তন চুল পড়ার অন্যতম কারণ । এবং দুঃখজনক ভাবে মাস্টারবেশনের মাধ্যমে খুব দ্রুত এবং ব্যাপক আকারে মানবদেহের হরমোন লেভেল পরিবর্তিত হয় যখন আপনি মাস্টারবেট করতে থাকবেন তখন আপনার দেহে খুবই দরকারী কিছু নিউরোকেমিক্যালস যেমন Testosterone, DHEA , HGH এগুলোর মাত্রা কমে যেতে থাকবে । আপনার দেহে কিছু ক্ষতিকর হরমোণ যেমন Prolactin, Cortisol এবং Dihydrotestosterone (DHT) খুব বেশী মাত্রায় তৈরি হবে । এর ব্যাটা Dihydrotestosterone (DHT) আপনার চুল পড়ার জন্য দায়ী ।

American Hair Loss Association এর তথ্য অনুসারে, DHT Hair follicles এ আক্রমণ চালিয়ে এর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করবে , Hair roots এর প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের কাজে বাগড়া দিবে , Sebaceious gland কে স্টিমুলেট করে মাথার ত্বককে তৈলাক্ত করে তুলবে ।পরিনতিতে চুল ঝরে যাবে । [১,২,৩,৪]

 হস্তমৈথুনের কারণে নিজেকে অকর্মণ্য মনে হবেঃ
প্রথমে কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলা যাক। ব্যক্তিগত জীবনে আমি একজন কর্মব্যস্ত মানুষ। প্রতিদিন আমাকে নানা ধরনে কাজ করতে হয়। কিন্তু আমি যখন হস্তমৈথুনে আসক্ত ছিলাম , আমি সারা দিনে খুব কম কাজই ঠিকভাবে করতে পেরেছি।

আসলে হস্তমৈথুনের ফলে আমার স্বাভাবিক হতে কয়েকদিন লেগে যেত।
আমি অফিসে যেতাম । আমার সামনে কাজ জমে থাকতো। ভাবতাম কাজ শুরু করি। আবার পরক্ষণেই ভাবতাম, ধুর! যা হয় হবে, এখন কিছু করতে পারবো না।
তারপর আবার অপরাধবোধ কাজ করত কিন্তু কাজ শুরু করার জন্য মানসিক জোর , ইচ্ছা কিছুই পেতাম না।
এভাবে শুধু পিছিয়েই যেতাম।
আসলে অফিস তো অনেক পরের কথা , আমি  বাড়ির সাধারণ কাজ যেমন থালাবাসন ধোয়া, কাপড় ধোয়া , বাজার করা, বারিঘর পরিষ্কার করা – এগুলোও ঠিকমত করতাম না।
হস্তমৈথুন বাদ দেয়ার পর থেকে আমি নিজের মনের ভিতর থেকেই অন্য রকম একটা উৎসাহ পাওয়া শুরু করলাম। কাজকে আগের মতো আর বিরক্ত লাগতো না । আগে যেখানে কাজের পাহাড় জমে থাকতো ,সেখানে নিয়মিত কাজ করার কারণে আমার এরকম কোন আর চাপই থাকতো না ।[৫]

হস্তমৈথুন আপনার আত্মমর্যাদাবোধ কমিয়ে দিবেঃ
আমরা আমাদের লেখার মূলত হস্তমৈথুনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছি। হস্তমৈথুনের কারণে কি কি হয় মূলত? – আপনার নিজের আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না, কাজে আগ্রহ জাগে না, অস্থিরতায় ভোগেন, স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের প্রতি থাকে না , আত্মপ্রত্যয় থাকে না। তো এত কিছুর পরেও আশা করেন যে আপনার কোন আত্মমর্যাদাবোধ বলে কিছু থাকবে?

