১৭. 'ও' যখন পর্ন আসক্ত (৩ পর্ব)

“ও যখন পর্ন আসক্ত” (প্রথম পর্ব)

বিসমিল্লাহির  রহমানীর রহীম ।
কতটা বিপদজনক ?
প্রত্যেকবারই দেখি ,  দিনের বেলা  ট্রেন যখন ঠিক যমুনা সেতুর ওপর  দিয়ে যায়, নিতান্তই কাঠখোট্টা , নীরস লোক ছাড়া প্রায় সবাই জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মারে বাহিরের  যমুনার রূপ দেখার জন্য । এ  জিনিস যেন পুরোনো হবার নয় । একবার দেখলে বার বার দেখতে ইচ্ছে করে । হল থেকে বাসায় যাচ্ছি ।  ট্রেন যখন  যমুনা সেতুর ওপরে উঠেছে ,  আমি করিডোরে হাঁটাহাঁটি করছি ।   যথারীতি প্রায়  সবাই দাঁড়িয়ে , বসে জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে  তাদের প্রকৃতি প্রেমের পরিচয় দিচ্ছে , এক মধ্যবয়স্ক  লোক দেখি মোবাইলের স্ক্রিনে বুঁদ হয়ে  আছে । আশে পাশে কী হচ্ছে  তার কোন হুঁশ জ্ঞান নেই ।   পাশ দিয়ে যাবার সময়  চোখের কোন দিয়ে তাকালাম একটু,  কি এত মজার জিনিস দেখছে ব্যাটা তা দেখার জন্য ।  আস্তাগফিরুল্লাহ …… আস্তাগফিরুল্লাহ …
আমরা অনেকেই যে ভুল ধারনাটা করে বসি সেটা হল পর্নআসক্তি শুধুমাত্র অবিবাহিত ছেলে /মেয়েদের আছে । কিন্তু আমাদের খোলা চোখে কখনোই ধরা পড়ে না যে মধ্যবয়স্ক বিবাহিত শিক্ষিত অশিক্ষিত দুই ধরণের লোকদের মধ্যেও এই সমস্যা প্রবল । আমাদের সমাজে বিশেষ করে মফস্বল এবং  গ্রামের দিকগুলোতে একশ্রেনীর মধ্যবয়স্ক পুরুষ আছে যারা ইন্টারনেট মানে বোঝে পর্নমুভি , চটিগল্প এই সব । একটু খেয়াল করলেই দেখবেন রিকশাওয়ালা, বাস /ট্রাকের ড্রাইভার , হেল্পার মানে এই ক্যাটাগরির লোকগুলো ইন্টারনেট , মোবাইল এবং স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যানে খুব মারাত্বক রকমের অশ্লীলতার মধ্যে ডুবে আছে । পর্নমুভি বলুন, আইটেম সং বলুন আর চটিগল্প সবখানেই তাদের অবাধ বিচরণ ।   বিবাহিত মধ্যবয়স্কদের এই পর্ন/ আইটেম সং আসক্তি খুবই ভয়ংকর রূপ ধারন করতে পারে ।
পর্ন মুভি দেখার ফলে অনেকেই  যৌন সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন বা বিছানায় ঠিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না  সংসারে শুরু হয় অশান্তি ।
“ডাক্তারি অভিজ্ঞতায়ও দেখেছি, পর্নোগ্রাফি দর্শকের যৌন-কর্মক্ষমতার ক্ষতি করে। পর্ন-দর্শকদের প্রিম্যাচিউর ইজ্যাকুলেশন (দ্রুত বীর্যপাত) এবং ইরেকটাইল ডিসফাংশনে (পুরুষাঙ্গ শৈথিল্য) ভোগার প্রবণতা থাকে।
কাগজ, সেলুলয়েড ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপ্রাকৃতিক যৌন অভিজ্ঞতায় এত বেশি সময় খরচ করায় তাদের জন্য সত্যিকারের মানুষের সাথে সেক্স করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পর্নোগ্রাফি তাদের যৌন অভিজ্ঞতার ধরণ ও পরিমাণ নিয়ে প্রত্যাশা ও চাহিদা বাড়িয়ে দিচ্ছে, একই সময়ে সেক্স উপভোগ করার ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।”
– ড. ম্যারিঅ্যান ল্যাডেন
একবার পর্ন আসক্ত হয়ে গেলে    সঙ্গীর মাঝে  আর  প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া না , তাকে শুধু ভোগ্য দ্রব্য মনে হয়   ।  অনেক স্বামী/স্ত্রী তাদের সঙ্গীদেরকে বাধ্য করেন বিছানায়  পর্নস্টারদের অনুকরণ করতে । অনেক স্বামীই স্ত্রীকে তো রেপ পর্যন্ত করে ফেলেন –ভালোবাসা হারিয়ে    যায় , মধ্যরাতে   স্বামীর স্পর্শ স্ত্রীর শরীরে আর শিহরণ জাগায় না , মনে হয় একটা পশু তাকে ছিড়ে ছিবড়ে ফেলছে ।   ঝড়  থেমে গেলে স্বামী পাশ ফিরে ঘুমিয়ে যান , স্ত্রী বেচারী জেগে থাকেন একজোড়া সিক্ত চোখ আর একদলা ঘৃণা নিয়ে ।  একসময় ভেঙ্গে যায় সংসার ।
“ তার কাছে আমি রক্ত মাংসের একজন মানুষ ছিলাম না , ছিলাম একটা ভোগ্য পণ্য ।  বিছানায় সে আমার সঙ্গে ঠিক মতো প্রেম করতো না ,   যেন  বিছানায় শুধু তার শরীরটাই উপস্থিত , মন থাকতো অন্য কোথাও – হয়তোবা সেই পর্ন অভিনেত্রীদের কাছে ; যাদের কথা চিন্তা করে সে উত্তেজিত হতো এবং আমার শরীরের ওপরে  ঝাল মিটাতো ……  ”
একজন পর্ন আসক্ত স্বামীর হতভাগ্য স্ত্রী এভাবেই বর্ণনা করেনকীভাবে পর্ন আসক্তি তাঁর স্বামীকে পশু বানিয়ে ফেলেছিল  ।  (Bergner & Bridges )
