সিরিয়াল কিলার
অত্যন্ত সুদর্শন আর হ্যান্ডসাম ছিল সে । লম্বা, ঋজু শরীরের কাঠামো , কোঁকড়ানো চুল, ঈগলের ঠোটের মতো বাঁকানো খাড়া নাক । প্রথম দর্শনে যে কেউই পছন্দ করে বসত , রাজ্যের মায়াভরা চোখ দুটো যে কোন মেয়েরই রাতের ঘুম হারাম করার মতো যথেষ্ট ছিল ।
আইনের তুখোড় ছাত্র ,বিনয়ী নম্র , মার্জিত রুচির পোষাক আশাক সব মিলিয়ে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ।আপাদমস্তক নিপাট ভদ্রলোক ।
সুদর্শন চেহারা আর ভদ্রলোকের মুখোশের আড়ালে সম্পূর্ণ অন্য একটা মানুষ ছিল সে- যেন রবার্ট লুই স্টিভেন্সনের গল্পের বই থেকে উঠে আসা বাস্তবের ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড । সে ছিল একটা সিরিয়াল কিলার , রেপিস্ট , একটা নরপিশাচ । ৩০ এরও বেশি মেয়েকে সে নিজের হাতে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ভাবে খুন করেছিল যদিও বাস্তবে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশী ।
লোকে তাকে টেড বান্ডি বলেই জানতো । শেয়ালের মতো ধূর্ত ছিল সে , বিড়ালের মতো নিঃশব্দ ছিল তার চলাফেরা । খুব নিখুঁত নারী শিকারের প্ল্যান করতো বান্ডি , চিতার ক্ষিপ্রতায় শিকার করে স্রেফ ভূতের মতো মিলিয়ে যেত হাওয়ায় । বাঘা বাঘা পুলিশ অফিসার আর ঝানু ঝানু গোয়েন্দাদের নাকের জল আর চোখের জল এক করে ছেড়েছিল সে । সত্তরের দশকে আমেরিকার ৭ টি প্রদেশ জুড়ে কায়েম করে ফেলেছিল এক ত্রাসের রাজত্ব ।
থিওডর রবার্ট বান্ডি ওরফে টেড বান্ডির জন্ম মার্কিন মুলুকের Burlington এ, , ১৯৪৬ সালের ২৪শে নভেম্বর । বান্ডির বাবা কে ছিল তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ ছিল । বান্ডির মনে সারাজীবন মায়ের প্রতি চাপা একটা ক্ষোভ ছিল এ ব্যাপারটা নিয়ে ।
পড়াশোনাতে বেশ মেধাবীই ছিল টেড বান্ডি ,১৯৭২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে গ্র্যাজুয়েশান কমপ্লিট করে সে ।
প্রথম আঘাতঃ
ঠিক কখন এবং কোথায় বান্ডি নারী শিকার শুরু করেছিল তা নিয়ে বিস্তর তদন্ত হয়েছে , জল অনেক ঘোলা করা হয়েছে কিন্তু আসল তথ্য বের করা সম্ভব হয়নি । বান্ডি এক এক সময় এক একজনকে এক এক রকম কথা বলতো ।
ধারনা করা হয় ১৯৬৯ সালে সে মেয়েদের কিডন্যাপ করা শুরু করলেও খুন করা শুরু করে ১৯৭১ সালের পর থেকে ।
কিছু আলামত এবং তদন্ত থেকে অনেক ডিটেক্টিভ আবার ধারনা করেন খুনি হিসেবে বান্ডির আত্মপ্রকাশ আরো অনেক আগে, ১৯৬১ সালে ৮ বছর বয়সের একটা মেয়েকে খুন করার মাধ্যমে – যখন বান্ডির বয়স মাত্র ১৪ । বান্ডি অবশ্য চিরকাল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ।
টুকটাক কিডন্যাপিং এবং দু একটা খুন করে হাত পাকানোর পর বান্ডি শুরু করে তার আসল খেলা ১৯৭৪ সালে , ২৭ বছর বয়সে ।
শিকারঃ
