০৭. নীল রঙের অন্ধকার (৯ পর্ব)

নীল রঙের অন্ধকার (১)

পর্ন মুভি বিষাক্ত মাকড়াশার মতো জাল বিছিয়ে রাখে । গ্ল্যামার আর চাকচিক্যে আকৃষ্ট হয়ে যে কেউ আটকে পড়তে পারে এই জালে । একবার জালে আটকা পড়লে সেই জাল ভেদ করে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন । মাকড়াশা যেভাবে পোকাকে তিলে তিলে মেরে ফেলে পর্ন মুভিও আপনাকে ঠিক সেভাবেই একটু একটু করে ধ্বংস করে ফেলবে । আপনি আস্তে আস্তে হারাবেন আপনার স্বাস্থ্য, আপনার পরিবার, আপনার চাকুরী, এমনকি আপনার ভালবাসার মানুষটিকেও । আমাদের এই সিরিজে আমরা আপনাদের কিছু সত্যিকারের গল্প বলে যাব । গল্পগুলো কিছু পর্ন আসক্ত মানুষের । কীভাবে তারা হারিয়ে ফেলেছেন এই জীবনের মূল্যবান সবকিছুই, নীল রঙের অন্ধকার গহ্বরে কিভাবে তারা ডুবে যাচ্ছেন সেই গল্প ।

ব্যর্থতা আর আর্দ্রতার গল্প!

দীর্ঘশ্বাস আর নীরব আর্তনাদের গল্প!

নষ্ট হবার গল্প!

পাঠক, আপনাকে স্বাগতম !

আমার স্বামী পর্ন আসক্ত। এটি কষ্টকর , কারণ আমি একজন সমাজ কর্মী । তার সাথে পরিচয়ের আগ থেকেই আমি পর্নের বিরুদ্ধে লড়ে আসছি। আমি ব্যক্তি, পরিবার, এবং সমাজের উপর তার ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখেছি। আমি সারাটা জীবন যুদ্ধ করেছি। আমি ছোটবেলা থেকেই উত্ত্যাক্তকারীর কবলে পড়েছি, কিন্তু আমি সেক্স এবং যৌনতাকে স্পেশাল মনে করি। সেই দম্পতিদের জন্য এটা নিষ্পাপ এবং পবিত্র একটা উপহার যারা পরস্পরের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করেছে। আমার আর আমার স্বামীর মূল্যবোধ একই ধরনের ছিল। আমরা পরস্পরের সাথে সব সময় আমাদের চিন্তা চেতনা শেয়ার করতাম। আমরা পরস্পরের জন্য নিজেকে, নিজের ভালবাসাকে , নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলাম।

আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত যেদিন সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আর তার পর দিন ছিল সবচেয়ে খারাপ দিন। আমাদের বাগদান উদযাপন করতে , আর আমার পরিবারকে বাগদানের আংটি দেখাতে আমরা একসাথে আমাদের বাসায় যাই। ফেরার পথে সে আমাকে বললে যে সে আমাকে কিছু বলতে চায়। সে মনে করেছিল এটা এত গুরুত্বপূর্ণ না। তারপরেও আমার জানা উচিত।




সে পর্নে আসক্ত ছিল। ১২ বছর বয়স থেকে সে পর্নে আসক্ত ছিল। আমার সাথে দেখা হবার আগ পর্যন্ত তার কখনও অনুতাপ হয়নি । আমি মেনে নিতে চেষ্টা করলাম। আমার সবটা দক্ষতা দিয়ে তাকে পর্ন ত্যাগ করার জন্য উৎসাহিত করলাম। বাসায় ফিরে এসে নিজেকে একা আবিষ্কার করলাম। খুব কাঁদলাম। আমি জানতাম এটা আমার দোষ ছিল না , আমি কোন খারাপ কাজ করিনি। এমনকি পরিস্থিতি এতটা খারাপও ছিল না। সেতো শুধু পর্ন দেখেছে। নাইট ক্লাব বা পতিতালয়ে যায়নি। সে এখনও একজন ভাল মানুষ। তাকে আমি ভালবেসেছি, তার খারাপ অতীত জেনেও।

কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল। আমি তার সম্পর্কে ভুল ধারনা করেছি। সে এমন একজন মানুষ যে প্রমাণ করেছে, বছরের পর বছর পর্ন দেখেও মানুষের যৌন তাড়না পুরণ হয় না। সে এমন একজন মানুষ যে তার চোখ দিয়ে মেয়েদেরকে ব্যবহার করেছে , অবমাননা করেছে। কাজেই সে নির্দোষ না। সে এইসব কথা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে। আর এমন সময় সে এগুলো প্রকাশ করেছে জখন আমার আর ফিরে যাবার পথ খোলা নেই। নেই কোন প্রশ্ন করার সুযোগ। আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, “আগে থেকে জানলে আমি কি বিয়েতে রাজি হতাম? আমি কি তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে বলতাম? ” হয়তোবা করতাম। কিন্তু তার এই সত্য লুকিয়ে রাখা আমাকে দুর্বল করে দিয়েছে। এটা আমাকে এক বিকৃত যৌন চাহিদার এক রাক্ষসের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করছে।

এরপর বিয়েটা হয়েই গেল। সে সৎ থাকবে বলে আমাকে কথা দিয়েছিল। সে বলেছিল, যদি আমি চাই তবে আমরা সারা জীবন কোন সাপোর্ট গ্রুপে যাব। অবচেতন ভাবে তার কর্মকাণ্ডের দায়ভার আমি নিতে শুরু করলাম। আমরা সাপোর্ট গ্রুপে গেলাম । সেখানে পাশাপাশি দুইটা রুম ছিল। আমি সারাটা সময় কাঁদলাম। তাদের কথা শুনলাম। কিছু রূপসী মেয়ে তাদের সঙ্গীর অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার জন্য নিজেকে দোষারোপ করছিল । তারা খুব বড় ধরনের মানসিক আঘাত পেয়েছিল। আসলে একজনের ভুলের কারণে যখন নির্দোষ কাওকে পস্তাতে হয় তখন এমন হওয়া স্বাভাবিক। আমি সেই পুরুষমানুষ গুলোকে ঘৃণা করি। সেখানে গেলে আমার নিজেকে লাঞ্ছিত মনে হয়। আর সেখানে নিয়ে যাবার জন্য আমার স্বামীকেও ঘৃণা করি। আমি এই কাউন্সেলিং সেশনে যাওয়া পছন্দ করি না। কারণ আমি জানি সেখানে কারা যায়। সেদিন সে খুশিমনেই কাউন্সেলিং গ্রুপ থেকে ফেরে। কিন্তু আমি গাড়ি পর্যন্ত যাবার আগেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি। বাসায় ফিরে সে আমার কাছে বসে। কিন্তু সে বোঝে না আমার ভিতর কি চলছে। সে আস্তে আস্তে ভাল হতে থাকে। কিন্তু আমার গায়ে “Wife of a Porn Addict.” লেবেলটা চিরতরে লেগে যায়।




তার আর আমার সম্পর্কের পবিত্রতা নষ্ট হয়ে গেছে। সেকি পর্ন তারকাদের সাথে আমার তুলনা করবে না? সেকি আমাকে আসলেই ভালবাসবে? সে কীভাবে আমাকে ভালবাসবে যেখানে আমাকে দেখলেই তার পর্নমুভির কথা মনে পড়ে?

বিয়ের পর কিছুদিন সব ভালোই চলছিল। একদিন আমি অফিসের মিটিং সেরে তাড়াতাড়ি বাসায় খাবার খেতে ফিরলাম। খাওয়া সেরে আমি তাকে বিদায় জানালাম। একটু পরে সে আমাকে মেইল করল যে তার আবার পর্ন দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু সে দেখবে কিনা বুঝতে পারছে না। আমি বুঝতে পারলাম , এটা এমন এক আসক্তি, যা থেকে সে কখনোওই ও মুক্তি পায় নি । এরপর থেকে আমি খুব ভয়ে থাকি, খুব সতর্ক থাকে।

আমি বুঝতে পারলাম অন্তরঙ্গতাকে আমি শুধু তাকে আমার কাছে বেধে রাখার জন্য ব্যবহার করি। আমার ইচ্ছা না থাকলেও এটা করতে হয়। এরপর তার যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে লাগল। আমার ভয় হয় যে আমি তাকে পর্নোগ্রাফির জগতে হারিয়ে ফেলব।

আমি ডায়েট করা শুরু করেছি। এখন আমার নিজের শরীর কে আমি নিজেই ঘৃণা করি। আমি এখন সবসময় তার প্রতি সন্ধিহান। আমি তার অতীতের জন্য ক্ষুব্ধ। কিন্তু সে আমাকে খুশি রাখতে সচেষ্ট।তাই আমি এখন কাউন্সেলিংএ যাই কীভাবে তাকে মাফ করবো তা বুঝতে। আমি যাই করি না কেন,সে হয়ত আর ভালো হবে না। আমার সাথে সে কখনোই সুখী হবে না। আমি এসব মেনে নিয়েছি।

আমার স্বামী তার বড় ভাই ও বাবার মাধ্যমে খুব ছোটবেলাতে পর্নোগ্রাফির সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায়। সে এর নেতিবাচক ফলাফল বোঝার বয়স হবার আগেই আসক্ত হয়েছে। আর আমি… আমি আমার মনে ভিতর অবিশ্বাস পুষে নিয়ে চলেছি। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছি এই অচেনা পৃথিবীর সাথে মানিয়ে নেবার। পর্নের বেড়াজালে আমরা আজ আবদ্ধ।

(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত)







নীল রঙের অন্ধকার (২)