একবার পর্ন আসক্ত হয়ে গেলে  নিজেদের বঊ/স্বামী’র শরীর দিয়ে তাদের আর  পোষায় না ।  পর্ন   স্টার / আইটেম গার্ল এর   কাছে  নিজেদের বউ/স্বামীকে  তখন খুব পানসে মনে হয় ।  তাদের  দরকার হয় নতুন শরীরের । তাছাড়া একটা আর কয়দিন চলে – এরকম মানসিকতা পোষণ করে এমন পাবলিকেরও অভাব এই দেশে নাই ।
বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায়  যেহেতু একের অধিক বিয়ে করাকে খুবই বাঁকা চোখে দেখা হয় । কাজেই তাদের বিকৃত লালসা  চরিতার্থ করার জন্য তারা বেছে নেয়  অন্য রাস্তা । শুরু করে পরকীয়া , ব্যাভিচার । অনেক  সময় কোপ পড়ে বাসার কাজের মেয়ে ,  ছাত্রী ,  অফিসের  অধস্তন নারী কর্মচারী  এই শ্রেণীর মহিলাদের উপর ।   পর্নমুভির গল্পগুলোও এমন ভাবে সাজানো হয় যেন   অফিসের  অধস্তন নারী কর্মচারীরা বস্‌দের সঙ্গে শুতে খুবই উদগ্রীব ।  আর এখনকার দিনের মুভি , নাটকের কাহিনীও এই  কামের আগুনে কেরোসিন ঢেলে দিচ্ছে ।
সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার হলো অনেক অনেক মানুষ আজকাল ইন্সেস্ট চটিগল্প পড়ে বা এই কন্সেপ্ট নিয়ে বানানো পর্নমুভি গুলো গোগ্রাসে গিলে । বিবাহিত, অবিবাহিত সবাই । বাঙ্গালী গর্ব করে তার ভাষা নিয়ে , কোটি কোটি টাকার ফুল নষ্ট করে শহীদ মিনারে , দেশ টা মা না বলে আবেগে “কাইন্দালসে” টাইপ অবস্থা   অথচ এই বাঙ্গালীই ইন্টার নেটের এমন অবস্থা করে ছেড়েছে যে গুগলে মা বা বোন লিখলেই যে অটোসাজেশান গুলো আসে তা স্বাভাবিক মস্তিষ্কের কোন মানুষের পক্ষে হজম করা সম্ভব না । গাঞ্জার কল্কিতে দু’টান মেরে আসলে অবশ্য ভিন্ন কথা ।
এইসব বিকৃত লোকদের  লালসার শিকারে পরিণত হয় তাদেরই কোন নিকটাত্মীয়। বিশেষ করে খালু, ফুফা ,দুলাভাই ,দেবর এরকম আত্মীয়ের দ্বারা অনেকই যৌন নিপীড়নের শিকার হয় ।  বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও একটু খোঁজ খবর করে দেখেন – অবস্থা টের পাবেন  ।
……… চলবে ইনশা আল্লাহ




“ও” যখন পর্ন আসক্ত (দ্বিতীয় পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।
আমি অনেককেই বলতে শুনেছি যে পুরুষ মানুষ দুই প্রকার, এক যারা পর্ন দেখে না আর দুই যারা বেচে আছে । বর্তমানে পুরুষদের  মাঝে পর্ন  ও সম্পর্কিত ব্যাপারগুলো ভাত খাওয়ার মতই সাধারণ হয়ে গেছে । যেসব মহিলাদের দাম্পত্য জীবনের ওপর পর্নের মারাত্মক এবং হৃদয় ভেঙ্গে দেওয়া কষ্টকর আঘাতগুলো এসেছে  তাদের কাছ থেকে আমি  প্রচুর প্রশ্ন পাই । তাদের কাছে পর্ন মানেই হচ্ছে প্রতারণা । আসলেই কিন্তু তাই ।
আমাদের মধ্যে অনেকেই এই কথা গুলো মিথ্যা মনে করছেন, কারণগুলো আমি জানি (নিচে বলছি), কিন্তু তার আগে আপনাদের কিছু শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া প্রয়োজন ।
“পর্ন ইউজ করা” বলতে আমি শুধু পর্ন দেখার কথা বুঝাইনি । পাবলিক প্লেসে হাঁটার সময় অথবা অনলাইনে ঘুরাঘুরির সময় এমন কিছু চোখে পড়াটা খুবই স্বাভাবিক যা পুরুষের চোখে একটু হলেও সুড়সুড়ি দেয়ার জন্যই উপস্থাপন করা হয়েছে । “ইউজ করা” বলতে বুঝিয়েছি, কেউ শারীরিক উত্তেজনা তৈরির জন্য ইচ্ছে করেই নিজের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে ড্রাগ এর মত করে পর্ন নেয় (যেমন চোখ দিয়ে সরাসরি ব্রেইনে), তারপর বেশিরবভাগ সময়ই মাস্টারবেট করে।
“প্রতারণা করা” বলতে বুঝিয়েছি, একটা বিয়েতে একজন আরেকজনের প্রতি যে আস্থা, বিশ্বাস, প্রতিজ্ঞা, দায়বদ্বতা থাকে তা ভঙ্গ করার কাজে পর্ন  ব্যাবহার করা, হয়তো প্রত্যক্ষ ভাবে নয়তো পরোক্ষ ভাবে । কারণ একটা বিয়েতে শুধু শারীরিক চাহিদা মেটানোই মুখ্য ব্যপার হতে পারে না, আরও কিছু ব্যাপার আছে ।
পর্নের ফাঁদ
নৈতিকতার শেষ স্তর কত নিচু হতে পারে, চলুন দেখি ।
Step 1: ধরুন, আমি একজন পতিতার কাছে গিয়েছি । এবং তার মাধ্যমে আমার শারীরিক চাহিদা মেটালাম । এটা কিন্তু আমার স্ত্রী’র সাথে প্রতারণা করা হবে । এ ব্যাপারে অন্তত কেউ আমার সাথে তর্ক করবেন না আশা করি ।
Step 2: এবার মনে করুন, আমি যখন পতিতাটির কাছে গিয়েছিলাম, আমরা আসলে একজন আরেকজনকে একদমই স্পর্শ করিনি । আমি শুধু তাকে আরেক পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্কে যেতে দেখে একই রুমে মাস্টারবেট করলাম (বিচ্ছিরি, তাই না?,থামবেন না কিন্তু, পড়তে থাকুন ) । এটাও কি আমার স্ত্রী’র সাথে প্রতারণা হবে???
