চটিগল্প কি পর্ন দেখার মতোই ক্ষতিকর?

পর্ন-বিষয়ক সাম্প্রতিক বিশদ গবেষণার বদৌলতে [1] পর্ন দেখার কুফলগুলো বেশ ভালমতই প্রমাণিত। কিন্তু, “ভিডিও পর্ন” কীভাবে একজনের ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্ককে ধ্বংস করে তা খালি চোখেই দেখা গেলেও যা পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান না, তা হল এই পর্ন জিনিসটা কত ধরণের আকার নিতে পারে। পর্ন অনেক ধরণের আছে। এক প্রকার পর্ন হল চটি ।আচ্ছা, এর ক্ষতিকর দিক কী? আদৌ আছে কি কোন?

চটি  হল সাহিত্যরচনা যেখানে সেক্সুয়াল ঘটনা খুব রংচঙ্গেভাবে বর্ণনা করা হয়। প্রচুর প্রেমের উপন্যাস, অসংখ্য ওয়েবসাইট আছে যেখানে খুব খোলামেলাভাবে যৌন-কাহিনী বলা হয়। আমরা এরকম অনেক প্রশ্ন পেয়েছি যে উচ্চমাত্রায় যৌনদ্দীপক গল্প পড়াটা পর্ন দেখার সমান ক্ষতিকর কি না। মাঝে মাঝেই আমরা কারো না কারো কাছ থেকে অভিজ্ঞতার বিবরণ শুনি যে কি না “লিখিত পর্ন”এর প্রতি আসক্ত। নিচের মেসেজটি চটিতে আসক্ত এক নারীর কাছ থেকে পাওয়া।

——–

প্রিয় এডিটর,
পরিচিত একজন আমাকে একবার বলেছিল, ছেলেরা পর্ন দেখে, মেয়েরা পর্ন পড়ে। এটা কোন ধরা-বাঁধা নিয়ম না হলেও মোটামুটি নির্ভুল কথা হিসাবে চালানো যায় একে। আমি এর জীবন্ত প্রমাণ। পর্ন দেখা থেকে দূরে থাকা আমার জন্য কোন ব্যাপারই না। পর্ন দেখতে অস্বস্তি বোধ করি, খুব লজ্জা লাগে। কিন্তু আমার পর্ন-আসক্তি হয়েছে “লিখিত পর্ন” থেকে, যে জিনিসটা কি না ভিডিও পর্নের মতই সহজলোভ্য, এবং একই রকম ধ্বংসাত্মক।

টিন-এজে থাকতে কিছু চটি  পড়া হলেও তেমন কোন ইফেক্ট ফেলেনি। বিখ্যাত(নাকি কুখ্যাত) এক গল্পের  সিরিজ থেকে আসলে আমার পর্ন-আসক্তির শুরু। আমি মূলত কৌতুহল থেকেই সিরিজটি পড়া শুরু করেছিলাম, যেটা কিনা খুব বোকামি ছিল। এরপর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এরকম রচনা পড়া শুরু করি।

আমার আসক্তি বাড়তে থাকে। এতে আমার বডি-ইমেজ, আমার স্বামীর সাথে সম্পর্ক, সবকিছুই পরিবর্তন হতে থাকে। আমার কিছু বিশ্রী স্বভাব তৈরী হয়ে যায়। দেখলাম যে বিকৃত-রচনা গুলোর কথা মনে করা ছাড়া আনন্দ পাচ্ছি না। যাই হোক, এক পর্যায়ে আমি ভাবতে বাধ্য হলাম, আমি যা যা পড়ছি, এগুলো আমার ব্যাপারে কী বলে?আমি এখনো পর্ন-আসক্তি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি স্বামীর সাথে সম্পর্কটা কে আগের মত স্বাভাবিকে ফিরিয়ে আনতে।

চিন্তাধারা এবং আচরণ পরিবর্তন করা কঠিন; আমি জানি আমার আসক্তি শুরু হওয়ার আগে যেমন ছিলাম, সেই অবস্থায় আর ফিরে যেতে পারবো না।রগরগে রোমান্টিক উপন্যাস কে ভিডিও পর্নের তুলনায় নির্দোষ আর নির্বিষ মনে হলেও আসলে এগুলো একই বস্তু এবং একইভাবে ব্রেইন আর সম্পর্কের ক্ষতি করে। দয়া করে, ভিডিও পর্নের ক্ষতিকর দিক নিয়ে যেমন রিসার্চ হয়, অন্যান্য ধরণের পর্ন নিয়েও এরকম রিসার্চ উৎসাহিত করুন। মানুষকে জানান যে “এটি শুধুমাত্র বই এবং চরিত্রগুলো বাস্তব না”- এরকম ধারণার মানে এই নয় যে এটা আপনার ক্ষতি করবে না, আসক্তি ঘটাবে না। দয়া করে, লিখিত পর্ন থেকে মুক্তির জন্য সাহায্য ও তথ্য আপনার ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত করুন।

–      ই.
————–

তাহলে উত্তর কী? চটি  কি পর্ন দেখার মতই ক্ষতিকর?

রিসার্চ এখনো নিশ্চিত উত্তর না দিলেও উপরের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটি বিবেচনায় নেওয়া যায়। এটা জেনে রাখা ভাল যে পর্নোগ্রাফি শুধুমাত্র ছবি বা ভিডিও আকারেই আসে না, বিভিন্ন আকারে ও মাধ্যমে এটা আসে। বাস্তবে সারা পৃথিবীর মানুষদের জীবন থেকে যা দেখা গিয়েছে, চটি  এবং অন্যান্য লিখিত পর্নোগ্রাফিক ম্যাটেরিয়ালের প্রভাব এবং ভিডিও পর্নের প্রভাব একই। বিভিন্ন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন চটি  উচ্চমাত্রায় যৌনদ্দীপক হওয়ায় এটি খুব দ্রুত আসক্তি ঘটায় এবং সত্যিকারের যৌনতার ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গিকে বিকৃত করে।

আমরা বিশ্বাস করি একে-অপরের ভালবাসায় পাগল দু’জন মানুষের (স্বামী-স্ত্রীর) একসাথে থাকাটাই চমৎকার ও স্বাভাবিক; একজন মানুষ একলা একটা কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসে থাকা বা একলা একটা অশ্লীল উপন্যাস হাতে বসে থাকাটা সুন্দর ও স্বাভাবিক না। নকলটা নয়, সত্যিকারের ভালবাসার পিছনে ছুটুন।

চটি গল্পের ভয়াবহতা, নেশা কাটানোর উপায় সব আলোচনা করা হয়েছে এই লিখাগুলোতে। অবশ্যই পড়ুন।

Popular Posts

পর্ণমুভি, মানবপাচার এবং পাশ্চাত্যের যৌন দাসত্বের গল্প (দ্বিতীয় কিস্তি)

মুক্ত বাতাসের খোঁজে (official pdf)