০১. অনিবার্য যত ক্ষয় (৩ পর্ব)

অনিবার্য যত ক্ষয় (প্রথম পর্ব) 

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম
বাকের ভাইকে (এইসব দিনরাত্রি নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র)  নিয়ে নব্বইয়ের দশকে অবিশ্বাস্য রকমের মাতামাতি করা হয়েছে  এদেশে । সেই সময়ের উঠতি তরুণেরা বাকের ভাইয়ের মতো দাঁড়ি রেখে, ব্যাকব্রাশ করে চুল আঁচড়িয়ে  সানগ্লাস চোখে ঘুরে বেড়াতো , মিছিলে শ্লোগান দিত – আমরা সবাই বাকের হবো, এত মোনা কোথায় পাব’?  
বাকের ভাইয়ের ফাঁসি আটকানোর জন্য রাস্তায় মিছিল করা হয়েছে, লেখককে হুমকি ধামকিও দেওয়া হয়েছে – বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হলে দেখে নেওয়া হবে, অভিনেতা কাদেরেরে ( নাটকে বাকের ভাইয়ের শাগরেদ) বাসায় নাকি ঠিল ছোঁড়া হয়েছেএরকম একটা কথা শুনেছিলাম বাকের ভাইয়ের ফাঁসির পর তার কুলখানির আয়োজনও নাকি করা হয়েছিল ।


বর্তমান সময়ে দেশে   কিরনমালা সিরিয়াল নিয়ে যা হচ্ছে তা মিডিয়া কিভাবে মানুষের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারে তার একটা ক্ল্যাসিক উদাহরণ হয়ে থাকবে । পুরো চিত্রটা পাওয়ার জন্য  নিচে কিছু  খবরের লিংক দেওয়া হলে, পড়ে দেখা যেতে পারে –
"কিরনমালা নিয়ে দুই বোনের ঝগড়া। একজনের আত্মহত্যা"
.
"কিরনমালা নিয়ে স্বামির সাথে ঝগড়া, এক গৃহবধুর আত্মহত্যা"
.
"কিরনমালা নিয়ে দুই গ্রামে সংঘর্ষ। পুলিশের ১০ রাউন্ড গুলি। আড়াইশতাধিক আহত।" [ http://bit.ly/2btqtF2 ]
.
"কিরনমালা দেখতে না দেয়ায় ৭ বছরের ছেলের আত্মহত্যা"
.
"কিরনমালা দেখতে না দেয়ায় মোহাম্মদপুরে আরেক ১৪ বছরের মেয়ের আত্মহত্যা" [ http://bit.ly/2btqE3s ]
.
"মা কিরনমালা দেখার সময় দুই ভাই-বোনের পানিতে ডুবে মৃত্যু"
.
‘কিরণমালা’ দেখছেন মা, পুড়ে মরল মেয়ে

[ সংকলনে - Muhammad Tafazzul ]

নাটক, সিনেমা,মিডিয়া, গল্প, উপন্যাস এগুলো মানুষের মনোজগতকে নিয়ন্ত্রণ করার খুবই শক্তিশালী মাধ্যম ।  এই মিডিয়াই ঠিক করে দেয় আমরা কাকে নিয়ে চিন্তা করব, কিভাবে চিন্তা করব, কার দুঃখে কেঁদে বুক ভাসাবো, কার আনন্দে আনন্দিত হব , কি পোশাক পড়বো, কি খাবার খাব  সবকিছু । মানুষ হিমুর মতো পাগল সেজে খালি পায়ে হেঁটে বেড়ায় রাস্তায়,  ফুটবলারদের মতো  হেয়ারকাট দেয়,  শাহরুখ, রনবীরদের  মতো প্রেম করে ,  বিজ্ঞাপনের মডেলদের মতো  পোশাক আশাক পড়ে ।
‘আমি তো শুধু দেখছি কিছু করছি না, কারো ক্ষতি তো করছি না’ এই টাইপের একটা কথা প্রায়ই শোনা যায় অনেক পর্ণ আসক্তদের  থেকে । অনেকে নিছক অজ্ঞতাবশত এই কথা বলে, আবার অনেকে নিজেদের পর্ণদেখাকে জাস্টিফাই করার জন্য এরকম একটা অন্তঃসারশূন্য ,ফাঁপা দাবী করে ।
আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে পর্ণমুভি/ আইটেম সং বা  মিউজিক ভিডিও (সফটকোর পর্ণ)  দেখা ধর্ষণ, যৌন বিকৃতি, শিশুনির্যাতন এর প্রভাবক হিসেবে কাজ করে , অনেক সময় প্রধান চালকের ভূমিকা পালন করে তাহলে এই লিখা পড়ে আপনার লাভ নেই । আপনি সত্যটা জানেন ।  শুধু শুধু সময় নষ্ট  হবে ।    
এই লিখাটা তাদের জন্য যারা কোনরকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়া , কোন একাডেমিক গবেষণা ছাড়া গায়ের জোরে প্রমাণ করতে চান , “পর্ণমুভি  ক্ষতিকর নয় , ধর্ষণ বা যৌন বিকৃতির জন্য এটা দায়ী নয়”, “আমি তো শুধু দেখছি, কিছু করছি না”।    
লিখার আসল অংশে প্রবেশ করার পূর্বে কিছু কথা বলে নিতে চাই ।  আমরা এই আর্টিকেলের প্রথমেই বাকের ভাই এবং কিরনমালা’র উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছি মানুষ যা দেখে , মিডিয়া যেটা তার সামনে হাইলাইট করে দেখায় সেটা তার ওপর কতোটা প্রভাব বিস্তার করে । মিছিল থেকে শুরু করে খুন !
তাহলে একটা মানুষ যদি রেগুলার  পর্ণমুভি দেখে সেটা তার আচার আচরনে প্রভাব ফেলবে এটাও তো অস্বাভাবিক কিছু না ।