হস্তমৈথুনের কারণে কোন নারীকেই আপনি সম্মানের চোখে দেখতে পারবেন নাঃ
যদি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি , তাহলে এক কথায় বলতে হয় যে , পর্নোগ্রাফিতে নারীদের দেখে ভাবতাম যে বাস্তবিক অর্থে তারা মনে হয় আসলেই এরকম। কোন নারীকে দেখলেই আমার এই  চিন্তাধারার সাথে মিলাতে চেষ্টা করতাম।

আসলে পর্নোগ্রাফি আর হস্তমৈথুনের কারণে কি হয় শেষ পর্যন্ত-
১) আপনি মূলত পর্নোগ্রাফি কেন্দ্রিক একটি কল্পনার জগতে বাস করবেন ।
২) পর্নোগ্রাফিতে মেয়েরা যেরকম করে, আপনার মনে হবে আসলেই মেয়েরা সেরকম । অথচ আপনি এটা বুঝতে পারবেন না যে পর্নোগ্রাফিতে যারা থাকে আসলে টাকার বিনিমিয়ে এরকম করে।
৩) আপনি ভাববেন যে পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করা পুরুষরাই ‘ আসল পুরুষ’ আর সেরকম হতে না পারলে আপনার কোন দাম নেই।
৪) আপনি মেয়েদেরকে একটা যৌনাবেদনময়ী বস্তু ছাড়া কিছুই ভাববেন না। এমন কি আপনার নিজের পরিবারের মেয়েদের নিয়েও এই ধরনের চিন্তা করতে আটকাবে না আপনার।
৫) সত্যিকার অর্থে আপনি নারীদেরকে একজন মানুষ হিসেবেই ভাববেন না।
চিন্তা করুন তো আপনি নিজেও তো একদিন বাবা হবেন। যাকে আপনি পর্নোগ্রাফিতে দেখছেন সে আপনার মেয়ে হলে আপনার কেমন লাগতো?

হস্তমৈথুনের কারণে আপনি স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকবেনঃ
পর্নভিডিও দেখলে আপনার মানসিক বিকাশ , চিন্তাধারা সবই সেটা কেন্দ্রিক হবে। আপনি যখন কোন নারীকে দেখবেন , তখন আপনার মনের মাঝে সেই পর্নভিডিও গুলোতে যা দেখেন ,সেটাই মনে হতে থাকবে।  আর একটা পর্নভিডিও তে যা দেখানো হয় সেটা কিন্তু স্বাভাবিক কিছু না।
একজন মানুষের মনে স্বাভাবিক ভাবেই যৌন কার্যাবলী সম্পর্কিত চিন্তা আসতে পারে। এটা খারাপ কিছু না । কিন্তু আপনি সারাদিন শুধু এসব চিন্তাই করবেন সেটা অবশ্যই দোষের। আর এই চিন্তাধারার সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে , হস্তমৈথুন।আসলে এটা আপনার জন্য সহজলভ্য একটা উপায় হয়ে দাঁড়ায়। আর এর ফলে আপনি স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়া থেকে আগ্রহ হারাতে থাকবেন । হস্তমৈথুনকেই কাঙ্ক্ষিত জিনিস মনে হবে।

সুগঠিত মাংসপেশির জন্য হস্তমৈথুন বাদ দিনঃ
আপনি কোন শরীরচর্চাবিদকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন , নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি হস্তমৈথুন করা থেকেও তাদের বিরত থাকতে বলা হয়।টেস্টোস্টেরন  হরমোন সুগঠিত মাংসপেশির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই হরমোন যদি  আপনি মাস্টারবেট করে  ক্রমশ শেষ করে ফেলেন ,তাহলে আপনার শরীর কীভাবে সুগঠিত থাকবে?  একজন পুরুষের শরীর হবে  সুগঠিত, স্টীলের মতো পেটানো,কঠিন;মেয়েদের মতো লতানো নরম- নমনীয় না।
অন্যদিকে মেয়েরাও স্বভাবতই সুগঠিত পুরুষদের প্রতিই আকৃষ্ট হয়। [৬,৭]
( বিস্তারিত আসছে ইনশা আল্লাহ্‌ …)
হস্তমৈথুনের কারণে আপনার ক্রমাগত পিঠ ব্যাথা হতে পারেঃ
এখনকার পুরুষদের মাঝে পিঠে তীব্র ব্যাথা হওয়ার কথা প্রায়ই শোনা  যায়। এরফলে চাকুরি বা পড়ার জায়গা বা কোন কাজেই ঠিকমতো বসে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে এখানেও টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে যাওয়াটা একটা ভূমিকা রাখে।