বান্ডি টার্গেট করত হাল ফ্যাশনের আকর্ষণীয় পোশাক পড়া সুন্দরী কলেজ,ইউনিভার্সিটির মেয়েদের যাদের বয়স সাধারনত ১৫-২৫ বছর । সুন্দর জামা কাপড় পড়ে কেতাদুরস্ত হয়ে মুখোশ, টর্চ লাইট , দড়ি দাড়া , সিঁধকাঠি , হ্যান্ডকাফ ইত্যাদি বাদামী ভোক্সওয়াগানে চাপিয়ে বান্ডি বেরিয়ে পড়তো শিকারের খোঁজে । টহল দিয়ে বেড়াতো এমন জায়গাগুলোতে যেখানে নারীদের আনাগোনা খুব বেশি । কাউকে মনে ধরলে বা একা একা কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলে নেমে আসতো গাড়ি থেকে ।
টার্গেট সাহাজ্য করতে আসলে সুদর্শন টেড বান্ডি “শুধু কথা দিয়েই চিড়ে ভিজিয়ে ফেলতো” । অনুরোধ করত বইগুলো গাড়ি পর্যন্ত পৌছে দেওয়ার । বই / ব্রিফকেস নিয়ে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছানো মাত্রই নরক নেমে আসতো টার্গেটের মাথায় ।তার এক হাত ঝোলানে থাকতো স্লিংএ বা এক পায়ে থাকতো প্লাস্টার – ভান করতো যেন তার হাত / পা ভাঙ্গা । আরেক হাতে থাকতো ভারী ব্রিফকেস বা মোটা মোটা বই । টার্গেটের খুব কাছে যেয়ে টার্গেটের মনযোগ আকর্ষণের জন্য বই গুলো সশব্দে ফেলে দিত বা এমন অভিনয় করত যে খুব কষ্ট হচ্ছে তার ব্রিফকেসটা বহন করতে – জরুরী সাহাজ্য দরকার ।
বেশ কয়েকদিন পর অসহায় মেয়েটার বিকৃত ফুলে ঢোল হয়ে যাওয়া জামা কাপড় ছাড়া লাশ পাওয়া যেত কোণ এক পরিত্যাক্ত জায়গায় – পাহাড় পর্বতে বা বনে জংগলে । অনেক সময় লাশের চিহ্নটুকুও পাওয়া যেত না ।
বান্ডি এতোটাই বিকৃত মানসিকতার ছিল যে সে লাশ পচে গলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত লাশের সঙ্গে সেক্স করতো । হয়তো একজায়গায় খুন করে ২০০ মাইল দূরের কোন এলাকায় যেয়ে সে আরেকটা খুন করতো , তারপর আবার প্রথম ক্রাইম স্পটে এসে লাশের ওপর ঝাল মিটাতো – আস্ত শয়তান লোক ।
সিয়াটল , সল্টলেক সিটি , কলারাডো , ফ্লোড়িডার মেয়েরা অদৃশ্য আতংকে ভুগতো , অজানা এক সাইকো ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরে না জানি কখন কার পালা আসে । এক হোস্টেল থেকে আরেক হোস্টেলে যাবার সময় , থিয়েটার বা মুভি থেকে ফেরার পথে এমনকি করিডোর দিয়ে এক রুম থেকে অন্য রুমে যাবার সময়ও মেয়েরা গায়েব হয়ে যেত , চিরুনী অভিযান চালিয়েও ধরা যেত না ঘাতককে ।
মাঝে মাঝে টুকটাক চাকুরী করলেও বান্ডির আয়ের একটা বড় উৎস ছিল পকেট কাটা আরো নির্দিষ্ট করে বললে মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ কাটা । হাত সাফাইও ভালো জানতো সে । সুপার স্টোর গুলো থেকে জিনিস পত্র চুরি করার ওস্তাদ লোক ছিল এই বান্ডি ।
একের পর এক মেয়ে রহস্যময় ভাবে গায়েব হয়ে যাচ্ছে অথচ রহস্যের কোন কিনারা হচ্ছে না – ধরা পড়ছে না ঘাতক । king county sheriff office এর ডিটেক্টিভরা আর Seattle Police Department কুত্তা পাগল হয়ে গিয়েছিল অপরাধী ধরার জন্য । কিন্তু বান্ডির শিকারের সংখ্যা কুড়ি পার হবার আগ পর্যন্ত কেউই বুঝতে পারে নি তারা প্রত্যেকেই আসলে পৃথক পৃথক ভাবে একজন লোকের পেছনে ছুটছে ।