খুব সুচতুরভাবে   আমাদের  পৃথিবীতে পর্ণমুভিকে  স্বাভাবিক একটা ব্যাপার বানিয়ে ফেলা হচ্ছে (নরমালাইজড) । আসল পর্ণ তো আছেই [ http://tinyurl.com/9ys2k],  বিজ্ঞাপন , বিলবোর্ড আইটেম সং, মিউজিক ভিডিওতে পর্ণস্টারদের অনুকরণ করা হচ্ছে । মুভি, সিরিয়াল গুলোর মাধ্যমে  বিকৃত যৌনাচার কে (এনাল সেক্স, ওরাল সেক্স ) যেমন  প্রমোট  করা হচ্ছে , তেমনি সমকামীদের জন্যেও একটা শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে  । পর্ণমুভি অতিসহজলভ্য করে ফেলা হয়েছে । বাংলাদেশের ১৩-১৭ বছর বয়সীদের শতকরা ৭৭ জন  নিয়মিত পর্ণমুভি দেখছে [http://tinyurl.com/z8mzjqs ]   
এগুলোর ফলাফল তো আমরা হাতে নাতেই পাচ্ছি ।   
গত কয়েক বছরে খুব দ্রুত  আমাদের সমাজে অশ্লীলতাকে বরন করে নেওয়ার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে । আমাদের দেশে  ফেসবুকে গ্রুপ খুলে লাখ লাখ ছেলে মেয়ে  নির্লজ্জ রসিকতায় মেতে উঠছে । আমাদের তরুণ তরুণীরা  কাম তাড়নায় পাগল হয়ে ভাদ্র মাসের কুত্তাদের মতো রাস্তাঘাটে, লিটনের ফ্ল্যাটে , ক্লাসরুমে শরীরের উত্তাপ মেপে নিচ্ছে । বিছানায়   পর্ণস্টারদের অনুকরণ করছে, পশুর মতো  একে অপরকে ব্যবহার করছে । ।  দশ  বছর আগেও টিভিতে যে দৃশ্য  একাকী দেখলেও আমরা লজ্জায় লাল হয়ে যেতাম, তারচেয়েও অশ্লীল দৃশ্য আমরা ফ্যামিলি শুদ্ধ বসে দেখছি  ।    


আর কথা বাড়াতে চাই না ।  ধৈর্য ধরে পড়ে ফেলুন , ধর্ষণ, বিকৃত যৌনাচার বা শিশুনির্যাতনের সঙ্গে পর্ণমুভির কি সম্পর্ক তা নিয়ে লিখা একাডেমিক , রসকষহীন ,খুবই বিরক্তিকর এই আর্টিকেলটি ।

ধন্যবাদ ।  


যৌন নিপীড়ন,লাঞ্ছনা,অবমাননা,ধর্ষণ,অজাচার,উৎপীড়ন ও অন্যান্য যৌন অপরাধ যেমন নারী পাচার ও যৌন দাসত্বের সাথে পর্নোগ্রাফির সম্পর্ক:

“পর্নোগ্রাফি হল থিওরি আর রেপ হল তার বাস্তবায়ন।”

-রবিন মরগান (Going Too Far: The Personal Chronicle of a Feminist)

“পুরুষরা পর্নোগ্রাফির পেছনে পয়সা ঢালে আর ধকল যায় নারীদের ওপর ধর্ষণ আর নিপীড়নের আকারে এমন এক সমাজের কাছে যা তাদের তুচ্ছ সেক্সুয়াল অবজেক্ট হিসেবে গ্রহণ করে।” -রোসালি ম্যাগিও (The Dictionary of Bias-Free Usage)

“আমি জেলে লম্বা সময় কাটিয়েছি এবং অনেকের সাথেই কথা হয়েছে যাদের অপরাধের মূল উৎস হল পর্ণ।তাদের প্রত্যেকেই ছিল এতে বাজেভাবে আসক্ত।F.B.I. এর নিজস্ব সিরিয়াল হোমোসাইড এর গবেষণায় এসেছে, সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে সবচেয়ে কমোন ইন্টারেস্ট হল পর্ণ যা একেবারে সত্য।”
-টেড বান্ডি (Serial Killer & Rapist of at least 28 Women & Girls)