উপরের এবং বর্তমানের দুটো কেসেই আমি যৌন আনন্দ পাওয়ার জন্য পতিতা একজন মহিলার সার্ভিস খুঁজছি, শুধু তাই না, এমন যৌন সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এমন একজন মহিলার শারীরিক সৌন্দর্য এঞ্জয় করছি যে কিনা আমার স্ত্রী না ।
“হ্যাঁ, আমি একজন পতিতার সামনে আমার চাহিদা পূরণ করেছি, কিন্তু বিশ্বাস কর আমরা একজন আরেকজনকে একদমই স্পর্শ করিনি । আমি তোমার বিশ্বাস রেখেছি””–এমন উদ্ভট কথা কোন পুরুষ তার স্ত্রী’র সামনে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে???, আমার মনে হয় না!  স্বামীর প্রতি আমার স্ত্রী’র যে অধিকার, যে বিশ্বাস তার কোন মূল্যই যেখানে থাকে না, সেখানে শারীরিক স্পর্শ ছিল কি-ছিলনা তাতে কিছু যায় আসে না ।
Step 3: আচ্ছা এবার ধরে নিই আমি পতিতাটির সাথে সামনা সামনি দেখা করিনি বরং অনলাইনে কোন ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ করলাম । কথার কথা, ওই চ্যাট সেশনের সময় ভিডিও ইমেজকে আমার ফ্যান্টাসির সোর্স হিসেবে ইউজ করে আমি মাস্টারবেট করলাম । এটাও কি প্রতারণা???
এই যে এতটা শারীরিক দূরত্ব, এটা কি পরিস্থিতির এমন কোন পরিবর্তন করে যে বিয়ের প্রতিজ্ঞা গুলো আর ভাঙবে না??? অসম্ভব !!!
Step 4: এবার মনে করি ভিডিও চ্যাট না করে বরং ওই পতিতাটি আমার জন্য তার একটি নোংরা ভিডিও রেকর্ড করল যেন যেকোন জায়গায় যেকোন পরিস্থিতিতে  তা দেখে আমি মাস্টারবেট করতে পারি । এখনও কি এটা প্রতারণা???
অন্য কেউ রেকর্ড বাটন প্রেস করেছে এজন্য এখন কি হটাৎ  করে আমি বিয়ের প্রতিজ্ঞা গুলোর প্রতি বিশ্বস্ত??? না, বরং এটা আরো   স্টুপিড একটা কাজ ।
Step 5: এখন মনে করি, সেই পতিতাটির একটা বিজনেস কার্ড আছে,  তাতে আবার খুব স্টাইল করে লেখা আছে “পর্ন অভিনেত্রী”। এমনকি তার একটা ওয়েবসাইটও আছে যেখানে এপর্যন্ত সে যেসব ফিল্ম করেছে তার লিস্ট আছে । তার পিম্প–মানে দালাল–এই কাজের জন্য সরকারকে ট্যাক্স দেয় এবং বাকি সব কিছুই ম্যানেজ করে । পুরোই রমরমা । আমি তার ওয়েবসাইটে গেলাম এবং ভিডিও গুলো দেখার জন্য ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিছু টাকা দিলাম যা সে খুব খুশি হয়েই আমার কাছে বিক্রি করল । এটা কি প্রতারণা??? এই যে পুরো ব্যাপারটার নাম পরিবর্তন করে পেশাদারিত্বের লেবাস পরানো হল তাতে কি মূল কাজের প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায়??? কখনোই না!!!
Step 6: এখন মনে করি এই পুরো ভিডিও কেনাবেচার ব্যাপারটা একটা ইন্ডাস্ট্রির মত যেখানে ওই মহিলা আরো অন্যান্য পতিতাদের এক বিশাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত যারা একই কাজ করছে । অনেকটা পতিতালয়ে যাওয়ার মত, যাকে যখন পছন্দ তখন বেছে  নিতে পারি, টাকা  দিলাম এবং তার শরীর আমার কামলালসা পূর্ণের জন্য উপভোগ করলাম । এটা কি প্রতারণা??? এই যে পুরো ব্যাপারটায় ইন্ডাস্ট্রির লেবাস পরানো হল তাতে কি মূল কাজের প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায়???অসম্ভব!!!