ফায়ার আর্মস ব্যবহার করা সে সচেতন ভাবেই এড়িয়ে গিয়েছিল নিজের আইডেন্টিটি লুকানোর জন্য – ব্যবহার করতো বাড়ির টুকুটাকি জিনিস – নাইলনের দড়ি দাড়া , স্টকিং …এর কারন ছিল অবশ্য – টেড বান্ডির মস্তিষ্ক ছিল ক্ষুরধার, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারার অভাবনীয় ক্ষমতা ছিল তার , ক্রাইম মেথোডোলজি নিয়ে গভীর পড়াশোনা তাকে শিখিয়েছিল কিভাবে কারো সন্দেহের উদ্রেক না করে ক্রাইম স্পটে আঙ্গুলের ছাপ বা এই জাতীয় কোন ক্লু না ফেলে নিমিষেই হাপিশ হওয়া যায় । ছদ্মবেশ ধারন করাতে ওস্তাদ ছিল সে – চুলে দু আঙ্গুল চালিয়ে বা ফেসিয়াল এক্সপ্রেশান বদলে ফেলে খুব তাড়াতাড়িই নিজের চেহারা বদলে ফেলতে পারত – এ কারনেই কোন প্রত্যক্ষদর্শীই নির্দিষ্ট করে তার চেহারার বিবরন দিতে পারতোনা পুলিশকে ।
এতো বিশাল এলাকার পরিধিতে অল্প সময়ের ব্যবধানে সে খুন এবং রেপ গুলো করতো যে পুলিশের পক্ষে বোঝা সম্ভব হতো না যে এই সব নারকীয় ঘটনার পেছনে একটা লোকই দায়ী – টেড বাণ্ডি , বান্ডির নিজের ভাষায় – “… the most cold-hearted son of a b***h you’ll ever meet …।
ঠিক কতটা খুন বান্ডি করেছিল তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেন না – ৩০ টি খুনের ঘটনা সে নিজে স্বীকার করেছে । কিন্তু বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ সাক্ষ্য দেয় তার খুনের সংখ্যা প্রায় একশোর কাছাকাছি । টেড বান্ডির আইনজীবিও একসময় স্বীকার করেছিল টেড একশোর বেশী হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ।
কি ছিল টেড বান্ডির এই অন্ধকার জগতের চালিকা শক্তি ? কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু ডিগ্রীও টেড বান্ডিকে মানুশ বানাতে পারেনি ? টেড বান্ডির শেষ পরিনতিই বা কি ছিল ?
ভোক্সওয়াগানকে থামানো হল । প্যাট্রল অফিসাররা অবাক হয়ে দেখলেন ভোক্সওয়াগানের সামনের ড্রাইভারের পাশের সিটটা নেই । সন্দেহ হওয়াতে গাড়ির ভেতরে সার্চ করা হল । পাওয়া গেল – নাইলনের দড়ি , সিঁধকাঠি , হ্যান্ডকাফ , মুখোশ , দস্তানা, স্ক্রু ড্রাইভার এবং আরো টুকিটাকি জিনিসপত্র । “এই ব্যাটা সিঁধেল চোর না হয়েই যায় না” ভাবলেন প্যাট্রল অফিসাররা । গাড়ির মালিক একান ওকান বিস্তৃত মনভুলানো হাসি দিয়ে অফিসারদের ভুজুং ভাজুং বোঝানোর চেষ্টা করল – বেরসিক অফিসাররা হাতে হাতকড়া পড়িয়ে সে হাসির বিনিময় দিলেন । অফিসাররা তখনো জানতেন না এইমাত্র তারা যাকে গ্রেফতার করলেন সে আমেরিকার টপ টেন মোস্ট ওয়ান্টেড লোকদের একজন থিওডর রবার্ট বান্ডি ওরফে টেড বান্ডি , নারীদের পশুর মতো ভোগ করে গলা টিপে হত্যা করা যার নেশা ।
পালাবি কোথায় ?
