১৫. তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে… (৪ পর্ব)

“তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে… (প্রথম পর্ব)”

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।
প্রচুর আলো বাতাস আর বিশাল একটা আকাশকে সঙ্গী করে বেড়ে ওঠা আমার । কলেজে উঠার পর চলে আসতে হল ইট, পাথর, ধোঁয়া আর যান্ত্রিকতায় ভরা ঢাকা শহরে । হোস্টেলের রুমটা প্রথম দর্শনেই অপছন্দ করে ফেললাম । ভরদুপুরেও  ঘোর অমবস্যার অন্ধকার । জানালা একটা আছে বটে তবে সেটা আলো বাতাস চলাচলের জন্য না; দুর্গন্ধ আর মশা প্রবেশের জন্য ।খাঁচায় রাখা পাখির মতো ছটফট করতো আমার প্রাণ। একটু পা ছড়িয়ে বসার জায়গা নেই,নেই দম ফেলার জায়গা।
কলেজের প্রেসারে রাত দিন এক করে পড়াশোনা করতে হত। তবু বিকেলবেলা কিছুটা হলেও অবসর পাওয়া যেত । কিচ্ছু করার ছিলনা তখন ।  বাতাসের মতো অবাধ ছিল আমার জীবন,মাঠে ঘাটে দৌড়ঝাঁপ করে বড় হয়েছি আমি,  ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেট আমাকে তেমন টানতো না, সারাদিন ক্লাসের পড়া পড়ার পর গল্পের বইটই পড়তেও ইচ্ছে করতোনা। রুমে মন খারাপ করে আমারই মতো আরেক হতভাগার  সঙ্গে চুপ করে বসে থাকতাম । মাঝে মাঝে রাস্তায় হেঁটে বেড়াতাম ।
উদ্দেশ্যহীন ভাবে।
রিকশার গোলকধাঁধ,লোকাল বাস, ফুটপাতের ফেরিওয়ালা,স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, অগণিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো মানুষ, দীর্ঘশ্বাসের মতো হুইসেল দিয়ে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলে যাওয়া ট্রেন, হেমন্তের  বিষন্ন আলো সব কিছু ছাপিয়ে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো ছোট্ট একটা নদীর পাড়, নদীর পাড়ের অলৌকিক একটা গ্রাম ।
একদল কিশোর সরিষাক্ষেতের আইল দিয়ে সারিবেঁধে হেঁটে যাচ্ছে । সরিষাক্ষেতের ওপর হেমন্তের নতুন কুয়াশা গা এলিয়ে দিয়েছে পরম আয়েশে । কিশোরদের কারো হাতে স্ট্যাম্প, কারো কাঁধে বল । সারাবিকেল মাঠে বল পিটিয়েছে ওরা । এখন যে যার বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছে । অশত্থ গাছের ওপর দিয়ে পূর্ণিমার বিশাল চাঁদটা  উঁকি দিতে শুরু করেছে । দূরের একটা গ্রাম থেকে করুন সুরে একটা বাছুর হাম্বা করে উঠলো । মাকে ডাকছে বোধহয় ওটা। উত্তরের বাতাসে সেই ডাক ভেসে বেড়ালো অনেকক্ষন । নিজের  শহরের ট্রেনটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো দেখলে ইচ্ছে করতো সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে এখনি চেপে বসি ট্রেনে ।