আধুনিক পর্ন ইন্ডাস্ট্রি কেমন হতে পারে শেষ এই স্টেপ এ এসে আমরা একটা ধারণা পেলাম  । এই কারণেই পর্ন ইউজ করা আর প্রতারণা করা সমান ।  পর্ন হচ্ছে বিয়ের প্রতিজ্ঞায় থাকা  সত্ত্বেও ডিজিটাল পতিতার সাথে সম্পর্ক ।
থামেন ভাইয়েরা, কথা এখনও শেষ হয় নাই ।
আমি এখন চড়চড় করে মন ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছি । অনেকেই ভাবছে–“ভাই থামেন, প্রথম স্টেপ আর শেষ স্টেপ এর সাথে তো কোন মিলই নাই, কেউ তো আর ডিজিটাল পতিতাবৃত্তি হিসেবে পর্ন দেখে না । আমাদের কালচারে পর্ন কে এভাবে দেখলে সেটা এক কথা ।  কিন্তু কেউ তো আর অনলাইনে পর্ন দেখার সময় এটা ভাবে না যে , ‘উফফ, একটা ডিজিটাল পতিতা দিয়ে এখন আমার কামলালসা পূর্ন না করলেই না’”
ভাল পয়েন্টই ধরেছেন ।  যাই হোক না কেন , প্রতিজ্ঞার কথা আসলেই কিন্তু প্রবৃত্তি আর উদ্দশের  কথা আসে ।  আমি যদি একটা কন্ট্রাক্ট সাইন করি যে আমার মালিকের কোন ব্যাবসায়িক তথ্য কারো সঙ্গে শেয়ার করব না, কিন্তু তারপরই কর্মক্ষেত্রের একটা  ইমেইল আমার বন্ধুকে ফরোয়ার্ড করি, জানিই না যে এটাও ব্যবসায়িক তথ্যের মধ্যেই পরে, আমি কিন্তু ইচ্ছা করে  কন্ট্রাক্ট ভাঙ্গার জন্য দায়ী না (যদিও মালিক ইচ্ছা করলেই আমার চাকরী খেয়ে দিতে পারে)।  যারা পর্ন ইউজ করে তারাও নিশ্চয়ই একই রকম করেই ভাবে যে, “আমি তো শুধু অভিনেতা অভিনেত্রীদের বানানো একটা ভিডিও দেখছি, কোন পতিতার সাথে ডিজিটাল সম্পর্ক করার কোন ইচ্ছা নাই””
মানলাম, কিন্তু  নৈতিক সিদ্ধান্ত যখন প্রশ্নবিদ্ধ তখন এর পেছনে কি উদ্দেশ্য ছিল তার মূল্য খুব কম । পর্নের ফাঁদ নিয়ে উপরের কথা গুলো যতটা না উদ্দেশ্য নিয়ে তার চেয়ে বেশি কাজগুলোর প্রকৃতি কেমন তা নিয়ে । পর্নোগ্রাফি বানাতে গিয়ে দর্শকদের যৌন সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রক্তমাংসের কিছু মানুষ সত্যি সত্যি নিজেদের বিক্রি করে দিচ্ছে । দর্শক বুঝুক আর নাই বুঝুক, একজন পতিতা মহিলাকে  তার শরীর ও যৌন আবেদনের জন্য ব্যাবহার করা হয়েছে, এখন মাধ্যম যাই হোক না কেন, এই কথার কোন পরিবর্তন হবে না ।
শারীরিক আনন্দের জন্য নিজ স্ত্রী ছাড়া আরেক মহিলার সান্নিধ্য খোঁজা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার মত কোন কাজ না, বরং তা থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেয়– যদিও ওই মহিলাকে একটা নোংরা এক্টিং এজেন্সির লেবাস পরিয়ে ভিডিওর মাধ্যমে আড়াল করে রাখা আছে, তাও কিছু যায় আসে না। এই কারণেই বিপুল সংখ্যক মহিলা বলে যে পর্ন ইউজ করা আর প্রতারণা করা সমান
পর্ন দেখা মানে ডিজিটাল পতিতার সাথে সম্পর্ক করা।   #পর্ন_মানে_প্রতারণা
প্রতারণা কেন এখানে প্রশ্নবিদ্ধ (আর কেনইবা এটা কোন ব্যাপার না)
যদিও আমি বলেছি যে পর্ন ইউজ করাটা বিয়ের পবিত্রতা এবং প্রতিজ্ঞা নষ্ট করে দেয়, এখন তারপরও  কেউ এমনটা করলে কি আচরণ করা উচিত তা নিয়ে আমি কোন উপদেশ দিব না । পর্নের ফাঁদ নিয়ে উপরের আলোচনায় ছয়টা ভিন্ন ভিন্ন স্টেপ এ ছয়টা ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যপট ব্যাখ্যা করা আছে । প্রত্যেকটা স্টেপ এই পাপের আলাদা ওজন আছে । প্রত্যেকটাই হয়তো প্রতারণা, তাদের প্রত্যেকের গভীরতা সমান না ।
যারা প্রশ্ন করে “”পর্ন ইউজ করা কি প্রতারণা”?” আবার বলে এটা কোন ব্যাপার কেন হবে,  তাদেরকে কোন কথা বলতেই দেয়া উচিত না।
কেউ কেউ এই প্রশ্ন করার সময় আরো কিছু কথা নিয়ে আসে। তারা মনে করে  “পর্ন মানে প্রতারণা সুতরাং তোমাকে আমি কক্ষনো ক্ষমা করবো না” “পর্ন মানে প্রতারণা সুতরাং আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব” ”পর্ন মানে প্রতারণা, আমিও তোমার সাথে প্রতারণা করে তোমাকে মজাটা বুঝাবো”–এইসব কথা গুলো পুরোই আলাদা বিষয় । যদি বলি একজন পুরুষ তার বিয়ের প্রতিজ্ঞাগুলো নষ্ট করেছে পর্নের মাধ্যমে, সেটা এক ব্যাপার ।  আবার যদি বলি তাকে ক্ষমা করা যাবে না, ডিভোর্স দেয়া উচিত অথবা তার উপর প্রতিশোধ নেয়া উচিত, সেগুলো আবার পুরোই আলাদা ব্যাপার ।
কেউ কেউ আবার এই প্রশ্ন করার সময়, শুধু এটাই জানতে চায় যে, সারাজীবন একজন আরেকজনের প্রতি আস্থাভাজন হয়ে থাকার যে উৎসাহ বিয়েতে  “কবুল” বলার সময় তারা তাদের স্বামী বা স্ত্রী’র মধ্যে  দেখেছিল সেটা এখন কোথায় গেল। হ্যাঁ, এটা মানতেই হবে যে এই পুরো পৃথিবীটাই যৌন সুড়সুড়ি দিয়ে ভরা । হ্যাঁ, তারা এটাও জানে যে তাদের জীবন সঙ্গীর হরমোনাল ক্যাপাসিটি একটু বেশিই আর তারা অন্যদের প্রতি একটু আকর্ষিত, তারপরও তারা তাদের সঙ্গীর আকর্ষণ, মনোযোগ, যৌন সন্তুষ্টি সবকিছুর কেন্দ্রে থাকতে চেয়েছিল, এর বেশি কিছুই না । “কবুল” বলার সময় তারা মন থেকে সত্যিকার অর্থেই বলেছিল, একই বিষয়টা অপর দিক থেকেও তারা আশা করেছিল ।