১৯৭৭ সালের জুন মাসে বান্ডিকে Garfield County jail থেকে Pitkin County Courthouse এ নিয়ে যাওয়া হয় একটা শুনানির জন্য।বান্ডিকে সুযোগ দেওয়া হয় আত্মপক্ষ সমর্থন করার এবং হ্যান্ডকাফ খুলে দেওয়া হয়। শুনানির বিরতির একপর্যায়ে বান্ডি লাইব্রেরীতে যাওয়ায় আবেদন করে তার নিজের কেস নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য।লাইব্রেরীতে যেয়ে সে একটা বুকসেলফের পেছনের জানালা দিয়ে দুই তলা থেকে লাফ দেয় মাটিতে। গোড়ালি মচকিয়ে গেলেও কোর্টের সীমানার বাহিরে চলে যেতে সক্ষম হয় সে। পুলিশের দেওয়া রোডব্লক এড়াতে এস্পেন পর্বতমালার মধ্যদিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ।কিন্তু পার্বত্য এলাকায় পথ হারিয়ে ফেলে বান্ডি।ছয়দিন পর বান্ডি যখন পুলিশের কাছে স্যারেন্ডার করে তখন ক্ষুদপিপাসায় আর ক্লান্তিতে তার অবস্থা ছিল
জেলে ফিরে বান্ডি আবার ফন্দি আঁটতে থাকে কিভাবে ফেরারী হওয়া যায় । প্রায় ৫০০ ডলারের বিনিময়ে সে একটা হ্যাকসো ব্লেড জোগাড় করে ফেলে । সন্ধ্যায় অন্য বন্দীরা যখন গোসল করতো সেই ফাঁকে সে জেলের সেলের সিলিঙ ফুটো করতে থাকে । ছয় মাসের অবিরাম চেষ্টায় এবং ১৬ কেজি ওজন কমিয়ে প্রায় একফুট বর্গাকার গর্ত দিয়ে সিলিঙের ওপরে উঠতে সক্ষম হয় বান্ডি । বেশ কয়েকবার রিহারসেল দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয় জেল থেকে পালানোর জন্য ।
১৯৭৭ এর ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ রাত । বেশীর ভাগ জেল কর্মীই বড়দিনের ছুটিতে। এই সুযোগ কাজে লাগায় বান্ডি । সিলিঙের গর্ত দিয়ে বের হয়ে নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায় জেল থেকে ।
১৭ ঘন্টা পর ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে যখন জেল কর্মকর্তারা বান্ডির সেলের সিলিঙ্গে গর্তটা আবিষ্কার করেন ততক্ষণে বান্ডি পগার পার হয়ে গেছে ।
এই ঘরের সিলিং ফুটো করেই জেল থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল বান্ডি |
মৃত্যুর চৌকাঠেঃ
জেল থেকে পালিয়ে বান্ডি হাজির হয় ফ্লোরিডাতে । সেখানে একের পর এক ধর্ষণ আর নারকীয় হত্যাকান্ড চালাতে থাকে এফবিআই আর ফ্লোরিডার পুলিশদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ।
অবশেষে ফেব্রুয়ারী ১২ তারিখে রাত ১ টার সময় পুলিশ অফিসার ডেভিড লি , Alabama স্টেট এর কাছে এরেস্ট করেন টেড বান্ডিকে । মিঃ লি টেড বান্ডিকে সোজা নিয়ে যান জেলে । জেলে যাবার পথে টেড বান্ডি আপন মনেই বলছিল –“ তুমি আমাকে মেরে ফেললেই ভালো করতে ,অফিসার”।
টেড বান্ডিকে তার অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয় ।
১৯৮৯ সালের ২৪ শে জানুয়ারী স্থানীয় সময় সকাল ৭:১৬ মিনিটে টেড বান্ডিকে ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় । সে সময় জেলের বাহিরে প্রায় ২০০০ জনতা বিশেষ করে তরুনী এবং যুবতীরা জড়ো হয়েছিল । নেচে, গেয়ে, ফায়ারওয়ার্ক এর মাধ্যমে তারা উল্লাস প্রকাশ করছিল । ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান উঠছিল – “বার্ন বান্ডি বার্ন”, “ ইউ আর ডেড, টেড”
বান্ডির মৃতদেহ পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা হয় এবং তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তা ওয়াশিংটনের অজ্ঞাত স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয় ।
কিন্তু কেন ?
কি ছিল টেড বান্ডির এই অন্ধকার জগতের চালিকা শক্তি ? কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু ডিগ্রীও টেড বান্ডিকে মানুষ বানাতে পারেনি ?