আমার নাম গ্যাব্রিয়েল ।
আমি একজন পর্ন  আসক্ত ।
বয়স যখন ১৩ চলছিল তখন একদিন হুট করেই আমি  পর্ন  মুভি দেখা শুরু করেছিলাম ।  প্রথমবার পর্ন  মুভি দেখার অভিজ্ঞতা আমার কাছে খুব সুখকর ছিলনা ।  আমার এখনো মনে আছে ,   প্রথম দিন পর্ন  মুভি দেখার সময় আমার গা গুলিয়ে উঠেছিল । পেটের ভেতরের নাড়ী ভুঁড়িগুলো দলা পাকিয়ে উপরে উঠে আসতে চাচ্ছিল । বমি করতে পারলে যেন আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচবো এরকম মনে  হচ্ছিল  । আসলে , ঐ পর্ন  মুভিটাতে আমি দেখেছিলাম একজন পুরুষ তার সঙ্গিনীর গলা চেপে ধরে তাকে পাশবিক ভাবে নির্যাতন করছে । আমার বয়স যেহেতু অনেক কম ছিল এবং আমি কখনোই এরকম দৃশ্য আগে দেখিনি এজন্য এটা আমি ঠিক হজম করতে পারছিলাম না ।  সেই ভয়াবহ দৃশ্য আমার  মস্তিষ্কে একেবারে চিরস্থায়ী যায়গা দখল করে নিল । আজকেও, এত বছর পরেও আমি সেই দৃশ্যগুলো চোখের সামনে  স্পষ্ট দেখতে পাই ।
প্রথমবার পর্ন  মুভি দেখার পর আমি বেশ কয়েকদিন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম । সব সময় কেমন জানি অস্বস্তি লাগতো । ঠিকমতো খেতে বা ঘুমাতে পারতাম না ।  গা গুলাতো সবসময় ।   কিন্তু তারপরেও আমার ভেতর থেকে  সবসময় একটা তাড়না অনুভব করতাম পর্ন  দেখার । কে জানি আমাকে বলতো  , “ যা গ্যাব্রিয়েল যা  ল্যাপটপ টা অন করে পর্ন  দেখ”।   প্রথমবার পর্ন  মুভি দেখার দুঃসহ অভিজ্ঞতার পর  আমি চাচ্ছিলাম না আবার পর্ন  মুভি  দেখতে ।   কিন্তু ভেতরের তাড়নাটার কাছে , নগ্ন নারীদেহ দেখার লোভের কাছে কয়েকদিনের মধ্যেই আমি  পরাজিত হয়ে গেলাম ।   একদিন ল্যাপটপের কাছে আমাকে ছুটে যেতে হল , ব্রাউজার অন করে  পর্ন  ওয়েবসাইটে লগইন করে পর্ন  দেখতে হল । সেইদিন  থেকেই শুরু হল আমার জীবনের  অন্ধকার পর্ব ।
আমার কিশোর বয়সের এই আদিম প্রবৃত্তির আগুনে কেরেসিন ঢেলেছিল আমার বাবার পর্ন  আসক্তি । আমার বাবার কোন চাকুরী ছিল না । আমার মায়ের চাকুরীর উপরেই আমাদের পুরো সংসার নির্ভরশীল ছিল ।  মা যখন অফিসে চলে যেত,তখন আমার বাবা  ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসে টিভিতে ঘন্টার পর ঘন্টা পর্ন  মুভি  দেখত ।  গ্রীষ্মের স্কুল ছুটির দিনগুলোতে আমাকে  বাড়িতেই থাকতে হত । আমার ভেতরে এমনিতেই সবসময় ছিল  পর্ন  দেখার তাড়না , তারওপর নিজের বাবাই যখন এভাবে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে  কোনরকম রাখঢাক না রেখেই খোলামেলা  ভাবে পর্নমুভি দেখত তখন আমি আর কীভাবে নিজেকে আটকাবো ?
আর বাবাও আমাকে কিছু বলতনা ।  বুঝতেই পারছেন পরিস্থিতি কেমন ছিল ।
দিনগুলো এভাবেই চলতে থাকলো ।  স্কুল শেষ করে কলেজে উঠলাম । আমার পর্ন  আসক্তিও আগের মতোই রইলো , কিছুটা বাড়লো বরং ।  আমি তখনো ঠিক বুঝতে পারি নি পর্ন  মুভির আসক্তি আমার কী ক্ষতি করে ফেলেছে ।  যখন বুঝলাম তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে ।
জীবনের বেশ কয়েকটি বসন্ত  একাকী পার হবার  পর আমি পেলাম  ভালবাসার মানুষের   খোঁজ ।   প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গিয়েছিল দুজনকে দুজনার । এরপর    বিয়েটা সেরে ফেলতে খুব বেশি দেরী করিনি । কিন্তু আমাদের সংসারটা বেশি দিন টিকলো না ।  প্রথম দিকে  ভালোবাসার কোন কমতি ছিলনা । পাগলের মতো আমি  ভালোবাসতাম ওকে , সেও আমাকে পাগলের মতো ভালবাসতো  । কিন্তু সমস্যাটা ছিল অন্য যায়গায় ।
আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে  দৈহিকমিলনের সময়  সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষে পরিণত হয়ে যেতাম  । প্রথম বার  পর্ন মুভিতে দেখা দৃশ্য গুলো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো বারবার ।   ক্ষুধার্ত বাঘকে   একটুকরো মাংসের সামনে ফেলে  দিলে বাঘ যেমন হয়ে যায় আমার অবস্থাও অনেকটা তেমন হয়ে যেত । আমি যেন একটা পশু হয়ে যেতাম  , যে শুধু   নিজেকেই  তৃপ্ত করতে জানে , যার মন বলে কিছু নেই , যে কখনো  কাউকে ভালোবাসেনি , জানেও না  ভালবাসা কাকে বলে । দৈহিক মিলনের ব্যাপারটা আমার জন্য প্রচন্ড অস্বস্তিকর হয়ে যায় । পুরোটা সময় আমার  ভালবাসার মানুষটাকে  ভোগ করার  একটা মাংসপিন্ড ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারতাম না । আমার স্ত্রী সব  সহ্য করত । কিচ্ছু বলতনা আমাকে । ছলছল চোখে মাঝে মাঝে তাকাতো আমার দিকে। সেই কান্নাভেজা চোখে লেগে থাকতো  অজস্র নীরব দীর্ঘশ্বাস আর বুক ভাঙ্গা চাপা আর্তনাদ ।
নিজেকে ধিক্কার দিতাম বারবার । গ্যাব্রিয়েল , তুমি না তোমার স্ত্রীকে ভালবাসো ? তুমি না তার  নীল চোখের তারায়   খুঁজে  পাও সাত রাজার ধন ? তুমি না একদিন সমুদ্রের পাড়ে সূর্যাস্তের সময় হাঁটতে হাঁটতে  তাকে  স্বপ্ন দেখিয়েছিলে সাদা কালো জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার এই পৃথিবীটাতে  লাল নীল সংসার পাতার ? তোমার কথা শুনে তাঁর দুচোখের  খুশির  সেই ঝিলিক তুমি ভুলে গেছো । ভুলে গেছো সেই সময়  কিভাবে পরমনির্ভরতায় সে তোমার কাঁধে মাথা রেখেছিল । তোমাকে ঘিরে সেও একটা স্বপ্ন দেখেছিল । সেও চেয়েছিল একটা  ছোট্ট সুখের সংসার ।   আজ তার সঙ্গেই তুমি এমন করছো ?  গ্যাব্রিয়েল তুমি খুব খারাপ মানুষ , গ্যাব্রিয়েল তুমি খুবই  খারাপ মানুষ ।
মানসিকভাবে আমি ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলাম । আমার হৃদয়টা সবসময়  খাঁ খাঁ করত ।  আমি চাইতাম আমার স্ত্রীকে ভালবাসতে , পশুর মতো আচরণ না করতে । কিন্তু আমার পর্ন  আসক্তি আমার অন্তরের ভেতরে একটা বিরাট শুন্যতার সৃষ্টি করেছিল,   আমার সমস্ত স্বত্তা থেকে  শুষে নিয়েছিল স্বামী-স্ত্রীর “একান্ত” মুহূর্তে  ভালবাসতে পারার  ক্ষমতা  ।
আমি আর এই ভয়ঙ্কর মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলাম না  কিছুদিনের ভেতরেই আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল ।আমার এখন বারবার  মনে হয় , ঈশ! আমি যদি কোনদিন পর্ন মুভি না দেখতাম । আমার বাবা যদি পর্ন  আসক্ত না হতো । আমি যদি এমন কোন সমাজে বেড়ে উঠতাম যেখানে  নারীদেহকে স্ক্রিনে এভাবে   ভোগ্যপন্য বানিয়ে  ফেলা হয়নি – তাহলে  পছন্দের মানুষটিকে নিয়ে দেখা আমার স্বপ্নগুলো এভাবে মিথ্যে হয়ে যেত না , ছারখার হয়ে যেত না আমার পৃথিবীটা ।
বৃষ্টি খুব পছন্দ ছিল আমার ।   মাঝে মাঝেই  বৃষ্টিতে   ভিজতাম আমি । একটু বেশিক্ষণ ভিজলেই  আমার  স্ত্রী  ছাতা আর তোয়ালে নিয়ে  হাজির হয়ে যেত । জোরাজুরি করতো মাথা মুছে ছাতার নীচে চলে আসার । আমার যদি জ্বর চলে আসে !
এখনো আকাশ কালো করে বৃষ্টি আসে । আমি সেই বৃষ্টিতে ভিজি ।  এখন আর ছাতা নিয়ে কেউ আসে না আমার জন্য ।
আমি কাঁদি ।
আমার চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । আমার কানে বাজতে  থাকে একটা মিষ্টি কন্ঠ – এইযে সাহেব, আর  ঢং করতে হবে না । ঠান্ডা লেগে যাবে তো ।  তাড়াতাড়ি মাথা মুছে ছাতার নিচে চলে আসুন তো, কুইক ।
(মূল লিখাটি https://fightthenewdrug.org/ সাইট থেকে সংগৃহীত)




নীল রঙের অন্ধকার (৩) 

 

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।
বাবা,
প্রথমেই বলে নি আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি আর তোমার জন্য আমার জীবনে যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। তোমার পর্ন দেখার কারণে আমার কি সমস্যা হয়েছে তা তোমার জানা উচিত। তুমি ভাবো এটা শুধু তোমার কিংবা তোমার আর আম্মার সম্পর্কে প্রভাব ফেলে।তুমি বুঝতেও পারোনি এটা কি গভীর সংকটে ফেলেছে তোমার সন্তানদের।
বয়স আমার ১২, সদ্য কিশোরী বয়সে পা দিচ্ছি, এমন সময়ই আমি তোমার কম্পিউটারে পর্ন আবিষ্কার করি।প্রথমত আমার খুব অবাক লাগতো, কারণ তুমি একদিকে আমাকে বলছ মুভি থেকে এটা ওটা না করতে আর নিজেই দিনের পর দিন এসব আবর্জনা গিলে চলেছ।আমি কি দেখব আর কি দেখব না এসব যখন তুমি বলতে আসতে তখন আমি এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে বের করে দিতাম, কারণ আমি জানতাম তুমি একটা ভন্ড!
আমি জানতাম, আম্মা একমাত্র নারী না যাকে তুমি চাও।তুমি যে আড় চোখে আমাদের দেখতে আমার সেটা নজর এড়ায়নি। তোমাকে দেখে পুরুষ জাতির প্রতি আমার প্রবল বিতৃষ্ণা তৈরি হয়।ভেবে বসি, সব পুরুষই বোধহয় তোমার মতো বিকৃত মানসিকতার হয়!
তুমি আমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলে কীভাবে আমার পোশাক আশে পাশের মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আর কীভাবে আমার নিজের অন্তরাত্মাকে আরো সুন্দর করা উচিত।কিন্তু তোমার কাজে কর্মে আমি বুঝেছিলাম আমি তখনি সুন্দর হতে পারব যখন আমি ম্যাগাজিনের কভারের মেয়েটির মত বা তোমার পর্নের মেয়েটির মত হতে পারব। তোমার কথার কোন মূল্যই তাই আমার কাছে ছিল না,বরং তোমার ‘লেকচার’ শুনতে খুব বিরক্ত লাগতো।
যত দিন যাচ্ছিল, এই পচে যাওয়া সমাজ শুধু আমার কানের কাছে শুধু ভ্যান ভ্যান করে যাচ্ছিল, আমি তখনই নিজেকে সুন্দর ভাবতে পারব যখন আমি “তাদের” মত হব।তোমার প্রতি বিশ্বাসটা দিন দিন শূন্যের কোঠায় নেমে আসছিল, কারণ তুমি যা বলতে  ঠিক তার উল্টোটা করতে।আমি হন্যে হয়ে এমন একজনকে খুঁজে বেড়িয়েছি যে শুধু আমার অঙ্গসৌষ্ঠব এর জন্য আমাকে ভালবাসবেনা,আমি মানুষটার জন্য ভালবাসবে।
বাসায় আমার বান্ধবীরা এলে আমি ভাবতাম তুমি কী চোখে তাদের দেখতে! আমার বান্ধবীর মত দেখতে নাকি তোমার নষ্ট কল্পনার কোন এক অংশ হিসেবে?
আমি বিয়ে করলাম  এমন একজন পুরুষকে যার জীবনে পর্নোগ্রাফি ছোবল দিতে পারে নি।আমি এখনো আমার ভেতর থেকে পুরুষ জাতির প্রতি অবিশ্বাস ঝেড়ে ফেলতে পারিনি।হ্যাঁ বাবা, তোমার পর্ন দেখা আমার স্বামীর সাথে আমার সম্পর্কে বছরের পর বছর প্রভাব রেখে গেছে।
আমি তোমাকে শুধু একটা কথাই বলতে চাই, হয়তো তুমি এখনো বুঝবে না, তোমার পর্নআসক্তি শুধু তোমার জীবন ধ্বংস করে নি, আমাদের সবার জীবন নষ্টের বিষাক্ত বীজ বপন করেছে।আমি যখনি চিন্তা করি আমাদের সমাজে কি গভীর শিকড় গেড়ে বসে গেছে এই ভয়ংকর নেশা, আমি অসুস্থবোধ করি।আমার প্রচন্ড খারাপ লাগে যখন আমার ছোট্ট ছেলের সাথে পর্ণের ভয়াবহতা নিয়ে কথা কথা বলতে হয়।আমি তাকে বুঝাই পর্ন আর দশটা পাপাচারের মতই শুধু নিজেকে না, আশে পাশের সবাইকে আঘাত করে।
আমি তো তোমাকে ক্ষমা করেই দিয়েছি।ঈশ্বর আমাকে এই কুপ্রভাব থেকে যেভাবে সরিয়ে এনেছেন সে জন্য আমি তার প্রতি সত্যি কৃতজ্ঞ।এখনো মাঝে মাঝে শিউরে উঠি। আমি প্রার্থনা করি যেন তুমি এই নোংরা নেশা থেকে বের হয়ে আসতে পারো, আরও অসংখ্য পুরুষ যেন এর করালগ্রাস থেকে মুক্তি পায়।
-তোমার আদরের মেয়ে
রেফারেন্সঃ https://faithit.com/an-open-letter-to-the-dad-looking-at-porn/