ঢাকা শহরের বাচ্চাদের দেখলে খুব কষ্ট হয়। কি করুণ অবস্থা ওদের! এমন এক সিস্টেম বানিয়ে ফেলেছি আমরা যেই সিস্টেম প্রত্যেকটা মুহূর্তে চুষে নিচ্ছে বাচ্চাদের জীবনীশক্তি । বইয়ের ভারে, কোচিং সেন্টারে এ দৌড়াদৌড়ি আর প্রাইভেট টিউটরের উৎপাতে ওদের জীবনটা কেরোসিন। ওদের ওপর এত চাপ দিয়ে কি লাভ? ওদের প্রতি একটু রহম করুন না । ওকে কেনইবা সব বিষয়ে ফুল মার্কস পেতে হবে? ওকে কেনইবা পাশের বাসার ফাইয়াজ বা ফারিহার মতো হতে হবে? আমরা প্রত্যেকেই না আলাদা আলাদা মানুষ ? আমাদের প্রত্যেকেরই আলাদা একটা সত্তা আছে , আছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট? কেন আমরা অন্যের কার্বন কপি হতে চাই? কেন?
অন্যের জীবনের দিকে না তাকিয়ে আমরা যদি আমাদের নিজেদের মতো করে জীবন যাপন করতে পারতাম তাহলে এই পৃথিবীটা অনেক বেশি সুন্দর হতো। এত টেনশান, এত অস্থিরতা,মানসিক অশান্তি, ইনসোমোনিয়া থাকতো না আমাদের। প্রত্যেকেই জীবনে যেটা হতে চেয়েছিল, যেটা ভালোবাসতো সেটাই হতে পারতো । ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে রোজ সকালে গোমড়া মুখে ব্যাংকের ডেস্কে বসতে হতো না, লুকিয়ে কবিতা লিখা ছেলেটাকে মনের বিরুদ্ধে পড়তে হতো না বিবিএ ।
ঢাকা শহরের যান্ত্রিক হৃদয়হীন মানুষগুলো টাকা,ক্যারিয়ার আর খ্যাতির পেছনে ছুটতে ছুটতে অখন্ড অবসর পায়না বললেই চলে। তারপরেও যতটুকু অবসর পায়,ততটুকু উপভোগ করাও বিশাল এক সমস্যা । কত দরিদ্র এই ঢাকা শহর! এক চিলতে আকাশ নেই , নিঃশ্বাস নেবার জায়গা নেই, খেলার মাঠ নেই, বাঁশঝাড় নেই ,নেই বাঁশঝাড়ের মাথার ওপরের সেই নির্ভেজাল চাঁদটাও ! এভাবে মুরগীর কুঠিতে, নয়টা-পাঁচটায় বাঁধা ছকে বেঁচে থাকাকে কি বেঁচে থাকা বলে ? এ জীবন তেলাপোকার জীবন! এ জীবন সরীসৃপের জীবন !  তবুও এই সাদাকালো জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে মানুষ লাল নীল সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখে । মা ভালোবাসে তাঁর সন্তানকে , স্ত্রী অপেক্ষা করে থাকে কখন ঘরে ফিরবে তার ভালোবাসার  মানুষটা ।
কি লিখব ভেবে লিখা শুরু করেছিলাম আর অপ্রাসঙ্গিক কতো কি লিখে ফেললাম!
অনেকের ক্ষেত্রেই মাস্টারবেশন বা পর্ন আসক্তি তীব্র আকার ধারণ করে শুধুমাত্র অবসর সময়টাকে ঠিকভাবে কাজে না লাগানোর ফলে ।  এই লিখাতে ইনশা আল্লাহ্‌ চেষ্টা করা হবে শত সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও কীভাবে অবসরকে আনন্দময় করা যায়  সে বিষয়ে আলোকপাত করার।
ঘরে ফেরার পরেঃ
সারাদিন অফিস করে বা ক্লাস করে বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে ঝুলে ঝুলে বাসার দরজার কলিংবেল টেপার সময়  এক অদ্ভুত শুন্যতা কাজ করে বুকের ভেতর । এই সময়টা,মানে অফিস বা ক্লাস থেকে ফেরার পরের এই সময়টা খুবই নাজুক। যারা মাঝে মধ্যে পর্নমুভি দেখে বা মাস্টারবেট করে  তাদের এই সময় শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়, “যা ব্যাটা পর্ন দেখ বা মাস্টারবেট কর , মেন্টাল স্ট্রেস দূর হয়ে যাবে”।
অনেকেই শয়তানের এই কুমন্ত্রণায় সাড়া দেয় । পর্ন/মাস্টারবেশনের ফ্যান্টাসির জগতে হারিয়ে ভুলতে চায় জীবনের সব অবসাদ । ক্ষণিকের জন্য অবসাদ দূর হলেও একটু পরেই ফিরে আসে শতগুন শক্তিশালী হয়ে ।
ইসলাম কি চমৎকার সমাধানই না দিয়েছে এই সমস্যার !
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)  বলেছেন স্বামী যখন ঘরে ফিরবে তখন যেন স্ত্রী দরজা খুলে দেয় । পরস্পর সালাম বিনিময় করে ।  স্ত্রী যেন স্বামীর জন্য সুন্দর করে সাজে ।