দেখা যায় যে , যখন টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কম থাকে তখন ব্যাথা অনেক তীব্র হয় । আবার যখন টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন এই ব্যাথা কমে যায় বা দূর হয়ে যায়।
হস্তমৈথুন আপনার পুরুষত্ব কমিয়ে দেয়ঃ
দেখুন, প্রতিটা মানুষই একটা সুখী দাম্পত্য জীবন চায়। আর এক্ষেত্রে সঠিক যৌন জীবনও একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।আর হস্তমৈথুন করে করে আপনি সেই সুযোগ দিন দিন দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন। পর্নোগ্রাফি আর হস্তমৈথুনের মাধ্যমে আপনি যেমন মানসিক ভাবেও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, তেমনি শারীরিকভাবেও অক্ষম হয়ে পড়ছেন দিনদিন। আপনি যদি দাম্পত্য জীবনে উপভোগ করতে চান, তাহলে এই মুহূর্তে পর্নোগ্রাফি আর হস্তমৈথুন – এই দুইটা জিনিসকেই ‘না’ বলুন।

 হস্তমৈথুন বাদ দিলে আপনার ঘুম ভালো হবেঃ
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য একটি জিনিস। আপনার ঘুম ঠিক মতো হচ্ছে না মানে আপনার শরীর পুরোপুরি সুস্থ না। অনিদ্রা আমাদের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
ঘুম ঠিকমতো না হলে আপনি কোন কাজই ঠিকমতো করতে পারবেন না। আলস্য, বিরক্তি আপনাকে ঘিরে থাকবে।

আপনাদের মনে হতে পারে, আলোচনা করি হস্তমৈথুন নিয়ে, এখানে অনিদ্রা-সুনিদ্রার কি সম্পর্ক?
হ্যা, আপনার ভালো ঘুমের জন্য টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা আছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, হস্তমৈথুন বাদ দেওয়ার পরে, আমার অনিদ্রা ধীরে ধীরে দূর হতে লাগলো। ঘুম থেকে উঠার পর আমার মাঝে কোন ক্লান্তিভাব থাকতো না। আগে মনে হত,  আরও শুয়ে থাকি। এখন আর সেটা নেই। [৮]

 প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিঃ
প্রস্টেট ক্যান্সার বা প্রস্টেট গ্রন্থিতে নানা রকম সমস্যা হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।এর জন্য দায়ী প্রধানত হস্তমৈথুন  ।
আমরা আবার অনেকেই উল্টা ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আছি যে , মাস্টারবেশনই  প্রস্টেট ক্যান্সার রোধ করে।
আচ্ছা এ ব্যাপারে তর্কবিতর্ক বাদ দিয়ে দেখি গবেষণার ফলাফল কি। তাহলেই সন্দেহ দূর হবে ইনশা আল্লাহ্‌ ।
Polyxeni Dimitropoulou (PhD),Rosalind Eeles(PhD, FRCP),এবং Kenneth R. Muir (PhD) ৮৪০ জন মানুষের উপর গবেষণা করেন । তারা ৮৪০ জন মানুষের যাবতীয় যৌন তথ্য সংগ্রহ করেন। এদের মাঝে অর্ধেক প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে ৬০ বছর বয়সের মাঝে, বাকি অর্ধেক হয় নি।
তাদের এই গবেষণার ফলাফল ছিল, আশ্চর্যজনক।
“স্বাভাবিক যৌনক্রিয়া প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে না, কিন্তু হস্তমৈথুন  করে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মাঝে হস্তমৈথুন  প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়। এ বয়সে যারা সপ্তাহে ২-৭ বার হস্তমৈথুন  করে তাদের ৬০ বছর বয়সে প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ৭৯% বেশি, যারা মাসে একবারেরও কম হস্তমৈথুন  করে তাদের থেকে। আবার এই ২০-৩০ বয়সের মাঝে যারা হস্তমৈথুন  থেকে দূরে থাকে , তাদের প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত ঝুঁকি ৭০% কম।” [৯,১০]
প্রস্টেট ক্যান্সারের সঙ্গে সঙ্গে  হস্তমৈথুন ব্রেস্ট(স্তন) ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
[১১]