দুটো বিষয় এই সমস্যার গভীরে  কাজ করে ।
প্রথমত, বেশিরভাগ সময়ই মানুষ বিয়েটাকে একটা আনন্দ-বিনোদন-উৎসবের মাধ্যম এবং লোক দেখানোর উপায় হিসেবেই দেখে, কিন্তু বিয়ের প্রতিজ্ঞা আর দায়িত্ব গুলোকে সিরিয়াসলি দেখে না ।
একারণে, আমরা আবিষ্কার করি আমাদের দুই পা দুই মেরুতে । এক মেরুতে, আমরা অনেক খুশি, সেই “পার্ফেক্ট মানুষ” কে খুঁজে পেয়েছি, তার সাথে একসাথে সারাজীবন কাটিয়ে দিব, মৃত্যু পর্যন্ত আমরা একে অন্য ভালবাসবো ছেড়ে যাব না । আরেক মেরুতে,  আমরা স্বার্থপরের  মত কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে নিজের যৌন তৃপ্তি মেটাই এবং বিয়ের সুখ আর সুবিধাগুলো উপভোগ করি ।
এই দুই মেরু আমাদের পাপে পূর্ন মনে তেল-জলের মতই মিশ খায় । এই ধরনের বিয়েতে আরো সামনে আগানোর আগে আমাদের হয় পর্নোগ্রাফি ত্যাগ করতে হবে নয়তো একজনকে নিয়ে সারাজীবন কাটানোর যে উদ্দীপনা আমরা দেখাই তা ত্যাগ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, এই ডিজিটাল দুনিয়া আমাদের আর সত্যিকার দুনিয়ার মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি করে সেটা আমাদের পুরো অন্ধ করে দেয় । আমরা মনে করি, কোন বিষয় যদি “অনলাইন” অথবা “টিভি” অথবা “শুধুই কল্পনায়” হয় তাহলে এগুলা বড় কোন ব্যাপার না । আমরা পাপগুলোকে নতুন নাম দেই- চুরি করা হয়ে যায় ডাউনলোডিং, নিষ্ঠুর আচরণ আর কথা বার্তা হয়ে যায় ব্যক্তিস্বাধীনতা, সুবিধা গ্রহণ আর শোষণ হয়ে যায় আনন্দ বিনোদন । আমরা নিজেরদেরকে দৃষ্টিবিভ্রমের সাম্রাজ্যে  আটকে ফেলেছি । পর্নোগ্রাফি দুজন বিবাহিত মানুষের পারস্পরিক অংশগ্রহণে করা সুস্থ-স্বাভাবিক যৌনকর্মকে উৎসাহ দেয় না বরং এটা মাস্টারবেশনকে উৎসাহ দেয় ।পর্নোগ্রাফিই একমাত্র স্বয়ংক্রিয় উত্তেজনা যার মধ্যে অন্তরঙ্গতা বা ভালবাসা বলতে কিছু নেই । পর্নোগ্রাফি হচ্ছে, পর্নোগ্রাফারদের ব্যাবসার জন্য নিজেকে শেষ করে দেয়া।”

(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত)





“ও” যখন পর্ন আসক্ত (শেষপর্ব )

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম । 
নিজের ‘স্বামী’ পর্ন আসক্ত এটা বোঝার পরের ধাপটার ক্ষেত্রেই অধিকাংশ স্ত্রী ভুল করে বসেন। কেউ কেউ একেবারেই পাত্তা দেননা, ভাবেন এটা আবার এমনকি, পুরুষমানুষ এক আধটু এগুলো দেখতেই পারে, দেখলেতো কোন সমস্যা নেই। কেউ কেউ আবার প্রচন্ড রেগে যান, চিৎকার চেঁচামেচি করেন, দুনিয়াশুদ্ধ লোকদের জানিয়ে দেন (বিশেষ করে স্বামীকে হাতেনাতে পর্ন দেখা অবস্থায় ধরে ফেললে)। আবার অনেক স্ত্রী’ই নীরবে চোখের পানি ফেলেন, কাউকেই কিছু বলেননা।
এই লেখায় আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করবো, আপনার স্বামী পর্ন আসক্ত এটা বোঝার পর আপনার করণীয় কী।
১) আপনার পর্ন আসক্ত স্বামীর সঙ্গে তার পর্ন আসক্তি নিয়ে কথা বলা।
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই ধাপে পা ফেলতে হবে খুব সাবধানে। একটু এদিক সেদিক হলে অবস্থা খুবই জটিল হয়ে যাবে।
খেয়াল করে দেখুন,কখন আপনার স্বামীর মন ভালো আছে, তারপর এমন কোথাও গিয়ে দুজনে বসুন যেখানে আপনারা একান্তে কথা বলতে পারবেন, হতে পারে সেটা বেডরুম কিংবা কোন পার্কের বেঞ্চ। অথবা কোন নিরিবিলি সবুজ ফুটপাত যেখানে আপনারা হাত ধরে পাশাপাশি হেঁটে যেতে পারবেন দুজনে বেশ কিছুটা দূর। তার চোখে চোখ রেখে সরাসরি বলুন, আপনি জেনে ফেলেছেন তার পর্ন আসক্তির কথা, তার পর্ন আসক্তির কারণে আপনি নিজেকে কতোটা তুচ্ছ মনে করেন, আপনার হৃদয়ে প্লাবণ নামে অষ্টপ্রহর, তার প্রতিটা স্পর্শে আপনার গা ঘিন ঘিন করে ওঠে; বিস্তারিত বলুন। তাকে মনে করিয়ে দিন বিয়ের সেই প্রথম রাতগুলোর কথা যখন পৃথিবীতেই নেমে এসেছিল জান্নাতের সুখ, ঘোমটা খুলে প্রথম চোখে চোখ রাখা, প্রাণভরে দেখা, প্রথম স্পর্শ, প্রথম জৈব-রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় মুগ্ধ হওয়া।
এরপর কতো ঝড় ঝাপটা এসেছে। দমকা বাতাস লন্ডভন্ড করে দিতে চেয়েছে আপনাদের সাজানো সংসার, আপনারা দু’জন দাঁতে-দাঁত চেপে,হাতে হাত রেখে,কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে গিয়েছেন, জয়ী হয়েছেন, সেই আপনারাই কেন পর্ন আসক্তির কাছে পরাজিত হবেন?