পর্নোগ্রাফি ও উদ্দামতা:
  ২০১০ সালের একটি রিসার্চ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা সম্পন্ন করেন ম্যারি অ্যানি লেইডেন (PhD, Director of the Sexual Trauma and Psychopathology Program Center for Cognitive Therapy, Department of Psychiatry, University of Pennsylvania)

পর্ণের উত্তেজনা ব্যাক্তিকে ফ্যান্টাসির সীমানা ডিঙ্গিয়ে ভয়াবহ বাস্তবতার মুখে ঠেলতে পারে।একটা এক্সপেরিমেন্টে একদল পুরুষকে দেখানো হয় রেইপ পর্ণ এবং আরেক দলকে নন-রেইপ পর্ণ।এরপর কোন রকম হাতের স্পর্শ ছাড়া নিজেদের সর্বোচ্চ মাত্রায় উত্তেজিত করতে বলা হল।এতে দেখা যায়, যাদের রেইপ পর্ণ দেখানো হয়েছে তাদের ফ্যান্টাসিগুলো ছিল অধিক বর্বর বাকিদের তুলনায়।আরেক গবেষণায় এসেছে, যেকোন ধাঁচের পর্ণই হোক না কেনো তার সাথে সরাসরি সম্পর্ক আছে অকথ্য গালাগালি, ড্রাগস আর অ্যালকোহলের।আর এসবই একজনকে দিয়ে ধর্ষণ করানোর জন্য যথেষ্ট।তাই যারা উগ্র লেভেলের পর্ণ দেখে, তাদের দ্বারা ধর্ষণের সম্ভাবনাও বিপুল থাকে।যাদের ডেইট রেইপ করার কলঙ্ক আছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে প্লেবয় টাইপের  কিছু ম্যাগাজিন বেশ ভূমিকা রেখেছে ।  দেখা গিয়েছে যে,যেসব স্টেইটে এইসব ম্যাগাজিনের সার্কুলেশনের হার বেশি সেসব স্টেইটে ধর্ষণের হারও বেশি।


      যেসব কিশোর এই সব পর্ণ দেখে অভ্যস্ত তাদের ৪২% হল সেক্স অফেন্ডার।সাধারণ কিশোরদের তুলনায় এদের পর্ণে জড়িয়ে পড়াটা খুবই স্বাভাবিক।৫-৮ বছর বয়সের মধ্যেই তা সম্ভব।এদের খুব কম সংখ্যক নিশ্চিত করেছে যে নিজেদের এই কুকর্মের পেছনে পর্ণ দায়ী নয়।তবে বাকিদের ক্ষেত্রে পর্ণই প্রধান কারণ।
   

  এখন কিছু পরিসংখ্যান দেখা যাক।হার্ডকোর পর্নোগ্রাফি লেলিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন ধাঁচের অপরাধীকে তাদের অপরাধ সংঘটনের জন্য।যেমন,চাইল্ড মলেস্টার(৬৭%),ইনসেস্ট অফেন্ডার(৫৩%) ও রেইপিস্ট(৮৯%)।এদের সবাই যে শুধু পর্ণ দেখার পরই ভিক্টিমদের উপর হামলা করত তা নয়,এদের অনেকেই রেগুলার পর্ণ দেখায় আসক্ত ছিল যা তাদের বর্বর হতে রসদ জুগিয়েছে এবং ওগুলো যে হার্ডকোর লেভেলের ছিল তাও কিন্তু নয়।তাই একজন পুরুষের পুরুষত্বের অপব্যবহার তার পর্ণ দেখার হারের ওপরও নির্ভর করে।যারা তাদের দৈহিক সামর্থ্যকে বাজেভাবে কাজে লাগায় বা যারা নারীদের কেবল আমোদের উপাদান হিসেবে উপভোগ করে আসছে তাদের দ্বারা শঙ্কিত হবার শঙ্কা অনেক বেশি থাকে।
      এবার কিছু ভিক্টিমের বক্তব্য শোনা যাক। ১০০ জন ভিক্টিমের মধ্যে ২৮% বলেছে যে তাদের ওপর হামলাকারী ব্যাক্তি পর্ণ দেখেছিল আর বাকিদের মধ্যে ৫৮% এ ব্যাপারে ঠিক নিশ্চিত নয়।আবার প্রথম শ্রেণির ভিক্টিমদের ৪০% বলেছে যে তাদের ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছিল তার একটি অংশ ছিল পর্ণ।বাকি ৪৩% বলেছে যে নির্যাতনের প্রকৃতি পর্ণে যা দেখানো হচ্ছিল তার মতোই ছিল অনেকটা।১৮% এর ধারণা অনুযায়ী,পর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে নির্যাতনকারী আরও ধর্ষকামী হয়ে উঠেছিল।১০০ জনের মধ্যে ১২% জানিয়েছে যে নির্যাতনকারী হুবুহু তার দেখা পর্ণের অনুরুপ ঘটিয়েছে তাদের সাথে আর ১৪% জানিয়েছে যে তাদের দিয়ে জোরপূর্বক কিছু বর্বর কাজ করানো হয়েছিল।
সবশেষে মূল কথা হল,পর্নোগ্রাফির জগৎ আপনাকে অস্বাভাবিক ব্যবহারে অভ্যস্ত করাবে।ধীরে ধীরে আপনার জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক অংশে পরিণত হবে এবং আপনার বিকৃত মস্তিষ্ক এক সময় আপনার কাছে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।এই বিষের সংক্রমণ থেকে কেউই নিরাপদ নয়।হতে পারে সে পুরুষ বা নারী, যুবক বা যুবতী, বাচ্চা বা বুড়ো, বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত।