নীল রঙের অন্ধকার (৪)

# “আমার নাম আমান্ডা । আমার মনে হচ্ছে পর্নোগ্রাফি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অন্যানাদের জানানো উচিত যাতে তারা   সাবধান হতে পারে। আমার সঙ্গী ছিল মারাত্মক রকমের পর্নআসক্ত। শুরু থেকেই সে আমাকে বুঝাতে শুরু করে যে, পর্ন  আসলে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার আর সবাই কম বেশি এটা দেখে। সে তার বন্ধুদের কথাও বলতো যে, তারাও পর্ন দেখে  থাকে। কষ্টকর হলেও আমি শুরু থেকে তার এই আচরণের সাথে মানিয়ে নিতে চাইতাম কিন্তু দিন দিন এটা অসহ্যকর  পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। দেড় বছর ধরে নিজের মনের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমার  স্বামী তখন দিনে প্রায় ৩ বার পর্ন ভিডিও দেখতো। তার চিন্তাভাবনা সব কিছু জুড়েই ছিল পর্ন। এছাড়া শারীরিকভাবে সে  আমাকে নির্যাতন করতে শুরু করে। সে আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পর্নমুভির মতো করে  ধর্ষণ করতো।আমার মাথায় গুলি  ভরা পিস্তল তাক করে মেরে ফেলার হুমকি দিত। আমি বুঝতে পারলাম, সে পর্ন এর কল্পনার জগত আর বাস্তব জগত  মিশিয়ে ফেলেছে। সেখানে যা দেখতো, আমার সাথে একই আচরণ করার চেষ্টা করতো। [১]

# আমার বয়স একান্ন বছর, আমি এক প্রতিবন্ধী কন্যার মা। পর্ন আমার পরিবারকে ধ্বংস করে ছেড়েছে ।
আমি ষোল বছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়েছিলাম এমন একজন মানুষের সাথে, যে জানতই না যে একজন নারীর সাথে কীভাবে চলতে হয়।  সে সবসময় হতাশাগ্রস্ত ছিল। তার  সমস্যাটা কী ছিল সে ব্যাপারে আমার কোন ধারণাই ছিল না । অফিস  থেকে ফিরে বিছানার এক পাশে এক ল্যাপটপ নিয়ে শুয়ে থাকত। যখন আমি তার সাথে কথা বলতে যেতাম
তখন সে ল্যাপটপটা দ্রুত নামিয়ে রাখত আর বলত যে সে বাথরুমে যাবে। এরপর যখন আমি চলে যেতাম তখন সে ফিরে আসত আর আগের মতোই কাজ করত। এক রবিবার সকালে আমার এক ছেলে হাঁটার সময় তাকে ল্যাপটপে পর্ন ডাউনলোড করতে দেখতে পেল। আমার ছেলেই আমাকে জানাতে দেরি করলনা।
.
অবশেষে আমি সমস্যাটা জানলাম। এর এক বছরের মধ্যেই আমরা তালাক নিই। ছয় বছর হল আমাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার।  আমার চিন্তা আমাদের প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে নিয়ে, যার দেখাশোনার দিকে ওর কোন নজরই নেই।
তালাকের এক বছর পরে আমি আরেকজন মানুষকে পাই যাকে দেখে সত্যিই ভাল মনে হয়, কিন্তু তারও ঠিক একই
সমস্যা আছে। যখন বাসায় আসে তখন থেকে কাজ করতে বাইরে যাওয়ার  সময় পর্যন্ত সে তার ঘরে থাকে। সে সপ্তাহে
পাঁচদিন এমন করে । তার কোন বন্ধু নেই; সে হতাশায় ভুগছে; তার আছে পর্নের ১০০টি ডিভিডি আর ২০০টি ম্যাগাজিন ।
এমনকি সে এক নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কেও লিপ্ত ।  সে আমাদের মাঝে একটা ভাল সম্পর্কের সব সুযোগকে নষ্ট
করেছে। সে কোন নারীর সাথেই সামাজিক হতে পারে না এবং নারীদেরকে শুধু পণ্য হিসেবেই দেখে। প্রকাশ্যেই স্বীকার
করে  যে সে কখনো সুখী হবে না কিন্তু তারপরও সে পর্নের প্রতি আসক্তির এতটাই গভীরে গেছে যে সেখান থেকে সে ফিরে
আসতে পারে না। আমার ভয় হল, যদি তার মা-বাবা(যারা খুব অসুস্থ) মারা যায়, তাহলে সে আরো গভীরভাবে
পর্নের প্রতি আসক্ত হবে।

আমার বোন একটি তের বছর বয়সী ছেলেকে দত্তক নিয়েছিল। ছয় বছর বয়সে তাকে এবং তার  ভাইবোনদের উদ্ধার করে ডিএসএস। এই ছেলেমেয়েগুলোর মা-বাবা পর্ন দেখত। আর পর্ন দেখার সময় তারা বাচ্চাদেরকে শোয়ার ঘরের মেঝেতে  থাকতে বাধ্য করত। টেলিভিশনে যেসব যৌনকর্ম দেখানো হত সেগুলোর অনুকরণ করতে এই দুই, পাঁচ ও ছয় বছর বয়সী বাচ্চাদেরকে
তারা বাধ্য করত। বাচ্চাগুলো এমন করতে অস্বীকার করলে তাদেরকে পেটানো হত। সেখানে থাকত
বাচ্চাদের এক চাচা- সেও পর্ন দেখত। তার বিকৃত লালসার শিকার হয়   শিকার হয় পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি।
আমি চাই সরকার পর্নমুভি নিষিদ্ধ ঘোষনা করুক ।  ইন্টারনেট জুড়ে রয়েছে পর্নমুভির বিশাল ভান্ডার যা প্রতিদিন হাজারো জীবন ধ্বংস করছে, যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে ।  আমি এখন আরেকটি সম্পর্কে
জড়াতে ভয় পাই। আমি যে আরো আঘাত সহ্য করতে পারব তা আর বিশ্বাস হয় না। [২]


#……… আমি এখনও হাইস্কুলে পড়ি, আর আমি গত চার বছর ধরে পর্নের প্রতি আসক্ত। এর শুরুটা ছিল কৌতুহল,
প্রথমে আমি শুধু জানতে চাইছিলাম যে এটা কী, তারপর কিভাবে কিভাবে যেন আমি এটাতে আসক্ত হয়ে পড়লাম । আমার অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে এখন আমি খারাপ চিন্তা ছাড়া কোন মেয়ের দিকে তাকাতেও পারি না।
স্কুলের বাইরে বা শপিংমলে হাঁটার সময় বন্ধুদের সাথে থাকলেও আমি শঙ্কিত থাকি।
.
আমি পর্ন দেখতে থাকলাম, আর এক বছর পর আমি মানুষকে অশ্লীল মেসেজ পাঠাতে শুরু করলাম, যা আমাকে যৌনকর্মের
প্রতি আগ্রহী করে তুলল, এর কয়েক মাস পরে আমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারাই, কারণ আমি তার প্রতি কিছু ভুল
আচরণ করেছিলাম।আর এখন আমি কোন মেয়ের সাথে দেখা করতেও ভয় পাই।আমার কৌতুহলের সাড়ে চার বছর পরে অবশেষে আমি একজনের  কাছ থেকে সাহায্য পেলাম।আমি পর্ন দেখা শুরু করেছিলাম এবং সাহায্য পেয়ে আমি তা বাদ দিয়েছি। আর আমি এ নিয়ে গর্বিত। [৩]

# …… আমার নাম সেলিনা । আমি ইউ.এস.এ তে থাকি । আমি  মনে করি পর্নমুভি পারিবারিক বন্ধন দুর্বল করে ফেলে , আত্মীয়তার সম্পর্কের বাঁধন আলগা করে ফেলে , মাঝে মাঝে ছিড়েই ফেলে । একদিন আমি হুট করেই আবিষ্কার করে বসলাম আমার এক আংকেল (উনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই কোলেপিঠে  করে মানুষ করেছেন ) ভয়ংকর রকমের পর্ন আসক্ত । কয়েক বছর আগে উনার ছোট বাচ্চাকে দেখাশোনা করার জন্য আমি কিছুদিন উনার বাসায় ছিলাম । এই সময় একদিন আমি  একটা ক্লজেটে প্রচুর পরিমাণ পর্নমুভির সিডি পেয়ে গেলাম । এই সিডি গুলো ছিল এমন কতগুলো ক্যাটাগরির যা ভাবলে আমার গা ঘিন ঘিন করে ওঠে – ঘৃণায় । ইনসেস্ট, রেপ , টীনিস … ছি ,ছি । কি জঘন্য । নিমিষেই আংকেলের ওপর থেকে আমার সব বিশ্বাস ,  শ্রদ্ধা উবে গেল  কর্পূরের মতো ।  সেই  সাথে  ছোটবেলায় তার সাথে কাটানো চমৎকার সময়গুলো,  স্মৃতি গুলো আমাকে এক বিরাট প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল । তার সঙ্গে কুস্তি খেলা , তার কোলে বসে টিভি দেখা এগুলো কি শুধু  নিখাঁদ স্নেহ, ভালোবাসার প্রকাশ ছিল  নাকি অন্য কিছু ……?  যেহেতু এর সঠিক উত্তর আমার কাছে নাই তাই আমি তাকে আর বিশ্বাস করতে পারি না । আমার মেয়ে তার আশেপাশে থাকলে আমি অস্বস্তি বোধ করি ।
.
পর্ন আসক্তদের বলতে চাই – তোমরা কি খুশি হবে যদি তোমাদের কোন নিকটাত্মীয় দেখে ফেলে তুমি ইনসেস্ট পর্ন দেখছো ? কেমন লাগবে তোমার তখন ? [৪]
.
(ভাই, একবার ভাবুনতো  আপনার আদরের ছেলে-মেয়ে ,ভাগ্নে- ভাগ্নী ,  ভাতিজা- ভাতিজি , ছোট বোন  বা অন্য কোণ নিকটাত্মীয় যদি কোণ দিন কোণ ভাবে আপনার পর্ন আসক্তির কথা জেনে যায় তারা কতটা কষ্ট পাবে ।  আপনাকে তারা হয়তো হিরোর আসনে বসিয়েছিল, আপনাকে পদে পদে অনুসরণ করতো ,আপনার মতো হতে চাইতো , আপনার কাছে তারা নিরাপত্তা খুঁজে পেত । আপনার অন্ধকার জগতের হদিস পাবার  পরেও তাদের কাছে আপনি কি আর সেই আগের আপনি থাকবেন ?  তাদের কাছে মুখ দেখাবেন কি করে ? )