মেয়েদের চোখের পানি পুরুষদের জন্য সহ্য করা খুব কষ্টের। আপনার স্বামীর সাথে কথা বলতে বলতে চোখে পানি আনুন, আপনাদের সন্তান থাকলে তার ভবিষ্যতের কথা আপনার স্বামীকে স্মরণ করিয়ে দিন। আপনাদের এই কথোপকথনের  সম্ভাব্য পরিণতি হতে পারে তিন রকমের।
  1. i) আপনার কাছে ধরা পড়ার আগে থেকেই আপনার স্বামী পর্ন আসক্তি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তিনি সফল হননি। আপনার মুখে কথাগুলো শোনার পরে তিনি প্রচন্ড ইমোশোনাল হয়ে পড়বেন, লজ্জায় লাল হয়ে যাবেন। কঠোর প্রতিজ্ঞা করবেন আসক্তি কাটানোর।
  1. ii) ধরা পড়ার আগে তিনি পর্ন আসক্তি কাটানোর ব্যাপারে সিরিয়াস কোন চিন্তা ভাবনা করেননি। কিন্তু আপনার সাথে এ কথোপকথনের পরে পর্ন আসক্তি ছাড়ার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা শুরু করবেন। আপনাকে আশ্বাস দেবেন যে তিনি আর পর্ন দেখবেননা।
iii)আপনার কথা শুনে রেগে যাবেন। আপনাকে বকা ঝকা করবেন। গোঁয়ার গোবিন্দের মতো আচরণ শুরু করবেন। পর্ন দেখার পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিবেন। আপনার স্বামীর প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। তিন নম্বর প্রতিক্রিয়ার কথা আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আমরা এখন চিন্তা করবো প্রথম দু’টি প্রতিক্রিয়া নিয়ে।
নিজে যেমন পর্ন আসক্তির ক্ষতিকর দিক নিয়ে পড়াশোনা করবেন ঠিক তেমনি আপনার স্বামীকেও পর্ন আসক্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে জানানোর আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। গুগল ঘেঁটে ঘেঁটে আর্টিকেল পড়বেন, ইউটিউবে ভিডিও দেখবেন, বই পড়বেন। পর্ন আসক্তির ভয়াবহতা সত্যিকার অর্থেই উপলব্ধি করতে পারলে আপনার স্বামীর ভেতর থেকেই একটা তাগাদা আসবে আসক্তি কাটানোর।
সেই সাথে আপনারা দুজনেই পর্ন আসক্তির সাথে লড়াই করার কৌশল সম্পর্কেও ধারণা পাবেন ইন্টারনেট বা বইপত্র ঘেঁটে ।
২) এর পরের ধাপ নিজেদের জন্য একজন কাউন্সেলর ঠিক করে নেয়া। কাউন্সেলর হতে পারেন মসজিদের ইমাম সাহেব, দু’ জনেরই কাছের কোন বিশ্বস্ত বয়স্ক মুরুব্বী, কোন মনোবিদ বা কোন যৌন বিশেষজ্ঞ। আপনার স্বামীর পর্ন আসক্তি কোন পর্যায়ের, মানে তিনি কি অল্প কিছুদিন হল পর্ন দেখা শুরু করেছেন এবং এখন আসক্তির প্রথম পর্যায়ে আছেন, সফটকোর পর্ন দেখেন নাকি হার্ডকোর পর্ন ছাড়া চলেই না, অল্প কিছুদিন নাকি দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক রকমের পর্ন আসক্ত, এসব কিছু চিন্তা করেই কাউন্সেলর ঠিক করতে হবে। মনে রাখবেন, কাউন্সেলরের সাহায্য নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ একটি মাত্র কাজে অবহেলার কারণে পর্ন আসক্তি কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হওয়ার নজির আছে ভুরিভুরি।
৩) পরের ধাপটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের খুঁজে বের করতে হবে কেন আপনার স্বামী পর্ন ভিডিও দেখছেন, কী আপনার স্বামীর জন্য পর্ন দেখার ট্রিগার হিসেবে কাজ করছে। হতে পারে,
  1. i) তিনি বিয়ের অনেক আগে থেকেই পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত।
  1. ii) বিয়ের পরে ইন্টারনেট ব্রাউযিং করতে করতে কৌতূহল বশত পর্ন ভিডিও দেখেছেন দু’ একবার, তারপর ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।
iii) কোন বন্ধুর মাধ্যমে।
  1. iv) ইরোটিক মুভি,আইটেম সং দেখার নেশা থেকে আরো কড়া পর্ন ভিডিওতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।
  1. v) হাইপার সেক্সুয়ালাইযড পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে।
  1. vi) যৌন অতৃপ্তি থেকে।
vii) মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য।
এই বিষয় গুলো চিহ্নিত করা খুবই জরুরী।
স্বামীর পর্ন আসক্তির জন্য নিজেকে দোষারোপ করা ঠিক হবেনা কখনোই। তারপরেও একটু চিন্তা করে দেখুনতো, এমনকিছু কি ঘটেছে আপনাদের মধ্যে যেটা আপনার স্বামীর সঙ্গে আপনার দুরত্ব বাড়িয়েছে, আপনাদের সম্পর্কে তৈরি করেছে শূন্যতা? আর এই শূন্যতা তিনি পূরণ করছেন পর্ন ভিডিও দিয়ে?
হাইপার সেক্সুয়ালাইযড এ সমাজে সবকিছুই একজন মানুষকে অবাধ, বিকৃত যৌনতার হাতছানি দেয়। মনে করুন আপনার স্বামী সারাদিন অফিসে কাজ করে বিধ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরলেন, কর্মক্ষেত্রের সহকর্মী থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের পথচারিনী, বিলবোর্ড, দোকানের সাইনবোর্ড সবকিছুই তার ভেতরে বিশাল এক শূন্যতার সৃষ্টি করে। তার এই শূন্যতা পূরণ করতে পারতেন আপনি নিজে। আপনার সাথে দুটো কথা,আপনার মিষ্টি মুখ, মিষ্টি মুখের এক চিলতে হাসি, হালকা খুনসুটি আপনার স্বামীর বুকের বিশাল শূন্যতা ভরিয়ে দিতো জান্নাতী সুখে। কিন্তু দেখা গেল আপনার স্বামী বাসায় ফিরে আপনাকে কাছেই পেলনা, আপনি হয়তো তখন বাসাতেই নেই, ঘরের বাইরে আপনার কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত। অথবা আপনি বাসাতে আছেন, কিন্তু আপনার স্বামীর সঙ্গে মিষ্টি করে কথা বললেননা, ঘরের কাজের চাপে আপনি এলেমেলো, অগোছালো চেহারা এবং বিরক্তি নিয়ে আসলে আপনার স্বামীর সামনে। অথয়াব ঘরে ঢোকার পরেই খ্যাঁক খ্যাঁক শুরু করে দিলেন, “এটা আনতে বলেছিলাম কেন আনোনি? আর কয়বার বলতে হবে? মিনসে, আজ তোমারই একদিন না হলে আমারই একদিন!”