 




‘অনিবার্য যত ক্ষয়’ (দ্বিতীয় পর্ব)

একেবারেই একাডেমিক ধাঁচের লিখা এটি । রসকষহীন । ধৈর্য ধরে পুরোটা পড়ার অনুরোধ রইলো পাঠকদের নিকট ।
অনেকেই একটা  ভুল ধারণা নিয়ে থাকেন  আমি তো শুধু পর্ণমুভি দেখছি , ওইগুলো করছি না । কারো কোন  ক্ষতি করছিনা । পর্ণ দেখা  দোষের তো কিছু না । এই ভুল ধারণাটা ভেঙ্গে দেবার জন্য এই লিখাটাই (সিরিজের প্রথম লিখাটা পড়ুন এখানে- http://lostmodesty.blogspot.com/2016/08/blog-post_30.html)  যথেষ্ট ইনশা আল্লাহ্‌ ।

প্রাপ্তবয়স্ক ও বাচ্চাদের ওপর পর্নোগ্রাফির প্রভাব-ডঃ ভিক্টর বি. ক্লাইন
একজন ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে আমি দীর্ঘকাল ধরে ট্রিটমেন্ট করে আসছি সেক্স অফেন্ডার, সেক্স অ্যাডিক্ট ও যৌন রোগধারী ব্যাক্তিদের যাদের সংখ্যা প্রায় ৩০০ এর মত।তাদের সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে অপ্রত্যাশিত ও অদম্য যৌন আচরণ, child molestation, exhibitionism, voyeurism, sadomasochism, fetishism and rape.
নিঃসন্দেহে বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে এদের একমাত্র প্রেরণাদায়ক শক্তি পর্ণ,দু চারটে ব্যাতিক্রম বাদে।এদের প্রাইমারি স্টেজে একটা সিন্ড্রোম কাজ করে যাকে আমি বলি ফোর ফ্যাক্টর সিনড্রোম।মানে প্রথমে আসক্তি, তারপর তীব্রতা বৃদ্ধি, এরপর ঘটে সংবেদনশীলতার অভাব আর শেষটায় এসে বর্বর আচরণ।

এক্ষেত্রে পুরোটাই আস্তে আস্তে ঘটে।প্রথমে ব্যাক্তি পর্ণের লোভ সামলাতে না পেরে তার যে ক্যাটাগরি পছন্দ সেই ক্যাটাগরির পর্ণে নিমজ্জিত হয়।পর্যায়ক্রমে তার পরিমাণ বাড়তে থাকে।এই  ভয়ংকর চোরাবালি একসময় তাকে নেশাগ্রস্ত করে।অবশেষে বিবেবকে শূন্যে ভাসিয়ে ও ফলাফলের কথা না ভেবে জীবনের অন্যতম ভুল করে বসে যার জন্য পরবর্তীতে মানসিকভাবে পস্তাতে হয়।কাউকে কাউকে পর্ণ মুহূর্তের মধ্যে গরম করে আবার মুহূর্তের মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে।কিন্তু কারো কারো ভিতর ক্যান্সারের মত এঁটে যায় সারাজীবন।মানসিক থেরাপির শরণাপন্ন হতে হয় তখন।