নীল রঙের অন্ধকার (৫)

বিশোর্ধ্ব এক পর্ন-আসক্ত তরুণের জীবনের একটি দিন

আমি পর্নে আসক্ত।
আমি সবসময় এরকম না, কিন্তু অনেক দিন থাকে যেদিন ঘুম থেকে উঠে কোন কিছুই করতে ইচ্ছা
হয় না। বরং ঠিক করি, দিনটা যাবে পর্ন দেখে, হস্তমৈথুন করে, খাওয়া-দাওয়া করে এবং ঘুমিয়ে। হয়তো আমি এটা আগে থেকেই ঠিক করে রাখি না, তাও কীভাবে যেন হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে, মোটামুটি  ১০ম বারের বেলায় যথাসম্ভব চেষ্টা করি একদমই না ভাবতে, যে আমি বেশ ভাল পরিমাণ সময়ই সম্পূর্ণ অচেতনতায় কাটাচ্ছি। পোষায় না যদিও। শুধু কয়েক মুহুর্তের যৌন-আনন্দ। এমনকি কখনো তাও না, শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস একটু দ্রুত হওয়া। (পর্নের) চেহারাগুলোর কথা চিন্তা করি, নিজেকে ওদের জায়গায় কল্পনা করি। আমার পছন্দের পর্নের টাইপ হল যেগুলোতে গ্রুপ-সেক্স থাকে। কিছু বন্ধু-বান্ধব একত্র হওয়া শুধুমাত্র যৌনতার খাতিরে। তেমন কোন ব্যাপার না। তাদের লজ্জা করে না, নাই অপরাধবোধ, নাই খেদ। শুধু মেনে নেওয়া। শুধু সেক্স। শুধু নগ্ন হওয়া, একে অপরের দিকে মুচকি হাসা। ভাল।
আমার ভাল লাগে।
প্রায়ই চিন্তা করি, আমি ওরকম করতে পারতাম কি না- নিজের কাছে নিজের যৌনতার স্বীকৃতি পাওয়া এবং যতটা চাই ততটা মুক্ত আর উদার হওয়া।
আমি সবসময় বুঝতে পারি কোনটা মেকি, আসল না। আমি ঐ ভিডিওগুলো একদমই সহ্য করতে পারি না, যেগুলো দেখেই বুঝা যায় মানুষগুলো অভিনয় করছে, অথবা যা-ই করুক, বাধ্য হয়ে করছে। মাঝেমাঝে আমি হয়তো ওটাও দেখবো এবং হস্তমৈথুনও করব। কোন সীমা নেই, শুধু হস্তমৈথুন করতে চাই। নিজেকে অচেতনতায় ফেলে দিয়ে অনুভূতিহীন হতে চাই। ভাবা শুরু করি, কতটা সেক্স আমি মিস করছি এবং আমি সত্যিকারের রিলেশনশিপকে কতটা ভয় পাই। এমনকি যে সব “রিলেশনশিপে” আমি ছিলাম, সবগুলোই পর্ন দ্বারা এত বেশি প্রভাবিত হয়ে গিয়েছিল যে একটা স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার সাথে ওগুলোর আর কোন পার্থক্য ছিল না। কোন ভালবাসা বা সম্মান ছিল না। খালি উত্তেজনা আর জটিলতা।
এখন রাত ৯টা বাজে, মনে হয় সকাল ৯টায় শুরু করেছিলাম, আজকে ক্লাসেও যাইনি, বাসার বাইরেও যাইনি (একবার বাদে। ম্যাকডোনাল্ড থেকে খাবার আনতে গিয়েছিলাম, কারণ ম্যাকডোনাল্ড আর পর্ন কেন জানি একসাথে ভালই যায়)। সারাদিনের মধ্যে আমার খুব বাজে সময় যায় যখন চিন্তা করি আমার জীবনে কখনো পরিবর্তন হবে না এবং আমি সবসময়ই আমার ভীতি ও সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করতে ভয় পাবো। তার চেয়ে বরং কম্পিউটারে বা সেল-ফোনে পর্ন দেখতে থাকি, অথবা মাথার মধ্যে কল্পনা করতে থাকি ওগুলো। এতে ভাল কিছু হয় না এবং ফলাফলটাও আসলে পোষায় না। আমি বেশ ক্লান্ত আর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। মাঝেমাঝে কষ্ট হয়। গতকাল থেকে গোসল করিনি। সম্প্রতি আমার একটা “রিলেশনশিপ” ব্রেক আপ হয়ে গেছে, আমি এখনো তা নিয়ে বিষণ্ণ। আমি পর্ন ছেড়ে দিতে পারছি না কারণ আমার মনে হচ্ছে এটা তাকে (এক্স-গার্লফ্রেন্ড) আমার সাথে কোনভাবে যুক্ত রাখছে। জগাখিচুড়ি টাইপ বিকৃত মানসিকতা আর কি!
ব্যাপার হল, আমি বেশ স্বাভাবিক একটা মানুষ, স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র। আমি চমৎকার বৈজ্ঞানিক জিনিস-পত্র পড়াশোনা করি এবং ক্লাস নিই। কিন্তু তাও, আমার ভাল লাগে না এগুলোর কোনটিই। যখন এই মানসিকতায় প্রবেশ করি, কোন কিছুরই পরোয়া করি না তখন। কোন কিছু চিন্তা করতে চাই না, সব ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছা করে। মনে হতে থাকে সবকিছুই আমার অধিকারসূত্রে পাওয়া। কোন কিছুর জন্যই আমি কৃতজ্ঞ না। লজ্জা, অপরাধবোধ আর আশাহীনতার সবচেয়ে গভীর গর্তে পড়ে আছি আমি। আত্মসম্মান জানালা দিয়ে পালায়, শুধু চিন্তা করি কতটা ঘৃণা করি নিজের জীবনকে এবং কতটা চাই মারা যেতে। পর্নে আসক্তির মাত্র দশ বছরের মাথায় জিনিসগুলো বিবর্তিত হয়ে পরোক্ষভাবে আত্মঘাতী চিন্তায় পরিণত হয়েছে।
মজার ব্যাপার হল, হয়তো আগামীকাল সকালে ঘুম থেকে উঠে সব ঠিক হয়ে যাবে এবং আমি আরো একবার নিজেকে বুঝাতে সক্ষম হব যে পর্ন-আসক্তিকে চিরতরে দূর করে ফেলব। পৃথিবী আমার হাতের মুঠোয় থাকবে, আমি চমৎকার সব কাজ করব। কিন্তু যে মুহূর্তে মনে হবে ব্যাপারগুলো আমার মন মত হচ্ছে না, আবার আমি যৌনতার সেই অন্ধকার গর্তে পড়ে যাব। যৌনতা খারাপ না। এটা স্বাভাবিক এবং সুন্দর। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পর্ন আমার জন্য এটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নারীর প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গীকে নষ্ট করেছে পর্ন, যেটাকে কি না আমি ভালবাসি ও কদর করি বলে দাবী করি। পর্ন হয়তো সবার জন্য এরকম না, কিন্তু আমাকে এটা ধ্বংস করে ফেলছে। আমাকে ধসিয়ে দেয় প্রতিটিবার। তাহলে কেন আমি বারবার এখানে আসি? কারণ এটা পরিচিত, এবং আমি নিরাশ হয়ে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছাই যে তখন আর কোন কিছুর পরোয়া করি না। আমি এর আদ্যোপান্ত জানি, জানি কীভাবে এতে ঢুকতে হয় এবং কীভাবে এটা থেকে বের হতে হয়।
এই সময়টায় আমার সামনের যৌনদ্দীপক ছবি এবং “যৌন তৃপ্তি” ছাড়া অন্য আর কিছু থাকে না। অনেকবার চেষ্টা করেছি এটা দূর করার। খুব বেশি হলে কয়েক মাস যাওয়ার পর এই অভ্যাস মাথা-চাড়া দিয়ে উঠে আমাকে বুঝায় যে আমি সর্বোচ্চ এই পর্যন্তই আসতে পারব এবং এটাই আমার যৌনতা আর পুরুষত্বকে সংজ্ঞায়িত করে। আমি ভবিষ্যতে নিজেকে ঠিক করার চেষ্টা করব, কিন্তু এখন আমি বিষণ্ণ ও ভীত যে সারা জীবন এভাবেই চলতে থাকবে।
নিজের উপর ক্ষুব্ধ আমি, ক্ষুব্ধ নিজের অতীতের উপর, শৈশব আর সংস্কৃতির উপর, যা কিছু আমাকে নারী ও যৌনতার মাঝের সম্পর্ক শিখিয়েছে। আমি তাদেরকে দুষতে চাই, যারা আমাকে শিখিয়েছে নিজের অনুভূতি আর উদ্বেগকে চেপে রেখে সবকিছু ঠিক আছে ভান করতে।
আমি ঠিক নেই।
আমি একলা, আমি ভীত।
মনে হচ্ছে যা-ই করছি, আমাকে জোর করে করানো হচ্ছে এবং আমি যা চাই, তা থেকে আমাকে আটকে রাখা হচ্ছে। আমি কি চাই, তাও জানি না। কাউন্সেলিং ও গ্রুপ-থেরাপি নিচ্ছি। দেখা যাক কি হয়। এতদিনে সামান্য উন্নতি হলেও নিজের উপর খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ আনতে পারিনি। যখন পা পিছলে যায়, এখানে এসে পড়ি, মনের একদম অস্পষ্ট একটা জায়গায়, যেখানে কোন কিছুরই মানে নেই, যে জায়গাটা আমার জীবনের সব ভালকে ঢেকে দেয়। আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি। ক্লান্ত লাগে, অনেক ক্লান্ত… এবং আসক্তি চলতেই থাকে।
আমি একজন পর্ন-অ্যাডিক্ট।
—————————————————————-
দুর্ভাগ্যবশত উপরের এই ব্যক্তিগত কাহিনীটি মানুষ যতটা মনে করে তার চেয়েও কমন। এখন অসংখ্য তরুণ পর্ন দেখার খারাপ ফলগুলো উপলব্ধি করছে এবং মুক্ত হতে চাইছে। কিন্তু পর্ন অত্যন্ত আসক্তিকর প্রকৃতির হওয়ায় তারা নিজেদেরকে বিষণ্ণতা, (পর্নের উপর) নির্ভরশীলতা, এবং স্ব-চিকিৎসার এক চক্রে আটক অবস্থায় আবিষ্কার করছে। রিলেশনশিপ এবং আত্মমর্যাদাবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, আসক্তির শেকলে আটকা পড়ে।
“আপনি” কী করতে পারেন
পর্ন খুবই আকর্ষণীয় আর উত্তেজনাময় মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে এটা যা করে তা হল, দর্শককে আসক্ত করা এবং তার সম্পর্কগুলোর ক্ষতি করা। আর্টিকেলটা শেয়ার করে পর্ন দেখার ক্ষতি এবং ফলাফল বিষয়ক এই আসল কাহিনীর প্রতি আলোকপাত করতে পারেন।
(মূল লিখাটি- www.fightthenewdrug.com সাইট থেকে সংগৃহীত)