স্ত্রীর হাসিমুখ, মিষ্টি কন্ঠের সালাম বা দুটো নরম কথা , একটু আলতো স্পর্শ,  সারাদিনের  পরিশ্রমে  ক্লান্ত,বিধ্বস্ত স্বামীকে  এক নিমিষেই দিতে পারে দু দন্ড শান্তি, নতুন করে বেঁচে থাকার প্রেরণা ,চোখকে করে দিতে পারে শীতল । ।
“…… তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গী সঙ্গিনীদের বানিয়েছেন, যাতে করে তোমরা তাদের কাছ থেকে সুখ শান্তি লাভ করতে পারো ”
( আল কুরআনঃ ৩০;২১)
পাশ্চাত্যের প্রোপ্যাগান্ডায় ব্রেইন ওয়াশড হয়ে নারী স্বাধীনতার নামে আমরা নারীকে ঘর থেকে বের করে রাস্তায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি পুরুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে । কর্মক্ষেত্রের কর্কশ,কঠোর পরিবেশ নারীর কোমলতা দূর করে দিচ্ছে । স্বামীর মনের শুন্যতা আর দূর করবে কি, দিনশেষে বেচারী নিজেই ঘরে ফিরছে শূন্য এক মন নিয়ে । কেউই কাউকে পর্যাপ্ত সময় কাছে পাচ্ছে না , দূরত্ব বাড়ছে একটু একটু করে । পরকীয়া,পর্ন আসক্তির দুয়ার খুলে যাচ্ছে ।
অবিবাহিত ভাইরা এখন হাউকাউ শুরু করবেন আমাদের তো বউ নেই, আমাদের কী হবে ?
ভাই,আমাদের সমাজে বিয়েকে করে ফেলা হয়েছে অনেক অনেক কঠিন । হাউকাউ না করে, বিয়ে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে না ভুগে আপনাদের চেষ্টা করতে হবে বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা । বিয়ে আপনার পর্ন আসক্তি বা মাস্টারবেট আসক্তি একেবারে দূর করবে এটা ভাবলে ভুল করবেন । বিয়ে কিছুটা সমাধান দিতে পারবে কিন্তু পুরোটা না । তাই,লড়াইটা শুরু করতে হবে এই মুহূর্ত থেকেই । বিয়ের জন্য বসে থাকলে চলবে না ।
ঘরে ফেরার পরে খুব দ্রুত ঢুকে পড়বেন বাথরুমে । ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে নিবেন ভালোমতো । স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে যতোটা কম স্পর্শ করা যায় ততোই ভালো । বাথরুমে কাপড় সম্পূর্ণ না খুলে ফেলে কিছু কাপড় শরীরে রেখে গোসল করা উচিত ।
গোসল শেষে বাথরুম থেকে বের হয়ে মোবাইলে বা সাউন্ডসিস্টেমে চালিয়ে দিন সুন্দর সুন্দর এই (http://bit.ly/2lkMIBU) তিলাওয়াত গুলো । আল্লাহ্‌র কালাম আপনাকে ইনশা আল্লাহ্‌ রক্ষা করবে শয়তানের ধোঁকা থেকে আর সেই সঙ্গে মেন্টাল স্ট্রেস কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করবে ।
“…… আমি কুরআনে যা কিছু নাযিল করেছি তা হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য তাদের রোগের উপশমকারী ও রহমত ”। (আল কুরআনঃ ১৭;৮২)
হালকা একটু ন্যাপ নিন । ছোট ভাইবোন বা পিচ্চিদের সঙ্গে খুনসুটি করতে পারেন । মানসিক চাপ কমাতে এগুলো  খুব সাহায্য করে ।
হোস্টেলে বা হলে পরিবার ছেড়ে দূরে থাকলে এই সময় বাবা মা’কে ফোন করুন । খোঁজ খবর নিন । ইমো,ভাইভার এগুলোর সদ্ব্যবহার করুন । মন খুলে কথা বলুন । মেন্ট্রাল স্ট্রেস দূর হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ্‌ ।

 

“তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে…(দ্বিতীয় পর্ব)”