আপনার স্বামীর বুকের ভেতরের শূন্যতার বিস্তৃতি আরো কিছুটা বাড়ে। অনলাইনে সারফিং করা শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে পর্ন আসক্তি। নাটক সিনেমার কল্যাণে এখন “কেয়ারিং ওয়াইফের” নতুন সংজ্ঞা তৈরি হয়েছে। স্বামীর সব ব্যাপারে খবরদারি করা, “এটা কেন করলে, ওটা কেন করলে না, ওর সঙ্গে কেন মিশলে…” এই ধরণের প্রশ্নবাণে বেচারা স্বামীকে সবসময় তটস্থ করে রাখাকে স্ত্রীকে এখন বলা হচ্ছে “কেয়ারিং ওয়াইফ”। কোন পুরুষ, সত্যিকারের পুরুষ স্ত্রীকে নিজের “বস”- এর ভূমিকায় দেখতে চায় না। এ কাজগুলো কতো অজস্র স্বামীদের মন বিষিয়ে তোলে, ধীরে ধীরে স্ত্রীর সাথে দূরত্ব তৈরি হয়, পরকীয়া, পর্ন আসক্তির সূচনা হয় তা আমরা বুঝতে পারছিনা!
আপনার স্বামীকে চোখের হেফাজতের গুরুত্বের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে থাকুন। দু’ জনের মিলিত প্রচেষ্টায় সিনেমা, নাটক দেখা ধীরে ধীরে কমাতে শুরু করুন, এবং এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ ভাবে এগুলো থেকে আপনার স্বামীকে দূরে থাকতে বলুন।
অবসর সময় খুব ভালোমতো কাজে লাগাতে হবে। ছুটির দিনগুলোতে মুভি,নাটক দেখা, ফেইসবুকিং, ইউটিউবে সারফিং করা বাদ দিয়ে নিজেদের মতো করে একান্ত সময় কাটান। অনুভব করুন আরো কতোটা ভালোবাসা বাকী রয়ে গেছে আপনাদের দু’জনের ভেতরে, সেই ভালোবাসা গুলো বেসে ফেলুন, বাইরে ঘুরতে যান, ফুটপাত ধরে হাঁটুন যতোক্ষণ ক্লান্ত না হন, রিকশায় বৃষ্টিবিলাস করুন (পর্দা মেইনটেইন করে)। জীবনের টানাপোড়নে আপনাদের মধ্যে যে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল কমে যাবে তার অনেকটাই।
আপনার স্বামীর জন্য সুন্দর করে সাজুন। রাস্তাঘাট,কর্মক্ষেত্রে নারীদেহের প্রদর্শনী দেখে দেখে তিনি বিষাক্ত মন নিয়ে ঘরে ফেরেন। আপনি অগোছালো হয়ে থাকলে সেই বিষাক্ত মন আরো বিষাক্ত হয়ে যায়, আপনার প্রতি আকর্ষণ কমতে থাকে। পরকীয়ার সূত্রপাত যেমন হয় তেমনি পর্ন দেখার
প্রবণতাও বাড়তে থাকে।
কুড়ি পেরোলেই বাঙ্গালী মেয়েরা কেমন যেন বুড়িয়ে যায়। নিজের শরীর ফিট রাখুন। বিয়ের প্রথম সময়ে দু’জনের চোখে মুগ্ধতার যে ঘোর লেগে থাকে বিয়ের পর কিছুটা সময় পার হলে তা কেটে যায় বাস্তবতার আঁচড়ে। আমরা কেউই স্বীকার করিনা, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনার শরীর বেঢপ আকৃতির হয়ে গেলে আপনার স্বামীর আপনার প্রতি দৈহিক আকর্ষণ কমে যাবে। ভালোবাসা,মায়া মমতা হয়তো আগের মতোই থাকে, কিন্তু দৈহিক আকর্ষণ নিশ্চিতভাবেই কমে যায়। এই ফাঁকা জায়গাটুকু দখল করে নেয় পরকীয়া কিংবা পর্ন আসক্তি।
আপনার স্বামীর দৈহিক চাহিদা মিটছে কিনা, তিনি একান্ত ভাবে আপনাকে তার প্রয়োজনমতো কাছে পাচ্ছেন কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। অন্তরঙ্গতার সময় আপনার স্বামীকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করুন। মাথায় রাখতে হবে,অন্তরঙ্গতার সময় স্বামীকে সাহায্য করার মানে এই না যে তিনি অন্তরঙ্গতার সময় এনাল সেক্স, ওরাল সেক্স করতে বললেও বা পর্ন এর নায়িকাদের মতো বিকৃত কাজ করতে বললেও আপনি সেটাই করবেন। শরীর ফিট রাখার মানে এই নয় যে আপনাকে পর্নস্টারদের মতো হতে হবে। সমস্যাটা আপনার স্বামীর,আপনার না। আপনি আপনার নিজের জীবনকে নষ্ট করবেন কেন? হারাম হালালের সীমার মধ্য থেকে যতোটুকু করা সম্ভব আপনি ততোটুকুই করবেন। এর বেশী কিছুনা।
একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে বোঝা দরকার। আপনার স্বামীর পর্ন দেখার জন্য আপনি দায়ী না। আপনি যাই করুন, যদি কোন অপরাধও করে ফেলেন, তবুও সেটা আপনার স্বামীর পর্ন আসক্তিকে জাস্টিফাই করে না। কিন্তু একজন মুসলিম নারী ও স্ত্রী হিসেবে, আপনি স্বামীর সংশোধনের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা আপনার দায়িত্ব। পশ্চিমা ফেমিনিস্ট দর্শন দ্বারা যাদের চিন্তা কলুষিত তাদের কাছে হয়তো এখানে অনেক কথাই ভালো লাগবে না, কিন্তু এ সমাধানগুলো তাদের জন্য না। এ সমাধানগুলো এবং এ বই মুসলিম হিসাবে ইসলামের অবস্থান থেকে মুসলিমদের জন্য বলা।
৪) আপনার স্বামীকে টার্গেট সেট করে দিন; “আগামী এক সপ্তাহ তুমি পর্ন দেখবে না…” এক সপ্তাহ পার হলে আবার নতুন টার্গেট দিন। এবার দু সপ্তাহ। এভাবে চলতে থাকবে। প্রত্যেকবার টার্গেট পূরণ করতে পারলে তাকে পুরষ্কৃত করুন, সেটা হতে পারে তার জন্য আপনার সুন্দর করে সাজা, কোন উপহার দেয়া অথবা তার পছন্দের কোন খাবার রান্না করা; কথায় আছে The only way to the heart is through the stomach!