নীল রঙের অন্ধকার (৬) 

 

আমি সুমন(ছদ্মনাম),বয়স ১৯ বছর।
একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আমার জন্ম গ্রামের একটি ছোট পরিবারে।
আজ আমি আমার জীবনের ছয়টি বছরের কিছু গোপন কথা আপনাদেরকে বলব।
আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। সেই সময়টাতে আমাদের গ্রামে ভিসিডি ভাড়ায় আনা হতো এবং প্রায় সব বয়সের মানুষজন দেখতো। তখন বাংলা মুভিগুলোই দেখানো হতো। ভিসিডি আনা নেয়ার কাজটি যারা করতো একটা সময় তাদের সাথে আমার ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায়।
সে বছর বৈশাখী মেলার দিন কয়েকজন বন্ধু মিলে মুভি দেখছি, তখন রাত প্রায় ১টা। একজন একটা মুভি চালালো যেটা ছিলো পর্নমুভি। আমি অবশ্য দেখতে চাইছিলাম না। সেইদিনই প্রথম পর্নমুভির সঙ্গে আমার পরিচয়।
এর মধ্যে আর কোন দিন পর্ন দেখিনি। তবে যখন ক্লাস সিক্সের শেষের দিকে- হঠাৎ একদিন রাতে দাদা সম্পর্কের একজনের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয় (সেই সময়টাতে অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে আমার স্পষ্ট কোন ধারণা ছিলো না)। তো ওই ব্যক্তির সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হচ্ছিল । একটা সময় দেখলাম উনি সেক্স রিলেটিড কথা বেশি বলছেন। আমি উনাকে অনেক সম্মান করতাম তাই পুরোটা সময় তার বিভিন্ন কথা শুনে গেলাম। ওইদিন রাতের কিছু কিছু কথা আমার মনে কৌতুহলের জন্ম দিয়েছিল। যাইহোক এভাবে আমার ক্লাস সিক্স শেষ হলো।
ক্লাস সেভেনে ।
পড়াশোনার চাপ অনেক, আমি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।এর মাঝে কয়েকজন বন্ধুর গ্রার্লফ্রেন্ড হয়। আমার  কিছু কিছু বিষয়ে জানার আগ্রহ বাড়তে থাকে । তখন যেগুলো জেনেছিলাম তার প্রায় সবই ছিল ভুল তথ্য ।যাইহোক,সেভেনের শেষ দিকে একটা মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক হয়ে যায়(যদিও এটা এই বয়সের জন্য নয়)। এর মাঝে আমি আরো ৪ বার ভিসিডিতে পর্নমুভি দেখি।
ক্লাস এইট।
পড়াশোনা আর আমার নতুন প্রেম,এই দুইটা নিয়েই আমার সময় কাটতো। অনেক ভালোই চলছিলো সম্পর্কটা আমার । আমি ওই মেয়েটার প্রতি  খুবই দুর্বল হয়ে যায় (এই বয়সের প্রেম জীবনে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে, নিজের জীবন থেকেই আমি তা শিখেছি)। আমি একটা মাল্টিমিডিয়া ফোন নেই।মাঝে মাঝে মেমোরি কার্ডে পর্নমুভি এনে দেখতাম। ক্লাস এইটের শেষদিকে দুর্ভাগ্যবশত আমাদের ব্রেকআপ হয়ে যায়। ঠিক এর পর থেকেই আমার জীবন অন্যদিকে মোড় নেয়।
ক্লাস নাইন।
আমি একা হয়ে পড়ি, মনে বিষণ্ণতা। তখন একা থাকতে বেশি ভালো লাগতো।আস্তে আস্তে আমি সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। তখন মোবাইলে টানা দুইমাস পর্নমুভি দেখলাম। একদিন আমার এক বন্ধু  একটা লিংক দিলো, আমি মেগাবাইট কিনে সেখানে যাই এবং কিছু গল্প পড়ি।আসলে এগুলো ছিলো চটি গল্প, যা পরে বুঝতে পেরেছিলাম। তখন আমি সময় পেলেই মেগাবাইট কিনে বিভিন্ন সাইটে গিয়ে চটি গল্প পড়তাম। গল্পগুলো আমি অনেক উপভোগ করতাম তখন। স্বাভাবিক ভাবেই মাস্টারবেশনের একটা প্রভাব শুরু হয় আমার মধ্যে। ক্লাস নাইন শেষ হয় এভাবেই ।

ক্লাস টেন।
আমি দেখলাম মেয়েদের প্রতি আমার কোন বিশ্বাস বা ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই, সব মেয়েকে মনে হয় প্রতারিণী (আসলে এটা আমি অনেক পরে বুঝতে পারি যে, প্রেমের সম্পর্ক নষ্ট হলে অনেকের কাছেই এমন মনে হয়)।
এই সময়টাতে আমি যৌনতার ব্যাপারে প্রচন্ড কৌতুহলী হয়ে উঠি।চটি গল্প বাদ দিয়ে আনলিমিটেড প্যাক কিনে পর্ন ডাউনলোড করতাম আর সেগুলো দেখতাম। তখন আমার স্বাস্থ্য  খারাপ হয়ে যেতে থাকে। তবুও আমি পর্ন দেখতে থাকি(আসলে পর্ন আর মাস্টারবেট, এই দুটোর মাঝে একটা সম্পর্ক সবসময় থাকে)। পর্ন না দেখলে তখন আর ভালো লাগতোনা। এমনও হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার আগের রাতেও আমি পর্ন দেখে তারপর ঘুমিয়েছি। সুতরাং আপনারা বুঝতেই পারছেন তখন  কি  মারাত্মক পর্ন আসক্ত ছিলাম আমি। এমনও দিন গেছে আমি চার বারেরও বেশি পর্ন দেখেছি । এসএসসি পরীক্ষার পরের ফ্রি সময়টাতে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এসএসসি রেজাল্ট ভয়াবহ রকমের খারাপ হয়।
কলেজে ভর্তি হতে এলাম শহরে। তবে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারিনা, স্যার ক্লাস করান আর আমি টেবিলের নিচে ফোন রেখে পর্ন ডাউনলোড করি। র্ফাস্ট ইয়ারের মাঝোমাঝি সময়ে আমি পিসি নিলাম। কম্পিউটারে এইচডি পর্ন দেখা শুরু হল। হয় দোকান থেকে টাকায় কিনে অথবা বন্ধুদের মোবাইল থেকে নিয়ে দেখি। কিছুদিন পর ব্রডব্র্যান্ড কানেকশন নেই- তখন অবস্থা আরো খারাপ হয়।কেননা অনলাইনে এইচডি পর্ন দেখা যায় যেকোন সময়।
একটা সময় আমি দেখলাম আমার কিছু মনে থাকে না- অথচ নয় দশ বছর আগের কথা সব মনে থাকে।হাজারো সমস্যায় জীবন তেজপাতা। আমি এও বুঝতে পারছিলাম আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি, কিন্তু পর্ন ছাড়া থাকতে পারছিনা। রাত ২টা বা ৩টা পর্যন্তও আমি পর্ন দেখি। যেহেতু আমি একা রুমে থাকতাম তাই আমি না চাইলেও বার বার দেখতে মন চাইতো।
একদিন ফেসবুকে এই (http://bit.ly/2niIvdK ) নোটটি দেখতে পাই । তখন আমার মনে হল “আমি হয়তো ভুল পথে আছি” এবং এর কিছুদিন পর আমি আরো একটি স্টেটাস দেখতে পাই  পর্নোগ্রাফিঃ মানবতার জন্য হুমকি (https://www.facebook.com/lostmodesty/ ) নামের একটি পেজে। সেদিন থেকে আমার ভেতর অপরাধবোধ কাজ করতে থাকে।আমি অনেক চিন্তা করি, কি করা যায় ? কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। আমি দেখলাম আমার ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম “আর না” !!!!
[এই নোটটিতে(http://bit.ly/2niIvdK ) কিছু সমস্যা আছে। পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তি থেকে বাঁচার জন্য এখানে মেডিটেশান করার কথা বলা হয়েছে। মেডিটেশান করা শিরক। পড়ুন এই সিরিজের (http://www.quraneralo.com/quantam_1/ ) সব কয়টি লিখা- লস্ট মডেস্টি]

