১৪. ফাঁদ (৬ কিস্তি)


ফাঁদ (প্রথম পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।

কংক্রিটের রাস্তায় পড়ে থাকা কোল্ড ড্রিংক্সের খালি বোতলে কষে একটা লাথি মেরে রাগ আর বিরক্তি দুটোই একসঙ্গে ঝাড়লো রুম্মান । “ধুউউর! পেটে খিদে রেখে এভাবে পার্কের বেঞ্চিতে কতক্ষন বসে থাকা যায়” ?

সেই দুপুর থেকে সে বসে আছে এই বেঞ্চিতে । এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল । পেটে দানাপিনা কিছুই পড়েনি টিফিনের পর ।

সামনের বেঞ্চিতে আধাশুয়ে থাকা উশকো খুশকো চুলের গাল ভাঙ্গা লোকটা তার ইঁদুরের মতো পিটপিটে লাল চোখ দিয়ে অনেকক্ষন ধরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্কুল ড্রেস পড়া রুম্মানের দিকে । রুম্মান অস্বস্তিবোধ করতে শুরু করলো । ঐ গাঞ্জাখোর ব্যাটাটা ছিনতাইকারী না হয়েই যায় না ।

“গাধা কোথাকার ! আমার কাছ থেকে ছিনতাই করার মতলবে আছে , আমার পকেটেতো একটা ছেঁড়া দুটাকার নোটও নেই” মনে মনে ভাবলো রুম্মান ।

সেই দুপুরে স্কুল ছুটি দিলেও বাসায় যেতে ভয় পাচ্ছে রুম্মান । বেশ কয়েকবার বাসায় যাবার জন্য রওয়ানা দিয়ে আবার মাঝপথ থেকে ঘুরে এসেছে , সাহসে কুলোয়নি । আজ বাসায় গেলে তার বাবা তাকে “বানাবেই”। সূর্য সকালে ওঠে – সন্ধায় অস্ত যায় , গরু ঘাস খায় এইগুলো যেমন ধ্রুব সত্য , তেমনি আজকে সে যে তার বাপের হাতে ডলা খাবে সেটাও ধ্রুব সত্য।




গত সপ্তাহে ক্লাসের টেক্সট বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলার সময় সে বাবার হাতে ধরা খেয়ছিল রেড হ্যান্ডেড – তখনো তার বাবা তাকে কিছু বলেননি । গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে সে দুপুরবেলা বাসা থেকে পালিয়ে হাজির হয়েছিল পাড়ার মাঠে । বীর পুরুষের মতো কাঠফাটা রোদে ক্রিকেট খেলে জ্বর বাঁধিয়ে বিছানায় পড়ে ছিল সে বেশ কয়েকদিন , তখনো তার বাবা তাকে কিছু বলেননি । কিন্তু আজকে আর রক্ষা নেই । আজকে মিড এক্সামের রেজাল্ট কার্ড দিয়েছে এবং সে দুইদুইটা সাব্জেক্টে ডাব্বু মেরে বসে আছে ।

ছিনতাইকারীর উটকো ঝামেলা থেকে বাবার হাতে পিট্টি খাওয়া ভাল। যা আছে কপালে ভেবে রুম্মান বেঞ্চি থেকে স্কুল ব্যাগটা তুলে কাঁধে নিয়ে , পানির খালি বোতলটা হাতে নিল । মক্তবের হুজুরের কাছ থেকে যত সূরা ক্বিরাত শিখেছিল ছোট বেলায় তার সব বিড়বিড় করে পড়তে পড়তে হন হন করে হাঁটা দিল বাসার দিকে । …প্লিজ! আল্লাহ আজকে পার করাইয়া দাও , সামনের শুক্রবার থেকেই নামাজ ধরব ,কথা দিলাম, পাক্কা , প্লিজ আল্লাহ প্লিজ ।




সুবহানাল্লাহ! মানুষের সাইকোলজিটাই এমন যে , মানুষ যখন অন্য কাউকে রাগিয়ে দেয় তখন সে তার সামনে যেতে ভয় পায় , ইতস্তত বোধ করে । শয়তান আদম সন্তানের ঠিক এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ফন্দি আঁটে আদম সন্তানকে তার পরম করুণাময় অসীম দয়ালু রবের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ।

শয়তান আর নফসের পাল্লায় পড়ে ভয়াবহ পাপ করে ফেলেছেন – মনে করুন যে পর্ন মুভি দেখে ফেলেছেন বা মাস্টারবেট করে ফেলেছেন । হরমোনের প্রেসার কমার পর আপনার খেয়াল হল – হায়! হায়! আমি এ কি করলাম? অনুশোচনার আগুনে আপনি দগ্ধ হচ্ছেন , ধিক্কার দিচ্ছেন নিজেকে। তৎক্ষণাৎ গোসল করে এসে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন; উদ্দেশ্য তওবা করা ।

রঙ্গমঞ্চে আগমন হল শয়তান ব্যাটার । আপনাকে ওয়াসওয়াসা দিতে শুরু করল ,“ কিরে ভন্ড! একটু আগে আল্লাহর নফরমানী করে আবার এখন এসেছিস তওবা করতে ? যা ভাগ ! তোর দেখি কোন লজ্জা শরম নাই, আল্লাহ’র সামনে দাঁড়াচ্ছিস কোন মুখে ? আল্লাহ কি তোকে মাফ করে দিবে মনে করেছিস”?

আপনি ভেবে দেখলেন – কথার মধ্যে তো বেশ যুক্তি আছে । দ্বিধা দ্বন্দে ভোগা শুরু করলেন তওবা করবেন কি করবেন না , ভুলে গেলেন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) তওবা করাকে কতটা উৎসাহিত করেছেন …

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন যারা তাঁর কাছে তওবা করে, এবং তিনি তাদেরকে ভালবাসেন যারা নিজেদেরকে পবিত্র করে।

—কুরআন, সূরা ২ (আল-বাকারা), আয়াত ২২২

অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভূলবশত মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে, এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন; আল্লাহ মহাজ্ঞানী রহস্যবিদ।

—কুরআন, সূরা ৪ (আন-নিসা), আয়াত ১৭

প্রত্যেক আদম সন্তানই পাপ করে, পাপীদের মধ্যে তারাই সর্বোত্তম যারা তওবা করে।

—সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং- ২৪৯৯




সহিহ বুখারীতে, আনাস ইবনে মালিক বর্ণনা করেন:

আল্লাহর রাসূল বলেন, “তোমাদের কেও মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়,আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবাতে তাঁর চেয়েও বেশি খুশি হন।”

—সহীহ বুখারী, ৮:৭৫:৩২১

ব্যাস শয়তানের প্ল্যান সার্থক ।

শয়তানের কুমন্ত্রনা একেবারেই পাত্তা দিবেননা , আপনাকে ভন্ড বললেও সে আসলে নিজেই ভন্ড । যে কোন পাপ করার পর এক মাইক্রোসেকেন্ডও দেরি না করে তৎক্ষণাৎ তওবা করুন , বহুত “ফায়দা” হবে।

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর সমীপে খাঁটি তওবা কর, এই আশায় যে তোমাদের প্রভু তোমাদের সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন আর তোমাদেরকে এমন উদ্যানসমূহে উপবিষ্ট করবেন যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে…”

—কুরআন,সূরা ৬৬ (আল-তাহরিম), আয়াত ৮

জালালুদ্দিন রুমী কী চমৎকার ভাবেই না বলেছেন –

“কড়া নাড়ো, তিনি তোমায় দরজা খুলে দেবেন

বিলীন হয়ে যাও, তিনি তোমায় সূর্যের মত উজ্জল করবেন

লুটিয়ে পড়ো, তিনি তোমায় বেহেশতে তুলে নেবেন

নিজেকে রিক্ত করো, তিনি তোমায় সবকিছু দিয়ে পূর্ণ করবেন”।

শয়তান বেচারার মন খুব খারাপ । এত চেষ্টার পরেও আপনার তওবা করা ঠেকাতে পারলো না । তার ষড়যন্ত্রের বাউন্সার, দুর্দান্ত হুক করে আপনি পাঠিয়ে দিয়েছেন মাঠের বাইরে । সে বুঝে ফেলেছে আপনাকে তওবা করা থেকে ফেরানোর মুরোদ ও’র কেন ও’র বাপ দাদা চৌদ্দগুষ্ঠির কারো নেই । কিন্তু তারপরেও দমে গেল না বেচারা । আবার রঙ্গমঞ্চে হাজির হল নতুন ফন্দি এঁটে – এই তওবা দিয়েই ঘোল খাইয়ে ছাড়বে আপনাকে। খেলা হবে ।

কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করল আপনাকে – আগে পর্ন মুভিটা দেখ তার পর তওবা করে ফেললি । আরে ব্যাটা জানিস না তওবা করলে আল্লাহ কি পরিমাণ খুশি হয় ? সব পাপ মাফ করে দেয়” ? তুইও মজা পেলি আর আল্লাহও খুশি হল !!! সাপও মরলো লাঠিও ভাংলো না !!!

ভাই, এরকম প্ল্যান করে পাপ করার পর তওবা করলে , তওবা কি কবুল হবে ? আল্লাহ (সুবঃ) খুশি হবেন ? আপনিই বলুন কমনসেন্সটা কাজে লাগিয়ে ?

বিষয়টা অনেকটা এরকম – আপনি রাস্তায় কাউকে বলা নেই কওয়া নেই মনের সুখে কিল থাপ্পড় চড় ঘুষি মেরে, মুখের জিওগ্রাফি বদলে দিয়ে সরি বললেন – তারপর ঐ বেচারা কি হাসিমুখে চেহারার রক্ত মুছতে মুছতে বলবেন – ইটস ওকে ব্রো ? নাকি মামা চাচা দোস্ত সব্বাইকে ফোন করে শার্টের হাতা গুটিয়ে আপনার দিকে তেড়ে আসবে – তবে রে ব্যাটা …

আল্লাহ (সুবঃ) যে কাজ হারাম করেছেন সেই কাজ এভাবে প্ল্যান করে করলে আল্লাহ (সুবঃ) এর সঙ্গে কি রসিকতা করা হয়ে যায় না ? আল্লাহর সঙ্গে রসিকতা !!!

আর তাছাড়া – পর্ন দেখা অবস্থায় বা মাস্টারবেট করা অবস্থায় মারা গেলে কবরে বা হাশরের ময়দানে কেমন আদর আপ্যায়ন পাবেন সেটাও চিন্তা কইরেন ।

সাধু সাবধান । শয়তান এরকম কুমন্ত্রনা দিতে শুরু করলে বিতাড়িত শয়তান থেকে চটজলদি আশ্রয় চান আল্লাহর কাছে । ল্যাপটপ , ফোন (যেটাতে আপনি পর্ন মুভি দেখার প্রিপারেশান নিচ্ছিলেন) বন্ধ করে দিয়ে ওই যায়গা ছেড়ে চলে যান দূরে । মানুষ জনের কাছে । খুব ভালো হয় সঙ্গে সঙ্গে ওজু করে দুই রাকাত সলাত আদায় করতে পারলে । আরো ভালো হয় জোরে আযান দিতে পারলে – জানেনইতো – আযান শুনলে শয়তান পাদু করতে করতে এলাকা ছেড়ে পালায় – দূর হ ব্যাটা পাঁজির পা ঝাড়া শয়তান! দূর হ! দূরে যেয়ে মর ………




(চলবে ইনশা আল্লাহ)