যৌন অপরাধের সাথে পর্নোগ্রাফির ঘনিষ্ঠতা –ররি রিড
পর্ণের প্রতি অতিরিক্ত মাদকতা মানুষের বৈধ যৌন আচরণে বিকৃত পরিবর্তন আনে ঠিক যেভাবে মানুষের জীবনকে তিলে তিলে ক্ষয় করে অ্যালকোহল।অনেকে হয়তো স্বাভাবিক যৌন আচরণের ওপর পর্ণের প্রভাবটা মেনে নিবে না।তাদেরকে যদি একবার আমার চেয়ারে বসিয়ে শোনাতে পারতাম পর্ণাসক্তদের সঙ্গীদের তিক্ত ও তীব্র অভিজ্ঞতার কথা যা আমাকে হরহামেশাই শুনতে হয়, তাহলে বোধয় তাদের ধারণা পাল্টে যেত।এদের বাধ্য করা হয় অসুস্থ যৌন আচরণে লিপ্ত হতে।মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার এরা।কিন্তু এসব ঘটনা কেবল চার দেয়ালের মাঝেই আটকা থাকে।বিচারের জন্য কোর্টরুম পর্যন্ত আর পৌঁছায় না।যারা এই ধরণের অস্বাভাবিক ও জোরপূর্বক যৌন আচরণে তাদের সঙ্গীদের নিমজ্জিত করে তারা এটাকে খুব স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়।অনেক সময় অচেনা কারো দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার চেয়েও মারাত্মক হতে পারে এসব অভিজ্ঞতা।
ভিক্টিম ধর্ষণের কারণ হিসেবে নিজেকে দোষারোপ করে না কারণ এখানে নিশ্চিতভাবে তার কোন দোষ নেই।কিন্তু যেসব বৈবাহিক সম্পর্কে সেক্সুয়াল ইন্টিমেসির নামে একপাক্ষিক বিনোদন আর লাম্পট্য চলে সেসব ক্ষেত্রে অনেক সময় অভিযোগকারী নিজেকে দায়ী করতে থাকে।মনে করে যে তাদের সঙ্গীর এই বাড়াবাড়িই বোধয় ঠিক।হয়তো এমনই হওয়া উচিৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক।সেক্স সম্বন্ধে নিজেদের ধারণাকে তখন রক্ষণশীল বা সেকেলে ধাঁচের ভাবতে শুরু করে।যখন সঙ্গীর ওপর অন্ধভাবে ভরসা করা শুরু করে তখন তারা ভাবে যে আমি হয়তো ওর চোখে যথেষ্ট সেক্সি হতে পারছি না,তাই ও পর্ণ দেখে।কাজেই এইটা আমার দোষ।একবার তো এক মহিলা আমাকে বলেই ফেলেছিলো যে অচেনা কারো হাতে একবার  নির্যাতিত হওয়া আর ১০ বছর ধরে পর্ণাসক্ত স্বামীর বেহাল্লাপনায় জড়িত থাকার মধ্যে বেছে নিতে বললে আমি প্রথমটাকেই বেছে নিবো।এইবার বুঝুন তাহলে ক্ষতিটা কোন পর্যায়ে নেমে এসেছে!

পর্নোগ্রাফির সাথে ধর্ষণের যোগসূত্র-ডঃ জুডিথ রিসম্যান  
F.B.I এর সিরিয়াল রেইপ প্রোফাইলার জন ডুগলাস তার বই “Journey Into Darkness” (1997) এ লিখেছেন, সিরিয়াল রেইপ কিলারদের আস্তানা তল্লাশি করে পাওয়া যায় পর্ণের ভাণ্ডার হয় স্টোর করা না হয় হোমমেইড।”The Evil That Men Do” (1998) বইতে রয় হেজেলউড বলেছেন,একবার এক সেক্স কিলারের সন্ধান পাই যে কিনা মেয়েদের বিভিন্ন পজিশনে বেঁধে রাখত ও টর্চার করত যা সে কোন এক পর্ণ ম্যাগাজিনে দেখেছিলো।আরেক রিপোর্টে এসেছে যে কিলারদের মধ্যে ৮১% তাদের অপরাধের জন্য প্রাথমিক মদতদাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে পর্ণকে।পর্ণের ভোক্তা বাড়ার সাথে সাথে দিন দিন এসব অপরাধের সংখ্যাও বাড়ছে।সরকারের কোন সোচ্চার পদক্ষেপ নেই এ খাতে।অর্ধ শতক ধরে তামাকের ব্যবসা একসময় আমেরিকা মাত করেছিল আর আজ সে জায়গা নিয়েছে পর্ণ।

# ৬০% পুরুষ এ মত পোষণ করেছেন যে, যদি ধরা পড়ার সম্ভাবনা না থাকতো তাহলে তারা হয়তো কোন নারীকে দিয়ে জোরপূর্বক কিছু করাতেন যা তার পছন্দ হতো না বা পারলে ধর্ষণই করতেন।
-Briere, J. &Malamuth, N. (1983). Self-reported likelihood of sexually aggressive behavior: Attitudinal versus sexual explanations. Journal of Research in Personality, 17,315-323.

# অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বেশ ঢিলেঢালাভাবে পর্নোগ্রাফি সংশ্লিষ্ট আইন মোতায়েন করা হয়।ফলস্বরূপ, ধর্ষণের হার বাড়ে ২৮৪%।কিন্তু একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে এ ব্যাপারে কঠোর আইন প্রয়োগ করে দেখা যায়, ধর্ষণের হার বেড়েছে মাত্র ২৩%।
আবার, হাওয়াইতে প্রথমে দুর্বল আইন প্রয়োগ করা হয়, এরপর তা মজবুত করা হয় এবং তারপর আবার পূর্বের অবস্থায় ফেরত নেয়া হয়।ধর্ষণের ফলাফলও আসে অনুরূপ।প্রথমে বাড়ে, এরপর কমে তারপর আবার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
-Court, J. (1984). Sex and violence a ripple effect. In Malamuth, N &Donnerstein, E (Eds), Pornography and sexual aggression. San Diego, Academic Press.