 প্রকৃত পুরুষ হস্তমৈথুনে আসক্ত থাকে নাঃ
শুধুমাত্র ছেলে হিসেবে জন্মালেই তাকে পুরুষ বলা যায় না। একজন সত্যিকারের পুরুষের আচার-আচরণ, কাজ- কর্ম সব কিছুই হবে সত্যিকারের পুরুষের মতো।
.
আপনি নিজেই একটু চিন্তা করুন- একজন পর্নোগ্রাফি আসক্ত , নিয়মিত হস্তমৈথুন করে, ঠিকমত কোন কাজ করে না, কারও সাথে ভালোভাবে মিশে না- এরকম কাউকে কি আপনি মন থেকে পুরুষ ভাবতে পারবেন। আমি নিশ্চিত যে, আপনি মুখে বলতে না পারলেও মন থেকে এ ধরনের মানুষকে পছন্দ করতে পারবেন না। তো আপনি কীভাবে আশা করেন যে , এই কাজগুলি আপনি করলেও আপনার সাথে অন্যরা ব্যতিক্রম আচরণ করবে?
একজন পুরুষ তার জীবনের সব দিক দিয়েই আত্মতৃপ্ত থাকে। আপনি কি চান না যে আপনিও তাদের একজন হতে?

 আপনার সুন্দর জীবনঃ
আগের লিখাগুলোতে তো নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে  হস্তমৈথুনের কুফল তুলে ধরেছি, এখন শুধু নিজের যুক্তির উপর ভিত্তি করে কিছু আলোচনা করি।
একটা মানুষ আসলে জীবনে কি চায়? অবশ্যই, সুখী-সুন্দর একটা জীবন।
একটা পুরুষের ঘরে ও ঘরের বাইরে নানা ধরনের ভূমিকা পালন করতে হয়। জীবনের সুখ-শান্তিও আসলে এই ভূমিকার উপর নির্ভরশীল। ভূমিকা মানে শুধু এই কাজ করতে হবে – তা না, আপনি এই কাজগুলো কত ভাল ভাবে সম্পাদন করছে সেটা।
.
আর, আপনি যেখানে কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না, আপনার নিজের কাজই ঠিকমত করেন না, সেখানে আপনি অন্যের প্রতি দায়িত্ব কিভাবে পালন করবেন?
আমার নিজের কথাই বলি। যখন থেকে হস্তমৈথুন বাদ দিলাম, আমার নিজের জীবনই পাল্টে গেল। আমি আগের থেকে অনেক বেশি সুখী এখন। কারণ আমি শুধু একা না, আমার আশেপাশের সবাইকে নিয়েই এখন সুখে আছি। আমি আগের থেকে মন খুলে হাসি, সবার সাথে প্রাণবন্তভাবে মিশি। জীবনে সুখী হতে কি আরও বেশি কিছু দরকার?
শুধুমাত্র অল্প কিছু সময়ের বিকৃতরুচির আনন্দের জন্য অনেক আনন্দময় জীবনটাকে নষ্ট করার কোন মানেই নেই।
এতো এতো ক্ষতিকর দিক থাকার পরেও কেন হস্তমৈথুনকে উপকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়? কেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও এটাকে ক্ষতিকর মনে করেননা? উত্তর পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুটা সময়।
(আগামী পর্বে সমাপ্য ইনশাআল্লাহ্‌…)

মূল লিখাটিঃ https://goo.gl/6njxzT

 

 

চোরাবালি (অষ্টম পর্ব)