ফাঁদ (দ্বিতীয় পর্ব)
বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
এক.
আসরের নামাজ হয়ে গেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো, হলুদ রোদ নরম হয়ে কমলা হতে শুরু করেছে। অনেক কমলা রঙের রোদে ভরে গেছে মসজিদের পাশের খেলার মাঠটা। মাঠের সবুজ ঘাসের বুকে ফুটে থাকা সাদা ঘাসফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মন কেমন জানি উদাস হয়ে গিয়েছিল। ঘোর কাটল চিৎকার চেঁচামেচিতে। মসজিদের খাদেম সাহেবের ছোট্ট ছেলেটা ঘুড়ি ওড়ানোর চেষ্টা করছে মাঠে। খাদেম সাহেব লাল টুকটুকে ঘুড়িটা ধরে আছেন, ছেলে যখন নাটাই ধরে দৌড় মারছে তখন তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন ঘুড়ি।
লাল টুকটুকে ঘুড়িটা নাক উঁচু করে বাতাসে ভেসে আকাশে উঠতে চাচ্ছে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর গোত্তা খেয়ে সোজা নেমে আসছে মাটিতে। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পর অবশেষে লাল ঘুড়িটা উড়তে পারল, পারল আকাশে ভেসে থাকতে। যেকোনো আসক্তি কাটিয়ে ওঠা অনেকটা আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর মতো বা ছোটবেলায় হাঁটতে শেখা কিংবা সাইকেল চালানো শেখার মতো। অনেক বার পড়ে যাওয়ার পর, হোঁচট খাবার পর, অনেক চেষ্টার পর তবেই-না সাইকেল চালানো শেখা যায়, ঘুড়িটা ডানা মেলে আকাশে। সে রকম আপনি একদিনেই, একবারে নেশা ছাড়তে পারবেন না—সময় লাগবে, লাগবে অনেক চেষ্টা আর দৃঢ় মনোবল।
পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তির কারণে জীবন অতিষ্ঠ। আপনি মুক্তি চান এগুলো থেকে। আদাজল খেয়ে, কোমরবেঁধে লেগে গেলেন, দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ মন। সবকিছুই ঠিকঠাক মতো চলছে। অনেকদিন পার হয়ে গেছে কিন্তু আপনি পর্ন-হস্তমৈথুনের ধারেকাছেও ঘেঁষেননি। খুব খুশি, স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন—যাক বাবা বাঁচা গেল…। কিন্তু হুট করেই একদিন ব্রেকডাউন হয়ে গেল—পর্ন ভিডিও দেখে ফেললেন বা হস্তমৈথুন করে ফেললেন। ঠান্ডা হবার পর মাথার চুল ছিঁড়তে লাগলেন আফসোস করে—হায়! হায়! এ কী করলাম আমি! এ রকম সময়ে কাটাঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ার জন্য রঙ্গমঞ্চে আবির্ভাব ঘটে ইবলিসের। কুমন্ত্রণা দিতে থাকে, আরে ব্যাটা তুই যতই চেষ্টা করসি না কেন, পারবি না পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে। এত টিপস ফলো করলি, এত কিছু করলি, পারলি এগুলো থেকে বাঁচতে? বাদ দে এসব ন্যাকামো…” এ রকম কুমন্ত্রণা সে ক্রমাগত দিতেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি হতাশ হয়ে পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা বন্ধ করে দেন।
হতাশ হবার কিছু নেই। পর্ন-আসক্তি প্রায় কোকেইন আসক্তির মতো ভয়াবহ ব্যাপার। এক দিনে, একবারেই সারা জীবনের জন্য পর্নোগ্রাফি বা হস্তমৈথুন আসক্তির সঙ্গে আড়ি দেয়া তো সম্ভব হবে না, সময় লাগবে কিছুটা। হতাশ হলে চলবে না। হস্তমৈথুন, পর্ন-আসক্তির যুদ্ধে বার বার পরাজিত হওয়া মানে “হেরে যাওয়া” না। আপনি হেরে যাবেন সেদিনই, যেদিন শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে হস্তমৈথুন, পর্ন-আসক্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা ছেড়ে দেবেন।
পরিচিত একজন ভাই আছেন – ভয়াবহ রকমের হস্তমৈথুনে আসক্ত ছিলেন ক্লাস সেভেন থেকে । দুই তিন বছর আগে উনি বুঝতে পারেন – হস্তমৈথুন না ছাড়লে ভবিষ্যৎ অন্ধকার । শুরু করেন হস্তমৈথুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। প্রথম দিনগুলোর কথা বলছিলেন ভাই একদিন – প্রথম দিকে সব ধরনের টিপস ফলো করার পরেও খুব বেশিদিন হস্তমৈথুন থেকে বাঁচতে পারতাম না । একসপ্তাহ , বড়জোড় দুই সপ্তাহ । প্রত্যেক বার  হস্তমৈথুন করার পর ভয়াবহ রকমের হতাশ হয়ে পড়তাম । মন খারাপ হয়ে যেত প্রচন্ড । দুই তিনদিন পর্যন্ত মন খারাপ থাকতো । আল্লাহ’র (সুবঃ) দরবারে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাতাম। বার বার দু’আ করতাম – আল্লাহ ! মুক্তি দাও আমাকে এটা থেকে, মুক্তি দাও । এভাবেই দেড় বছরের মতো চলে গেল । ধৈর্য ধরে  লেগে থাকলাম । অবশেষে আল্লাহ (সুবঃ) আমাকে মুক্তি দিলেন হস্তমৈথুন থেকে ।
ভাই হতাশ হলে চলবে না । হস্তমৈথুন/পর্ন আসক্তি’র যুদ্ধে বারবার পরাজিত হওয়া মানে আপনি “হেরে” যাননি, আপনি হেরে যাবেন সেদিনই, যেদিন শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে হস্তমৈথুন/ পর্ন আসক্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা ছেড়ে দিবেন ।
“হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।”[আয-যুমারঃ৫৩]

হাল ছাড়বেন না কখনোই। ধৈর্য ধরে লেগে থাকুন, আল্লাহ্‌র (সুবঃ) ওপর ভরসা করে। ইন শা আল্লাহ্‌ আপনি বিজয়ী হবেনই। ইন শা আল্লাহ্‌ একদিন চমৎকার ঝকঝকে হলুদ রোদ উঠবে চারিদিকে, ঝিরি ঝিরি বাতাসে গাছের পাতাগুলো দোল খাবে, দোয়েল মিষ্টি শিস দেবে, হস্তমৈথুন, পর্ন-আসক্তির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আপনি ডানা মেলবেন সুন্দর ওই নীল আকাশটাতে—মুক্ত বাতাসে। সেদিন আপনার সমস্ত হতাশা, কষ্ট, দুশ্চিন্তা, দুঃখগুলো দলবেঁধে এসে দুঃখপ্রকাশ করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করবে যে, তারা নিতান্তই মিথ্যে ছিল।
দুই.
শয়তানের আরেকটা খুব কার্যকরী কৌশল হচ্ছে, “আজকেই শেষ। কাল থেকে আর পর্ন ভিডিও দেখব না বা হস্তমৈথুন করব না”—এ চিন্তাভাবনা আপনার অন্তরের মধ্যে গেঁথে দেয়া। প্রতিটি আগামীকালের আরেকটি আগামীকাল আছে; আগামীকালও যে আপনার মনে হবে না আজকেই শেষবার, এর গ্যারান্টি কে দেবে? এটা একটা ইনফিনিট লুপ যার কোনো শেষ নেই। পর্ন দেখা বা হস্তমৈথুন করা বন্ধ করতে হবে আজকেই। যদি আজকে না পারেন তাহলে আগামীকাল পারবেন এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
তিন.
ইসলাম নিয়ে সিরিয়াস হবার পরে হাল আমলের ছেলেমেয়েরা বিয়ে নিয়ে বেশ রোমান্টিসিযমে ভুগতে শুরু করে। কোনো এক অদ্ভুত কারণে এরা বিয়ে করাকেই তাদের ধর্মীয় জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য অথবা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনের প্রধান পূর্বশর্ত বানিয়ে ফেলেছে। অন্তরের অবস্থা আল্লাহ্‌ই (সুবঃ) ভালো জানেন, তবে তাদের বাহ্যিক আচার-আচরণ দেখে তা-ই মনে হয়। ভাবখানা এমন, ইসলাম শুধু বিয়ে করতেই বলেছে আর কিছু করতে বলেনি। বিয়ে করে “দ্বীনের অর্ধেক পূরণে” তাদের খুব আগ্রহ, কিন্তু দ্বীনের আরও অর্ধেক যে অংশ বাকি আছে সেটা পূরণে তারা ততটা মনোযোগী না।
এ বিয়ে নিয়েই শয়তান ব্যাটা খুবই মারাত্মক ফাঁদ পাতে, আর আমাদের তরুণেরা বিয়ে নিয়ে এতটাই রোমান্টিসিযমে ডুবে থাকে যে, সেই ফাঁদে পা তো দিয়ে বসেই, সেই সাথে কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও তাদের হুঁশ ফেরে না। তরুণদের কাছে বিয়েই হয়ে গেছে সকল সমস্যার সমাধান।