৫) আপনার স্বামী টার্গেট পূরণ করতে না পারলে তার সঙ্গে রাগারাগি করবেন না। তাকে সাহস দিন, প্রেরণা যোগান। পুরুষের জন্য নারী যে কত বড় প্রেরণার উৎস তা নারীরা মনে হয়না কোনদিন বুঝবে!
৬) আপনার স্বামী তার পর্ন আসক্তি কাটানোর ব্যাপারে আন্তরিক, এটা যদি আপনি বুঝতে পারেন তাহলে আপনার স্বামীকে সময় দিন। তিনি বার বার ব্যর্থ হলেও তার সঙ্গে ধৈর্য ধরে লেগে থাকুন। কিন্তু আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনার স্বামী পর্ন আসক্তি কাটানোর ব্যাপারে একেবারেই আন্তরিক না, তিনি আপনার আবেগ নিয়ে খেলছেন তাহলে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। আপনিও তার আবেগ নিয়ে খেলুন। কান্নার বন্যা বইয়ে দিন, সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দিন,রান্না করা বন্ধ করুন; ভাতে মারুন, পানিতে মারুন, শরীরে মারুন।
৭) আপনার স্বামীকে পর্ন দেখা অবস্থায় দেখলে ঠিক তখনই কিছু বলার দরকার নেই। এ সময় তার থেকে দূরে থাকাই ভালো। তিনি এ সময় স্বাভাবিক অবস্থাতে থাকেন না, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে যেতে পারে। তাই পরে যে কোন একসময় এটা নিয়ে আলাপ করবেন।
৮) পিসি বা ফোনে পর্নসাইট ব্লক করার সফটওয়্যার বা অ্যাপস ইন্সটল করা অত্যন্ত জরুরী। এই ওয়েবসাইট বা অ্যাপস গুলো আপনার স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করেই ইন্সটল করতে হবে। লুকিয়ে লুকিয়ে গোয়েন্দাগিরি করার জন্যে নয়। আপনার স্বামীর সঙ্গে কোনরকম পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এগুলো ইন্সটল করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন বিষে বিষক্ষয় প্রবন্ধে।
ইন্সটল করতে সমস্যা হলে   আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সঙ্কোচবোধ করবেন না ।
৯) বাসায় পারতপক্ষে কাজের মেয়ে রাখবেন না, যেসব নারীদের সাথে আপনার স্বামীর বিয়ে হালাল, যাদের সঙ্গে আপনার স্বামীকে পর্দা মেইনটেইন করতে হবে তাঁদের ব্যাপারে আপনার স্বামীকে বারবার নাসীহাহ দিতে হবে। আপনার স্বামীকে পর্দার গুরুত্ব মনে করিয়ে দিতে হবে নিয়মিত।
১০) প্রচুর পরিমাণে দু’আ করতে হবে দুজনে মিলে। দান সাদকাহ করতে হবে। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
১১) আপনার সন্তানদের তাদের বাবার কাছ থেকে যতোটা পারা যায় দূরে রাখতে হবে। অনেক অনেক মানুষের পর্নোগ্রাফির সাথে পরিচয় ঘটে তাদের বাবাদের পর্ন আসক্তির সূত্রে।
১২) আপনার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও যদি আপনার স্বামী পর্ন আসক্তি কাটানোর ব্যাপারে আন্তরিক না হন, বারবার আপনার সঙ্গে প্রতারণা করেন, বারবার সুযোগ দেওয়ার পরও তিনি ব্যর্থ হন তাহলে আপনাকে আপনাদের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। একা একা কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না, আপনার কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন, মুরুব্বীদের সঙ্গে আলোচনা করুন। কোন কিছু লুকোনোর দরকার নেই। তারপর সবাই মিলে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটা ডিভোর্সও হতে হবে। তবে যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, তার আগে অবশ্যই কোন আলিমের সাথে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে হবে, আর অবশ্যই ইস্তেখারার সালাত আদায় করে নিতে হবে।
এবার আবার প্রথম ধাপে ফিরে যাই। পর্ন আসক্তি নিয়ে কথা শুরু করলে আপনার স্বামী যদি রাগারাগি করেন তাহলে ওকে কিছুটা সময় দিন। তারপর আবার বলুন। পর্ন আসক্তির ভয়াবহতা বুঝিয়ে বলুন। আবেগ নিয়ে খেলুন,সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ী চলে যাবার হুমকি দিন, তিনি একসময় বুঝবেন ইন শা আল্লাহ্‌। তারপর ধাপে ধাপে ২ থেকে শুরু করে পরে টিপস গুলো অনুসরণ করুন।
কোনমতেই আপনার স্বামীকে বোঝাতে না পারলে মুরব্বদীদের সাহায্য নিন। এতেও কাজ না হলে একটা পথ তো খোলা আছেই- বিচ্ছেদ।  তবে আবারো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি এধরণের চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত যদি নিতেই হবে তবে অবশ্যই কোন আলিমের পরামর্শ নিয়ে এবং ইস্তেখারার সালাত আদায় করেই অগ্রসর হবেন।
(শেষ)

মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটির পিডিএফ গুগল ড্রাইভ থেকে ডাউনলোড করুন