অবসর  কাটানোর খুব চমৎকার এবং আমার অতি প্রিয় একটা উপায় হচ্ছে বই পড়া । কিছু অখন্ড অবসর, এক মগ কফি আর একটা ভালো বই … আহ! জীবনে আর কী চাই !
বিবাহিতরা এখানেও বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন । কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে আরাম করে বসলেন দু’জন । ঝিরি ঝিরি বাতাস বইতে শুরু করলো । হাতে আগুন গরম চা আর প্রিয় কোন বই । আহ! জীবন শান্তি!
বইয়ের কালো  কালির নিষ্প্রাণ হরফগুলোর যে কী শক্তি একবার যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারতাম! বাঙ্গালী  ঐতিহাসিকভাবেই  বই কেনার প্রতি তেমন  আগ্রহী ছিল না কখনোই, কিন্তু একটা সময় ছিল বাঙ্গালী ধার করে হোক বা পাঠাগারে যেয়ে হোক টুকটাক বই পড়েছে ।  এই ফেইসবুক,ইউটিউবের যুগে বাঙ্গালী এতোটা বইবিমুখ যে হয়েছে তা অতীতে আর কখনো হয়নি ।  পড়ার কোন বিকল্প নেই ,ভাই। পড়ুন ।
কি বই পড়া যেতে পারে ?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ।
জীবনের বড় একটা সময় কেটেছে জাফর ইকবালদের মতো সস্তা,কপি পেস্ট লেখকদের ছাইপাঁশ পড়ে । এখন আফসোস করে মরি । ইশ! ছাইপাঁশ গাঁজাখুরি লিখা গুলো পড়ে কেন যে সময় নষ্ট করলাম !
বই মানুষের মনোজগত পরিবর্তনের খুবই শক্তিশালী একটি মাধ্যম । দুএকটা হিমু পড়লে ইচ্ছে করবে হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে সারাদিন রাস্তায় খালি পায়ে হেঁটে বেড়াতে । পর্ন/মাস্টারবেশন নিয়ে যারা সমস্যায় আছেন তাদের অবশ্যপালনীয় একটা কাজ হল ন্যাকা প্রেম,ভালোবাসা,এক চিমটি বিজ্ঞান আর এক চিমটি গাঁজা মিশিয়ে লিখা সায়েন্স ফিকশান টাইপের বইগুলো এড়িয়ে চলা । এই বইগুলো যেমন সময় খেয়ে ফেলে ঠিক তেমনি আপনার বুকের ভেতর একধরনের হাহাকার তৈরি করে । ঈশ! নীরা বা তিথির মতো আমার যদি কেউ থাকতো! রূপার মতো কেউ যদি আমার জন্যে অপেক্ষা করত !
অবসরে,বিশেষ করে একা থাকলে এরকম হাজারো চিন্তা ভর করবে আপনার মাথায় । চিন্তা থেকে দুশ্চিন্তা, দুশ্চিন্তা থেকে দুঃখ বিলাস , সেখান থেকে হতাশা , আর হতাশার মুহূর্তেই শয়তান এসে ধরবে ক্যাঁক করে ।
তাহলে কি পড়বো ?
কুরআনের পুরো  অনুবাদ কয়জনের পড়া আছে ? হুমায়ূন,সুনীল, সমরেশের ঢাউস ঢাউস বই পড়ে ফেলেছি, কিন্তু আল্লাহ্‌র বইটার পুরোটা এখনো পড়া হয়নি আমাদের । কি লজ্জা !  লজ্জা আরো বাড়ার আগে এখনই পড়া শুরু করে দেন । মূল আরবি টেক্সট না পড়ে  শুধু অনুবাদ পড়ে যান । প্রথম প্রথম একটু কেমন কেমন লাগতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করুন একসময় খুবই মজা পাবেন । আল কুরআন একাডেমী,লন্ডন কর্তৃক প্রকাশিত কুরআনের বাংলা অনুবাদটা আমার ভালো লেগেছিল ।
মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবনীও আমাদের পড়া নেই । পড়তে পারেন এটিও । ‘আর রাহেকুল মাখতুম (https://goo.gl/AqUSkD )’, ‘সীরাহ ইবনে হিশাম’ বা রেইনড্রপসের ‘সীরাহ (http://bit.ly/2nxO6P4)’  পড়া যেতে পারে ।
রিয়াদুস সালেহীন,হায়াতুস সাহাবা বই গুলোও পড়া যেতে পারে । অন্তর নরম করতে এই বই গুলো খুবই কার্যকরী ।
আলহামদুলিল্লাহ্‌! বাংলাদেশে এখন বেশ সুন্দর সুন্দর বই বের হচ্ছে । বই কিনুন। বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না ।
যারা গাঁটের টাকা খরচ করে বই কিনতে চাননা তাদের জন্যে রয়েছে  Kalamullah.com । ইচ্ছেমতো  পিডিএফ নামিয়ে  পড়ুন এখান থেকে ।
নাসীম হিজাযী’র অসাধারণ কিছু ঐতিহাসিক উপন্যাস আছে । পড়ে ফেলতে পারেন এগুলোও(http://bit.ly/2mZKHKq) ।
অবসর কাটানোর আরেকটা ভালো উপায় হচ্ছে লেকচার শোনা । এই ইসলামিক রিমাইন্ডারগুলো (http://bit.ly/2ny3VrY) আপনার পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তি দূর করতে সাহায্য তো করবেই, সেই সঙ্গে আল্লাহ্‌ চাইলে আপনার জীবনের গতিপথই পালটে দিতে পারে ।
কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে লেকচার শোনার মধ্যে অন্যরকম একটা মজা আছে, না শুনলে ঠিক বলে বোঝানো যাবে না । অন্য উপকার না হোক, লেকচার শুনতে লাগলে পাঁচ-দশ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে  পড়বেন এটা নিশ্চিত  ।