“মন খারাপ কেন?”
“কারণ আমার বউ নাই”
“রেসাল্ট খারাপ কেন?”
“কারণ বউ নাই, মন খারাপ থাকে, পড়তে পারি না ঠিকমতো।”
“ফজরের সালাত কাযা হয় কেন?”
“কারণ বউ নাই, মুখে পানি ছিটিয়ে কেউ ডেকে দেয় না।”
“পর্ন ভিডিও দেখা ছাড়তে পারছ না কেন? হস্তমৈথুন কেন করো?”
“কারণ আমার বউ নাই।”
বিয়ে কোনো ম্যাজিক বাটন না যে আপনি চাপ দেবেন আর আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিয়ের আগের কিছু সমস্যা হয়তো বিয়ের পর চলে যাবে, সেই সাথে আরও অনেক নতুন সমস্যার উদ্ভব হবে। চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকা, ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করা, একসঙ্গে রিকশায় ঘোরা, ফুচকা খাওয়া, শুধু এগুলোই বিয়ে না। বিয়ে মানে অনেক দায়িত্ব, অনেক কর্তব্য।
“বিয়ের আগে পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি কাটানো সম্ভব না, তুই চাইলেও ছাড়তে পারবি না। পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো বিয়ে, বিয়ে করবি সব ঠিক হয়ে যাবে, এখন দুশ্চিন্তা ভুলে “চিল” কররে পাগলা।”
এ রকম অজস্র মিথ্যে কথা শয়তান আপনাকে গুলে খাওয়াবে। আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন। পর্ন-হস্তমৈথুন থেকে বিয়ে করা ছাড়াও রেহাই পাওয়া যায় সেটা আপনি মেনে নিতে চাইবেন না। আপনার চিন্তাভাবনা আবর্তিত হবে বিয়েকে কেন্দ্র করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিয়েকে খুব কঠিন বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আবার দেখা যাবে বিয়ে নিয়ে সারাদিন আকাশ-কুসুম চিন্তা করলেও আসলে বিয়ে করার জন্য কোনো কংক্রিট স্টেপ আপনি নিচ্ছেন না। জীবিকার ব্যবস্থা করছেন না। আচরণে ম্যাচিউরিটি আসছে না। কাজকর্মে দায়িত্ববোধের ছাপ দেখা যাচ্ছে না। নিজের ফ্যামিলিকে বোঝানো দূরের কথা হয়তো তাদের সাথে এ নিয়ে কথাই শুরু করতে পারছেন না। কিন্তু দিনরাতে অনবরত বিয়ে নিয়ে চিন্তা থামছে না।
বাবা-মাকে বিয়ের কথা বলতেই দেখবেন অনেক দিন লেগে যাবে।
অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরও হয়তো যখন চাচ্ছেন তখন বিয়ে করা হয়ে উঠবে না। আপনি আরও হতাশ হয়ে পড়বেন। পর্ন দেখা, হস্তমৈথুন করার পরিমাণ বাড়তে থাকবে। জীবন অসহ্য মনে হবে। অথচ আপনি যদি অন্য টিপসগুলো অনুসরণ করতেন, তাহলে হয়তো পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতেন।
বিয়ে করলেই পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি দূর হয়ে যাবে এটা ভাবলে মারাত্মক রকমের ভুল করবেন। সাময়িক সময়ের জন্য হয়তো এগুলো থেকে দূরে থাকতে পারবেন, কিন্তু তারপর যেইকে সেই। অনেক অনেক বিবাহিত ভাই ভয়ঙ্কর রকমের পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তিতে ডুবে আছেন। অনেকের ঘর ভেঙেছে পর্ন-আসক্তি। অ্যামেরিকাতে ৫৬ শতাংশ ডিভোর্সের জন্য দায়ী পর্ন-আসক্তি। ৫৫ শতাংশ বিবাহিত অ্যামেরিকান পুরুষ স্বীকার করেছেন যে তারা মাসে একবার হলেও পর্ন ভিডিও দেখে।[1] ২৫ শতাংশ বিবাহিত অ্যামেরিকান মহিলা স্বীকার করেছে যে, তারা মাসে একবার হলেও পর্ন ভিডিও দেখে। আর যারা মাসে একবার হলেও পর্ন দেখে এমন অবিবাহিত অ্যামেরিকান মহিলার সংখ্যা শতকরা ১৬ জন।[2]
কিন্তু কেন বিয়ে পর্ন বা হস্তমৈথুনের সম্পূর্ণ সমাধান না?
পর্ন-আসক্তির কারণে আপনার মস্তিষ্কের গঠন বদলে যাবে। ‘মাদকের রাজ্যে’ শিরোনামের লিখায় আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বাস্তব যৌনতার প্রতি আপনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। সেই সঙ্গে যৌনমিলনের সক্ষমতাও। আপনার স্ত্রী আপনাকে যৌনতার জন্য প্রস্তুত করতে পারবেন না, স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ হবার চাইতে ঘরের এক কোণায় বসে পর্ন দেখাকেই আপনি উত্তেজক এবং তৃপ্তিদায়ক মনে করবেন। পর্ন দেখে দেখে আপনার মধ্যে নারীর দেহ নিয়ে যে অতিরঞ্জিত ধারণা করেছিলেন, সেটা বুঝবেন বিয়ের পরে। আপনি হতাশ হবেন। আপনার পর্ন দ্বারা প্রোগ্রামড ব্রেইন আপনার স্ত্রীর চেয়ে পর্ন অভিনেত্রীদের নিটোল দেহের প্রতি বেশি আকর্ষিত হবে। আপনি আবার ফিরে যাবেন পর্নের জগতে।
অন্তরঙ্গতার পুরো ব্যাপারটিই দুজন মানুষের অত্যন্ত চমৎকারভাবে কাছে আসা, যা আসলেই আল্লাহ্‌র (সুবঃ) পক্ষ থেকে একটি আশীর্বাদ। ভালোবাসা এবং মমতার কারণে স্ত্রী বা স্বামীকে তৃপ্তি দেয়া। নিজের চেয়ে নিজের স্ত্রীর তৃপ্তির ব্যাপারে বেশি চিন্তা করা; নিশ্চিত করা যেন পুরো সময়টুকু তার জন্য আরামদায়ক হয়, যেন তিনি কষ্ট না পান বা তাঁর সাথে বিবেচনাহীন আচরণ না করা হয়, যেন তাঁকে সম্মান দেয়া হয়।
পর্নের পুরো ব্যাপারটিই অন্তরঙ্গতার বিপরীতে যায়, কারণ এখানে মুখ্য বিষয় হলো, নেয়া ও স্বার্থপরতা। নিজে তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে আনন্দ দেয়া, নতুন কিছুর খোঁজ চালিয়ে যাওয়া। পর্ন আসক্ত হবার কারণে আপনি আপনার স্ত্রীর চাওয়া পাওয়ার দিকে কোনো খেয়ালই রাখবেন না। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে তৃপ্তি না পেয়ে আপনি অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্সের দিকে ঝুঁকবেন, স্ত্রীর ওপর জোরাজুরি করবেন। স্ত্রী রাজি না হলে আপনি থেকে যাবেন অতৃপ্ত। পর্ন দেখা শুরু করবেন আবারও। তা ছাড়া অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্সে যৌনতৃপ্তির পরিমাণ কমে যায়। আপনি এগুলোর সুযোগ পেলেও অতৃপ্ত থেকে যাবেন। ঘুরেফিরে সেই পর্ন দেখে হস্তমৈথুন করতে হবে।[3]
বিয়ের পর পর স্বামী-স্ত্রীর সবকিছুই পরস্পরের ভালো লাগে। দুজন দুজনকে ক্রমাগত আবিষ্কার করে আর মুগ্ধ হয়। ঝড় বয়ে চলে ভালোবাসার। কিন্তু বেশ কিছুদিন পর বিশেষ করে ১০ বছরের একটা লুপের পর ভালোবাসার ঝড় থেমে যায়। অন্তরের টান, মায়া-মমতা আগের মতো থাকলেও শারীরিকভাবে আপনার স্ত্রী হয়তো আপনাকে আর আগের মতো টানবেন না। বাচ্চাকাচ্চা সামলাতে গিয়ে তিনি হয়তো আপনাকে আর আগের মতো “কোয়ালিটি টাইম” দিতে পারবেন না। হয়তো এ কারণে আপনি যৌনজীবন নিয়ে একঘেয়েমিতে ভুগবেন। তবে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানে যৌনতাই সব কিছু না; বরং বিয়ের অনেকগুলো অংশের মধ্যে এটি একটি। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, বিশ্বাস, মায়া, দায়িত্ববোধ এগুলোও বিয়ের অংশ। তাই বয়সের সাথে সাথে সব পুরুষই যৌনজীবনে একঘেয়েমিতে ভুগবেন বা ভোগেন এমন না। সমস্যাটা হলো পর্ন কীভাবে আপনার চিন্তায় প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে। পর্ন আপনাকে একজন সঙ্গিনীতে সন্তুষ্ট হতে দেবে না।
যারা পর্ন দেখে অভ্যস্ত তাদের পক্ষে একজন যৌনসঙ্গিনীতে তৃপ্ত হওয়া অত্যন্ত কঠিন। পর্নের বৈশিষ্ট্যই হলো সাধারণ যৌনতার ব্যাপারে একঘেয়েমি সৃষ্টি করা। এমনকি পর্ন-আসক্ত ব্যক্তির কাছে একই ধরনের পর্নও একসময় একঘেয়ে লাগে। তার আরও কড়া কিছুর প্রয়োজন হয়। সফটকোর থেকে হার্ডকোর, হার্ডকর থেকে রেইপ পর্ন, গে পর্ন, চাইল্ড পর্ন এভাবে তার “উন্নতি” হতে থাকে। নীল জগতে নিত্যনতুন অপ্সরাদের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা আপনার কাছে রক্তমাংসের মানবী খুব তাড়াতাড়ি পুরোনো হয়ে যাবে, পানসে লাগবে। যৌনজীবনের একঘেয়েমি আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে দেবে পর্ন এবং হস্তমৈথুনের। শত সহস্র মানুষ বিয়ে ছাড়াই পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে মুক্তি পেয়েছে। আপনিও পারবেন ইন শা আল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌র (সুবঃ) ওপর ভরসা করে চেষ্টা চালু রাখুন, পাশাপাশি বিয়ের জন্যও নিজেকে যোগ্য করে তুলুন। বিয়ে করতে পারছি না তাই পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারছি না, এসব অজুহাত দেবেন না।
[1] 2014 Pornography Survey and Statistics. Proven Men Ministries- Porn Survey
[2] Barna Group, U.S., 2014
[3] পাঠকদের সবিনয়ে অনুরোধ করছি ১০৮ টি নীল পদ্ম আবারও পড়ে নিতে।



ফাঁদ (তৃতীয় পর্ব)

ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে হলের বারান্দায় আসতেই দিলটা “খুশ” হয়ে গেল নিলয়ের। চমৎকার ঝকঝকে রোদ ধুয়ে দিচ্ছে চারপাশটাকে। আকাশটা ভীষণ নীল। মনে হচ্ছে কেউ যেন নীল রং ঢেলে দিয়েছে সমস্ত আকাশজুড়ে। কী অসহ্য সুন্দর!
জোড়া শালিক হলুদ হলুদ পা ফেলে ঘাসের মধ্যে পোকা ধরছে। ঘাসগুলো যেন সবুজ গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। মৃদু বাতাসে তির তির করে কাঁপছে সাদা ঘাসফুলগুলো। নারিকেল, আম, জাম আর কাঁঠালের বনে দীর্ঘশ্বাসের মতো একটা বাতাস উঠল হুট করে। আমের শাখাগুলো দুলছে, হাতছানি দিয়ে ডাকছে যেন নিলয়কে; আয় নিলয়, আয়…
নাস্তা করে এসে কী করবে ঠিক বুঝতে পারল না নিলয়। ছুটির দিন আজকে। ক্লাস কিংবা ল্যাবের কোনো ঝামেলা নেই। আরেকবার সেঁটে ঘুম দেবে কি না ভাবছে, এমন সময় মনে হলো “ধুর! ঘুম দিয়ে লাভ নেই। তারচেয়ে একটা মুভি দেখি। কী জানি একটা নতুন বাংলা মুভি এসেছে শোভন বলছিল… উমম… মনে পড়ছে… ওটাই দেখি।”
ইউটিউবে গিয়ে মুভি দেখা শুরু করল নিলয়। গতানুগতিক কাহিনি। একটু পরেই একটা গান শুরু হয়ে গেল। আইটেম সং। নিলয় ভদ্র ছেলে। শুক্রবার ছাড়াও মাঝে মাঝে মসজিদে যায়। আইটেম সংয়ের কাণ্ডকারখানা দেখে লজ্জা পেয়ে গেল। স্কিপ করে গেল পুরোটা। একটু পর শুরু হলো আরেকটা গান। আইটেম সং না হলেও যথেষ্টই অশ্লীল। এবার কিছুক্ষণ, কিছুক্ষণ না পুরোটাই দেখল সে। ভেতর থেকে কে যেন তাকে বলল, আরে ব্যাটা দেখ, একবার দেখলে কিছুই হয় না।
পুরোটা মুভি যখন সে দেখে শেষ করল তখন ওর অবস্থা বেশ খারাপ। কান গরম হয়ে গেছে। হার্টবিট খুব বেড়ে গেছে। জোরে জোরে নিশ্বাস পড়ছে। বাইশটা বসন্ত পার করে দেয়া তৃষ্ণার্ত শরীর জেগে উঠেছে। নিলয় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেই আইটেম সংটা (প্রথম বার এটা দেখেই সে লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলেছিল) বেশ কয়েকবার দেখল। তারপর একটা-দুইটা করে বেশ কয়েকটা দেখে ফেলল। ভেতর থেকে ওর ভালো মানুষের সত্তাটা বার বার নিষেধ করছিল। সেটাকে পাত্তা দিলো না সে একবারেই। উত্তেজনা বাড়তে থাকল। একসময় জঘন্য কাজটা করে ফেলল নিলয়। ঠান্ডা হবার পর হুঁশ ফিরল। গভীর অবসাদ তাকে গ্রাস করল। একটু আগেও যে সোনালি রোদ্দুরে ভরা পৃথিবীটাকে অনেক সুন্দর মনে হচ্ছিল, আল্লাহ্‌কে (সুবঃ) বার বার ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছিল সে পৃথিবীটাকেই এখন ভীষণ স্যাঁতস্যাঁতে, অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে।
মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কতবার এভাবে নিজের নফস আর শয়তানের কাছে পরাজিত হতে হবে জানে না নিলয়।
এভাবেই উদ্দেশ্য গোপন করে কালে কালে, যুগে যুগে, আদম (আঃ) আর হাওয়া (আঃ) থেকে শুরু করে তাঁদের সন্তানদের ধোঁকা দিয়ে চলেছে ইবলিস। সে কখনোই সরাসরি আপনাকে বলবে না, “যা পর্ন দেখ” বা “হস্তমৈথুন কর”। ধাপে ধাপে অত্যন্ত ধৈর্য ধরে আগাবে সে। প্রথম ধাপটা সে আপনার কাছে খুব আকর্ষণীয় করে রাখবে। সে কাজটা করার জন্য আপনার সামনে অনেক লজিক নিয়ে আসবে। আদম (আঃ) আর হাওয়াকে (আঃ) যেভাবে ধোঁকা দিয়েছিল ঠিক সেভাবেই। ঘটনাটা আমরা সবাই জানি। আল্লাহ্‌ (সুবঃ) আদম (আঃ) আর হাওয়াকে (আঃ) একটা গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। এমনকি সে গাছের কাছে যেতেও নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু শয়তান তাদের সেই গাছের ফল খাইয়েই ছেড়েছিল। শয়তান প্রথমেই উনাদের বলেনি, “তোমরা এই নিষিদ্ধ গাছের ফল খাও।” শয়তান প্রথমে আদম (আঃ) আর হাওয়া (আঃ) গিয়ে বলল, “দেখো! আমি তোমাদের বন্ধু, আমি তোমাদের উপকার করতে চাই। তোমরা যদি এই গাছের ফল খাও, তাহলে তোমরা চিরযৌবন পেয়ে যাবে। চিরকাল এই জান্নাতে থাকতে পারবে।”
তাঁরা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আল্লাহ্‌র (সুবঃ) আদেশ অমান্য করে ফল খেলেন, শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ্‌ (সুবঃ) তাঁদের চিরসুখের জান্নাত থেকে বের করে পাঠিয়ে দিলেন এই দুঃখ-কষ্টে ভরা দুনিয়াতে।
বনি ইসরাইলের বারসিসার ঘটনাটাও শয়তানের স্টেপ বাই স্টেপ ধোঁকার আরেকটি ক্ল্যাসিক উদাহরণ। অত্যন্ত ইবাদতগুজার বারসিসাকে শয়তান ধীরে ধীরে ধোঁকায় ফেলে এক তরুণীর প্রেমে মশগুল করে দেয়। তারপর তার সঙ্গে যিনা করিয়ে নেয়। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হলে ইবলিস বারসিসাকে প্ররোচনা দেয় তাকে মেরে ফেলতে। সবশেষে বারসিসাকে বাধ্য করে শয়তানের উদ্দেশে সিজদাহ করতে।
আপনাকে কাবু করার জন্য সে একই রকম ফাঁদ পাতবে। প্রথম স্টেপটা হবে আপাতদৃষ্টিতে খুবই সাধারণ, নিরীহ একটা বিষয়। রাস্তাঘাটে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকা, মাঝেমধ্যে মুভি দেখা, ইউটিউবে একটু ভিডিও দেখা, কোনো মেয়েকে ফেইসবুকে ফলো করা, প্রোফাইল পিকচারে লাইক দেয়া, মাঝেমধ্যে চ্যাট করা, বা “বোনের মতো”/ “জাস্ট ফ্রেন্ড” মেয়েবন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দেয়া, হ্যাং আউট করা ইত্যাদি। এ কাজগুলো করতে আপনার মন খুঁত খুঁত করলে হাজারটা যুক্তি খাড়া করবে সে আপনার সামনে; আরে একদিনই তো…, মাঝেমধ্যে বিনোদনেরও তো একটু দরকার আছে নাকি! ইসলাম কি এতই কঠোর? আমি তো শুধু চ্যাটই করছি, প্রেম তো আর করছি না…, মেয়ে দেখলে কী আর এমন হবে; আল্লাহ্‌র (সুবঃ) এত সুন্দর সৃষ্টি, মা শা আল্লাহ্‌ দেখব না কেন? আমরা ও রকম না, একসাথে বসে আড্ডা দিলেও, একই রিকশায় ঠাসাঠাসি করে বসলেও আমাদের মনে খারাপ কিছু আসে না—আমরা জাস্ট ফ্রেন্ডস… এ রকম হাজার হাজার যুক্তি।
যদি শয়তানের পাতা এই ফাঁদে একবার পা দেন, তাহলেই ফেঁসেছেন। বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে শয়তানের হাতে নাকানি-চুবানি খেয়ে নিজের জন্য জাহান্নামের গর্ত বুকিং করার। নিজের ওপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ভাবতে পারেন, আরে ধুর! অযথায় ভয় দেখাচ্ছেন আপনি… আমাকে কখনো শয়তান নাকানি-চুবানি খাওয়াতে পারবে না, উল্টো আমিই তাকে দৌড়ানি দেবো। ওই প্রথম স্টেপই কেবল, তারপর তো আর আগাচ্ছি না। আপনার মতোই বারসিসাও ভেবেছিল যে, “ওই প্রথম স্টেপ পর্যন্তই। তারপর তো আর আগাচ্ছি না।” কিন্তু একসময় হাঁটি হাঁটি পা পা করে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সবগুলো স্টেপস পার করে শয়তানকে সিজদাহ করার মতো জঘন্য পাপ করে বসেছিল। আপনার ক্ষেত্রেও যে এমনটা হবে না, তার গ্যারান্টি কী। বারসিসা ছিল খুবই বড় একজন ইবাদাত-বন্দেগী করনেওয়ালা (আবিদ)। কিন্তু শেষমেষ তারই এমন করুণ পরিণতি হয়েছিল—আমি, আপনি কোনো ছার।[1]
তা ছাড়া, আল্লাহ্‌ (সুবঃ) নিজেকে নিজেই ফিতনাহতে ফেলতে নিষেধ করেছেন। তিনি কিন্তু বলেননি তোমরা যিনা কোরো না, তিনি বলেছেন যিনার কাছেও যেয়ো না।[2]
কাজেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে নিজেকে এই সব ফিতনাহর মধ্যে ফেলার কোনো মানেই হয় না। আত্মবিশ্বাস ভালো, তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কেবল বোকাদেরই থাকে। রংবাজি করার আরও অনেক জায়গা পাবেন, এখানে না করাই ভালো। জান্নাত-জাহান্নামের প্রশ্ন এটা। বাস্তবতাটা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনি খুব ভালো করেই জানেন কোন কোন বিষয়গুলো আপনাকে ফিতনাহর মধ্যে ফেলে। কোন ট্রিগারগুলো একটু একটু করে আপনাকে পর্ন দেখতে, হস্তমৈথুন করতে বা আসল যিনা করে ফেলতে ধাবিত করে। সে বিষয়গুলোর তালিকা করুন। ট্রাকের পেছনে লেখা থাকে, দেখেছেন না—১০০ হাত দূরে থাকুন? সেভাবেই যিনার দিকে ধাবিত করা সেই বিষয়গুলো থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। ধারেকাছেও ঘেঁষবেন না। শয়তানকে কোনো সুযোগই দেবেন না। কোনো যুক্তিই মানবেন না।
[1] বারসিসার কাহিনিটা পড়ে আসুন এই লিংক থেকে – http://bit.ly/2nabgeZ
[2] সূরা বনি ইসরাইল; ১৭ : ৩২




ফাঁদ (চতুর্থ পর্ব)


গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে খুব বেশি দেরি নেই। একসময় জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিল ভালো একটা চাকরি করে মনের মতো একজনকে বিয়ে করা। এখন চাকরির কথা মনে হলেই গা শিউরে ওঠে। চাকরি-টাকরি বাদ। ব্যবসা করব, ব্যবসা। ঘুমানোর আগে কাঁথা গায়ে দিয়ে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে আমি ব্যবসার চিন্তা করি। মফস্বল শহরে অল্প টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করব, তারপর আস্তে আস্তে ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠবে। হেড কোয়ার্টারটা ওই মফস্বল শহরেই থাকবে, কিন্তু ব্রাঞ্চ খোলা হবে ঢাকাসহ দেশের সব বড় বড় শহরে। গাড়ি হবে, বাড়ি হবে, বউ হবে। প্রতিমাসে একবার কক্সবাজার, বছরে অন্তত একবার দেশের বাইরে ট্যুর। ভবিষ্যতের এই সুখময় দিনের কথা ভাবতে ভাবতে আমার চোখের ঘুম কখন হাওয়া হয়ে যায়! ভাগ্যিস আমার কাঁথাটা ছেঁড়া না; নাহলে নিন্দুকেরা মুখ বেঁকিয়ে বলেই বসত, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন!
এই যে চিন্তা করতে পারা, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারা আল্লাহ্‌র (সুবঃ) কি বিশাল এক নিয়ামত সেটা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? কী গভীরভাবে মানুষ চিন্তা করতে পারে! কী ব্যাপক বিস্তৃত তার চিন্তাভাবনা! কত মোটাসোটা খটমটে, রসকষহীন বই সে লিখে ফেলেছে স্রেফ চিন্তা করেই! পাল্টে দিয়েছে পৃথিবীর গতিপথ!
সুবহান আল্লাহ্‌!!
চিন্তাশক্তিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পর্নোগ্রাফি/হস্তমৈথুন/ চটিগল্পের শুরুটা কিন্তু হয় লাগামছাড়া চিন্তাভাবনা থেকেই। রাতে ঘুমানোর আগে বা কোনো অলস মুহূর্তে কোনো মেয়ের কথা মনে হলো বা মনে হলো পর্ন ভিডিওতে দেখা কোনো দৃশ্যের কথা। আপনি সেই মেয়েকে নিয়ে বা দৃশ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করা শুরু করলেন। আপনার চিন্তাভাবনা ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠল। আপনার ভেতরের প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তুলল। ওই জঘন্য কাজগুলো করার জন্য প্রেশার তৈরি করল। একসময় আপনি সেই চাপের কাছে মাথানত করবেন, আত্মসমর্পণ করবেন শয়তানের কাছে।
তাই চিন্তার ব্যাপারে সাবধান। আপনার পদস্খলনের জন্য শয়তানের খুবই শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত, লাগামছাড়া চিন্তা। আবারও বলছি এটা খুবই শক্তিশালী হাতিয়ার। শয়তানের এই হাতিয়ার নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারলে আপনার আসক্তি কাটানো খুবই সহজ হয়ে যাবে। কোনো মেয়েকে নিয়ে বাজে চিন্তা করা বা পর্ন অভিনেত্রীদের নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগায় আনন্দ আছে, ক্ষণিকের মজা আছে। কিন্তু এর শেষ পরিণাম ভয়াবহ; জাহান্নামের লেলিহান শিখা।
যা যা করতে পারেন :
১) কিছুক্ষণ চিন্তা করে মজা নিই, পরে আর চিন্তা করব না, এ রকম মন-মানসিকতা থাকা যাবে না। বাজে চিন্তা আসামাত্রই আল্লাহ্‌র (সুবঃ) কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। চিন্তার ডালপালা গজাতে দেয়া যাবে না। চিন্তার ফোকাস সরিয়ে ফেলতে হবে, মানুষজনের সাথে কথা বলতে হবে, জায়গা পরিবর্তন করতে হবে বা কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে।
২) এমন কিছু মেয়ে থাকে যাদের কথা মনে হওয়া মাত্রই আপনার ভেতরে পর্ন দেখা বা হস্তমৈথুন করার একটা চাপ তৈরি হয়। ওইসব মেয়েদের কথা মনে হওয়া মাত্রই আপনি আল্লাহ্‌র (সুবঃ) কাছে আশ্রয় তো চাইবেনই সেই সাথে ওইসব মেয়েদের জন্যও দু’আ করবেন, যেন আল্লাহ্‌ (সুবঃ) তাদের হেদায়াত দেন, তাদের হৃদয়ের ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলে পবিত্র জীবনযাপনের তাওফিক দেন। এভাবে দু’আ করাটা খুবই কার্যকরী। এর মাধ্যমে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে। ওই মেয়েগুলো আপনার কাছে এখন আর কেবল ভোগের মাল না; বরং সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সব মানবীয় অনুভূতি নিয়ে রক্ত-মাংসের একটা জলজ্যান্ত মানুষ। ওদেরও ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করে, স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে, প্রিয় মানুষটার কাঁধে মাথা রেখে জ্যোৎস্না দেখতে ইচ্ছে করে, আপনি আল্লাহ্‌র (সুবঃ) নাম স্মরণ করছেন, তার কাছে দু’আ করছেন। এ সময় শয়তান খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারবে না। আপনার ফোকাস চেইঞ্জ হয়ে যাবে।
আর আপনার দু’আর কারণে যদি আল্লাহ্‌ (সুবঃ) কাউকে হেদায়াত দিয়েই দেন, তাহলে কী বিপুল পরিমাণ পুরস্কার আপনার জন্য অপেক্ষা করবে সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।
৩) বাজে চিন্তা যেন না আসে সে ব্যবস্থা করতে হবে। জাস্ট ফ্রেন্ড, জাস্ট ফ্রেন্ড খেলা, পবিত্র প্রেম, পবিত্র প্রেম খেলা বন্ধ করতে হবে।
“আমরা শুধুই বন্ধু, আমাদের মন পবিত্র, মনে কোনো পাপ নেই, আমরা ভাই-বোনের মতো”, প্লিয এ ধরনের হাস্যকর দাবি করবেন না। কেন এই মিছে অভিনয় করছেন? কেন নিজেই নিজেকে বোকা বানাচ্ছেন? আপনি জানেন যে, আমিও জানি আপনি যা বলছেন তা মিথ্যে। আপনি আপনার “জাস্ট ফ্রেন্ডদের” নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগেননি, তাদের নিয়ে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে রসালো আলাপ করেননি, তাদের ভেবে হস্তমৈথুন করেননি এইসব মিথ্যে বলবেন না। যেখানে মেয়েদের দিকে তাকানোই হারাম সেখানে তাদের সাথে প্রেম করা, বন্ধুত্ব করা, মেলামেশা করার তো প্রশ্নই আসে না।
মেয়েদের সাথে অবাধ মেলামেশাও পুরুষের সেক্সুয়াল মোড অন করে। পুরুষ যখন কোনো নারীর সাথে ইন্টার‍্যাকশানে যায় তখনো তার শরীরের ভেতর টেস্টোস্টেরোন নিঃসৃত হয় এবং তাকে সেই নারীর সাথে চূড়ান্ত পর্যায়ের অন্তরঙ্গ হবার জন্য প্রস্তুত করে।[1] আর টেস্টোস্টেরোন নিঃসরণের মাত্রা যদি খুবই বেশি হয়, তাহলে ব্যক্তি অন্তরঙ্গ হবার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করে। আপনার “জাস্ট ফ্রেন্ড” বা প্রেমিকার সাথে তো আর ঠিক সেই মুহূর্তে অন্তরঙ্গ হতে পারছেন না, তাই বাথরুমে গিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করছেন, ঠিক কিনা?
দয়া করে এগুলো বন্ধ করুন। পর্ন/হস্তমৈথুন/চটিগল্পের আসক্তি থেকে ফিরে আসা এমনিতেই খুবই কঠিন। আপনার এ কাজগুলোর জন্য ফিরে আসা আরও কঠিন, এমনকি অসম্ভবও হয়ে দাঁড়ায়।
৪) মাহরাম ছাড়া যত নারী আছে, তাদের সাথে পর্দা করুন। এমনকি নিকটাত্মীয়াদের সাথেও। মাহরাম হচ্ছেন এমন একজন যাকে বিয়ে করা হারাম। যেমন : ছেলেদের জন্য দাদি, নানি, মা, দুধ-মা, খালা, ফুপু, বোন, দুধ-বোন, শাশুড়ি, মেয়ে, নাতনি, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, ছেলের বউ হলো মাহরাম।[2] বাকি সবাই গাইর মাহরাম। মাহরাম ছাড়া অন্য যেকোনো মহিলাদের অর্থাৎ গাইর মাহরাম মহিলাদের বিয়ে করা জায়েজ। ভাবি, চাচি, মামি, শালি, কাযিন (মামাতো বোন, চাচাতো বোন, খালাতো বোন) এরা সবাই গাইরে মাহরাম। এদের সাথে পর্দা করতে হবে।[3]
পর্ন-আসক্তি বিশেষ করে চটিগল্পের নেশা ছাড়তে চাইলে অবশ্যই অবশ্যই এদের সঙ্গে পর্দা করতে হবে। তা না হলে তাদের সঙ্গে আপনার কথোপকথন, চলাফেরা, ওঠাবসা আপনাকে চটিগল্পগুলোর কথা বা ইনসেস্ট পর্নের কথা মনে করিয়ে দেবে। চটিগল্প বা পর্নের বিরুদ্ধে আপনি যে প্রতিরোধ ব্যূহ গড়ে তুলেছেন, তা ভেঙে তছনছ হয়ে যাবে। আপনি বার বার ফিরে যাবেন চটিগল্প কিংবা পর্নের কাছে। শয়তান সব সময় এই সম্পর্কগুলো দিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেয়।
তাই ভুল হয়ে যাবার (আল্লাহ্‌ না করুক) ভালো একটা আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া চটিগল্প পড়ার কারণে বা পর্ন দেখার কারণে আপনার মনে তাদের নিয়ে বাজে একটা চিন্তা সব সময় ঘোরাফেরা করে, আপনি বহু কষ্টে সেটি চাপা দিয়ে রাখেন। তাদের সঙ্গে মেলামেশা, কথাবার্তায় সেই চিন্তা ফুলে ফেঁপে উঠবে, বিস্ফোরণ ঘটতে কতক্ষণ?বলা যত সহজ পর্দা করাটা তত সহজ না।
সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে পর্দা মেনে চলার। একান্তই সম্ভব না হলে চেষ্টা করুন ইন্টার‍্যাকশান একেবারেই কমিয়ে ফেলতে। কাযিন, শালি, ভাবি, মেয়ে ক্লাসমেইট গল্প করতে এলে গোমড়া মুখে থাকুন, হ্যাঁ, হু-তেই কাজ সেরে ফেলুন। দেখবেন আস্তে আস্তে ওরা দূরে সরে যাবে। সবচেয়ে ভালো টেকনিক হলো “হুজুর” হয়ে যাওয়া। দাড়ি ছেড়ে দিন, মাথায় টুপি পড়তে শুরু করুন, গাইরে মাহরাম মহিলা দেখলেই চোখ নামিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন, দেখবেন কাযিন বা শালিরা আপনার সঙ্গে আড্ডা মারতে আসছে না, ভাবি আপনাকে দেখলেই মাথায় কাপড় দিয়ে আড়ালে চলে যাচ্ছেন। এ কাজগুলো যদিও এমনিতেই করা উচিত, তবুও যদি না করে থাকেন, অন্তত এ উসিলায় করে ফেলুন।
প্রথম প্রথম আপনার মনে হতে পারে কাযিন, ভাবি বা অন্য গাইর মাহরাম মহিলাদের থেকে এ রকম দূরে দূরে সরে থাকলে ওরা আপনাকে অসামাজিক ভাববে। ভাববে আপনি আলগা ভাব মারেন। পরে একসময় বুঝবেন ব্যাপারটা ঠিক উল্টো—এই দূরে দূরে সরে থাকার কারণেই তারা আপনাকে প্রচুর সম্মান করবে, শ্রদ্ধা করবে। ভালো ছেলের উদাহরণ দিতে গেলে আপনার নামটাই প্রথমে মনে পড়বে।
৫) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চোখের হেফাযত করা। রাসূল (সাঃ) বলেছেন “নজর হচ্ছে শয়তানের তীর”[4]। শুধু এই চোখের হেফাযতের মাধ্যমে আপনি পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে নিজেকে বাঁচাতে তো পারবেনই, সেই সঙ্গে আপনার জীবনটাই বদলে যাবে। এক সপ্তাহ চোখের হেফাযত করে দেখুন। পার্থক্যটা নিজেই টের পাবেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “মানুষের শরীরে এমন একটি গোশতপিণ্ড রয়েছে যা ঠিক থাকলে পুরো
শরীর ঠিক থাকে; আর তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে পুরো শরীর নষ্ট হয়ে। আর তা হলো ক্বলব বা হৃদয়।” (বুখারি : ৫২; মুসলিম : ৪১৭৮)
ক্বলব বা হৃদয় ঠিক থাকলে ঈমান-আমল সবই ঠিক থাকবে, আর ক্বলব কলুষিত থাকলে ঈমান-আমলের বারোটা বেজে যাবে। শয়তান তাই প্রথমেই আপনার হৃদয়ের দখল নিয়ে নিতে চায়, যেন আপনাকে ইচ্ছেমতো নাকে ছড়ি দিয়ে ঘোরানো যায়। চোখের দৃষ্টি হলো শয়তানের তুরুপের তাস। এর মাধ্যমে সে অতি সহজেই আপনার হৃদয়ের দখল নিতে পারে। আর একবার হৃদয়ের দখল করে নিতে পারলে সে আপনাকে দিয়ে তার ইচ্ছেমতো পাপ কাজ করিয়ে নেবে।
এই যৌন সুড়সুড়িতে সয়লাব সমাজে কি আদৌ চোখের হেফাযত করা সম্ভব?
জ্বী, কঠিন হলেও সম্ভব। রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হবে, রাস্তার আশেপাশে, গার্লস স্কুলের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়া যাবে না। যে জায়গাগুলোতে মেয়েদের আনাগোনা বেশি বা যে জায়গাতে ফ্রি মিক্সিংয়ের সম্ভাবনা বেশি সেই জায়গাগুলো পরিত্যাগ করতে হবে।
সাহাবা (রাঃ), তাবেঈ এবং আগের যুগের নেককার মানুষদের চোখের হেফাযত সম্পর্কে জানতে হবে। তাঁদের প্রতিযোগী হিসেবে নিতে হবে; উনারা পারলে আমি কেন পারব না…
মুভি, নাটক, গান-বাজনা থেকে দূরে থাকতে হবে, পত্রিকার বিনোদন-পৃষ্ঠা সযত্নে এড়িয়ে চলতে হবে। বেশ কার্যকরী একটা উপায় হলো, আপনি একদিনে কতবার চোখের হেফাযত করতে পারলেন না সেটা হিসাব করে রাখা। তারপর কাফফারা হিসেবে প্রতিবারের জন্য দু-রাকাত করে নফল সালাত আদায় করা। মনে করুন, আপনি কোনো একদিন মোট ১০ বার চোখের হেফাযত করতে পারলেন না, তাহলে এই ১০ বারের জন্য মোট ২০ রাকাত নফল সালাত আদায় করুন। এভাবে করতে থাকুন।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আপনি চোখের হেফাযত করতে পারেননি, কিন্তু শয়তান যখন দেখবে আপনি প্রত্যেকবার চোখের হেফাযত না করার জন্য দু-রাকাত করে সালাত আদায় করছেন, তখন সে আফসোস করবে। আপনাকে নফল সালাতের সোয়াব থেকে বঞ্চিত করার জন্য সে নিজের গরজেই আপনাকে চোখের হেফাযত করতে সাহায্য করবে।
নামায আদায় করার এ টিপস শোনার পরে মনে খুবই ভালো অনুভূতি কাজ করে, “যাক বাবা! আর চোখের হেফাযত করতে সমস্যা হবে না।” কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, এই টিপসের ওপর আমল করা কষ্টকর। আপনি সারাদিন মেয়েদের দিকে ইচ্ছেমতো তাকালেন, রূপসুধা পান করলেন এই ভেবে যে, “আমি রাতে তো নামায আদায় করে নেবই কাফফারা হিসেবে”, কিন্তু শেষমেষ দেখবেন নামায আর আদায় করা হয়ে উঠবে না। আমলের ব্যাপারে আন্তরিকতা না থাকলে চোখের হেফাযত আর করা হয়ে উঠবে না। তাই কঠোর প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে ১০০ রাকা’আত নামায হলেও আপনি ১০০ রাকা’আত নামায আদায় করবেন।
পর্ন ভিডিও দেখা, হস্তমৈথুনের দিকে ধাবিত করার উল্লেখযোগ্য আরেকটি মাধ্যম হলো ইউটিউব। আপনার মনে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই, স্রেফ একটা ভালো ভিডিও দেখার জন্য ইউটিউবে বসবেন, তারপর সাজেশান লিস্টে কিছু ভিডিও উঁকিঝুঁকি মারতে থাকবে। আপনি সেদিকে তাকাতে না চাইলেও মাঝে মাঝে চোখ চলে যাবে। আর তখনই শয়তান এসে ক্যাঁক করে ধরবে। আর এটা বলবেন না যে, ইউটিউবে ১০ মিনিটের জন্য ভিডিও দেখতে বসে আপনি কেবল ১০ মিনিটই বসে থাকেন। একবার ইউটিউবে বসলে এক-দেড় ঘণ্টা কোন দিক দিয়ে চলে যায়, টেরও পাওয়া যায় না। শুধু শুধু সময় নষ্ট। তারচেয়ে এই সময়ে কিছুটা আঁতলামি যদি করতেন, তাহলে আপনার সিজিপিএ-টা স্বাস্থ্যবান হতো, ভালো একটা জব পেতেন আর কোনো রূপসী কন্যার বাবার মনটাও হয়তো ভবিষ্যতে গলত।
অনেক সময় অবশ্য কোনো উপায় থাকে না। কোনো টিউটোরিয়াল দেখার জন্য বা ভালো কোনো লেকচার শোনার জন্য ইউটিউবে বসতেই হয়। পরামর্শ থাকবে বিসমিল্লাহ বলে ব্রাউযিং শুরু করুন। ভালো হয় K9 ইন্সটল করা থাকলে। চাইলেও আজেবাজে ভিডিওগুলোতে অ্যাক্সেস করতে পারবেন না।[5]
অবসর সময়ে কখনো ইউটিউবে বসে র‍্যান্ডমলি ভিডিও দেখবেন না (বাক্যটা কয়েকবার পড়ুন, মাথায় গেঁথে নিন )। অবসর সময়ে খুব বেশি বেশি কুমন্ত্রণা দেয় শয়তান, তার ওপর যদি আপনাকে ইউটিউবে র‍্যান্ডমলি ভিডিও দেখা অবস্থায় পায়, তাহলে তো ওর পোয়াবারো। ইউটিউবের ফাঁদ থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আর বিস্তারিত আলোচনা পাবেন বিষে বিষক্ষয় নামক প্রবন্ধে।
[1] Desires And Plesures Decoded, Documentry by Discovery Channel
[2] সূরা নিসা; ৪ : ২৩
[3] https://bn.wikipedia.org/wiki/মাহরাম
[4] মুস্তাদরাক হাকিম: ৭৮৭৫তাবারানি মুজামুল কাবির: ১০৩৬২
[5] বিষে বিষক্ষয় দ্রষ্টব্য।