আসসালামু-আলাইকুম।
আমি এনামুল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর কসম আমি একটা মিথ্যা কথাও এখানে বলব না, পুরোটাই আমার এবং পরিচিতজনদের সাথে ঘটে যাওয়া বাস্তবতা। এখন আমার বয়স বিশের এর কাছাকাছি কিন্তু ছোট থেকেই অন্যদের তুলনায় একটু চিকন। বন্ধুদের সাথে তেমন মিশি না আর আমার বন্ধুর সংখ্যাও হাতে গোনা কয়েকজন। কারো কারো কাছে হস্তমৈথুন সম্পর্কে শুনতাম কিন্তু ততটা বুঝতাম না। গত বছর দুয়েক আগে কৌতূহলবশত হস্তমৈথুন করেই ফেলি। অদ্ভুদ রকমের পাগল করে দেয়া একটি সুখকর অনুভূতি পেলাম প্রথম বার। এরপর থেকে এটা বারবার আমাকে ছায়ার মত আকর্ষণ করত।
.
কিছুদিন পর পর্ন দেখার সাথে সাথে একই সময়ে এটা করতে শুরু করলাম। সপ্তাহে ৩,৪ দিন বা তার বেশি হস্তমৈথুন করতাম। কিন্তু প্রতিবারই এটা করার পর এমন হতাশার সৃষ্টি হত যেন সব শেষ! স্পার্ম বের হয়ে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ড পরেই মনে হত আমি একি করলাম, প্রতিবারই তওবা করতাম যে জীবনে আর এই কাজ করব না। একদিন বা তার বেশি সময় মন খারাপ করে হতাশায় ডুবে থাকতাম কিন্তু দুইদিন পর আবার যেই-সেই! এভাবেই বারবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছিল প্রায় দেড়টি বছর ধরে। কোন ভাল কাজ করতে আগ্রহ পেতাম না। ভাল কোন কাজ করার সময় মনে হত কি লাভ এসব করে, আমিতো কঠিন অপরাধে জড়িয়ে আছি। এমনিতেই শুকনা ছিলাম আর দিনে দিনে আরো ডালপালা হয়ে যাচ্ছিলাম, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল হতাশার মাত্রা। একটা সময় খেয়াল করলাম অতীতের অনেক কিছুই আমি মনে করতে পারছি না, বারবার চেষ্টা করছি কিন্তু তবুও পারছি না। একটা সহজ বিষয় বুঝতে বা মনে রাখতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে, কোন কাজে শক্তি পাচ্ছিনা। আগে প্রতিদিন ১৫ কি.মি. সাইকেল চালিয়ে কলেজে যেতাম কিন্তু এখন বাজারে যেতেই হাঁপিয়ে যাই।
.
যাইহোক, আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর কাছে তার জীবনের গল্প শুনেছিলাম অনেকবার। প্রতিদিন কয়েকবার করে মাস্টারবেট করত সে। কয়েক বছর পর ধাতুক্ষয়ের সাথে তার এমন অবস্থা হয়েছিল যে, তার বীর্য থেকে পায়খানার চেয়ে বাজে দুর্গন্ধ বের হত। একেকটা সময় মাথাব্যথায় অজ্ঞান হয়ে যেত। মেধাবী ছেলেটার ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলা যায়।
.
আমার জীবনে ফিরে আসি, হঠাৎ একদিন রাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়, দেখলাম আমার পরনের লুঙ্গি ভিজা। নাহ সেটা পানি বা প্রস্রাব ছিলনা, স্পার্ম ছিল। কিন্তু আমি তো স্বপ্নে কিছু দেখিনি, স্বপ্নদোষ তো হয়নি তাহলে এরকম কেন? খেয়াল করলাম অটোমেটিক স্পার্ম বের হচ্ছে ফোটা ফোটা করে। দুইদিন পর রাতে আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। মনে পড়ল সেই বন্ধুটির কথা, ভাবলাম আমিও কি তার পথে হাটছি, তার পরিণতি কি আমাকে হাতছানি দিচ্ছে????
এতটাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছিলাম যে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করলাম “আল্লাহ প্রয়োজনে আমার বউ বাচ্চা কিছু লাগবে না আমি জীবনে কোন খারাপ কাজ করব না, কিন্তু আমাকে ওর পরিণতি দিয়েন না” জেলার সবচেয়ে ভাল ডাক্তারের কাছে গেলাম কিন্তু কয়েক মাস ধরে আমার প্রস্রাবের সাথে স্পার্ম বের হচ্ছে এবং সাথে শারীরিক এবং মানসিক দুর্বলতা তো আছেই। সিজিপিএ ৩.৫০ থেকে ২.৭৫ এ নেমে গেল! ওই বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারলাম আমার পরিচিত অনেক ছেলেই এই অসুখে আক্রান্ত এবং সবার এই সমস্যার শুরু হস্তমৈথুন থেকে।
.
পর্ন,মাস্টারবেশন থেকে এখন আমি দূরে। সময় থাকতে ভাল হওয়ার সুযোগ পেয়েও আমি হাতছাড়া করেছিলাম কিন্তু আজ প্রকৃতি আমাকে জোর করে শান্ত করেছে। জানিনা কবে এই অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাব কিংবা আদৌ মুক্তি পাব কিনা শঙ্কিত। অনেকটা সময় নিয়ে মোবাইল কিবোর্ডে কষ্ট করে লিখলাম, প্রয়োজনে লিখার ভুলগুলো সংশোধন করে হলেও লিখাটা প্রকাশ করবেন যেন মাস্টারবেশনে আক্রান্ত ভাইয়েরা একটু হলেও এর ভয়াবহতা বুঝতে পারে।


মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটির পিডিএফ গুগল ড্রাইভ থেকে ডাউনলোড করুন