কিছু বিষয় নিয়ে অসংখ্যবার চিন্তা করেছি। পরে গুগলের সহায়তায় কিছু তথ্য পেলাম। একটা সময় নিজেকেই প্রশ্ন করলাম—-
(ক) পর্ন/মাস্টারবেশনের এর সুফল কী ?
-আমি এর কোন ভালো দিক খুজে পাইনি। শুধু মনের অদৃশ্য শান্তনা।
(খ) পর্ন/মাস্টারবেশনের এর কুফল কী ?
-প্রথমে আমি দেখলাম এটা ব্রেইনের ক্ষতি করছে। আমার অনেক কিছুই মনে থাকেনা, মেজাজ  খিটখিটে থাকে সবসময়।
শারীরিক ভাবে ক্ষতি হয়, আগে আমার যেখানে একটা কাজ করতে ৫মিনিট লাগতো, সেটা করতে এখন ১০মিনিটের মত সময় লাগে। বিভিন্ন অসুস্থতা সবসময় লেগেই থাকে।
মেয়েদেরকে সবসময় ভোগ্যপণ্য মনে হয়। একজন মেয়ে মানুষকে দেখলেই মনে হয় এও হয়তো সেই ধরনেরই মেয়ে।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকেনা।
জীবনটা একঘেয়ে হয়ে যায়।
পড়াশোনা বা ক্যারিয়ার সব নষ্ট হয়ে যায়।
নারী নির্যাতনে উৎসাহিত করে……
 আমি এ থেকে বের হয়ে আসতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না।
প্রথমত এটা এমন এক নেশা, যেটা আমার কাছে মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে মনে হয়। মাছের ফাঁদে মাছে ঢুকতে পারে কিন্তু সেখানে থেকে বের হওয়া অনেক কঠিন। এমন হয়েছে কয়েকদিন দুরে থেকেছি আবার শুরু হয়েছে। আমি ৫০ এরও অধিক পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি, কোন কোন সময় আমি সফল আবার  কোন কোন সময় ব্যর্থ হয়েছি।
মাঝে এমন হয়েছে, যখন দেখছি আর পারছিনা তখন তাবলীগ জামতে চলে গেছি তিনদিনের জন্য। তখন দেখা গেলো আমার ভেতর আল্লাহর প্রতি একটা ভয় কাজ করে এবং ওগুলো দেখতে মন চাচ্ছে না।
এখন আমি এই কাজগুলো করছি-
১) কম্পিউটারে k-9 ওয়েব প্রটেকশন ইন্সটল করেছি, এবং এমন এক পাসওয়ার্ড যেটা আমিও যানিনা এবং পৃথিবীর কেউ যানে না।
k-9 এর ইউজার ইমেল(যে মেইল দিয়ে k9 রেজিঃ, ডাউনলোড, ইন্সটল করেছি) এর রিকভারি অপশন বন্ধ করেদিয়েছি, অথাৎ এই মেইলের পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে বা ভুলে গেলে এটা আর রিকভারি করা যাবে না।
মেইলের পাসওয়ার্ড ছোট কাগজে লিছে একটি কোরআন শরিফের ভিতরে রেখে দিয়েছি(যদিও এটা ঠিক হয়েছে কিনা জানিনা, তবে আমি পাপ থেকে মুক্তি পেতে এটা করেছি)।
ইউটিউবে অনেক স্কেন্ডাল বা পর্ন ছড়িয়ে থাকে, বিভিন্ন  মুভিগুতে বেডরুমের দৃশ্য থাকে, যেগুলো আমাকে পর্ন দেখতে প্ররোচিত করে। আর এই কারনে এখন আগামী সাত দিনের জন্য ইউটিউ k-9 এর মাধ্যমে ব্লক করে রেখেছি। যেন আগামী সাত দিন ইউটিউব না দেখতে পারি(যদিও এটা অনেক কষ্টকর হবে)।
ফোনে যেন নেট ইউজ করতে না পারি সেই জন্য রাউটার বিক্রি করে দিয়েছি।
আমি অনেক অনেকবার দেখেছি কুরআন তেলাওয়াত বা নামাজ অথাৎ ধর্মীয় বিষয়গুলো মনকে সতেজ রাখে এবং কোন অপরাধ করার আগে বিবেক দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়। এ কাজগুলো আমি আগে করতাম না। এখন করার চেষ্টা করি।
সবার সাথে কানেক্টেড থাকোর চিন্তা করছি।
এখন আমি শপথ করি আজকের পর আর না, কিন্তু ? কিন্তু দেখা গেলো কাল আবারো সেই একই কাজ করে ফেলি।আমার বড় সমস্যা হলো নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি আমি। আমি জানি এর কারাপ দিকগুলো কিন্তু ওই সময়টাতে আমার আর এইসব কথা মনে থাকে না।
…এখানে সংক্ষেপে কিছুটা লিখার চেষ্টা করেছি মাত্র । ভোর ৫টা বাজতে চললো প্রায় । প্রয়োজনে আমি আরো জানাতে পারবো। আমি চাই আমার মত কেউ যেন এমন না হয়। তরুণদেরকে সতর্ক করুন প্লিজ, আমার দেখা অনেক ছেলে তার জীবনকে নষ্ট করছে প্রতিনিয়তই। আমার জন্য দোয়া করবেন, আপনাদের জন্যও দোয়া রইলো। আমার পরিচয়টি গোপন রাখবেন।




নীল রঙের অন্ধকার (৭)  

অনেকে FTND (http://fightthenewdrug.org ) তে নিজেদের জীবনের ব্যক্তিগত ঘটনার কথা বলেন কীভাবে তাদের ও তাদের সঙ্গীর জীবনে পর্ন প্রভাব ফেলেছে। আমরা এসব ঘটনাবলি খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়ে থাকি। পর্নোগ্রাফির অপকারিতা সম্পর্কে বিজ্ঞান ও গবেষনা নিয়তই কাজ করে যাচ্ছে, সেই সাথে কারো জীবনের সত্যি কাহিনী আমাদের সামনে আসলে তা জীবন্ত হয়ে তুলে ধরে পর্নোগ্রাফি বাস্তব জীবনে কী ক্ষতি করছে।
আমরা সম্প্রতি একজনের চিঠি পেয়েছি যিনি পর্ন থেকে অবাস্তব যৌনাচরণ শিখতে চেষ্টা করার কুফল ভোগ করেছেন। পর্নে যা দেখতে মজার ও আনন্দদায়ক লাগে তা বাস্তব জীবনে নীচ ও অস্বস্তিকর। আবার এটাই প্রচুর মানুষের কাছে যৌনশিক্ষার একমাত্র মাধ্যম। এরকম অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে পর্ন কীভাবে ভুল যৌনশিক্ষা দেয়, যা সংগীর সাথে সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ফেলে যৌনজীবনের ক্ষতি করে।
……
প্রিয় এডিটর,
আমার বয়স ২৪ বছর, কেনিয়ার অধিবাসী। আমি ১৫ বছর বয়সে ম্যাগাজিনে পর্ন বিষয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম। কারন সে সময়ে আমার তখনও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। আমি খুব চটপটে ও এ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় এবং নতুন কিছু শিখতে ভালবাসি। তাই আমার সামনে কোনকিছু আসলে তা না পড়ে থাকতে পারতাম না। এভাবেই পর্নোগ্রাফির সাথে ম্যাগাজিন থেকে আমার পরিচয়।
পরবর্তীতে যখন ইন্টারনেট ব্যবহারের সু্যোগ পেলাম, শুরুতেই জানতাম কি খুঁজতে হবে। তখন থেকেই পর্ন দেখা শুরু করলাম ও পর্নের মেয়েদেরকে নিজের সাথে কল্পনা করতে লাগলাম। সত্যি বলতে, পর্নের এই অভ্যাসটা আমার কাছে ভালই মনে হত কারন পর্নের মেয়েদের শুধু পর্দায় দেখতে পেতাম আর তাদেরকে কল্পনা করতে পারতাম বাস্তবে দেখা না করেই বা না শুয়েই। শুরুর দিকে মাত্রাটা বেশি না থাকলেও কিছুদিন পর আমার নিয়মিত পর্ন দেখার অভ্যাস নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেল।
আমি সব সময়ই বিশ্বাস করেছিলাম পর্ন দেখা এবং এর কলাকুশলীদের নিয়ে গবেষনা করা ভবিষ্যতে আমাকে সংগিনীর জন্য মস্ত ভাল প্রেমিক করে তুলবে, আরো আকর্ষনীয় করে তুলবে এবং গার্লফ্রেন্ড পেতে সাহায্য করবে। এর একটিও সত্য হয় নি যদিও। যেমন, পর্ন থেকে পাওয়া টিপস আমাকে বিছানাতে একেবারে বাজে করে ফেললো। বস্তুত আমার অবস্থা এতই বাজে হয়ে গেল যে, আমি শুধু পর্নের মাধ্যমেই উত্তেজিত হতাম, গার্লফ্রেন্ডের দ্বারা না। আমি আর কোন কিছুকে পাত্তা দিতাম না, সারাক্ষন পর্ন দেখতাম, প্রায় সবখানেই, এমনকী জনবহুল জায়গাতেও। এটা হয়ে দাঁড়াল একটা বড় সমস্যা।
আসলেই পর্ন এক কঠিন নেশা। এটা অস্বস্তিকর এবং এর ফলাফল সর্বনাশা। একবার আমার এক প্রাক্তন বান্ধবী প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়ে প্রশ্ন করেছিল, “তুমি কেন শুধু পর্দার ঐ নড়াচড়া করা দৃশ্যগুলোর জন্য আমাকে ধোঁকা দিচ্ছ?” সে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল, কিন্তু আমি ছিলাম আসক্ত। সে আমাকে এটা ছেড়ে দিতে বলার পরেও যখন পারলাম না, আমাদের সম্পর্কটা ভেঙ্গে গেল। আমি হতাশ হয়ে পড়লাম।
মজার ব্যপার হল, একটা ধারণা আছে যে, আপনি চাইলেই যেকোনো সময় পর্ন দেখা ছেড়ে দিতে পারবেন এবং এটা কোন কঠিন বিষয় নয়- কিন্তু এটা সত্যি না। আপনি যত দেখবেন, তত আরো বেশি চাইবেন। সত্যিই পর্ন সম্পর্কে আগে যা যা বিশ্বাস করতাম এর সবই মিথ্যা। পর্ন আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে নি, ভাল প্রেমিক করে তোলে নি, আমার সম্পর্ককে ভাল করে টিকিয়ে রাখে নি। পর্ন থেকে আমি যা পেয়েছিলাম তা হল বিফলে যাওয়া সময়, গ্লানি এবং যৌনজীবন সম্পর্কে ভুল মন্ত্রণা। আরো খারাপ বিষয় হল, পর্ন সবখানে ছড়িয়ে থাকে। এমনকী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও। তাই আমি এ থেকে পালাতে পারতাম না।
কেন আমি পর্ন দেখা বন্ধ করার ও এর বিরুদ্ধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিলাম? গত মাসের শেষ দিকে আমার বান্ধবী সিদ্ধান্ত নিল আমাদের সম্পর্কের ইতি টানার। এতগুলো ব্যর্থ চেষ্টার পর আর তাকে বোঝাতে পারি নি যে আমি বদলাতে পারব। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম যখন সে বলেছিল, “পর্ন তোমাকে কেবল একটা অপদার্থ করে ফেলবে। বিদায়।” ভীষণ হতাশ হলাম কারন সে ছিল আমার তৃতীয় বান্ধবী যে এই কথাটি বললো। এবং জানেন, আমি এর কোন পাল্টা যুক্তি দেখাতে পারি নি।
সত্যি কথা হল, পর্ন স্বাস্থ্যকর নয়, উপকারী নয়। আমি সেরে উঠতে চাই নিজের কারনে ও আমার ভবিষ্যতের সম্পর্কগুলোর কারনে।
আশা করি আমার কথাগুলো যে পর্ন দেখা বন্ধ করতে চাইছে এমন কাউকে অনুপ্রেরণা দেবে। কারণ এ থেকে ভাল কিছুই আসে না। সত্যিই, পর্ন ভালবাসাকে মেরে ফেলে। FTND  কে ধন্যবাদ ভাল কাজের জন্য।
………
পর্ন যদিও সীমাহীন যৌনাচার দিয়ে ভরা এক অবাস্তব জগতের আশা দেখায়, বিজ্ঞান প্রতিনিয়তই প্রমান করে যাচ্ছে বাস্তবটা আসলে ঠিক এর বিপরীত। তাছাড়া, পর্নের কারনে বিপুল সংখ্যক পুরুষ দর্শক অপূর্ণ যৌনচাহিদার সমস্যায় ভুগছে। যার মাধ্যমে স্পষ্টতই বোঝা যায়, তারা শুধুমাত্র পর্নের প্রভাবে তাদের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এর জন্য বাস্তব যৌনক্রিয়ায় আর সক্রিয় থাকতে পারছে না। বিছানায় ভাল প্রেমিক হবার কথা ভুলেই যান, যেখানে পর্ন আপনাকে একেবারে যৌন নিষ্ক্রিয় দশায় নিয়ে যাচ্ছে।
পর্ন থেকে যৌনশিক্ষা গ্রহণ করা এবং এ্যাকশন মুভিতে গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করার দৃশ্য দেখে গাড়ি চালানো শেখা একই কথা। এখানে সবই অত্যন্ত অবাস্তব, অতিরঞ্জিত এবং একেবারেই বাস্তব জীবনের কাছাকাছি না। পর্ন এক প্রকার ফাঁকি, একারনে এটি পারস্পরিক সম্পর্কের মাঝে অবাস্তব চাহিদা তৈরি করে এবং ভালবাসা ও ঘনিষ্ঠতার মাঝে বিকৃত আচরণ ঢুকিয়ে দেয়।
সমাজকে বুঝতে হবে যে, বাস্তব সংস্রবই পারে মানুষকে সত্যিকারের যৌনতৃপ্তি দিতে। আপনি যতই পর্ন দেখুন না কেন, দিন শেষে রক্তমাংসের মানুষের সাথে মেশার কামনাই করবেন। সমাজ এখন প্রযুক্তির সাথে যৌনক্রিয়া চর্চার ভয়ংকর পথে যাত্রা করছে। পর্ন দেখার অভ্যাসকে স্বাভাবিক বলে ধরে নিলে আমরা এমন একটা অবস্থায় গিয়ে পৌঁছাব যেখানে বাস্তব সম্পর্কগুলোর জায়গা পর্ন দখল করে নেবে…