ফাঁদ (পঞ্চম পর্ব)

ফেইসবুক ছুরির মতো। চিকিৎসকের হাতে থাকলে ছুরি জীবন বাঁচায়, রংবাজের হাতে থাকলে জীবন কেড়ে নেয়। ফেইসবুকও তা-ই। ভালোমতো ব্যবহার করতে পারলে আপনার জীবনের গতিপথই পালটে দেবে ফেইসবুক। আর একটু অসতর্ক হলেই জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। ফেইসবুক একসময় এমন ছিল না, জ্ঞানের প্রতিযোগিতা, সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা, দাম্পত্য জীবনের সুখ প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার দাপট দেখানোর প্রতিযোগিতা, নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনের প্রদর্শনী ছিল না ফেইসবুকে।
একবার চিন্তা করুন ফেইসবুক কতবার আপনার জীবনের স্বাদ নষ্ট করে দিয়েছে, বেঁচে থাকার ইচ্ছেকে মেরে ফেলেছে, অস্থিরতা, অশান্তি সৃষ্টি করেছে। দামি রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সেলফি দেখে, দেশ-বিদেশ ভ্রমণের ছবি দেখে আপনি অশান্ত, অস্থির হয়েছেন। ফেইসবুকে আপনার বন্ধুরা যখন তাদের জীবনের কাল্পনিক সুখ আর সাফল্যের ডালি সাজিয়ে বসেছে, তা দেখে আপনার অন্তর হয়েছে বিষাক্ত, পরশ্রীকাতর। হতাশার শ্যাওলা জমেছে আপনার মনে। দীর্ঘশ্বাস পড়েছে একের পর এক … “ধুর শালা! কিছুই হলো না জীবনে!” হতাশার শ্যাওলা আরও ঘন হয়েছে, হয়েছে আরও বেশি সবুজ। এই হতাশার মুহূর্তে কত অসংখ্যবার শয়তান আপনাকে পেয়ে বসেছে। আপনি পর্ন দেখেছেন, করেছেন হস্তমৈথুন, শেষমেষ আক্ষেপের অশ্রু ঘুম পাড়িয়েছে আপনাকে।
যতটুকু পারুন, ফেইসবুকে কম সময় দিন। তবে বাধ্য না হলে একবারে ছেড়ে চলে যাবেন না। পরিমিত ফেইসবুকিং অনেক ক্ষেত্রেই খুবই উপকারী একটি বিষয়। ইসলামিক পেইজগুলো ফলো করুন, যারা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিয়ে দেয় না বা ইসলামকে পাশ্চাত্যের মনমতো ব্যাখ্যা করে না এমন হকপন্থী আলিমদের অনুসরণ করুন। এসব দিক থেকে ফেইসবুক আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারবে।
আপনার যেসব বন্ধু অশ্লীল ছবি, ভিডিও ইত্যাদি শেয়ার করে তাদের আনফ্রেন্ড করে দিন। আনফ্রেন্ড করতে না চাইলে আনফলো দিন। আইডির ওপর কার্সর রাখলে following লিখাকে unfollow করে দেয়। এতে ওই আইডি আপানার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকবে কিন্তু নিউজ ফিডে শো করবে না। এতে চোখের গুনাহও হলো না, বন্ধুও রাগ করল না। মাঝখানে আপনি ফিতনাহ থেকে বেঁচে গেলেন। ফেসবুকের ডান পাশে আসা বিভিন্ন মডেলদের ফলো করার আইডি, বিভিন্ন অশ্লীল পেইজের অ্যাড ইত্যাদি দূর করার জন্য facebook purity নামের ব্রাউযার এক্সটেনশান ব্যবহার করতে পারেন। Firefox, chrome দুটোর ব্রাউযারের জন্যই পাবেন।
অশ্লীলতা ছড়িয়ে বেড়ানো অসংখ্য পেইজ আছে ফেইসবুকে। এসব পেইজ কোনোমতেই ফলো করা যাবে না। ফলো করা যাবে না নায়িকা, অভিনেত্রী, মডেল বা কোনো সেলিব্রেটিকেই। আপনার হোমপেইজ রাখতে হবে একদম পরিষ্কার। কোনো মেয়ের ছবিই যেন না আসে। ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে কোনো মেয়ের ছবি দেখে ফেললেও সেটা আপনাকে পর্ন দেখা বা হস্তমৈথুন করার ট্রিগার হতে পারে, উসকানি দিতে পারে। তাই আমাদের সাজেশান হলো মাহরাম ছাড়া আর কোনো মেয়েকেই আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে না রাখা। এমন অনেক ভাই আছেন যারা পর্ন, হস্তমৈথুন ছাড়ার জন্য আদা জল খেয়ে নামেন।
কিন্তু ফেইসবুকে নারীর ফিতনাহর জালে আটকে থাকার কারণে পর্ন, হস্তমৈথুন আর ছাড়া হয় না। আজকে, এ মুহূর্তেই বিপরীত লিঙ্গের সবাইকে আনফ্রেন্ড করুন। কাযিনদেরও। (কাযিনদের আনফ্রেন্ড করতে না চাইলে আনফলো দিয়ে রাখতে পারেন, কিন্তু আমরা এটাকে তীব্রভাবে নিরুৎসাহিত করব। সোজা আনফ্রেন্ড করুন। হয়তো কিছু কঠিন কথা শুনতে হবে, কিন্তু আলটিমেটলি এতে আপনি উপকৃত হবেন ইন শা আল্লাহ্‌।)
খুঁজে খুঁজে ফ্রেন্ডলিস্টের সব মেয়ে/ছেলেদের বের করে আনফ্রেন্ড করা ঝামেলার এবং সময়সাধ্য ব্যাপার। তবে এর সহজ সমাধান আছে।
ছেলেদের জন্য :
নিচের লিংক গেলে, আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে যাদের জেন্ডার ফিমেইল দেয়া তাদের সব আইডি চলে আসবে ইন শা আল্লাহ্‌। তারপর খুব সহজে তাদের আনফ্রেন্ড করে দিতে পারবেন।
https://www.facebook.com/search/females/me/friends/intersect
ওপরের লিংকে সমস্যা হলো এ লিংকটি ব্যবহার করুন:
https://m.facebook.com/search/females/me/friends/intersect
মেয়েদের জন্য :
নিচের লিংকে গেলে, আপনার ফ্রেন্ড লিস্টের যেসব আইডির জেন্ডার মেইল দেয়া তাদের সব আইডি চলে আসবে ইন শা আল্লাহ্‌। তারপর তাদের আনফ্রেন্ড করে দিতে পারবেন খুব সহজে।
https://www.facebook.com/search/males/me/friends/intersect
ওপরের লিংকে সমস্যা হলে :
https://m.facebook.com/search/males/me/friends/intersect
বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে ফেইসবুকে কখনোই ইন্টার‍্যাকশানে যাবেন না। কখনোই চ্যাট করবেন না। মোটামুটি ইসলাম প্র্যাক্টিসিং ভাইয়েরাও এ ফাঁদে পড়ে যান। কোনো মেয়ে আপনাকে ইনবক্সে কিছু জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর দেয়ার দরকার নেই। আপনি যে ফিতনাহর ভয়ে রিপ্লাই দিতে চাচ্ছেন না এটা বলারও দরকার নেই। শয়তান আপনাকে বার বার ধোঁকা দিতে চাইবে। আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেবে দাওয়ার গুরুত্ব এবং ফযীলত। শয়তানের ধোঁকায় ভুলবেন না। কমেন্ট, ইনবক্সে দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে কখন যে দিলের দাওয়াত দিয়ে বসে থাকবেন তা টেরও পাবেন না।
আপনাদের অনুরোধ করব দয়া করে ফেইসবুকে ছবি আপলোডের পরিমাণ একটু কমান। উঠতে-বসতে সেলফি তোলা আর সেটা ফেইসবুকে আপলোড দেয়া যে একধরনের অসুস্থতা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা সেটা কেন আপনারা বোঝেন না? ফেইসবুকে ছবির পর ছবি আপলোড করে, কাল্পনিক সব স্ট্যাটাস দিয়ে আপনি যে মিথ্যে সুখের ফানুস ওড়াচ্ছেন তাতে আপনার কী লাভ হচ্ছে? আপনার কারণে কত মানুষের অন্তর বিষিয়ে যাচ্ছে! টানাপোড়েন সৃষ্টি হচ্ছে সম্পর্কে। সেই সঙ্গে চোখের “নজর”[1] লেগে আপনার ক্ষতি হচ্ছে!
আপনার ক্রমাগত সেলফি আপলোড দেয়াতে সবাই যে বিরক্ত হয়, কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে কেউ বলে না এটা কেন বোঝেন না? বোনেরা আমার, আপনারা কেন বোঝেন না, আপনাদের ছবিগুলোতে প্রশংসামূলক কমেন্ট করা ছেলেগুলো আপনাকে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগে? তাদের বন্ধুদের সঙ্গে আপনাকে নিয়ে কুৎসিত আলোচনা করে? আপনারা আসলেই কি চান কোনো বিকৃত রুচির ছেলের যৌন ফ্যান্টাসি আর হস্তমৈথুনের নায়িকা হতে? ঠিক বুঝি না, বুঝতে পারি না আপনারা কেন যে নিজেরাই নিজেদের এভাবে অপমানিত করেন!
কিছু প্রতারক চক্র ফেইসবুক থেকে মেয়েদের ছবি সংগ্রহ করে, তারপর এডিট করে পর্নসাইট বা চটিগল্পের পেইজে দিয়ে দেয়, অনেক সময় ব্ল্যাকমেইল করে। এ কথাও মাথায় রাখা দরকার।
শয়তানের পাতা আরেকটি মারাত্মক ফাঁদ হলো আধুনিক বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড কালচার। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে শয়তান খুবই মারাত্মক ফাঁদ পাতে। পর্ন ও হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমাদের একটা টিপস ছিল যে, একজন খুবই কাছের বন্ধুকে সব খুলে বলে তার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। শয়তান আপনাকে বোঝাবে, “আরে পাগলা, গার্লফ্রেন্ডের চেয়ে কাছের মানুষ কে আছে তোর? তার সাথে সবকিছু শেয়ার কর। সে কি তোর জন্য মূর্তিমান এক প্রেরণা নয়? তার চোখের দিকে তাকিয়ে, তার হাত নিজের মুঠোতে নিয়ে তুই কি নিজের মধ্যে বিশ্বজয়ের শক্তি অনুভব করিস না? তা ছাড়া বিদ্রোহী কবি বলেছেন,