আমাদের মফঃস্বল শহরটা এমনিতে খুবই সুন্দর । ফাগুনের দিন আর ফাগুনের রাতে এই শহরে যেন বেহেশত নেমে আসে; এতো সুন্দর! অর্ধেক নগরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা…
ফাগুনের এক দুপুরে এই শহরের একরাস্তায় হাঁটার সময় মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম একবার – এই শহরের,এই রাস্তায়,এইরকম ফাগুনের দুপুরে বউয়ের হাতে হাত রেখে হাঁটতে চাই, একবার হলেও । বউকে দেখাতে চাই, “এইযে দেখ জীবনবাবুর সেই ভাঁটফুল,আর ঐযে, যে গাছটাতে আগুন লেগেছে সেটা পলাশ । দুপাশের অতন্দ্রপ্রহরীর মতো যে গাছগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের ঝরে পড়া পাতাগুলো তোমার আমার গা ছুঁয়ে পড়ছে পথের ওপর সেগুলো গগণ শিরীষ”।
দুটো কারণে প্রতিজ্ঞাটা এখনো পূরন করে উঠতে পারিনি …
শহরের ঐ রাস্তায় ফাগুনের ঐ সময়ে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি আর আমার বউয়ের দেখাও পাইনি এখনো।
ছুটির দিনে অযথা ফেসবুকিং না করে,টিভিসেটের সামনে না বসে থেকে  স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হোন। কক্সবাজার,বান্দরবন বা দেশের বাহিরে ঘুরতে যেতে হবে সে কথা বলিনি। বাসার পাশের রাস্তাতে দুজনে হাঁটুন, আইস্ক্রীম খান, ঝালমুড়ি খান,রিকশাতে করে আশপাশটা চক্কর দিন। চাঁদনী পসার রাতে একসঙ্গে জ্যোৎস্না দেখুন, শ্রাবণসন্ধ্যায় ঘর অন্ধকার করে জানালার ধারে বসে থাকুন দু’জন ।
একমহাসমুদ্র ভালোবাসা নিয়ে দুজন মানুষ কাছাকাছি আসে বিয়ের মাধ্যমে । সংসার নামের কুখ্যাত কারাগারে ফেঁসে যেয়ে সেই ভালোবাসার মহাসমুদ্র শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগে না। স্ত্রীকে সময় দিন। তাঁর রান্নার প্রশংসা করুন, প্রয়োজনে পাম দিন, মরা খালেও জোয়ার আসবে ইনশাআল্লাহ্‌।
সপ্তাহজুড়ে কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপে পিষ্ট হয়ে আপনার অন্তর হয়ে যায় শূন্য। আপনি থাকেন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত।এই সময়  আপনাকে,শয়তান খুব বেশী কুমন্ত্রণা দেয় পর্নমুভি দেখার ।এইসময় আপনার দরকার আপনার স্ত্রীকে । আপনার স্ত্রীরও দরকার আপনাকে । সারা সপ্তাহ জুড়ে বেচারী আপনাকে কাছে পায়না। এই একটা বা দুটোদিন তাঁকে তো কিছুটা সময় দিন। নাহলে কে জানে একদিন দেখবেন কোন সুযোগ সন্ধানী শেয়াল আপনাদের দুজনের মাঝে সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোবে। পরকীয়া,বিবাহ বিচ্ছেদ তো আর এমনি এমনিই বাড়ছে না!
‘বউ’ নিয়ে মাতামাতি করতে যেয়ে আমরা যেন ভুলে না যায় আমাদের মা-বাবার কথা । শুধু টাকা ইনকাম আর রান্না করার জন্যে আমাদের বাবা-মা পৃথিবীতে আসেননি। তাঁদেরও বাহিরে খেতে যেতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে ছেঁড়াদ্বীপ আর নীলগিরি দেখতে । তাঁরাও মানুষ। তাঁদেরকেও সঙ্গে নিন।সময় দিন।
অবিবাহিতরা আবার হাউকাউ শুরু করবেন,“আমাদের তো বউ নেই , আমাদের কী হবে”?
উত্তর পাওয়া যাবে আগামী পর্বে ইনশা আল্লাহ্‌ ……




‘তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে…. (তৃতীয় পর্ব)’