উত্তরটা খুবই চমক জাগানিয়া – পর্নোগ্রাফি ।
বারো তের বছরের ছোট্ট টেড বান্ডি যেদিন বাসার বাহিরে পাড়ার মুদি দোকানে এবং ড্রাগস স্টোরে পর্নোগ্রাফিক ম্যাগাজিনের সন্ধান পেয়ে গেল সেইদিনই ছোট্ট টেডের মধ্যে জন্ম নিল একটা সিরিয়াল কিলার , রেপিস্ট স্বত্বা ।
(মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে ডক্টর জেমস সি. ডবসন এর নিকট একটি সাক্ষাৎকার দেয় টেড বান্ডি । সাক্ষাৎকারটি পড়ে আসুন – এখান থেকে ।
অনুরোধ করব এই লিংকে যেয়ে সাক্ষাৎকারের ভিডিওটিও দেখে আসতে । মৃত্যুর চৌকাঠে পা দেওয়া মানুষটার কথাতে যে আবেগ মেশানো ছিল সেই আবেগ লেখাতে ধারন করার ক্ষমতা কাউকে দেওয়া হয়নি)
আপনি পর্ন মুভি দেখছেন আর ভাবছেন আমি তো শুধু কিছুই করছি না , শুধু দেখছি ; কিন্তু আপনার পর্ন আসক্তি যে আরেকটা টেড বান্ডির জন্ম দেবে না তার নিশ্চয়তা কে দিবে ? বেশ কিছু হাই কোয়ালিফাইড গবেষনায় [ http://tinyurl.com/hgs2zeu ] প্রমাণিত হয়েছে পর্ন আসক্তি এর আসক্তদের মাঝে যৌন নিপীড়ন করার প্রবণতা জাগিয়ে তোলে ।
আপনি কি চান একজন টেড বান্ডি হতে ? একজন ধর্ষক ?
মৃত্যুর চৌকাঠে দাঁড়িয়ে বলা টেড বান্ডির কিছু কথা এখানে না উল্লেখ করলেই নয়-
“………আমাদের মতো যারা মিডিয়ার হিংস্রতা বিশেষত পর্নোগ্রাফিক হিংস্রতা দ্বারা অতিমাত্রায় প্রভাবিত, তারা কেউই বাহ্যত দানবীয় নই। আমরা আপনাদেরই পুত্র, আপনাদেরই স্বামী। আর সবার মতোই আমরাও একটা পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে বেড়ে উঠেছিলাম। কিন্তু এখন ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে- পর্নোগ্রাফি যে কারো বাসার মধ্যে ঢুকে পড়ে এক ঝটকায় বাসার বাচ্চাটাকে পারিবারিক কাঠামোর বাইরে বের করে নিয়ে আসে। ঠিক যেমনভাবে বিশ-ত্রিশ বছর আগে এটা আমাকে ছোবল মেরে বাইরে বের করে এনেছিলো। আমার বাবা-মা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে এসব থেকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন যেমনটা অপরাপর কট্টর খ্রিস্টান পরিবারেও হয় কিন্তু এসব প্রভাবকের ব্যাপারে সমাজ অনেকটাই শিথিল”।
“…… আমি কোনো সমাজবিজ্ঞানী নই এবং ভান ধরে এটাও বলবো না যে- সভ্য সমাজের চিরাচরিত ধারনায় আমার বিশ্বাস আছে। কিন্তু আমি দীর্ঘদিন যাবত কারাগারে বন্দী এবং এই সময়ের মধ্যে আমি এমন অনেকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি যারা ভায়োলেন্স ঘটানোর ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ। কিছু ব্যতিক্রম বাদে, তাদের প্রত্যেকেই পর্নোগ্রাফিতে গভীরভাবে আসক্ত ছিলো। নরহত্যা সংক্রান্ত এফ.বি.আই এর নিজেদের রিপোর্ট বলে- সিরিয়াল কিলারদের সাধারণ আগ্রহের বিষয় হচ্ছে পর্নোগ্রাফি। সুতরাং এটাকে উপেক্ষা করার কোনো উপায়ই নাই” ।
“……… আমি আশা করবো- আমি যাদের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়েছি তারা আমার অনুশোচনায় বিশ্বাস না করলেও এখন আমি যে কথাগুলো বলবো সেগুলো বিশ্বাস করবেন। আমাদের শহর, আমাদের সম্প্রদায় কিছু প্রভাবকের ব্যাপারে এতোটাই শিথিল যেগুলোর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। আজ হোক কাল হোক এগুলো প্রকাশ পাবেই। মিডিয়ায় ভায়োলেন্স বিশেষত সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স এখন হরেক উপায়ে গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার ভয় হয় যখন আমি ক্যাবল টি.ভি. দেখি। আজকাল সিনেমার মাধ্যমে যেসব ভায়োলেন্স আমাদের বাসা অবধি পৌঁছে গেছে, ত্রিশ বছর আগে সেগুলো এক্স-রেটেড অ্যাডাল্ট থিয়েটারেও দেখানো হতো না”।