‘কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী’
গার্ল ফ্রেন্ডের প্রেরণাতেই তুই বিদায় জানাতে পারবি পর্ন আর হস্তমৈথুন আসক্তিকে।”
প্রেম নিজেই এক মারাত্মক ফিতনাহ। পদে পদে আল্লাহ্‌র (সুবঃ) আদেশ অমান্য করা। গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে, তার দিকে তাকানোর মাধ্যমে, ডেটিং করার মাধ্যমে, স্পর্শ করার মাধ্যমে আপনি আল্লাহ্‌র (সুবঃ) আদেশ অমান্য করে চলেছেন আর শয়তানকে সুযোগ করে দিচ্ছেন আপনার অন্তরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার। আপনার অন্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সে আপনাকে দিয়ে ইচ্ছেমতো পাপ কাজ করিয়ে নিচ্ছে।
আপনি পর্ন দেখছেন।
হস্তমৈথুন করছেন।
প্রেমকে হস্তমৈথুন/পর্ন-আসক্তি থেকে মুক্তির মহৌষধ মনে করার কোনো কারণ নেই। প্রেম আপনাকে খুব অল্প সময়ের জন্য পর্ন-হস্তমৈথুন থেকে দূরে রাখতে পারবে হয়তো, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান দিতে পারবে না। সে প্রেম যতই “পবিত্র”(?) হোক না কেন। অধিকাংশ ছেলেরা কী করে? নিজেই বলুন।প্রেমও করে আবার পর্ন ভিডিও দেখে, হস্তমৈথুন করে। এ হারাম সম্পর্কটা হুড তোলা রিকশা, কেএফসি, আলো-আঁধারির রেস্টুরেন্ট, স্টার সিনেপ্লেক্স পর্ব শেষে আপনাকে লিটনের ফ্ল্যাটে কিংবা “রুম ডেইটে” নিয়ে যেতে পারে। আর সেটা নিশ্চয়ই পর্ন আর হস্তমৈথুনের চেয়েও জঘন্য এক ব্যাপার।
আপনি নিজে পর্ন/হস্তমৈথুন/চটিগল্পের আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে এমন সব বন্ধুদের গুডবাই জানাতেই হবে, যারা নিজেরাও ওইসবে আসক্ত। ওদের সাথে ওঠাবসা চালিয়ে গেলে আসক্তি থেকে বের হয়ে আসা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ওরা আপনাকে পর্ন দেখার আমন্ত্রণ জানাবে, “চল দোস্ত, আজকে একটু দেখি…”, “নতুন কালেকশান আছে। দেখবি চল…”
হয়তো-বা বসে আড্ডা দিচ্ছেন। হুট করে কেউ চটিগল্প বা পর্ন ভিডিওর গল্প শুরু করে দিলো, মেয়েদের নিয়ে রসালো আলাপ শুরু করে দিলো। তাদের আলোচনায় আপনি যোগ না দিলেও অশ্লীল কিছু টার্ম, কিছু শব্দ গেঁথে যাবে আপনার মাথায়। পরে আপনার মস্তিষ্ক যখন অলস থাকবে, আপনি একা থাকবেন বা ঘুমাতে যাবেন তখন আপনার মাথায় ওই শব্দগুলো ঘুরতে থাকবে। ক্রমাগত আপনাকে জ্বালাতে থাকবে। পর্ন না দেখা পর্যন্ত, হস্তমৈথুন না করা পর্যন্ত আপনি নিস্তার পাবেন না চিন্তার জ্বলুনি থেকে।
.
“পিচ্চিকালের বন্ধু, ওদের ছাড়া থাকবি কীভাবে? একসঙ্গে গ্রুপস্টাডি করিস, ওদের থেকে দূরে সরে গেলে কে তোকে পড়া বুঝিয়ে দেবে, কার কাছে নোট পাবি?” এসব বলে শয়তান আপনাকে ধোঁকা দেবার চেষ্টা করবে। ওর কথায় কান দিয়েছেন তো মরেছেন। আপনার জীবনটাকে ধ্বংস করে ছাড়বে এসব বন্ধুরা। আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে জাহান্নামে।
.
“হায় আমাদের দুর্ভোগ, আমি যদি অমুক ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। শয়তান তো এমনই চরিত্রের যে, সময়কালে সে মানুষকে অসহায় অবস্থায় ফেলে চলে যায়।”
(সূরা আল ফুরকান; ২৫:২৮-২৯)
“বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, তবে খোদাভীরুরা নয়।” (সূরা আয যুখরুফ; ৪৩:৬৭)
আল্লাহ্‌র (সুবঃ) জন্য বিদায় বলে দিন ওইসব বন্ধুদের। আল্লাহ্‌ (সুবঃ) আপনাকে এদের চেয়েও উত্তম বন্ধু মিলিয়ে দেবেন ইন শা আল্লাহ্‌। মানুষ একাকী থাকতে পারে না, বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন কাটাতে পারে না। তাই আমাদের সাজেশান হবে প্র্যাক্টিসিং মুসলিম ভাইদের (সমাজের ভাষায় “হুজুর” ) সঙ্গে ওঠাবসা করুন। ইন শা আল্লাহ্‌ তাঁদের সাহচর্য আপনাকে সহায়তা করবে আসক্তি দূর করতে।
.
যুবকদের যৌনাকাঙ্ক্ষা দমিয়ে রাখার একটি পদ্ধতি রাসূলুল্লাহর (সাঃ) হাদিস থেকে জানা যায়। রোযা রাখা।[2] প্রতি সপ্তাহে দুদিন, সোমবার আর বৃহস্পতিবার রোযা রাখা শুরু করতে পারেন। দেখবেন মাস দেড়েকের মধ্যে আপনি অনেক এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু শয়তান আপনাকে রোযা রাখতে দিতে চাইবে না; “এত লম্বা দিনে কীভাবে রোযা রাখবি, ক্লাস আছে, ল্যাব আছে… পারবি না, রোযা রাখলে তুই শুকিয়ে যাবি, চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে…”
.
আল্লাহ্‌র (সুবঃ) ওপর ভরসা করে রোযা রাখা শুরু করে দিন। আল্লাহ্‌ (সুবঃ) সহজ করে দেবেন ইন শা আল্লাহ্‌। একই কথা খাটে দান-সাদকাহর ব্যাপারেও। প্রত্যেকবার হস্তমৈথুন করার পর বা পর্ন দেখার পর আপনি যখন পাপের কাফফারা হিসেবে দান-সাদকাহ করতে যাবেন, তখন শয়তান আপনাকে ভয় দেখাবে, “দান করলে তো টাকা শেষ হয়ে যাবে। মাস চালাবি কী করে?”
.
এসব ফিসফিসানিকে কোনোরকমের গুরুত্ব দেয়া যাবে না। আল্লাহ্‌ (সুবঃ) নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, দান করলে তিনি ধন-সম্পদ বাড়িয়ে দেন, তাই শয়তানের কথায় কান না দিয়ে দান করতে থাকুন।
.
নাটক, সিরিয়াল, সিনেমা, গান, আইটেম সং এগুলো শয়তানের খুবই ভয়ঙ্কর ফাঁদ। এগুলো থেকে দূরে না থাকলে কোনোমতেই চোখের হেফাযত করা সম্ভব না। শয়তান এ ফাঁদ পেতে খুব সহজেই আপনার অন্তর দখল করে নিতে পারে। অন্তরের নিয়ন্ত্রণ শয়তানের হাতে তুলে দিলে কী হবে সেটা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে বলিউডের আইটেম সং খুবই বিষাক্ত। একজন সুস্থ স্বাভাবিক পুরুষ আইটেম সং দেখলে কীভাবে স্থির থাকতে পারে? আপনি যদি আইটেম সং দেখা ছাড়তে না পারেন, তাহলে পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি কাটানোর চিন্তা বাদ দিন। এ পর্যন্ত পড়ার পর আপনি নিশ্চয়ই আমাদের ওপর ক্ষেপে গিয়েছেন—গান শোনা যাবে না, মুভি-সিরিয়াল দেখা যাবে না, প্রেম করা যাবে না, মেয়েবন্ধু থাকা যাবে না, ফেইসবুকে মেয়েদের সঙ্গে চ্যাট করা যাবে না, ইউটিউবে র‍্যান্ডমলি ভিডিও দেখা যাবে না… তাহলে করা যাবেটা কী? ইসলাম কি এতটাই কঠোর? ইসলামে বিনোদন বলে কিছু নেই? অবসরে করবটা কী?
.
অবসরে কী করবেন, মুভি-সিরিয়ালের বদলে কী দেখবেন, গানের বদলে কী শুনবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ‘তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে’ সিরিজে। পড়ে ফেলুন।
কিন্তু তার আগে আপনার কিছু বিষয় জানা দরকার…
.
অ্যামেরিকা!  স্বপ্নের দেশ!
যে দেশের আকাশে-বাতাসে সুখ আর আনন্দ ভেসে বেড়ায়।
যে দেশের মানুষদের মতো হতে পারাটাই আমরা মনে করি আধুনিকতা, জাতে উঠতে পারে, জীবনের সার্থকতা। যাদের লাইফস্টাইল আমরা অন্ধের মতো অনুকরণ করি। আমাদের পরম আকাঙ্ক্ষিত সব উপাদানই আছে তাদের যাপিত জীবনে—বন্ধু, আড্ডা, গান, উদ্দাম পার্টি, গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড, ফ্রি মিক্সিং, ফ্রি সেক্স, মুভি, সিরিয়াল, ড্রাগস… সবকিছুই। বিনোদনের এক মহাসমুদ্রে ডুবে আছে এরা। আমাদের চোখে জীবনে সুখী হতে হলে যা যা দরকার, তার সবকিছুই আছে এই অ্যামেরিকানদের। সুখের যে সংজ্ঞা আমরা বানিয়েছি সেটা অনুযায়ী অ্যামেরিকানদের সবচেয়ে বেশি সুখী হবার কথা।
.
কিন্তু…
.
কিন্তু তারপরও কেন প্রতি ১০ জনে ১ জন অ্যামেরিকান তীব্র হতাশায় ভোগে?[3]
কেন প্রতিবছর ৪৪,১৯৩ জন অ্যামেরিকান আত্মহত্যা করে? প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২১ জন?[4]
কেন অ্যামেরিকার কিশোর-কিশোরীরা ব্যাপকভাবে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠছে?[5]
কেন অ্যামেরিকানদের আত্মহত্যার হার আগের চেয়ে প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে?[6]
কেন?