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
…অনেক দিন পর ফুল পিচ ক্রিকেটে খেলা হল । শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল ।
বিছানায় গা এলানো মাত্র গভীর ঘুমে । সকালে ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন শরীর এক্কেবারে ঝরঝরে ।
পর্নআসক্তি বা মাস্টারবেশন আসক্তি  নিয়ে যারা ঝামেলায় আছেন তাদের উচিত অবসর পেলেই নিয়মিত খেলাধুলা করা বা শারীরিক পরিশ্রম করা ।  সারাদিন ব্র্য়লার মুরগীর মতো রুমে বসে বসে ফিফা , কাউন্টার স্ট্রাইক বা কক খেলে লাভ নেই ;  আসল পুরুষের মতো আসল খেলা খেলুন –   ক্রিকেট খেলুন , ফুটবল খেলুন (এটা বেশি কাজের )।
ঢাকা শহরের মুরগীর কুঠিতে থাকেন ? খেলার জায়গা নেই ?
…ফুটপাতে জগিং করুন, লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ভাঙ্গুন , রিকশায় চড়া কমিয়ে দিয়ে হাঁটুন, পুশ আপ দিন – দশটা করে শুরু করুন , এক দিন পর পর পুশ আপের পরিমাণ তিনটা করে বাড়াতে  থাকুন – ১০- ১৩-১৬ এভাবে ।
সুযোগ থাকলে মাঝে মাঝে পুলে যেয়ে সাঁতার কাটুন,অফিসে,ক্লাসে বা টিউশানিতে সাইকেল চালিয়ে যান । মোদ্দা কথা হল যত বেশি সম্ভব ঘাম ঝরান ।
আপনার বয়সটাই এমন যে শরীরে এখন হেব্বি এনার্জি । এত্ত এনার্জি যে কিছু এনার্জি রিলিজ না করলে ঠিক স্বস্তি পাওয়া যায় না, শরীরটা কেমন কেমন জানি করে । হালাল পথে এই এনার্জি রিলিজ না  করলে ইবলিশ ব্যাটা তো রয়েছেই আপনাকে হারাম পথ গুলো বাতলে দেওয়ার জন্য । তার পাল্লায় পড়ে দেখা যাবে রিলিভ পাওয়ার জন্য আপনি মাস্টারবেট করা শুরু করেছেন – আর মাস্টারবেট করার আগে পর্নমুভি দেখছেন ;হোক সেটা সফটকোর বা হার্ডকোর বা আইটেম সং ।  তাই খেলাধুলা করুন , এক্সারসাইজ করুন – হালাল পথে এনার্জি রিলিজ করুন।
শারীরিক পরিশ্রম করলে বা খেলাধুলা করলে খুব সলিড ঘুম হবে ইনশা আল্লাহ, শরীর মন দুটোই চাঙ্গা থাকবে । ঘুমানোর আগে যে “উলটা পালটা” চিন্তা ভাবনা মাথায় আসে সেগুলো থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ ।
রাসূল (সাঃ) এর একটা সুন্নাহও আদায় হয়ে যাবে  ইনশা আল্লাহ এক্সারসাইজ করলে । মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। এছাড়া তিনি নির্দোষ খেলাধুলা, ঘোড়দৌঁড়, কুস্তি ও তীর নিক্ষেপ চর্চার জন্য অন্যদেরকে উপদেশ দিতেন। তিনি বলেছেন, পিতার ওপর সন্তানের অধিকারহলো হলো, পিতা সন্তানকে  সাঁতার ও তীর-চালনা শেখাবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
“দূর্বল  মু’মিনের চেয়ে শক্তিশালী আল্লাহর  কাছে মু’মিন অনেক উত্তম ও অধিক প্রিয়, সবার মধ্যেই কল্যান রয়েছে•••”। (সহীহ্ মুসলিম, কিতাবুল ক্বাদর)
তো এক্সারসাইজ , খেলাধুলা করে  হয়ে উঠুন শক্তিশালী , মেদ ভুঁড়ি কমিয়ে হয়ে উঠুন ফিট , বিয়ের বাজারে নিজের মুল্য বাড়ান আর তুড়ি মেরে  উড়িয়ে দিন  বেয়াড়া পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তি  ।
জীবন নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই আমাদের । এটা পাইনি,ওটা পাইনি। অবসরে, বিশেষ করে একাকী থাকলে এক এক করে মনে পড়ে জীবনের সব হিসেব না মেলা ঘটনাগুলোর কথা । অজান্তেই বিষন্নতা আর হতাশা গ্রাস করে । হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হয় । অনেকসময় এই অপ্রয়োজনীয় দুঃখ বিলাস খুলে দেয় পর্ন আসক্তির দুয়ার ।
খুব বেশি বয়স হয়নি আমার । কিন্তু এরমধ্যেই দুইবার ঘুরে আসতে হয়েছে হাসপাতাল থেকে । পড়তে হয়েছে সার্জনের ছুরির নিচে । সহ্য করতে হয়েছে অবর্ণনীয় যন্ত্রণা। বিছানায় শুয়ে বসে থাকতে হয়েছে দেড় দুই মাস। বারবার অনুভব করেছি তখন, সুস্থতা আল্লাহ্‌’র(সুবঃ) কি বিশাল নেয়ামত।  আপনি হেঁটে বেড়াতে পারেন , ইচ্ছে হলে যেখানে খুশি যেতে পারেন, চোখ দিয়ে দেখতে পান , কান দিয়ে শুনতে পান -আপনি ডুবে আছেন নিয়ামতের এক মহাসমুদ্রে। তারপরেও কেন এত দুঃখ বিলাস ?
বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে অবসরে মাঝে মাঝে হাসপাতালে যান । জীবনকে দেখতে পাবেন এক আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। কত নানা রকমের রোগী!  কেউ চোখে দেখতে পায়না , কারো পা কেটে ফেলতে হয়েছে, কেউ শ্বেতশুভ্র বিছানায় শুয়ে শুয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে ওপারে যাবার।
স্পিরিট,ন্যাপথালিন,স্যাভলন,ওষুধের কড়া গন্ধ,নার্সদের ছোটাছুটি, বসতবাড়ির জমিটুকুও বিক্রী করে গ্রাম থেকে আসা রোগীর স্বজনদের শূন্য চাহনি, অন্যরকম  নিষ্ঠুর,নির্দয় এক জগত । ঘুরে আসুন হাসপাতাল থেকে । মন নরম হবে, জীবনে অল্পে তুষ্ট হওয়া শেখা যাবে, আল্লাহ্‌’র (সুবঃ) প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া শেখা যাবে, মৃত্যুভীতি জাগবে; পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তি কাটানোর জন্য যেটা খুবই দরকারী ।
রোগী দেখতে যাওয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর  সুন্নাহ । অনেক হাদীসে রোগী দেখতে যাওয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে ।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমান যদি অন্য মুসলমান রোগীর সেবা শুশ্রষা বা খোঁজখবর নেওয়ার জন্য সকালে যায়, তাহলে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদিন তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করতে থাকে। আর যদি সন্ধ্যায় যায়, তাহলে সারারাত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ)
বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এতিমখানা বা বৃদ্ধাশ্রম থেকে । পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তি কাটানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে এগুলোও ।
মাঝেমধ্যে কবরস্থানে যাওয়া নিশ্চিতভাবেই এমন অভিজ্ঞতা যা অহংকারকে নিঃশেষ করে দেয়,অন্তরে আল্লাহ্‌ভীতি জাগায়। যদি কিছুদিনের মধ্যে না গিয়ে থাকেন, তাহলে স্থায়ী বাসিন্দা হবার আগে একবার দর্শনার্থী হিসেবে ঘুরে আসুন।
কবরস্থানে গিয়ে আপনার প্রিয় মানুষদের কবরের পাশে দাঁড়ান। সেই সময়গুলোর কথা স্মরণ করুন যখন তারা ছিলেন সুস্থ-সবল। অবস্থান করছিলেন জীবিতদের মাঝেই। সেই কবরবাসীদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করুন। কল্পনা করুন আপনি কবরে শায়িত,কল্পনা করুন একবার , দুনিয়ায় থাকতে পর্ন মাস্টারবেশনে যে ক্ষনিকের মজা নিয়েছিলেন এখন তার প্রতিদান দেওয়া হচ্ছে, আপনার কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে,আপনার পরিধানে জাহান্নাম থেকে আনা আগুনের পোশাক…
অবসরে ঘুরে আসুন গোরস্থান থেকে। আল্লাহর কাছে কবরবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং তাদের উপর রহমত বর্ষণের আকুল আবেদন জানান। দুয়া করুন যেন আল্লাহ তাদের কবরসমূহকে প্রশস্ত করে দেন ও আলো দ্বারা উদ্ভাসিত করে দেন। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান যেন আপনি নিজে যখন তাদের মাঝে অবস্থান করবেন তখন আপনার উপরও রহম করা হয়। [১]
চলবে ইনশা আল্লাহ্‌ ……
পড়ুন বাকি পর্ব গুলোঃ
তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে(প্রথম পর্ব) – https://goo.gl/t8l1mO
তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে(দ্বিতীয় পর্ব) –  http://bit.ly/2oNbHPs
[১]  শায়খ ইউনুস কাথরাদা’র বাংলা ফেইসবুক পেইজ থেকে এই লিখাটির অধিকাংশ নেওয়া হয়েছে। মূল লিখার লিংক – http://bit.ly/2oiTvfq




তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে…(শেষ পর্ব)

এ দুনিয়ার জীবনে যারা সফল, যাদের যশ, খ্যাতি, অর্থবিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তির কোনো অভাব নেই, আমরা অবেচেতন মনেই তাদের অনুসরণ, অনুকরণ করার চেষ্টা করি। হোক সে ক্লাসের সেরা ছাত্র বা জনপ্রিয় খেলোয়াড়, তুখোড় অভিনেতা বা শীর্ষ ধনীব্যক্তি। এরা কীভাবে অবসর কাটায়? ঘরের কোণায় বসে মুভি-সিরিয়াল দেখে, ইউটিউবে পড়ে থেকে, ফেইসবুকে একটার পর একটা স্ট্যাটাস দিয়ে?

জাগতিক জীবনে সফল ব্যক্তিরা অবসর কাটাতে বেরিয়ে পড়ে পৃথিবীর পথে, ছুটে বেড়ায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। কেউ সাগরে নৌকা ভাসায়, কেউ আকাশ থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়ে, কেউ পাহাড়ে চড়ে বেড়ায়, কেউ হাইকিং করে, সাঁতার কাটে, বই পড়ে, সাইক্লিং করে, পরিবার-আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটায়। অবসরে তারা নতুন নতুন জিনিস শেখে—কোনো নতুন ভাষা, কোনো নতুন প্রযুক্তি, রান্না বা অন্য কিছু। নেটওয়ার্ক বিল্ড আপ করে, চ্যারিটি ফান্ডের জন্য টাকা সংগ্রহ করে, কোনো জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়।
অবসর সময়কে শুধু নিছক “আনন্দ” আর “মজা” করার মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রোডাক্টিভ কিছু করার চেষ্টা করুন। সাঁতার, সাইক্লিং, বাইক চালানো শিখুন, রান্না করাটা শিখে নিন। মাইক্রোসফট অফিস খুব ভালোমতো শিখুন, ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং জানা খুব জরুরি; ধীরে ধীরে শিখে ফেলুন। টুকটাক প্রোগ্রামিং করা শিখুন, সুযোগ থাকলে ইলেক্ট্রনিক্স নিয়েও অল্পবিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করুন। মসজিদে স্বেচ্ছাশ্রম দিন, জনসেবামূলক কোনো প্রতিষ্ঠানে সময় দিতে পারেন (নারী-পুরুষের ফ্রি মিক্সিং হবার সম্ভাবনা থাকলে কোনো দরকার নেই)।
আল্লাহ্‌ (সুবঃ) বলেন, “…আর সফলকাম তারাই যাদের দোযখের আগুন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। দুনিয়ার জীবনতো ছলনার বস্তু ছাড়া অন্য কিছুই নয়।” (সূরা আলে-ইমরান, ৩:১৮৫)
তাঁরাই প্রকৃত সফল ব্যক্তি (রাঃ) যারা এই ধুলোমলিন পৃথিবীতেই পেয়েছিলেন জান্নাতের সুসংবাদ। কেমন ছিল তাদের অবসর? কী কী করে তাঁরা কাটাতেন তাঁদের অবসর?
জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীদের (রাঃ) অবসর কাটত আল্লাহ্‌র (সুবঃ) যিকিরে, কুরআন তিলাওয়াতে, ইলম অনুসন্ধান আর ইলম অনুযায়ী আমল করায়। তাঁরা (রাঃ) ঘোড়া চালাতেন, তীরন্দাজি করতেন, কুস্তি করতেন, ভারোত্তলন, হাই জাম্প, লং জাম্পের অনুশীলন করতেন। যুদ্ধবিদ্যা চর্চা করতেন। তাঁদের (রাঃ) মূল ফোকাস ছিল আল্লাহ্‌র (সুবঃ) যমিনে আল্লাহ্‌র (সুবঃ) দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। তাঁদের (রাঃ) মতো হবার চেষ্টা করুন।
হালের তুচ্ছ ছেলেমানুষি সেলিব্রিটি কালচার ছেড়ে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জেনারেশানকে, কুরআনের প্রজন্মকে আপনার রোল মডেল হিসেবে নিন। কুরআন পড়ুন, বুঝুন, দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে মনোযোগ দিন, তাওহিদ, আল ওয়ালা ওয়াল বারা, মিল্লাতু ইব্রাহিমের মতো দ্বীনের বেইসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা স্বচ্ছ করুন। নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগী হোন। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, অবসরে প্রোডাক্টিভ কাজ করতে গিয়ে যদি আপনার ওপর বাড়তি চাপ পড়ে অথবা উইকএন্ড চলে যাবার পরেও পুরো সপ্তাহের অবসাদ, গ্লানি দূর না হয়, তাহলে অবসরে বা উইকএন্ডে প্রোডাক্টিভ কাজ না করে শুধু রিল্যাক্স করুন।
আপনার প্রথম প্রায়োরিটি থাকবে পর্ন/হস্তমৈথুনের ফিতনাহ থেকে বেঁচে থাকা, প্রোডাক্টিভ কাজ করতে গিয়ে যদি দিন শেষে আবার পর্ন/ হস্তমৈথুনের জগতে ফিরে যান, তাহলে সেই প্রোডাক্টিভ কাজের কোনো দরকার নেই। কোনোমতেই চাপ নেয়া যাবে না। রিল্যাক্সড থাকতে হবে। ফোকাস রাখতে হবে আপনার প্রায়োরিটির ওপর। আপনি কি চান পর্ন/হস্তমৈথুন-আসক্তি থেকে বেঁচে থাকতে, নাকি চান না? যদি চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই কিছু স্যাক্রিফাইস (আপাতদৃষ্টিতে) করতে হবে, আপনার কোনো মেয়ে বন্ধু থাকা যাবে না, ফ্রি মিক্সিং এড়িয়ে চলতে হবে, গান শোনা যাবে না, আইটেম সং, মুভি সিরিয়াল থেকে দূরে থাকতে হবে। আপনি যদি শয়তানের এই ফাঁদগুলো থেকে দূরে না থাকেন, তাহলে দিনের পর দিন চেষ্টা করে যাবেন, কিন্তু আশানুরূপ ফল পাবেন না।
পর্ন/হস্তমৈথুন/চটিগল্পের আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার মনের জোর, আল্লাহ্‌র (সুবঃ) ওপর ভরসা করা আর তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া। কোনো বান্দা যখন আল্লাহ্‌র (সুবঃ) দিকে এক হাত এগিয়ে যায় আল্লাহ্‌ (সুবঃ) তার দিকে কয়েক হাত এগিয়ে যান। আপনি ভয়ঙ্কর একটা পাপ থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাচ্ছেন, শয়তানের তাঁবু থেকে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন। তাহলে কেন আল্লাহ্‌ (সুবঃ) আপনাকে সাহায্য করবেন না? আল্লাহ্‌র (সুবঃ) ওপর ভরসা রাখুন। নাছোড়বান্দার মতো চাইতে থাকুন। আল্লাহ্‌ (সুবঃ) আপনাকে এই পাপ থেকে বাঁচাবেনই। মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। হৃদয়ের কথা শুনুন।অন্তর থেকে চাইলে একদিন না-একদিন পর্ন/হস্তমৈথুন/চটিগল্পের আসক্তি দূর হবেই হবে।
ইন শা আল্লাহ্‌।

(শেষ)

মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটির পিডিএফ গুগল ড্রাইভ থেকে ডাউনলোড করুন