# একদল পুরুষকে একটা ভিডিও দেখানো হল যেটাতে একজন নারী সেক্সুয়াল ভায়োলেন্সের মাধ্যমে উত্তেজিত ও কামুকী হয়ে ওঠে।আরেক দলকেও একই ধাঁচের কিছু একটা দেখানো হয় তবে তাতে সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স থাকে না।এইবার দুই দলকেই দেখানো হল পর্ণ যাতে রয়েছে ধর্ষণ।এরপর প্রথম দলের অধিকাংশ জানালো, তাদের চোখে পর্ণের মহিলাটির যেন ভোগান্তি কম আর তৃপ্তিই বেশি।কাজেই মহিলারা ধর্ষণ উপভোগ করে আর এমনই তাদের মতামত।
-Check, J. &Malamuth, N. (1985). An empirical assessment of some feminist hypotheses about rape. International Journal of Women’s Studies, 8, 414-423.

# এইবার মহিলাদের ব্যাপারটা দেখা যাক।অনেকে যারা বাচ্চাকাল থেকেই পর্ণের দুনিয়ায় ঢুকেছে, তাদের কাছে ধর্ষণের ভয়াবহতা হালকা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং তারা যেসব সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসিতে নিমজ্জিত হয় সেগুলোর মাঝে ধর্ষণও থাকে।
– Corne, S., Briere, J. &Esses, L. (1992). Women’s attitudes and fantasies about rape as a function of early exposure to pornography. Journal of Interpersonal Violence, Vol 7 No 4, pp 454-461.






‘অনিবার্য যত ক্ষয়’ (শেষ পর্ব)

আমেরিকান আর্মির  মহিলা সদস্যরা শত্রুদের নিয়ে ততোটা বেশী শংকিত থাকে না ,  যতটা বেশী  শঙ্কিত থাকে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের হাতে যৌন নিপীড়িত হবার  ভয়ে  ……
একটা গভীর  দীর্ঘশ্বাস ছেড়েই এই কথা গুলো বললেন ডোরা হারনান্দেজ যিনি প্রায় দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করেছেন আমেরিকান নেভী এবং আর্মি ন্যাশনাল গার্ড এ । ডোরা হারনান্দেজ সহ আরো কয়েকজন প্রবীণ ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা হচ্ছিল যারা  আমেরিকার সামরিক বাহিনীতে  কাজ করেছেন অনেক বছর , ইরাক এবং আফগানিস্থান যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন । এই ফ্রন্টগুলোতে  কোনমতে  তারা সারভাইভ করতে পেরেছেন  কিন্তু পুরো কর্মজীবন জুড়ে তাদেরকে আরোও একটি যুদ্ধ করতে হয়েছে  নীরবে-এবং সেই যুদ্ধে তারা প্রতিনিয়তই পরাজিত হয়েছেন । তাদের সেই নীরব যুদ্ধ ধর্ষণের বিরুদ্ধে ।

পেন্টাগনের নিজেস্ব  রিসার্চ থেকেই  বের হয়ে এসেছে যে আমেরিকান সামরিক বাহিণীর  প্রতি চার জন মহিলা সদস্যের একজন তাদের ক্যারিয়ার জুড়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ।
আমেরিকার সামরীক বাহিনীতে চলমান যৌন নির্যাতনের কারণ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে মিলিটারি ক্যাম্পগুলোতে পরনোগ্রাফিক ম্যাগাজিনের সহজলভ্যতা । যৌন নির্যাতনের হার কমানোর জন্য  মিলিটারি ক্যাম্পগুলোতে এইসব ম্যাগাজিন ক্রয় বিক্রয় করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে । জয়েন্ট চীফ অফ স্টাফ বলেছেন ,“আমাদের বাহিনীতে বিরাজমান এই যৌন নির্যাতনের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতেই হবে । আর এজন্যেই সামরিক ঘাঁটি গুলোতে পরনোগাফিক ম্যাগাজিন কেনাবেচা করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে”। [তবে এই পদক্ষেপ অবস্থার কতটা উন্নতি ঘটাবে তাতে অনেকেই সন্দিহান। কারণ ক্যাম্পগুলো থেকে খুব সহজেই পর্ণসাইটে প্রবেশ করা যায়]
http://cbsn.ws/2bvrck9
http://bit.ly/2bvrkVA