 


নীল রঙের অন্ধকার (৮) 

 

আসসালামু আলাইকুম ভাই,
আল্লাহ্‌ আপনাদের কাজে বারাকাহ দিক । আমার নাম আবু সাব্বির (ছদ্মনাম)। আমি ১৯ বছরের এক তরুণ। থাকি শান্তিনগরে (ছদ্ম ঠিকানা)। পর্ন এবং মাস্টারবেশন আসক্তি আমার জীবনকে বিষিয়ে দিয়েছে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে আমি আপনাদের ফেসবুক পেইজ (www.facebook.com/lostmodesty ) খুঁজে পাই । তখনই বেশ কিছু লিখা পড়ে ফেলি। অনেকেই পর্নআসক্তির বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামের কথা শেয়ার করেছেন। আমার জন্য তাঁদের লড়াইয়ের কাহিনীগুলো ছিল খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। অনেক দিন ধরেই আমি চেষ্টা করছি এই আসক্তি কাটিয়ে ওঠার,কিন্তু  কেন জানি পারছিনা। আমি হতাশ,ক্লান্ত, নিঃস্ব ,রিক্ত । দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করুন। আমার কাহিনী অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। সময় নিয়ে পড়বেন আশা করি।

শুরু করি তাহলে? তখন আমার বয়স ছিল পাঁচ বছর। একটা ফ্ল্যাটে আরো দুইটা পরিবারের সঙ্গে আমরা ভাড়া থাকতাম। ঐ ফ্ল্যাটে  তিনটা রুম থাকলেও টয়লেট ছিল কেবল একটা। আমাদের রুমের বামের রুমে যেই পরিবার থাকতো,তাঁদের ক্লাস সিক্স পড়ুয়া এক ছেলে ছিল। আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম,মাঝে মাঝে তার কাছে পড়া বুঝতে যেতাম। সে আমার বড় ভাইয়ের মতো ছিল।
হুট করে সে আমার সঙ্গে অদ্ভুত আচরণ করা শুরু করলো । আমার সামনেই পোশাক পাল্টাতো,আমার শরীরের এখানে সেখানে বাজেভাবে স্পর্শ করতো। আমি তার এরকম অদ্ভুত আচরণের কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেতাম না। সে আমার স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে হাত বুলাতো এবং মাস্টারবেট (এটা আমি অনেক পরে বুঝেছিলাম) করতো । সে বলতো,‘দেখ তুই আমার আদরের ছোট ভাই। এইসব কথা কাউকে বলবি না’।
কয়েকদিনের ভেতরেই সে আমাকে শিখিয়ে দিল কীভাবে মাস্টারবেট করতে হয়। যখন আমাদের বাবা মা কেউই বাসায় থাকতো না, তখন সে আমার এখানে সেখানে হাত বুলিয়ে মাস্টারবেট করতো। আমি ভাবতাম এটা বোধহয় মজার একটা খেলা, বাবা মা বাসায় না থাকলে এটা খেলতে হয়।
আমি সেই সময় ছিলাম একেবারেই বাচ্চা। তেমন কিছুই বুঝতাম না। দেখতাম সে মাস্টারবেট করার কিছুক্ষণ পরে স্নানঘরে যেয়ে গোসল করে নিচ্ছে। একবছর ধরে এমনটা চললো। তারপর ওরা বাসা বদলে চলে গেল অন্য জায়গায়।
কিন্তু এর মধ্যে যা ক্ষতি হবার হয়ে গিয়েছে। তাকে ছাড়াই আমি মাস্টারবেট করা শিখে গিয়েছি ততোদিনে। মাসে অন্তত দুইবার মাস্টারবেট করতাম। কোন ধারনাই ছিলনা আমি কি করছি,কিন্তু এটা আমাকে আনন্দ দিত প্রচুর।
দশ বছর বয়সে ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা। ততোদিনে আমি পুরোদস্তর মাস্টারবেশনে আসক্ত একজন। একদিন মাস্টারবেট করার পর দেখি আমার লজ্জাস্থান থেকে কি জানি বের হয়ে আসছে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম প্রচন্ড। সেই সময় মুখে ব্রণ উঠতে শুরু করলো। শরীর দুর্বল হয়ে গেল। পড়শোনায় মন দিতে সংগ্রাম করা লাগতো তখন।
সেই সময় আমাদের দেশে মাল্টিমিডিয়া ফোন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে কেবল। আমার কয়েকজন বন্ধুর mp4 প্লেয়ার ছিল। তাদের সঙ্গে আমি পর্ন দেখা শুরু করলাম। টিফিন পিরিয়ডে,ক্লাসের আগে, ক্লাসের পরে এমনকি ক্লাসে বসে বসেও আমি পর্ন দেখতাম। বন্ধুদের সঙ্গে মেয়ে নিয়ে সবসময়  রসালো আলোচনা করতাম। বয়স খুব বেশি না হলেও ততোদিনে আমি পরিণত হয়েছি দাঁতালো এক বুনো শুয়োরে।
নিজের মাল্টিমিডিয়া ফোন হাতে পেলাম  ১৪ বছর বয়সে। ইন্টারনেট তখন খুব একটা সহজলভ্য ছিলনা তারপরেও যতবেশি সম্ভব পর্ন ডাওনলোড দিতাম। স্কুলের রেজাল্ট খুব খারাপ হতে থাকলো। মানসিক সমস্যা তো আগে থেকে ছিলই , বিভিন্ন দৈহিক সমস্যাও দেখা দিতে লাগলো। স্কুল বদলে অন্য স্কুলে গেলাম যেন পড়াশোনা আবার নতুন উদ্যোমে শুরু করতে পারি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলোনা। পড়াশোনা করব কি নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতেই পারলাম না! চুপচাপ থাকতাম সব সময়,কারো সঙ্গে তেমন একটা মিশতাম না। খেলাধুলার ধারে কাছেও যেতামনা , সত্যি বলতে কি এনার্জি পেতাম না খেলাধুলা করার। সবসময় হয়রান লাগতো। স্কুল পালাতাম। সপ্তাহে দুইবারের মতো পর্ন দেখতাম আর মাস্টারবেট করতাম। দুই বছর গেল এভাবেই।
১৬ বছর বয়সে যা হয়েছিল তা ভাবলে আমি আজো শিউরে উঠি। বাহিরের দুনিয়া সম্পর্কে আমার বাস্তব জ্ঞান তখন ছিল একেবারেই শুন্যের কোঠায়; ইন্টারনেট ঘেঁটে আবছা আবছা একটা ধারনা ছিল এই আরকি। বেঁচে থাকা অসহ্য মনে হতো আমার কাছে। কোনকিছুই ঠিকমতো করতে পারতাম না। বাবামার সঙ্গে রাগারাগি করতাম। আমার না ছিল কোন ভাইবোন না ছিল কোন বন্ধু বান্ধব। আমার এই করুন অবস্থার জন্য কাউকে দায়ী করতে চাইতাম আমি। কিন্তু  কাকে দায়ী করব?
শেষমেশ কাউকে না পেয়ে  দায়ী করলাম আল্লাহ্‌কে! সব দোষ আল্লাহ্‌র! তিনি যদি আমাকে ঐ ছেলের সঙ্গে না মেশাতেন ছোটবেলায় তাহলে আমি পর্ন,মাস্টারবেশন কি জিনিস জানতামই না আর আমার জীবনটা এরকমও হতো না । আমি নাস্তিক ছিলাম না, কিন্তু আল্লাহ্‌কে দোষ দিতাম।
তারপর ভাবলাম যে,বখাটে ছেলেপেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করি। তারা হয়তো আমার বন্ধু হবে আর আমি এই নরকতুল্য জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে ‘অস্থির’ একটা জীবন পাব।বখাটে ছেলেদের সঙ্গে মেশা শুরু করলাম, রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফোকা শুরু করলাম। গাঁজাটাই বা বাদ যাবে কেন ! গাঁজার কল্কিতেও দম দেয়া শুরু করলাম। মাঝে মধ্যে কড়া কিছু ড্রাগসও নিতাম। রাস্তায় রাস্তায়  রংবাজি করে বেড়াতাম  সারাদিন।
ভাবতাম এতদিনে বোধহয় আমার স্বপ্নের জীবনটা পেয়ে গেছি আমি, কিন্তু আমার পর্নআসক্তি গেলই না বরং আরো বাড়লো। ড্রাগস নিতাম তো শরীরে এনার্জি যেন টগবগ করে ফুটতো, প্রচুর পরিমাণ মাস্টারবেট করতাম। হাস্যকর একটা ব্যাপার ঘটলো এইসময়…
প্রেমে পড়লাম আমি!
পর্ন দেখতাম আর ও’কে নিয়ে ফ্যাণ্টাসীতে ভুগতাম। কিন্তু আমি জানতাম কখনোই তাকে নিজের করে পাবো না আমি । কত পাগলামিই যে করেছি আমি তার জন্য! হাসি পায় এখন এসব মনে হলে। হাত কেটে রক্ত দিয়ে তার নাম লিখেছি,মারামারিতে জড়িয়েছি আরো কত কি! সে অনেক কথা!
একসময় মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল । আমি ভেঙ্গে পড়লাম আরো বেশী ।বখাটে ছেলেপেলেদের সঙ্গে মেশাবন্ধ করলাম। বাসায় থাকতাম সবসময়। মাঝে মাঝে শুধু সিগারেট কিনতে বাহিরে যেতাম। পর্ন দেখার মাত্রা বেড়ে গেল আরো।
আলহামদুলিল্লাহ্‌! এই সময় আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে অল্পবিস্তর জানাশোনা শুরি করি। আমি জানলাম  আমি যেগুলো করছি সেগুলো করা মারাত্মক ভুল। যে ভুল আমি করেছি তার মাশুল আমাকে সারাজীবন গুনতে হবে। অন্যান্য ধর্ম নিয়েও ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলাম কিছুদিন। কিন্তু শেষমেশ বুঝলাম যা আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি সেটা ইসলাম, অন্য কিছু না।
গাঁজা খাওয়াতো আগেই ছেড়েছি এবার সিগারেট খাওয়াও ছেড়ে দিলাম। বাসায় নামাজ পড়া শুরু করলাম। কিন্তু পর্ন আর মাস্টারবেশন আসক্তি ছাড়তে পারলামনা কিছুতেই।
পুরোনো কাসুন্দি তো অনেক ঘাঁটাহল। এবার বর্তমান অবস্থার কথা বলি…
আমি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাসায় পড়ার চেষ্টা করি। পড়াশোনা করিনা, বাবা মার সঙ্গে  থাকি। ভাইবোন নেই,নেই কোন বন্ধবান্ধব।একাকীত্বে ভুগি,আত্মবিশ্বাস তলানিতে। মানুষজনের সঙ্গে মিশতে পারি না। এমনকি বাসায় আত্মীয়স্বজন আসলে আমি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই। আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ। পাগল বলতে পারেন একপ্রকার। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলি প্রায়ই, মানুষজন আড়চোখে তাকায়। কিছু মনে থাকে না। তীব্র মাথা ব্যাথা হয়,ব্যাথায় মাথা যেন ছিড়ে যায়,মনে হয় মাথা কেটে ফেলে দেই। আমার  বয়স যদিও ১৯ বছর আমাকে দেখে মানুষ ভাবে আমার বয়স বোধহয় ত্রিশের কোঠায়। চুল পড়ে যাচ্ছে আর আমার যে ছোট ছোট কিছু দাঁড়ি আছে জানি না কি কারণে সেটা লাল হয়ে যাচ্ছে।
আমি খুব বেশী খাওয়া দাওয়া করিনা, কিন্তু আমি অনেক মোটা। ব্যায়াম ট্যায়াম যে করবো তাও হয়না, সবসময় এতো ক্লান্ত থাকি…
আমি জানি না কী করব। আমি এত অল্প বয়সে মাস্টারবেশনের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম যে আমার শরীর নিজে নিজেই রিঅ্যাক্ট করে। অর্থাৎ প্রায় প্রতি রাতেই মাস্টারবেট করি। এমনকি ট্রাউজার বেল্ট দিয়ে বেঁধে রাখলেও নিজেকে থামাতে পারি না। নিজের অজান্তেই পাপ করে ফেলি। ব্যাপারটা অদ্ভুত যে মাস্টারবেশনের পর পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকে পড়ি। অপরাধবোধ হয়, মনে হয় যে খোদা আমাকে ক্ষমা করবেন না, তারপর পর্ন দেখি। আমার একটি পিসি ও ফোন আছে। আমার কোন ডিভাইসেই পর্ন নেই, হতাশ লাগলে ওসবের সাইটে যাই। মাঝে মাঝে ওয়েব ব্রাউজ করার সময় নারীর ছবি দেখলে উত্তেজিত হয়ে যাই। ক্লিক না করে থাকতে পারি না।আমার আত্মীয়স্বজন বেড়াতে এসে তাদের সন্তানদের সাফল্য নিয়ে গর্ব করেন। আমি আরো হতাশ হয়ে যাই,পুনরায় ফিরে যাই পাপের রাজ্যে। আমার মা-বাবা আমাকে বকাঝকা করলে আমি হতাশ হয়ে পাপ করে ফেলি। সবভাবেই আমি ডুবে যাচ্ছি এক গভীর অন্ধকারে।
একটা হাদিস আছে যেখানে বলা হয়েছে, হাশরের ময়দানে একদল মানুষ আল্লাহ্‌র সামনে পাহাড়সমান পুণ্য নিয়ে দাঁড়াবে, কিন্তু আল্লাহ্‌ সেই পুণ্যগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবেন, কারণ এই মানুষগুলো একা থাকা অবস্থায় সব ধরণের সীমা অতিক্রম করেছিল ও আল্লাহ্‌কে অমান্য করেছিল। [রেফারেন্স লাগবে]
আমার নবী (সাঃ) আমাকে নিয়ে হাদিসে বলেছেন। আমি যখন একা থাকি, আমিও ওরকম কাজ করি।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।