এই কথাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ……
“………যেটা আমি আগেও বলেছি- প্রভাবকগুলোর ব্যাপারে আমাদের সমাজের শিথিলতা চোখে পড়ার মতো। বিশেষতঃ এই ধরণের ভায়োলেন্ট পর্নোগ্রাফি। যখন সভ্য সমাজ টেড বান্ডিকে দোষারোপ করতে করতে পর্ন ম্যাগাজিনের পাশ দিয়ে দেখেও না দেখার ভান করে হেঁটে যাচ্ছে, তখন আসলে একদল তরুন তাদের অগোচরেই টেড বান্ডিতে পরিণত হচ্ছে। আক্ষেপের জায়গাটা ঠিক এখানেই”।
দেখুন নারী স্বাধীনতা, নারীদের সমানাধিকার বিশেষ করে মুসলিম নারীদের নিয়ে পাশ্চাত্যের চিন্তাভাবনার কোন শেষ নেই , মুসলিম নারীদের জন্য তাদের ফেমিনিস্টদের মায়াকান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যায় , অথচ দেখুন পাশ্চাত্যই কি সুনিপন ভাবে এই পৃথিবীটাতে লক্ষ লক্ষ টেড বান্ডি তৈরি করার কাঁচামাল যোগান দিচ্ছে …… প্রতি ৩৯ মিনিটে আমেরিকা একটা করে নতুন পর্ন মুভি আপলোড করছে , বিশ্বের মোট পর্ন মুভির শতকরা ৮৫-৮৯ ভাগ বানাচ্ছে আমেরিকা একাই ।
[http://tinyurl.com/9ys2k , http://tinyurl.com/jm8qtl8 ] পর্ন মুভি বানানোয় প্রথম ১০টা দেশের মধ্যে বেশীরভাগই পাশ্চাত্যের
[ http://tinyurl.com/zap2rap ] হলিউড, মিউজিক ভিডিও, রিয়েলিটি শো, ফ্যাশন শো , সুন্দরী প্রতিযোগিতা, রেসলিং এইগুলার কথা না হয় নাই বললাম ।
পাশ্চাত্যের পর্ন মুভি আর সেক্স ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা পুরনের জন্য মানব পাচারের শিকার হতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মা বোন , লক্ষ লক্ষ ছোট ছোট দুধের শিশুদের । [http://tinyurl.com/zanm372 , http://tinyurl.com/hvofqnd, http://tinyurl.com/zn2yvy9 ]
পাশ্চাত্য নারীদের কিভাবে স্বাধীনতা দিবে ? যখন তারাই নারীদের জন্য এই পৃথিবীটাকে করে তুলেছে বসবাসের অযোগ্য ।
আমেরিকাতে প্রতি ১০৭ সেকেন্ডে একটা করে ধর্ষণ হয় [http://tinyurl.com/k8ehojc ] , তাদের তরুনরা এতোটাই পশু যে প্রতি ৪ জন নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন ধর্ষিত হয় তাদেরই পুরুষ ক্লাসমেটদের দ্বারা [http://tinyurl.com/jagb8ky ] , প্রতি ৬ জন নারীর মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৩৩ জন পুরুষের মধ্যে একজন তাদের লাইফটাইমে একবার হলেও ধর্ষণের শিকার হয়। [http://tinyurl.com/nm3gp5o ] ১৮ বছরে পা দেবার আগেই প্রতি ৪ জন মেয়ে শিশুর ১জন এবং প্রতি ৬ জন ছেলে শিশুর ১ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়[http://tinyurl.com/mzfxksp]
বাবার হাতে মেয়ে, ভাইয়ের হাতে বোন ধর্ষণের শিকার হয় । [http://tinyurl.com/hjq2a29 , http://tinyurl.com/zerbb5v ]
মা বোনেরা অফিসে আদালতে, রাস্তা ঘাটে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় । [http://tinyurl.com/mk2dmcr , http://tinyurl.com/pbzgmdrhttp://tinyurl.com/hvhqkcq ]
এতকিছুর পরেও যখন পাশ্চাত্য নারী স্বাধীনতার বুলি আওড়াই তখন কুরআনের একটা আয়াতই কেবল মনে পড়ে ……
“…তাদের যখন বলা হয় এই পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করোনা , তখন তারা বলে আমরাই তো বরং শান্তি স্থাপন কারী” । (সূরা বাকারাহ , আয়াত-১১)
আল্লাহ (সুবঃ) আমাদের অন্তর গুলো খুলে দিক , সত্য গ্রহণ করার তৌফিক দিক । (আমীন)