রেফারেন্স
[1] রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা নজরলাগা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। কেননা, নজরলাগা সত্য।-ইবনু মাজাহ : ৩৫০৮
[2] বুখারি : ১৮০৬; মুসলিম : ৩৪৬৪
[3] Did you know 80% of individuals affected by depression do not receive any treatment?
– https://goo.gl/ip6Vw5
[4] Suicide Statistics – https://goo.gl/QAScBi
[5] Suicide rates climb in US, especially among adolescent girls -https://goo.gl/sXV9ud
[6] Suicide rate on the rise in U.S. – https://goo.gl/xkYC7L

 


ফাঁদ (ষষ্ঠ পর্ব)

ফাগুনের দুপুর ।
রাফি সি এনজি থেকে নেমে ঠ্যালাভ্যানে উঠেছে বেশ কিছুক্ষন হল । দেশের বাড়ীতে ছুটি কাটাতে যাচ্ছে ও । দেশে অবশ্য  বহুদিন যায় না সে । এক দূর সম্পর্কের চাচার পরিবার ছাড়া কেউ আর নেইও দেশে । সবাই যে যার মতো ঢাকাতে সেটেল্ড। এতদিন পর  সে যে দেশে যাচ্ছে তার কারন তার পাশে বসা আপাদমস্তক বোরখায় মোড়ানো এই মানুষটা; তার স্ত্রী সুমাইয়া । সুমাইয়াকে নিজের দেশ দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে সে । মাত্র দু’মাস হলো ওদের বিয়ে হয়েছে । দুজনের ঘোর যে এখনো কাটেনি সেটা বুঝতে তৃতীয়পক্ষের খুব বেশী বেগ পেতে হবেনা । দুজন দুজনার দিকে মাঝে মাঝেই যেভাবে ঘোর লাগা চোখে তাকাচ্ছে,চার চোখ এক হওয়া মাত্রই রাফি তার লাজুক চেহারা ঝট করে ফিরিয়ে নিচ্ছে  তা দেখে একটা পিচ্চিও চোখ বন্ধ করে বলে দিবে   মিয়া আর বিবির  জীবন ফাল্গুনের এই মায়াবী প্রকৃতির মতোই, রঙ্গীন ।

বুড়াভ্যান চালক শামুকের গতিতে ভ্যানটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে । ওদের দুজনের অবশ্য ভালোই লাগছে এতে । দুপুরটা অসম্ভব শান্ত । ১১ কেভি লাইনের ওপরে বসে একটা ঘুঘু তারস্বরে ডেকে দুপুরের এই অপার্থিব নিস্তব্ধতা দূর করার বৃথা চেষ্টা করছে । রাস্তার দুপাশের শিশু গাছ গুলো গার্ড অব অনারের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে । বসন্তের লিলুয়া বাতাসে সেই গাছগুলোর পাতা ঝরে ঝরে পড়ছে রাফি আর সুমাইয়ার ওপর । রাফি মাথার সবুজ টুপিটা  ঠিক ঠাক করে নিয়ে আস্তে করে হাত রাখলো সুমাইয়ার মোজা পড়া হাতটার ওপর, সুমাইয়া ঘুরে তাকালো তার দিকে, চার চোখ এক হলো , চোখে চোখে কথা শুরু হল এমন সময় বেরসিকের মতো কাছের একটা গ্রাম থেকে লাউডস্পীকারে চলতি একটা হিন্দি গান বেজে উঠলো । জমাট বাঁধা নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল, ঘুঘুটা চমকে  উড়ে পালালো । রাফি আর সুমাইয়াও চমকে উঠলো । রাফির হাতের ভেতর থেকে এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিল সুমাইয়া।
স্বপ্ন ভঙ্গ হলো ওদের । নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ ।
প্রচন্ড বিরক্তিতে ফোঁস করে একটা শ্বাস ছাড়লো রাফি । যে ব্যাটা গানটা বাজাচ্ছে তাকে হাতের কাছে পেলে ……
রাফির মনেই পড়লো না একসময় সেও ভরদুপুরে কিংবা গভীর রাতে লাউডস্পীকারে গান ছেড়ে আশেপাশের  লোকদের নাভিশ্বাস তুলে ফেলতো । তার জীবনটা এখন কার মতো গোছানো ছিল না। সে ছিল এক বাউন্ডুলে। তেল আর চিরুনির সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল,হাতে বালা । হুমায়ুন গোগ্রাসে গিলতো, হিমু হয়ে খালি পায়ে হেঁটে বেড়াতো রাস্তায় । অষ্টপ্রহর গান শুনত সে । জন ডেনভার,ঈগলস,মান্না দে, হেমন্ত,অঞ্জন দত্ত,আর্টসেল,তাহসান …… ।  জীবনের কোন লক্ষ্য ছিল না তার । ভাবতো বন্ধু, আড্ডা,গান, ট্যুর,মাস্তি এই তো জীবন ।
হৈচৈ করে বেড়ানো হাসিখুশী রাফির জীবনে হুট করেই বিশাল একটা বিপর্যয় ঘটে গেল । ফিজিক্সের প্রতীতির প্রেমে পড়েছিল সে প্রথম দেখাতেই ।  প্রতীতিও । ওদের রিলেশানটা ছিল খুবই গোপন । রাফির বন্ধুবান্ধব কেউই জানতো না ব্যাপারটা।
প্রেম যখন পেকে টসটসে, প্রতীতি রাফির হাতে হাত রেখে ১০৮ বারেরও বেশী  জিজ্ঞেস করেছে আমাকে কখনো ছেড়ে চলে যাবে নাতো , তখন কানাডা থেকে এলো এক দমকা হাওয়া । সেই দমকা হাওয়ায় অচিন দেশের রাজকুমার প্রতীতিকে নিয়ে উড়াল দিল । বিদায় নিতে প্রতীতি, রবীন্দ্র সরোবরের সামনে দেখা করেছিল রাফির সঙ্গে । কেঁদে কেঁদে বলেছিল, “আমাকে ক্ষমা করে দিও,রাফি”। রাফি হেসেছিল । প্রতীতির চোখের পানি মুছে দিয়ে তার দুগালে নিজের দুহাত রেখে বলেছিল, “পাগলি মেয়ে একটা” ।
তারপর কত দিন চলে গেছে । রাফি কত রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে বিছানায় এপাশ করে করে । একটার পর একটা সিগারেট ধ্বংস করেছে । গভীর রাতে সাউন্ড সিস্টেম অন করেছে । মান্নাদে কেঁদে কেঁদে জানিয়েছে সে অনেকদিন দেখেনি তার প্রিয়াকে ,তাহসান বলেছে চাঁদের আলো কখনো তার হবে না । মাঝে মাঝে গিটার নিয়ে হলের সিড়িতে বসতো  রাফি। গাঁজায় দুটো দম মেরে গান ধরতো ‘গিভ মি সাম সানশাইন , গিম মি সাম রেইন ……’ । খাওয়া দাওয়া করতোনা , ক্লাসে যেত না , ক্লাস টেস্টগুলোও মিস করতো । তার রুমমেট, বন্ধু বান্ধব অনেকেই চেষ্টা করেছে তাকে বোঝানোর । বোঝেনি সে ।
বন্ধুরা সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিল । এমন সময় একটা ঘটনা ঘটলো যেটা রাফির জীবনের মোড় ঘুরে ঘুরিয়ে দিল ১৮০ ডিগ্রী ।
গাঁজা আর সিগারেটের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে তার রুমমটে রুম ছেড়ে চলে গিয়েছিল । বেডটা কয়েকদিন ফাঁকাই পড়েছিল । সেই দিনগুলাতে রাফি আরো বেশী করে গাঁজা টানত । কয়েকদিন পরে সেই বেডে উঠলেন সিভিলের নাফিস ভাই । নাফিস ভাই এর মুখে একগাল দাঁড়ি, চোখে চশমা , ইয়েমেনি এক শায়খের মতো দেখতে অনেকটা । মুখে সব সময় স্মিত হাসি । প্রথম দেখাতেই মানুষটাকে খুব ভালো লেগে গিয়েছিল রাফির । রাফির বেহাল অবস্থায় খুব কষ্ট পেয়েছিলেন উনি ।
ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে রাফিকে বুঝিয়েছেন উনি । রাফি তর্ক করেছে , মেজাজ হারিয়েছে মাঝে মধ্যেই , চিৎকার করে বলেছে , “আমাকে আমার মতোই থাকতে দিন না নাফিস ভাই। আপনারা হুজুর মানুষ , ভালোবাসার কি বোঝেন ?”
ভালোবাসার কি বুঝি! নাফিস ভাই স্মিত হেসে রাফিকে শুনিয়েছেন ভালোবাসার এক মহাকাব্যিক উপাখ্যান । শুনিয়েছেন মুহাম্মাদ খাদীজার প্রেমের কথা, শত বাঁধা বিপত্তির মুখেও দ্বীন প্রচারে মুহাম্মাদের দৃঢ়তা আর খাদীজার পাশে থাকার কথা । শুনিয়েছেন স্ত্রীর সঙ্গে মুহাম্মাদের দৌড় প্রতিযোগিতার গল্প, সওয়ারীর পিঠে উঠতে স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য হাঁটু গেড়ে বসে পড়ার গল্প । রাফি শুনেছে আর মুগ্ধ হয়েছে ।
এমনটাও হয়!
আস্তে আস্তে রাফির মধ্যে পরিবর্তন আসা শুরু হল । ঝাঁকড়া চুলে তেল চিরুনী পড়লো,সিগারেট খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিল ,গাঁজা ছেড়ে দিল একেবারেই, শুক্রবার ছাড়াও মাঝে মাঝে মসজিদে যাওয়া শুরু করলো । প্রতীতির বিরহের মাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করলো ।
একদিন নাফিস ভাই রাফিকে শোনালেন আশ্চর্য একদল তরুণীদের কথা ,আয়তনয়না যাদের চোখ, কোন মানুষ ও জ্বীন কখনো যাদের স্পর্শ করেনি । প্রবাল ও পদ্মরাগের মতো এই সব তরুণীদেরকে আল্লাহ্‌ (সুবঃ) নাম দিয়েছে হূর আল আঈণ । আল্লাহ্‌ (সুবঃ) এদেরকে নাকি এতো সুন্দর করে বানিয়েছেন যে এদের দিকে তাকিয়েই মানুষ নাকি বছরের পর বছর কাটিয়ে দিবে । তবু চোখ ফেরাতে পারবে না ।
“দেখ রাফি, প্রতীতির চেয়ে হাজার হাজার গুনে সুন্দরী হবেন জান্নাতে তোমার স্ত্রী। প্রতীতি যেমন তোমাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে, জান্নাতের স্ত্রী কখনোই তোমাকে ধোঁকা দিবেন না । প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে আগের মুহূর্তের চেয়েও বেশী ভালোবাসবেন । জান্নাতের স্ত্রীর হাতে হাত রেখে কার্তিকের নরম হলুদ আলোয় তুমি হেঁটে বেড়াতে পারবে ধানক্ষেতের আইল বেয়ে, অশত্থের গুড়িতে হেলান দিয়ে বসবে তুমি , তোমার স্ত্রী তোমার কাঁধে মাথা রেখে বসবে ঠিক তোমার পাশেই। সব রং নিভে যাবে । থাকবে শুধু অন্ধকার । পাশাপাশি বসবার ।
নাফিস ভাই এরপর রাফিকে দুইটা লিখা ( http://bit.ly/2gqcbH8   , http://bit.ly/2khn5xA  ) পড়তে দিয়েছিলেন । এই দুইটা লিখা পড়ার পর প্রতীতির প্রতি যা ভালোবাসা ছিল তার এক কানাকড়িও আর থাকলো না রাফির মনে । কঠোর প্রতিজ্ঞা করলো জান্নাতের সেই মুহূর্তগুলো কিছুতেই মিস করা যাবে না । বদলে গেল রাফি । আমূল বদলে গেল ।


দ্বীন নিয়ে সিরিয়াস হবার পর একটা বিষয় খুব ভোগাতো রাফিকে । প্রতীতি যখন ছেড়ে চলে যায়  রাফিকে তখন বাস্তবতা থেকে হারিয়ে যাওয়ার জন্য সে গাঁজা টানতে শুরু করে , সেই সাথে সে ঘন্টার পর ঘন্টা পর্ণমুভি দেখা । নাফিস ভাইয়ের দেখা পাবার আগ পর্যন্ত সে পর্ণমুভির আসক্তি নিয়ে তেমন একটা মাথাঘামাতো না । কিন্তু পরে এই ব্যাপারটাতে সে ভেতর থেকে কুঁকড়ে যেতে থাকে । একদিন ঐ জঘন্য কাজটা করার পর রাফি মসজিদের পিলারের আড়ালে সিজদাহতে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছিল । সেটা দেখে ফেলেন নাফিস ভাই । তারপর কি করে যেন বুঝে ফেলেন রাফির পর্ণ আসক্তির কথা । একবিকেলে আসরের সলাতের পর রাফিকে নিয়ে মিজান মামার দোকানে যান নাফিস ভাই। লাচ্ছির অর্ডার দিয়ে শুরু করেন কথা ………


মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটির পিডিএফ গুগল ড্রাইভ থেকে ডাউনলোড করুন