অনেকেই একটা  ভুল ধারণা নিয়ে থাকেন  আমি তো শুধু পর্ণমুভি দেখছি , ওইগুলো করছি না । কারো কোন  ক্ষতি করছিনা । পর্ণ দেখা  দোষের তো কিছু না । পর্ণ দেখার সঙ্গে ধর্ষণ বা শিশু নির্যাতনের কোন সম্পর্ক নেই ; এইগুলো পর্ণ সহজলভ্য হবার আগেও ছিল এখনো আছে । এই ভুল ধারণাগুলো ভেঙ্গে দেবার জন্য সিরিজের প্রথম দুটি লিখা পড়ুন, যথেষ্ট ইনশা আল্লাহ্‌ ।
একেবারেই একাডেমিক ধাঁচের লিখা এটি । রসকষহীন । ধৈর্য ধরে পুরোটা পড়ার অনুরোধ রইলো পাঠকদের নিকট ।

শিশু যৌন নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি -ডঃ ডায়ানা ই.এইচ.রাসেল
বারবার চাইল্ড পর্নোগ্রাফি দেখা ও তা দেখে মাস্টারবেট করার ফলে ব্যাক্তির বাস্তবে তা প্রতিফলিত করার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠতে থাকে।এক মানসিক রোগী ছিল যে আসলে ছিল স্যাডিস্টিক সিরিয়াল রেইপিস্ট।৯ বছর বয়স থেকেই মেয়েদের টর্চার করার ফ্যান্টাসি তার মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করে।১২ বছর বয়সে সেসব চিন্তাকে মাথায় এনে শুরু হয় মাস্টারবেশন।তা চলতে থাকে প্রতি মাসে ২০ বার করে।২২ বছর বয়সে সে তার প্রথম স্ত্রী ও অন্যান্য মহিলাদের ধর্ষণ করে।অনেকের কাছে পর্ণ অল্প সময়ের জন্য আনন্দের খোরাক জোগালেও কেউ কেউ এর হাত ধরেই জন্ম দেয় নির্মম বাস্তবতার যা নিষ্পাপ কিছু জীবনকে বিষাদময় করে তুলে অকল্পনীয়ভাবে।

ভার্নন গিবার্থের সঙ্গে সাক্ষাৎকার (
retired Lieutenant Commander with the NYPD and author of “Sex Related Homicide and Death Investigation: Practical and Clinical Perspectives”) যখন এসব ক্রিমিনালদের ঘটনা শুনি মানে তাদের ভিতরকার দুনিয়াটা স্পষ্ট চোখে দেখি, তখন এ বিষয়ে আর সন্দেহ থাকে না যে প্রকৃত নীরব ঘাতক কোনটি।এমন কিছু ফ্যান্টাসি আছে যা কোনদিনই বৈধ বা সভ্য না।কিন্তু এ ফ্যান্টাসিগুলোই কাউকে কাউকে আচ্ছামত পেয়ে বসে।এগুলো নশ্বর ও ক্ষণস্থায়ী।আর পরের ধাপে ব্যাক্তি শরণাপন্ন হয় পর্ণের।এতে করে ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট কোন ক্যাটাগরির উপর সে দিনের পর দিন দুর্বল হতে থাকে।ব্যাক্তি ভেদে তা ভিন্ন ভিন্ন।আর এক সময় সে লালসার জোয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহদের ওপর আর বাস্তবায়ন ঘটায় তার মনের ভেতর পুষে রাখা ফ্যান্টাসির।

ক্যাথারসিস থিওরি বা ক্যাথারসিস ইফেক্ট
এই টার্মটি হয়তো অনেকের কাছেই অজানা।সহজ বাংলায় বলতে গেলে বিশোধন তত্ত্ব বা বিশোধন প্রভাব।মানে এই থিওরি মতে, পর্ণকে ব্যবহার করে আমরা আমাদের বর্বর ফ্যান্টাসিগুলোকে লাগাম দিতে পারি।অর্থাৎ আমাদের মনের ক্ষুধাকে সাময়িকভাবে মিটিয়ে আমরা ধর্ষণ বা যে কোন প্রকার সেক্সুয়াল ভায়লেন্স ঠেকাতে পারি।কারণ ধর্ষণ করার আকাঙ্ক্ষা তো পর্ণই মিটিয়ে দিচ্ছে।আবার কষ্ট করে বাস্তব জীবনে কারো মানহানি করার কি দরকার?
তাহলে এবার দেখা যাক যে এই থিওরি কতোখানি যুক্তিযুক্ত।একটা এক্সপেরিমেন্টের কথা উল্লেখ করবো যা পরিচালনা করেন হাওয়ার্ড, রিফলার ও লিটজিন।২৩ জন পুরুষকে নিয়ে এই এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের একটি পর্নোগ্রাফিক মুভি দেখানো হয় এবং তাদের উত্তেজনা পর্যবেক্ষণ করা হয়।এরপর পনেরো দিন প্রতিদিন নব্বই মিনিটের জন্য অ্যাডাল্ট পর্ণ দেখানো হয়।ফলে দেখা যায়, সবার মধ্যে শুরুতে যে উত্তেজনা কাজ করছিলো তা ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