 

 

নীল রঙের অন্ধকার (৯) 

আমি পর্ন দেখা শুরু করি আট বছর বয়স থেকে। তখন আমি স্কুলে পড়তাম। বন্ধুরাই আসলে আমাকে প্রথম এটা সম্পর্কে বলে। আমি ঐ দিনই তা দেখি। এভাবেই আমার আসক্তি শুরু হয়। ১২ বছর পরে আমি যখন কলেজে ভর্তি হই , তখনও আমি পুরোদমে পর্ন দেখা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আসলে পর্ন থেকে দূরে সরে যাবার কোন ইচ্ছেই আমার ছিলনা। আমি নিজেও বুঝতে পারতাম যে এটা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু কেন যেন এটা বাদ দিতে পারতাম না! এই আসক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কেও আমার তেমন কোন ধারণা ছিলনা। কতই না বোকা ছিলাম আমি!!!

.

সমস্যার শুরু হয় আমার বিয়ের পর থেকে। আমার মাথায় গেঁথে ছিল পর্ন ভিডিওগুলোর শিক্ষা। সত্যি কথা বলতে, যৌনতা সম্পর্কে আমি সবকিছুই জেনেছিলাম পর্ন থেকে । আমার স্ত্রী জানতো যে আমি পর্নমুভিতে আসক্ত। কিন্তু এ ব্যাপারে সে কখনো কোন কিছু বলতোনা। আসলে তারও এটা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল না। সে ভাবতো আমার অন্য কিছু স্বাভাবিক চলছে আর তার প্রতিই বিশ্বস্ত থাকছি , তাই এটা নিয়ে তার চিন্তা না করলেও চলবে। আমি নিজেতো আসক্ত ছিলামই, পাশাপাশি তাকেও পর্ন দেখানো শুরু করি। আমরা চাইতাম পর্নমুভির মতো করে অন্তরঙ্গ হতে। আসলে এটা যে বাস্তবতা বর্জিত একটা জগৎ তা মাথাতেই আসতো না।

প্রথম প্রথম সে এটা করতো আমাকে খুশি করতে গিয়ে। কিন্তু পরে সে নিজেও আসক্ত হয়ে পড়ে। পর্নমুভি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ হয়ে পড়ে।

.

সে আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করতো কোন দৃশ্যটা আমার বেশি ভালো লাগে, তারপর সে পর্দার পর্ন অভিনেত্রীদের অনুকরণের চেষ্টা করতো। তার হাঁটা-চলাফেরা, সাজসজ্জা সব কিছুই হয়ে যাচ্ছিল পর্ন অভিনেত্রীদের মতো। আমি প্রথম দিকে খুশিই হতাম এই ভেবে যে, আমার স্ত্রী তো আমাকে খুশি করতেই এরকম করছে।

.

কিন্তু ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিতে থাকে!

একদিন আমার স্ত্রী ‘গ্রুপ-সেক্স’ এর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করল। এমনকি সে সমকামিতার প্রতিও আগ্রহী হয়ে ওঠে।আমি তাকে বোঝালাম যে সে ভুল পথে যাচ্ছে, বাস্তবতা আর কল্পনা গুলিয়ে ফেলেছে কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে!! যা সর্বনাশ হবার তা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে!

বুঝতে পারছিলাম, আমরা ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

আমাদের মধ্যেকার সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছিল, ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকতো। এর মাঝে আমি শারীরিক অসুস্থতার অন্য চাকুরী হারালাম।চিকিৎসার জন্য পানির মতো টাকা খরচ হচ্ছিল। আমার প্রতি আমার স্ত্রীর ব্যবহার আমূল বদলে গেল। আমাকে যেন সে মানুষই মনে করতোনা।

সার্জারির ধকল আর তার এই ব্যবহারে আমি তখন টালমাটাল। হায়! আমার জীবনের সবই বুঝি শেষ।

কিন্তু এত কিছুর পরেও সে পর্ন আসক্তি কমাতে পারে নি, বরং আমাকেও নানা ভাবে জোরাজোরি করতো। কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমার তখন স্বাভাবিক নড়াচড়া করতেই কষ্ট হতো,পর্ন অভিনেতাদের মতো অন্তরঙ্গ হওয়া তো দূরের কথা!

আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করতে শুরু করলাম। আমার স্ত্রী তার অফিস শেষ হবার প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা পর বাসায় আসতে শুরু করেছে। আমি  তেমন একটা গুরুত্ব দিলাম না। কারণ তার মাঝে অনেক খারাপ কিছু থাকলেও আমার সাথে প্রতারণা করবে এই চিন্তা ঘুণাক্ষরেও মাথাতে আনতাম না। এতোটুকু বিশ্বাস অন্তত আমার ছিল।

কিন্তু আমাকে সম্পূর্ণ ভুল  প্রমাণ করে কয়েকদিন পরে সে নিজেই আমাকে আমার এক বন্ধুর কথা বললো।সে স্বীকার করলো যে তার সাথে সে এক,ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে এবং আমার চেয়ে তাকেই বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। এরপর  একদিন ব্যাগ গুছিয়ে সে  আমার সেই বন্ধুর কাছে চলে গেল।

আমার মাথায় সত্যিকার অর্থে আকাশ ভেঙ্গে পড়লো! হৃদয়টা দুমড়ে মুচড়ে গেল!

আমি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক ভাবে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই কাজ হল না। শেষ পর্যন্ত আমাদের ‘ডিভোর্স’ হয়ে গেল। একটা সুন্দর সাজানো সংসার শেষ হয়ে গেল।

ডিভোর্সের কয়েক মাস পরে  বিভিন্ন দিক চিন্তা করে আমি বুঝতে পারলাম যে এই সব কিছুর মূলে রয়েছে পর্নোগ্রাফি।

আমার স্ত্রী তো শুরুতেই এরকম ছিল না। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়ার পর থেকেই তার এই পরিবর্তন শুরু। আমিই তাকে পর্ন  দেখানো শুরু করেছিলাম। আর এর প্রায়শ্চিত্ত করলাম তাকে হারিয়ে ফেলে।

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মাঝে নানা দিক থাকে। দায়িত্ববোধ, সহানুভূতিশীলতা, ভালবাসা সবকিছুই থাকে। অথচ আমরা এটা শুধু যৌনতার মাঝেই আটকে রেখেছিলাম। তার ফলাফল তো আমরা নিজেরাই ভোগ করলাম । আমি কোন দিন ভাবতে পারিনি  সে আমাকে ছেড়ে অন্য কারও কাছে চলে যাবে।তাকেই’বা দোষ দেই কীভাবে?

আমার শারীরিক অসুস্থতাকে সে অক্ষমতা মনে করে নিজেকে বঞ্চিত ভাবতো। যার ফলাফল গিয়ে দাঁড়ায় ডিভোর্সে।”

====

আমাদের সমাজে এমন অগণিত দম্পতি রয়েছেন যারা একসঙ্গে মিলে পর্ন দেখেন।এর পেছনে অনেক গুলো কারণ থাকতে পারে। শয়তানের কুমন্ত্রণা রয়েছেই, সেই সঙ্গে একটু বাক্সের বাহিরে যেয়ে অন্তরঙ্গতাকে উপভোগ করতে চাওয়া। এটা ভেবে তারা ভুল করেন যে দুজনে একসঙ্গে পর্ন দেখলে বিছানায় প্রেমের তুফান বয়ে যাবে, ভালোবাসা জমে ক্ষীর হয়ে যাবে। অথচ বাস্তবতা পুরোটাই বিপরীত। স্বামী স্ত্রী মিলে একসঙ্গে পর্ন দেখতে বসার মুহূর্তেই তারা নিজ হাতে লিখে ফেলেন তাদের প্রেমের এপিটাফ। ১০৮টি নীলপদ্ম সিরিজে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে সে আলোচনা পুনরায় টেনে আনা পাঠকদের শুধু বিরক্তিই উৎপাদন করবে। পাঠকদের নিকট হাতজোড় করে অনুরোধ করছি পড়ে আসুন ১০৮ নীলপদ্ম সিরিজের সবকয়টি পর্ব।


মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটির পিডিএফ গুগল ড্রাইভ থেকে ডাউনলোড করুন