কাঠামোগত দিক দিয়ে দুর্বল এই এক্সপেরিমেন্টে কিছুই প্রমাণ হয় না।প্রথমত, কি ধরণের পর্ণ সাবজেক্টরা দেখতে চায় তার ক্ষেত্রে কোন স্বাধীনতা ছিল না।বাধ্য হয়ে তাদের সবাইকে একই পর্ণ দেখতে হয়েছে।অথচ একেক জনের চাহিদা একেক রকম।তাই অল্পতেই তাদের উৎসাহ ফুরিয়ে গেছে।দ্বিতীয়ত, লম্বা সময় ধরে এবং একটানা চলে আসা যে কোন কাজই মানুষকে একঘেয়েমি করে তুলে।তাদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।

এর বিপরীতে দেখবো জিলম্যান ও ব্রায়ান্ট এর এক্সপেরিমেন্ট।দুইটা গ্রুপে সাজানো হয় স্যাম্পলদের।প্রথমটা তৈরি করা হয় সমান সংখ্যক তরুণ ও তরুণী নিয়ে।এই আন্ডারগ্র্যাজুয়েটদের ডাকা হয় ২টি মিডওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে।পরবর্তী গ্রুপটাতেও থাকে সমান সংখ্যক তরুণ তরুণী।তবে তারা স্টুডেন্ট নয়।

এবার শুরু হয় এক্সপেরিমেন্ট।তাদেরকে অনেকগুলো অপশন দেওয়া হয় মানে কে কী ধাঁচের পর্ণ দেখতে চায়।একটা নির্দিষ্ট সময় পরে দেখা যায়, তারা যখন একটা ক্যাটাগরি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে তখন ঝাঁপিয়ে পড়ছে অন্য আরেকটায় যা আগেরটার তুলনায় আরো বর্বর।মানে যেগুলো খুব অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে।

মাস্টারবেশন এর ফ্যাক্টরটাও এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা দর্শকদের কামবাসনাকে আরো জোরদার করে। তবে অনেক পুরুষের ক্ষেত্রেই মাস্টারবেশনের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে তার কল্পনার মানুষটির সাথে বাস্তবে মিলিত হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।কিন্তু যখন দেখে বৈধভাবে তা হয়তো কোনদিন সম্ভব না, তখনই তাদের কেউ কেউ ভিতরের রাক্ষসটাকে টেনে বের করে আনে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান ঘেটে এর বহু উদাহরণ দাঁড় করানো যায়।
তাই বলা চলে, ক্যাথারসিস থিওরির মূলত কোন ভিত্তি নাই।
অস্ট্রেলিয়ায় সম্প্রতি এক গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে পর্ণাসক্ত বাচ্চাদের বাড়তি উগ্রতার কথা। প্রায় সবার কাছেই ইন্টারনেট সহজলভ্য ও এদের ৯০% স্বীকার করেছে যে অনলাইনে পর্ণ দেখার অভ্যাস আছে। এক চতুর্থাংশ জানিয়েছে, বড় ভাই বা বোনের সহায়তায় বা কোন বন্ধুর প্ররোচনায় পড়ে তারা পর্ণের জগতে পা ফেলেছে, অনেক সময় অনিচ্ছা সত্তেও।আরেক চতুর্থাংশ বলেছে, অনলাইনে যাওয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্যই ছিল পর্ণ দেখা। যখন আলাদাভাবে ডেকে অভিভাবকদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তখন তাদের প্রায় প্রত্যেকে তাদের সন্তানের অনলাইন ব্রাউসিং নিয়ে সন্দেহপ্রবণ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।

আচ্ছা! এটা কি হতে পারে যে পর্ণের মাধ্যমে ধর্ষণ রোধ সম্ভব?-রবার্ট পিটারস্
পর্নোগ্রাফির পক্ষে যারা, তারা লম্বা সময় ধরেই বলে আসছে যে যেসব ব্যাক্তি সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স ঘটানোর ইচ্ছা রাখে, পর্ণ তাদের সেই খায়েশকে লাগাম দেয় ও তাদের শান্ত করে।অনেকের ক্ষেত্রে তা সত্য হতে পারে কিন্তু একটু আগে যে পরিসংখ্যান দেখানো হল তাতে কি মনে হয় এতে লোকসানের চেয়ে লাভ বেশি হয়?মোটেই না।আর যদি তাই হতো তাহলে দিনের পর দিন এই অপরাধীদের সংখ্যা বাড়ছে কেনো? কারণ আজকের যুগে আমরা এটাকে বেশ সহজলভ্য করে তুলেছি তা যে ক্যাটাগরির কথাই বলুন না কেনো।
সম্প্রতি এক গবেষণায় এসেছে, যারা চাইল্ড পর্নোগ্রাফি দেখে অভ্যস্ত তাদের অর্ধেকের বেশি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বাচ্চা মেয়েদের উত্যক্ত করার অভিযোগে।সামাজিক গবেষণাগুলো থেকেও প্রতীয়মান হয় পর্ণের সাথে যৌন অপরাধের জোরদার সম্পর্কের কথা।

মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটির পিডিএফ গুগল ড্রাইভ থেকে ডাউনলোড করুন